বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


এথেনা ইনফোটেক, এই অফিসটা কলেজ মোড় থেকে উইপ্রো টাওয়ারের দিকে গেলে ঠিক ‘রং দে বাসন্তী’ রেস্তঁরার পাশের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে কয়েকটা বাড়ি পরেই। লিফটে চেপে সিক্সথ ফ্লোর। ছোট অফিস কিন্তু এখানে রিশেপসনে এক দিদিমণি! অনেকটা অরুণা ইরানির মতো দেখতে, কিন্তু ললিতা পাওয়ারের মতো চশমা পরেন। দিয়া খুব পুরোনো হিন্দি ছবি দেখে তাই এঁদের চেনে। তার বন্ধু-বান্ধবরা এ সব শুনলে হাসে। এখনকার হিন্দি ছবি অবশ্য আশির দশকের মত হয় না। সেখানে পুরনো হিন্দি ছবির মতো ছাপমারা ভিলেন বা ভ্যাম্প থাকে না।
—আপনি ভিতরে যান!… মিস দিয়া সাহা!
ভাবনার সুতো স্মৃতির কাটাঘুড়ির সঙ্গে উড়ে গেল।
—ইয়েস ম্যাম।
—প্লিজ গো ইনসাইড, ডকুমেন্টস সব সঙ্গে আছে তো?
—হ্যাঁ, ম্যাম।
—ভিতরে ডানদিকে ঘুরে প্রথম ঘর! রিশেপসনের ঠিক পিছনে!
রাস্তায় নেমে একটা বড় করে শ্বাস নিল দিয়া! ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, তুমি শুনছো!’ বলার মতো কেউ নেই! আর মা এখন গ্যাস এজেন্সির অফিসে কাজে ব্যস্ত। নয় ফোনে বুকিং নিচ্ছে, নয় নতুন কানেকশনের ফর্ম ভরে দিচ্ছে। মোবাইল বন্ধ। এজেন্সির এখনকার মালিক খুব ট্যাঁকট্যাঁক করে।

ইন্ডিয়া ডিজিটাল হয়েছে, কিন্তু ডিজিটাল ফ্রডের আশঙ্কায় এখন বহুমানুষ অনলাইনে কাজকর্ম করা বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রথম প্রথম ফোন ব্যাঙ্কিং থেকে শুরু করে সবকিছু লোকে অনলাইনেই করতেন, মানে যারা পারতেন আর কি! কিন্তু এখন বিশেষ করে রিটায়ার্ড বয়স্কমানুষ আর অনলাইনকে বিশ্বাস করেন না । কোথা থেকে কে কী কলকাঠি নেড়ে দেবে, আর কষ্ট করে জমানো ব্যাঙের আধুলি খালি হয়ে যাবে! সুতরাং এখন আবার পুনঃমুষিক ভব’!
আরও পড়ুন:

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পর্ব-২: আকাশ এখনও মেঘলা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৯: কী ছিল চিঠিতে, উত্তর লিখতে গিয়ে উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের হাত কেঁপেছিল

বাবা যখন মারা গেলেন তখন দিয়া ক্লাস নাইনে পড়ে। বাবা ভীষণ সিগারেট খেত গোটা রাত কাশত। বারণ করলে শুনত না। লাংসে মারণ রোগ। ধরা পডার দু-মাসের মধ্যে সব শেষ। গ্যাস এজেন্সির মালিক বাবার পরিচিত, তিনি খুব সহৃদয় ভদ্রলোক ছিলেন। মাকে নিজে বাড়িতে এসে তাঁর এজেন্সিতে ডেক্সের কাজ দিলেন। ব্যবসাটা মেয়ের নামে করেছিলেন। স্ত্রী আগেই মারা গিয়েছেন। তিনি মারা যাবার পর মেয়েই এখন খাতাকলমে এজেন্সির ‘ওনার’। আর দেখাশোনা করেন তাঁর জামাই! বউ-ভাগ্যে স্বামী সেমি-মালিক! স্বাভাবিকভাবেই মালকিনের থেকে তার প্রতাপ প্রতিপত্তি বেশি হবার কথা।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৫: সুন্দরবনের পাখি — মাছরাঙা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০১: সরষের মধ্যে ভূত

