
ছবি: সংগৃহীত।
দুলাল চমকে ওঠে। হাতে ধরা কাপ থেকে চলকে পড়া চারবিবার সকালেই পরা সাদা পাঞ্জাবিটা দাগিয়ে দিল।
—এ হে হে চায়ের দাগ লেগে গেল, ও স্নিগ্ধা! একটা ভিজে কাপড়-টাপড়।
—থাক! লন্ড্রিতে দিতে হবে!
—উঠে পড়লি যে?
—বললাম যে পাঞ্জাবিটা লন্ড্রিতে দিতে হবে। কাকিমা আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি স্নিগ্ধার বিয়ের ব্যাপারে আমার চেনাপরিচিতদের বলবো আর যাতে এবার কেউ বাজে কথা না বলে সেটা আমি খেয়াল রাখবো!
—দেখ দুলাল তোরা ছোটোবেলা থেকে একে ওপরকে চিনিস জানিস, একে অপরের বাড়ি ছেলেবেলা থেকেই যাওয়া আসা! লোকের কুৎসা, অপবাদ দেওয়া স্বভাব তাই তারা বলেছে। কিন্তু আমি ভেবে দেখলুম তোর কাকাবাবু চলে যাবার পর এই বাড়িতে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই! স্নিগ্ধার বিয়ে হয়ে গেলে এই নির্বান্ধব পুরীতে আমি একা! পাড়ার লোকজনের চরিত্তির বোঝার আর বাকি নেই! তাই তোদের দুজনের বিয়ে হলে খারাপ কী? স্নিগ্ধা আমার চোখের সামনে থাকবে এই বাড়ি আমি বিয়ের পরে তোদের দুজনের নামেই লিখে দেবো!
—এ হে হে চায়ের দাগ লেগে গেল, ও স্নিগ্ধা! একটা ভিজে কাপড়-টাপড়।
—থাক! লন্ড্রিতে দিতে হবে!
—উঠে পড়লি যে?
—বললাম যে পাঞ্জাবিটা লন্ড্রিতে দিতে হবে। কাকিমা আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি স্নিগ্ধার বিয়ের ব্যাপারে আমার চেনাপরিচিতদের বলবো আর যাতে এবার কেউ বাজে কথা না বলে সেটা আমি খেয়াল রাখবো!
—দেখ দুলাল তোরা ছোটোবেলা থেকে একে ওপরকে চিনিস জানিস, একে অপরের বাড়ি ছেলেবেলা থেকেই যাওয়া আসা! লোকের কুৎসা, অপবাদ দেওয়া স্বভাব তাই তারা বলেছে। কিন্তু আমি ভেবে দেখলুম তোর কাকাবাবু চলে যাবার পর এই বাড়িতে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই! স্নিগ্ধার বিয়ে হয়ে গেলে এই নির্বান্ধব পুরীতে আমি একা! পাড়ার লোকজনের চরিত্তির বোঝার আর বাকি নেই! তাই তোদের দুজনের বিয়ে হলে খারাপ কী? স্নিগ্ধা আমার চোখের সামনে থাকবে এই বাড়ি আমি বিয়ের পরে তোদের দুজনের নামেই লিখে দেবো!
—আপনি কি স্নিগ্ধার সঙ্গে কথা বলে আমায় এসব বলছেন?
—স্নিগ্ধার ব্যাপারটা তুই আমার ওপর ছেড়ে দে! কেন আমার স্নিগ্ধাকে কি তোর অপছন্দ?
—কাকিমা আপনি গুরুজন আপনার সঙ্গে এসব কথাগুলো বলতেই আমার খারাপ লাগছে! পছন্দ-অপছন্দ এসবের কোন কথাই উঠছে না। আর আমার পছন্দের কেউ থাকলে, বাবা মারা গেছেন আমার মা বা দিদি জামাইবাবুদের আমি নিশ্চয়ই বলতাম, তাঁরা কথা বলতেন।
—না না, আমি তো বৌদির কাছে নিজেই যেতাম। সে নয় তোর দিদি জামাইবাবুদের সঙ্গেও কথা বলতাম। তার আগে তোর মতামতটা তো জানতে হবে!
