শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


ফাদার স্যামুয়েল এখন ৬০ টপকে ৬৪ চার্চ লাগোয়া তাঁর থাকার জায়গা। অন্যদিকে দোতলা বয়েজ হোস্টেল। এখন সেখানে মোট ৪৫ জন আবাসিক থাকে। ছেলেদের পাঁচ থেকে চোদ্দ বছর বয়স। একতলা দোতলা মিলিয়ে তিনটে তিনটে ছটা বড় বড় ঘর। এক এক ঘরে আটজন করে থাকার ব্যবস্থা। আর দুটো তলায় দুটো দুটো চারটে বড় বাথরুম। নিচের তলায় রান্নাঘর খাবার ঘর। ছাদে টবে রাখা ফুলের বাগান আর যোগাসন করার জায়গা।
৩০ বছর আগে এসব কিছু ছিল না। আজকের অতনুর বয়সী ফাদার স্যামুয়েল সেদিন যখন এই চার্চে এসেছিলেন, তখন মাত্র টানা টিনের ছাউনি দেওয়া চারটি ঘরের হোম ছিল। তারই দুটিতে থাকার ব্যবস্থা একটি রান্নাঘর আর একটি খাবার ঘর। একটু দূরে চার্চের পিছন দিকে সার দিয়ে তিনটি টয়লেট। টিনের ঘরের একপাশে কুয়োতলা সেখানেই স্নানের ব্যবস্থা। সেইসব বদলিয়ে আজ এখানে পৌঁছতে ত্রিশ বছর লেগে গেছে। কনগ্রেগেসন অফ ক্রিশ্চান ব্রাদারস ইন ইন্ডিয়া সংক্ষেপে সিসিবিআই থেকে যে টাকা আসতো তাতে খুব বেশি কিছু করবার কথা ভাবা যেত না। তবে অনেক সহৃদয় মানুষ খ্রিস্টান না হওয়া সত্ত্বেও ফাদার স্যামুয়েলকে নানাভাবে সাহায্য করতেন। হোমে আশ্রয় দেওয়ার নাম করে ধর্মান্তরিত করবার যে প্রবণতার কথা আড়ালে আবডালে বহুকাল ধরে চলে আসছে ফাদার স্যামুয়েলের নামে অন্তত এই ধরনের কোন অভিযোগ এ পর্যন্ত ওঠেনি।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৮: সুন্দরবনের পাখি — শালিক

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-৪: আকাশ এখনও মেঘলা

বহু মানুষ একটা কঠিন স্বপ্নকে ছোঁবার প্রত্যয় নিয়ে বাঁচে। স্বপ্নের কিছুটা সত্যি হলে সে প্রত্যয় আরও দৃঢ় হয়। ফাদার স্যামুয়েল এর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এই চার্চে আগে ছিলেন ফাদার মরিস। তাঁর অনেকগুলো শারীরিক সমস্যা ছিল কিন্তু তবু সেই সব অসুবিধাকে দূরে সরিয়ে ছিয়াত্তর সালের শেষাশেষি এই প্রায় পরিত্যক্ত চার্চটিতে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করেন ফাদার মরিস। ক্রিশ্চান মিশনারিজরা অনেক আগে থেকেই এই ধরনের সেবামূলক কাজে যুক্ত ছিলেন।

সরকারিভাবে প্রথম ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু সুরক্ষা দপ্তর যখন জুভিনাইল জাস্টিসের ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড প্রটেকশন স্কিম নিয়ে এলেন সেখানেই সিএনসিপি শব্দটা সরকারিভাবে এল। চিলড্রেন ইন নিড অফ কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন। সরাসরি সরকারি তত্ত্বাবধানে বা সাহায্যপ্রাপ্ত হোম তৈরি হল। কিন্তু তখনও ফাদার স্যামুয়েলের মতো মানুষজন বেসরকারি উদ্যোগে কিছুটা সাধারণ মানুষের সাহায্যে তাদের কাজ চালিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০২: অন্ধকারে কে?

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা

ফাদার মরিস ভেবেছিলেন চার্চের উন্নতি করবেন অনাথ ছেলেপুলের আশ্রয়ের একটা ব্যবস্থা করবেন। পরবর্তীতে ফাদার স্যামুয়েল তাকে পুরোদস্তুর হোম তৈরি করলেন। খ্রিস্টান হোম নিয়ে নানাধরনের ধারণা বহুদিন ধরেই মানুষের মধ্যে আছে। বিদেশ থেকে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে টাকা আসে গরিব মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি। কুৎসা রটে, তার সবটা সত্যি নয়। যেমন বহু রাজনৈতিক নেতামন্ত্রী চৌর্যবৃত্তিতে সিদ্ধহস্ত, তাবলে রাজনীতির লোক মানেই চোর চামুণ্ডা নয়।
আরও পড়ুন:

ভাসাবে দোঁহারে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’

কারও সঙ্গে কোন ও দ্বন্দ্বে না গিয়ে নিজের কাজ করে গিয়েছেন ফাদার স্যামুয়েল। প্রয়োজনে এলাকার এমএলএ, এমপি’র কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু শর্ত একটাই কোনও রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি নেই। তাঁর চার্চ নেই বা হোম নেই। ফাদারের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে অতনু হোমের ঘরগুলো দেখে।তার মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলে নেয়। এগুলো অতনুর কাজে লাগবে। গাড়িভর্তি বইপত্র খাতা-পেনসিল শুকনো খাবার এসব নামানোর পর ফাদার স্যামুয়েলের হাতে যখন খামবন্দি এ মাসের চেকটা তুলে দিল, তখন চার্চের চূড়ার লম্বা ছায়া পড়েছে মাঠে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১১: মৃণালিনীর মৃত্যুর পর বিবাহ-প্রস্তাবের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ

সামনেই চার্চের প্রবেশদ্বার বা পোর্টিকো তারপর একটা চৌকো জায়গা এট্রিয়ম আর চিলতে আড়াআড়ি করিডর বা নার্থেক্স টপকেই মূল উপাসনা স্থল, মাঝামাঝি লম্বা রাস্তা হল নেভ। দু’পাশে সারিসারি বসার জায়গা আইল একেবার পূবদিকে মাথার অংশে আড়াআড়ি করিডর ছেড়ে বেদি, ওপরে ক্রুশবিদ্ধ প্রভু যিশু। হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যের সঙ্গে ভীষণ মিল। মূল তোরণ নাটমন্দির মূলমন্দির গর্ভগৃহ এই ধাঁচেই খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্র ক্রসচিহ্নকে অনুসরণ করে বানানো গির্জার স্থাপত্য।

কিন্তু অতনু চার্চের ভিতরে গেল না। ফাদার স্যামুয়েলও কিছু বললেন না। ফাদার জানেন অতনু সেন তার এই ৩৪ বছরের জীবনে ১৪ বছর পর্যন্ত মার সঙ্গে বহুবার মন্দিরে গিয়েছে। কিন্তু তার পরের কুড়ি বছরে সে একবার মাত্র এই গির্জার মধ্যে ঢুকে ছিল তারপর কোনওদিন কোনও গির্জা কোনও মন্দির বা মসজিদে অতনু পা রাখেনি। —চলবে।

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content