বৃহস্পতিবার ৮ মে, ২০২৫


ছবি: সংগৃহীত।

একার রোজগার তবু দুলাল নিজেকে গুছিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। দিদিদের স্বামীরা মানে দুই জামাইবাবু যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। তাঁরা দেখাশোনা করে সব রকম সাহায্য করলেন। দুলাল তার ছোট বোনের বিয়ে দিল। পাত্র পরিচিত। মানে চেনাশোনা ঘর, ছোটোবোন মণির স্কুলের বান্ধবী নীলিমার মাসতুতো দাদা। দুজনে দুজনকে চেনে। কিন্তু সেরকম কোনও ঘনিষ্ঠতা হয়নি। ছেলেটি কলকাতার একটি নামীস্কুলে অফিসক্লার্কের চাকরি করে। মোটামুটি সচ্ছল।
কলকাতার বাঁশদ্রোণীতে ছোট্ট বাড়ি! নীলিমার মাসি এবং মেসো দুজনেই চাকরি করেন। মাসি ক্যালকাটা কর্পোরেশনে আর মেসো রয়েছেন হাওড়ার একটি কারখানায় সকালবেলায় বাবা-মা ছেলে তিনজনেই খেয়ে টিফিন নিয়ে বেরিয়ে যান। ভোরবেলায় রান্নার লোক চলে আসে। সকালবেলাটা খুব হুড়োহুড়ি, সবাই খুব ভোরে উঠে পড়েন, তাড়াতাড়ি শুতে যান! শুধু শনিবারটা বেনিয়ম। কখনও মনি-মণির বর কখনও শ্বশুরশাশুড়িকে নিয়ে ওরা চারজনে মিলে সিনেমা দেখতে যায়। মালঞ্চ পদ্মশ্রী কখনও নবীনা! সেদিনটা বাইরে খায়! তোফা আনন্দে আছে! সপ্তাহের অন্যদিন সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত মণির খাওয়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই!
আরও পড়ুন:

আকাশ এখনও মেঘলা/১১

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯২: শ্রীমার সঙ্গে এক মেমসাহেবের কথোপকথন

মণির টিভি দেখার নেশা কোনওকালেই নেই। মণিকে বাড়ি থেকে ওরা বলেছেন প্রাইভেটে পড়াশোনা করে এমএ পরীক্ষাটা দিতে। তারপর স্কুলের চাকরির চেষ্টা করতে হাঁটাপথে বাড়ির কাছাকাছি স্কুলটুলে ভালো চাকরি পেলে করবে না হলে চাকরি করার দরকার নেই। মণির শ্বশুরবাড়ি দেখে দুলালের মনে খুব শান্তি! এদের কোনও রকম দাবিদাওয়া ছিল না, শাড়ি-গয়না, খাট-আলমারি ড্রেসিংটেবিল টেলিভিশন কিচ্ছু না! জামাইবাবুদের সঙ্গে কথা বলে দুলাল বিয়ের দিন বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মায়ের হাত দিয়ে মণি আর মণির বরের নামে করা একটা মোটা টাকার ফিক্সড ডিপোজিট-এর সার্টিফিকেট উপহার দিয়েছিল! বাবা যখন বেঁচেছিলেন তখন দুই দিদিকে সাধ্যমতো দিয়েছেন—মণি কেন পাবে না আর দুই দিদি মিলে যতটা যা সম্ভব অল্পস্বল্প বরের আংটি আর মণির হার দিয়েছিল!
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৮: গার্হস্থ্যজীবনে জ্যেষ্ঠ রামচন্দ্রের ভাবমূর্তি, তাঁর দেববিগ্রহে উত্তরণের একটি অন্যতম কারণ?

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯৪: মৌটুসি

এরপর স্বাভাবিকভাবেই জামাইবাবুরা দুলালের বিয়ের চেষ্টা করতে লাগলেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে একটা সমস্যা তৈরি হল। আসলে পাড়ারই মেয়ে স্নিগ্ধার এ বাড়িতে খুব আসা যাওয়া ছিল। স্নিগ্ধা প্রথমে অমৃতলাল স্যারের কাছে পড়া দেখাতে আসতো। স্নিগ্ধা অমৃতলালের বন্ধুস্থানীয় যতীন করের মেয়ে! যতীন অসুস্থ হয়ে মারা যান! যতীন করের মেয়ে ছোটবেলা থেকে যাওয়া-আসা আছে তাই অমৃতস্যার কখনো তার কাছ থেকে পয়সা নেননি। দুলালের বাবা অমৃতলাল সেন মারা যাবার পর স্নিগ্ধা দুলালের কাছে পড়তে আসতো, স্নিগ্ধা দুলালের দুই দিদির থেকে অনেকটা ছোট আর দুলালের থেকে বছর চারেকের ছোট মণির থেকে দু’ বছরের বড় ছিল স্নিগ্ধা। কিন্তু অনেক কষ্ট করে মণির সঙ্গেই হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিল স্নিগ্ধা ব্যাস ওখানেই ইতি!
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৯: যে-আঁধার আলোর অধিক