—আমার কোন মতামত নেই। আমি জুটমিলে সামান্য চাকরি করি, এই মুহূর্তে বিয়ে করার কোন পরিকল্পনা নেই। আর আমি যাকে বিয়ে করার কথা ভাবতাম আমি তাকেই সে কথা প্রথম বলতাম, আপনি আপনার মেয়ের থেকে জানতে পারতেন!
—স্নিগ্ধার ব্যাপারটা তুই আমার ওপর ছেড়ে দে! কেন আমার স্নিগ্ধাকে কি তোর অপছন্দ?
—কাকিমা আপনি গুরুজন আপনার সঙ্গে এসব কথাগুলো বলতেই আমার খারাপ লাগছে! পছন্দ-অপছন্দ এসবের কোন কথাই উঠছে না। আর আমার পছন্দের কেউ থাকলে, বাবা মারা গেছেন আমার মা বা দিদি জামাইবাবুদের আমি নিশ্চয়ই বলতাম, তাঁরা কথা বলতেন।
—না না, আমি তো বৌদির কাছে নিজেই যেতাম। সে নয় তোর দিদি জামাইবাবুদের সঙ্গেও কথা বলতাম। তার আগে তোর মতামতটা তো জানতে হবে!
—আমার কোন মতামত নেই। আমি জুটমিলে সামান্য চাকরি করি, এই মুহূর্তে বিয়ে করার কোন পরিকল্পনা নেই। আর আমি যাকে বিয়ে করার কথা ভাবতাম আমি তাকেই সে কথা প্রথম বলতাম, আপনি আপনার মেয়ের থেকে জানতে পারতেন!
আরও পড়ুন:

পর্ব-১৩: আকাশ এখনও মেঘলা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯৪: ‘মহেশ্বরের অনন্ত ধৈর্য’
—আমার কথা শুনে কি বুঝতে পারছিস না যে স্নিগ্ধারও এতে মত আছে, তোকে ছোটবেলা থেকেই সে যথেষ্ট শ্রদ্ধাভক্তি করে, ভয়ও পায়! আর আমাদের মা-মেয়ের সম্পর্ক দুই বন্ধুর মতো!
—সেটা আন্দাজ করতে পারছি! যাইহোক রবিবার দিন বাড়িতে সকলেরই নানান কাজ থাকে —আপনার অনেকটা সময় নষ্ট হল, আমি এলাম… ও হ্যাঁ আপনি আপনাদের দোতলা বাড়িটা লিখে দেবেন জানলে পাত্রের লাইন পড়ে যাবে এত চিন্তা করছেন কেন? আপনি যোগাযোগ করুন স্নিগ্ধাকে যাঁরা পছন্দ করবেন দরকার হলে পাড়ার তরফে আমি তাঁদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলব!
—সেটা আন্দাজ করতে পারছি! যাইহোক রবিবার দিন বাড়িতে সকলেরই নানান কাজ থাকে —আপনার অনেকটা সময় নষ্ট হল, আমি এলাম… ও হ্যাঁ আপনি আপনাদের দোতলা বাড়িটা লিখে দেবেন জানলে পাত্রের লাইন পড়ে যাবে এত চিন্তা করছেন কেন? আপনি যোগাযোগ করুন স্নিগ্ধাকে যাঁরা পছন্দ করবেন দরকার হলে পাড়ার তরফে আমি তাঁদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলব!
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৭: পাতি সরালি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১২: অপারেশন অপহরণ
এতক্ষণ এই বিষয়ের মূলপাত্রী স্নিগ্ধা। অন্তরালে ছিল দুলাল কথাগুলো বলে বেরিয়ে যাবার মুহূর্তে স্নিগ্ধা পর্দা সরিয়ে ভিতরে এল। অপমানে তার দু’চোখ জ্বলছে। কাঁপা গলায় বলে উঠলো—
—দেখো দুলাল দা, তোমাকে অত উপকার করতে হবে না। আমার মা যেখানে পারে যেমন পারে আমার বিয়ে ঠিক করবে। তোমার অত ব্যস্ত না হলেও চলবে!
