শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


স্টেডি-স্টাডি। ইনফোসিস ছাড়ার পর থেকেই রবীন চ্যাটার্জির মাথার মধ্যে এই অ্যাপের ভাবনাটা এসেছিল। ক্রমাগত কাজ করতে করতে উইপ্রোতে এসে স্টেডি-স্টাডি ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে যায়। প্রথমে এটা স্কুল-ভিত্তিক একটা মোবাইল আপ্লিকেশন ছিল। স্কুলের সিলেবাস, সারা বছরের কারিকুলাম বা পাঠক্রম, ক্লাস, রুটিন তার সমস্ত খুঁটিনাটি পাওয়া যাবে এই অ্যাপ্লিকেশনে। একেবারে দেশজভাবে তৈরি বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি তিনটি ভাষায় চলে। আর এখন স্টেডি-স্টাডিরই আরেকটা ভার্সন নিয়ে কাজ করছে এথেনা ইনফোটেক। তার নাম টু স্টাডি (TU-STUDY)।
অভিভাবকদের ক্লাস-ভিত্তিক, সাবজেক্ট-ভিত্তিক টিউটর খুঁজে দেবে এই অ্যাপ্লিকেশন, আবার টিউটরও তাঁদের জন্য ঠিকঠাক ছাত্র বা ছাত্রী খুঁজে পাবে।

মালবিকা স্বাভাবিকভাবে এথেনা ইনফোটেকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ফাউন্ডারদের প্রেজেন্টেশন মালবিকা এবং রবীন একসঙ্গে করেন। স্টেডি-স্টাডির গ্রোথটা ভালো, কিন্তু টিউ-স্টাডির ব্যাপারে রবীন বা মালবিকা দুজনেই খুব আশাবাদী।

অতনু সেন হয়তো জানতেন, রবীন চ্যাটার্জি এইচআর-এর জন্য লোক খুঁজছেন! রবীন স্যার কাগজটা দেখে একটাই কথা বলেছিলেন—
—দিয়া ইউ আর লাকি এনাফ!
—কেন স্যার।
—অতনু সেন কখনও কাউকে কোথাও রেকমেন্ড করেন না।
আরও পড়ুন:

আকাশ এখনও মেঘলা/৩

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৯: আপনামাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়

অতনু সেনের রেকমেন্ডেশন বলেই কি দিয়ার এথেনা ইনফোটেক-এ চাকরি পেতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি? ভদ্রতার জন্যই তো তাঁকে একটা… ফোন নম্বর চাইবে? কিন্তু মিস্টার চ্যাটার্জি যদি কিছু মনে করেন?

প্রথমদিন দেখা হবার পর থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে কোম্পানি এবং কাজের ধরন বোঝানোর সময় মি. চ্যাটার্জি তাঁর এই স্টার্টআপের সবকিছু ডিটেলে বলেছেন। বলেছেন এই কারণে যে স্টার্টআপের স্ট্রাকচারের মধ্যেই একটা ইনফরমাল ব্যাপার আছে। কর্মীরা কোম্পানির অবস্থাটা পরিষ্কার জানতে পারলে নিজের সবটুকু দিয়ে কোম্পানিকে বাঁচাবার চেষ্টা করবে। মানে এরকমই একটা অপ্রচলিত বিশ্বাস কাজ করে। আর স্টার্টআপে টিকে থাকতে গেলেও একটা লড়াকু মানসিকতা থাকতে হবে। চাকরি হলেও ঠিক চাকরি নয় খানিকটা নিজের নিজের ব্যবসায়িক উদ্যোগের মতো!
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০২: অন্ধকারে কে?

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৪: ‘…জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’, লরেন্স ও ফ্রিডা/২

তাই কৃতজ্ঞতা জানানোর কর্তব্যের থেকেও রবিন চ্যাটার্জীর মনের মধ্যে অকারণ সন্দেহ তৈরীর হওয়ার সম্ভাবনা এড়িয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাঁর মনে হতেই পারে অতনু সেন হয়তো দিয়াকে আবার তাঁর কোম্পানিতে ফেরত চাইছেন? আচ্ছা অতনু সেনের কোম্পানিতে যে মহিলাদের নেওয়া হয় না এটা রবীন চ্যাটার্জি কি জানেন? একদম ছোট কোম্পানি কেউ খোঁজ খবর রাখেন না। না হলে তো এটা অফিশিয়ালি বলতেই পারেন না। দিয়ার হঠাৎ মনে হল সে এসব নিয়ে বড্ড বেশি ভাবছে। সেক্টর ফাইভেই রয়েছে কখনো না কখনো দেখা হবে। তখন ‘থ্যাংক ইউ’ বলা যাবে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৭: সুন্দরবনের পাখি — ফিঙে

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?

দমদম নাগেরবাজার বাসে কলেজ মোড় থেকে সল্টলেক লেকটাউন হয়েও যাওয়া যায় আবার উল্টোডাঙ্গা বেলগাছিয়া আরজিকর হয়েও যাওয়া যায়। শনিবার দুটো রাস্তাই মোটামুটি খালি, ঘণ্টাখানেক লাগার কথা। মা রাগ করুক আর যাই করুক মিষ্টি আর মায়ের জন্য শাড়িটা নিয়েই বাড়ি ঢুকবে দিয়া। এত বছর এত কষ্ট করে দিয়াকে মানুষ করেছে মা। দিয়া তো নিজের হাতে কোনদিন কিছু কিনে দিতে পারেনি।

উল্টোদিকে চশমা পরা বয়স্ক কাকু বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছেন। অন্যদিনে চুড়িদার পরেই অফিসে আসে। আজ কি মনে হল, মায়ের একটা ডুরেতাঁতের শাড়ি পরে এসেছে! কমবয়সী মেয়ে সাদা শাড়ি পরতেই পারে! তার জন্য একজন মাঝবয়েসী লোক কারণে অকারণে ঘুরে ঘুরে দেখবে? কি আশ্চর্য! মেয়েরা এখনও রাস্তায় নিরাপদ নয়! বাসটা আরজিকর হাসপাতালের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ সেই অভাগী মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। কী ঘটে গেল তার ওপর দিয়ে? তার মা-বাবার ওপর দিয়ে? প্রতিবাদ হল, রাত দখল হল! দিয়া মাকে নিয়ে নাগের বাজারে এক রাতদখলে সামিলও হয়েছিল । কিন্তু আইন তদন্ত প্রমাণ এসব মানুষের মনের কথা বোঝে না। তাই সকলেই তাকিয়ে আছেন “পথের শেষ কোথায়? কী আছে পথের শেষে?”
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১০: মানুষের পাশে, মানুষের কাছে

ঈশ! ছি ছি ছি! মানুষটা নেমে যাবার পর মনে পড়ল! ইনি তো অতনু সেনের কোম্পানির রিশেপসনের ভদ্রলোক, বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনের সামনে নেমে গেলেন! এদিকেই থাকেন? নাকি কোন কাজে এসেছেন? ওই জন্য বারবার ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। দিয়া একদম খেয়াল করতে পারেনি। কি সব আজেবাজে ভেবে বসল। ওনাকে থ্যাঙ্ক ইউটা বলে দিলে অতনু সেনের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেত! না, কৃতজ্ঞতা খামে মুড়ে পাঠানোর জিনিস না!

কিন্তু অতনু সেন এখন ঠিক কোথায়? চুঁচুড়া চার্চের বাইরে এসে দাঁড়ালো অতনু সেনের গাড়ি।—চলবে।

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content