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৪: রবীন্দ্রনাথের ‘মুকুট’ ত্রিপুরার ইতিহাসাশ্রিত গল্প

পড়াশোনায় কোনওকালেই ভালো ছিল না। সাজগোজ নাচের অনুষ্ঠান এসব নিয়ে মেতে থাকতো! জুটমিলে চাকরি পাবার আগে কলেজে পড়ার সময় থেকেই দুলাল পাড়ার কালচারাল অনুষ্ঠানের অন্যতম হোতা! এই অনুষ্ঠানের রিহার্সাল এসব নিয়ে স্নিগ্ধা আর স্নিগ্ধার মা ছন্দার উৎসাহের অন্ত থাকতো না! দুলাল নাচের অনুষ্ঠানে ভাষ্যপাঠ করতো, জুটমিলের কাজের চাপে কখনও কখনও দুলালের ফিরতে দেরি হতো। স্নিগ্ধাদের বাড়িতে অনেক রাত পর্যন্ত রিহার্সাল চলত! স্নিগ্ধার মা’র স্বভাবচরিত্র নিয়ে পাড়ায় চাপা কানাঘুষো চলত! স্নিগ্ধার এক অবিবাহিত খুড়তুতো কাকা প্রায়ই বাড়িতে আসতেন অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা আসর চলতো। স্নিগ্ধার বাবা তখন যথেষ্ঠ অসুস্থ! সেই অসুস্থ মানুষটিও নাকিপ্রতিবাদ করতেন এবং রাগ করে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা পথ্য নিতেন না! অনেকে বলেন সাংসারিক অভিমানেই যতীন বাবু নিজেকে স্বেচ্ছামৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন!
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৫৩: আলাস্কার দক্ষিণে রয়েছে সেই মনোরম গ্লেন হাইওয়ে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৭০: বিচারক

গুজবের হাত-পা আছে, তারা আপন ইচ্ছেতে উড়ে উড়ে বেড়ায়। যতীন করের মৃত্যুর কিছুদিন পরেই স্নিগ্ধার মা ছন্দা পুরনো ছন্দে ফিরে এলেন। সেই অবিবাহিত খুড়তুতো কাকা আবার পুরনো নিয়মেই আসতে শুরু করেছিলেন! পরের ঘটনাটা বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ বলেই বাজারে চালু। স্নিগ্ধার এই অবিবাহিত কাকা বড়বাজারে ব্যবসার কাজে নিয়মিত যেতেন। সন্ধ্যের মধ্যে ট্রেনে করে চুঁচুড়ায় ফিরতেন। সেদিন শনিবার। সন্ধের ট্রেনে অত ভিড় নেই, ট্রেন চন্দননগর ছাড়ার পর তিনি সিট ছেড়ে কামরার দরজার ধারে গিয়ে হাওয়া খাচ্ছিলেন। কমবয়সী ছোকরাদের মত একেবারে দরজার ধারে নয় খানিকটা ভিতরে।
বাঁ হাত দিয়ে গেটের দিকে পিঠকরা সিটগুলোর ঠিক পিছনে যে ছোট্ট হ্যাণ্ডেল থাকে সেটা শক্ত করে ধরেছিলেন! ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে স্পিড নিতেই মনে হল যেন অদৃশ্য কেউ তাঁকে গেটের দিকে টানছে। তিনি বাঁ হাতের হ্যান্ডেলটাকে খামচে বারবার নিজেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না, ট্রেনযত স্পিড নিচ্ছে যত দুলছে ততই লোকটির বামহাত হ্যান্ডেল থেকে ছেড়ে যাচ্ছে তিনি মাথার কাছে জালের সামনের হ্যান্ডেল ধরবার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না। কথা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু পারছেন না সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করছেন চোখ বড় বড় হয়ে আসছে নিঃশ্বাস যেন আটকে আসছে লোকটি ক্রমশ অদ্ভুতভাবে ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরে পড়ে গেলেন।

এই গল্প বহু বছর পাড়ায় চালু ছিল। স্নিগ্ধা আর স্নিগ্ধার মা তারাপীঠ থেকে একদল তান্ত্রিক আনিয়ে সারাবাড়িতে তিনচারদিন ধরে নানা রকম কাণ্ডকারখানা করেছিলেন। তবে ওদের কোনও অসুবিধা হয়নি, শুধু স্নিগ্ধার জীবনে বোধহয় এরই প্রভাব পড়েছিল। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content