দিয়াকে বিশেষ কিছু প্রশ্ন নয়। সাধারণ পড়াশোনা আর এইচ-আর সংক্রান্ত কথা বললেন। ইনি মানে এথেনা ইনফোটেক-এর সিইও রবীন চ্যাটার্জি। সম্ভবত অ্যাডমিনের লোক খুঁজছিলেন। হয়তো কেউ ছিলেন টাকাপয়সায় সমস্যা ছিল। বেটার অফার পেয়ে দুম করে ছেড়ে দিয়েছেন। ছোটখাট আইটি কোম্পানির মাইনে এতই কম, অনেকেরই পিএফ-এর সুবিধে নেই। চাকরি ছাড়লে পাওনা বলে বিশেষ কিছু থাকে না। নোটিশ পিরিয়ডের পাওনাটা বেশকিছু কোম্পানি দিয়েও দেয়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৪: শিকারী ও ‘শিকার’

যে গান যায়নি ভোলা— প্রাক জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য…/১

রবীন চ্যাটার্জি ইনফোসিসে প্রায় চারবছর ছিলেন, তারপর উইপ্রোতে আরও চার বছর কাজ করার পর এই স্টার্ট আপ চালু করেন। বেশ কয়েকবছর ওভারসিস ক্লায়েন্ট সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে। টেকনিক্যাল হেড ছিলেন। প্রজেক্ট ম্যানেজারের কাজ করেছেন। এঁরা প্রায় সকলেই বেশ কয়েকবছর বড় আইটি কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে নিজস্ব স্টার্টআপ শুরু করেন। একটা নিশ্চিত চাকরি সচ্ছ্বল রোজগার সেই সব ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে লাফ দেওয়ার জন্য প্রচুর সাহস লাগে, আত্মবিশ্বাস লাগে। রবীনবাবুর পক্ষে সেটা একটু সহজ হয়েছে তার স্ত্রী মালবিকার জন্য। মালবিকা চাকরি ছাড়েননি। উইপ্রোতেই আলাপ সেখানেই বিয়ে। তারপর স্ত্রী মালবিকার ভরসাতেই রবীনের ঝুঁকি নেওয়া।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০০: সন্দেহের তীরবিদ্ধ ভরতদের আজও খুঁজে পাওয়া যায়

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১৩: রাগ অনুরাগের বন্ধন, ডিএইচ লরেন্স ও ফ্রিডা

প্রথমদিনের মতোই লিফট থেকে বেরিয়ে লবি টপকে থেকে রাস্তায় পা দিয়ে গভীরভাবে একটা বড় শ্বাস নিল দিয়া। রাস্তার ধুলো এগরোলের ধোঁয়া পোড়াতেল মেশানো হাওয়া হলেও সামনের বড় গাছটার থেকে একটা সোঁদা সবুজ গন্ধ আসছে। আজ শনিবার। আজ দিয়া তার প্রথম মাসের মাইনে পেয়েছে। সে ভাবছিল মার জন্য কি একটা শাড়ি কিনে বাড়ি ফিরবে? মিষ্টি নিয়ে যাবে এক বাক্স? একবার কি অতনু সেনের অফিসে গিয়ে দেখা করে তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত? নাহ! সেটা বোধহয় একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে!

শনিবার দুপুর তিনটে আমরা অতনু সেনের গাড়িটা চিংড়িঘাটা দিয়ে বেরিয়ে বাঁদিকে মা ফ্লাইওভারের দিকে যেতে দেখলাম। একটানা চলে রবীন্দ্রসদন টপকে ফ্লাইওভার থেকে নেমেই একটু এগিয়ে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের আগের বাঁ হাতি রাস্তায় ঢুকে গেল। না, সেই রাস্তার শেষে বেল্ভিডিওর রোডে গিয়ে আর অতনু সেনের গাড়িতে দেখা গেল না। তার বদলে গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়েছে প্রেসিডেন্সি জেলের চত্বরে।—চলবে।

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content