—দেখো দুলাল দা, তোমাকে অত উপকার করতে হবে না। আমার মা যেখানে পারে যেমন পারে আমার বিয়ে ঠিক করবে। তোমার অত ব্যস্ত না হলেও চলবে!
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১১০: বনবাসী রামের নিরাসক্ত ভাবমূর্তির অন্তরালে, ভাবি রামরাজ্যের স্রষ্টা দক্ষ প্রশাসক রাম

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৪: গ্রীষ্মকালে আলাস্কা সত্যিই অচেনা এক দেশ
রাস্তায় বেরিয়ে দুলাল কড়কাটা ঘুঁড়ির মতো পাক খেতে খেতে চায়ের দোকান ক্লাব লোকাল পার্টি অফিসে খানিকক্ষণ চক্কর কাটল। তারপর কি ভেবে স্টেশন রোডে গীতাঞ্জলি লন্ড্রিতে গিয়ে পাঞ্জাবিতে লাগা চায়ের দাগটা দেখালো—
—এ হে হে!
—উঠবে?
—কবে লেগেছে?
—এই তো এক্ষুণি।
—বাড়ি গিয়ে একটা শার্ট পরে এটা এসে দিয়ে যাও আমি দুটো পর্যন্ত আছি! দেরি করো না আজ রোববার সন্ধেবেলা বন্ধ।
—এ হে হে!
—উঠবে?
—কবে লেগেছে?
—এই তো এক্ষুণি।
—বাড়ি গিয়ে একটা শার্ট পরে এটা এসে দিয়ে যাও আমি দুটো পর্যন্ত আছি! দেরি করো না আজ রোববার সন্ধেবেলা বন্ধ।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭৬: পৃথিবীতে এমন কেউ নেই, যাঁর জীবনের আকাশে কখনও শত্রুতার মেঘ জমেনি
…চায়ের দাগটা হয়তো উঠে যাবে না উঠলে পাঞ্জাবিটা বাড়িতেই পরে নেবে। সাতসকালে স্নিগ্ধার মায়ের কাছে এরকম একটা অদ্ভুত প্রস্তাব পেয়ে মনের মধ্যে ওদের মা-মায়ের দুজনের সম্বন্ধেই একটা নোংরা দাগ লেগে গেল ! সেটা কি কোনদিন উঠবে?… কানাঘুষো একটা গুজগুজ ফুসফুস হচ্ছিল। দুলালের সামনে বলার সাহস কারো হয়নি! আজ মনে হচ্ছে এই গুজবটা রটানোর পিছনেও ছন্দা কাকিমার মাথা রয়েছে! মা-মেয়ের যৌথ উদ্যোগ হলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই! এত নির্লজ্জ মানুষ হয় কি করে? ভাবে কি করে যে একটা বাড়ির লোভে কেউ কাউকে দুম করে বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে… হ্যাঁ, স্বামী মারা গিয়েছেন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে বিধবা মহিলা একা থাকবেন। দুশ্চিন্তা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। একা মানুষ হলে সকলেই চায় তার কাছাকাছি থাকুক মেয়ে জামাই! তাহলে মা-মেয়েতে মিলে যুক্তি করে এরকম একটা অদ্ভুত প্রস্তাব! প্রথমে মনে হয়েছিল এটা ছন্দা কাকিমার মস্তিষ্কপ্রসূত। স্নিগ্ধা হয়তো এসব বিষয়ে বিশেষ কিছু জানে না। কিন্তু পরে স্নিগ্ধা ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে যা বলল তাতে এটা স্পষ্ট যে তারা দু’জনে মিলে আলোচনা করে এটা পরিকল্পনা করেছে। ….খুব ভুল না হলে সম্বন্ধও হয়নি আর ভাংচিও কেউ দেয়নি! পুরোটাই বানানো…।
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দুলাল বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল! —চলবে।
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দুলাল বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল! —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।