বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫


( ১ )

TechSolution Kolkata। সেক্টর ফাইভে অফিস। কলেজ মোড়ে নেমে একটু এগিয়ে একটা রেস্তঁরা-কাম-পানশালার পাশ দিয়ে ঢুকতে হয়। খুব ভালো করে চেনা না হলে টেবিলে পড়ে থাকার রাবার ব্যান্ডের মতো খুঁজে পাওয়া যায় না। বারবার সামনে দিয়ে যাতায়াত করার পরেও গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। একসময় ধৈর্য হারিয়ে সাত সকালে ওই পানশালার দরজা ঠেলে ঢুকতে হয়। দরজা ঠেলতেই অবশ্যম্ভাবীভাবে একটা চিকেন চাপ আর বিয়ারের রাতভোর জমে থাকা ভ্যাপসা ককটেল গন্ধ নাকে আসবে।
একটা রংচটা মদ কোম্পানির বিজ্ঞাপন আঁকা টি-শার্ট পরে থপথপে মোটা একটা লোক। খসখসে চামড়া কুতকুতে চোখ মাথায় রোঁয়া খাড়া চুল। রাতের পালাগানের শেষে যাত্রাদলের অধিকারীর মতো বিধ্বস্ত অবস্থায় চড়া লাল রঙের সানমাইকার কাউন্টারে বসে আছে। দরজার ঠেলে জিন্স পরা কমবয়সী মেয়েটিকে ঢুকতে দেখে লোকটা জিভ বের করে অকারণে হাসলো। জলভরা বেলুনের মতো ছড়িয়ে থাকা পেটের পরের শরীরের নিম্নাঙ্গ আর দেখা যাচ্ছে না! ভাগ্যিস! পরনে কী আছে সেটা ঈশ্বর জানেন! মেয়েটি কিছু বলার আগেই লোকটি বলে উঠল—
—এখন বন্ধ তো!
—তাই?
মেয়েটির কথার মধ্যে লুকনো ঠাট্টা বুঝতে পেরে লোকটা আবার কালো ছোপ পড়া দাঁত বের করে হেসে ফেলল।
—আমি আসলে একটা ঠিকানা টেক…
টেক শুনেই টিকটক-এর মতো আঙুল তুলে লোকটা মেলার আলো জ্বলা রোবটের মতো সলিউশন দিয়ে দিল।
—বাঁয়ে গলি দিয়ে সোজা ঢুকে নদ্দোমা পেরোলে ডান দিকে সিঁড়ি। তিন তলা।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৮: কপোত-কপোতী

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৭: ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মহর্ষি পেলেন চরম দুঃসংবাদ

ছোট্ট অফিস। সেক্টর ফাইভ এর অন্যান্য লিফটওলা মোজাইক করিডোর মোটা ঘষা কাচের দরজাওলা অফিস নয়। সাধারণ একটা ছোটখাটো ফ্ল্যাটকে অফিস বানানো হয়েছে। দেওয়ালে লাগানো সাধারণ ব্যাকেলাইট সিটের উপর লেখা ‘টেক সলিউশন কলকাতা’। মোটামুটি এই ধরনের ছোটখাট সব অফিসের রিসেপশনে একজন মহিলা থাকেন, এখানে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ। দরজা দিয়ে মেয়েটিকে ঢুকতে দেখে তিনি ভীষণ অবাক।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৮: রামানুজ ভরত ও লক্ষ্মণ, আনুগত্যের প্রকাশে দু’জনেই অনন্য

গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১২: দর্দরজাতক

মেয়েটি ভাবে কী আশ্চর্য? এত বয়স পর্যন্ত এই লোকটি মেয়ে দেখেনি নাকি?
—বলুন?
—না মানে ইন্টারভিউ!
—আপনাকে ডাকা হয়েছিল? অ্যাপ্লিকেশন করেছিলেন?
—না
—তাহলে?
—অ্যাপ্লিকেশন পাঠিয়ে কোন উত্তর তো পাওয়া যায় না, সরাসরি কথা বলতে চলে এলাম, লিংকড-ইনে বিজ্ঞাপন ছিল একটা।
—ওখানে তো ঠিকানা ছিল না?
—আইটিতে কাজ করব আর আইডেন্টিটি বের করতে পারবো না এটা কি হয়?
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮১: ইষ্টদেবীরূপে মা সারদা

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৬: ‘রাজর্ষি’ অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন ‘বিসর্জন’ নাটক

ঠিক সেই সময় অফিসে ঢুকছিলেন এক সুঠাম ঝকঝকে যুবক। তবে সফল যুবকরা আজকের দিনে আর ২৫-২৬ নয়, তারা ৩৪-৩৫। রিসেপশনের মাঝবয়সী লোকটি উঠে না দাঁড়ালেও সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে দেখলেন। সেটা লক্ষ্য করেই তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি ঘুরে তাকাবার আগেই একটা পুরুষালী পারফিউমের হালকা সুবাস পেল। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই লক্ষ্য করল ভদ্রলোক থমকে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। এই মেয়েটি যে সাধারণের থেকে বেশি বুদ্ধিমান এবং চটপটে সেটা আমরা পানশালাতেই বুঝতে পেরেছি। এক মুহূর্ত বাজে সময় না দিয়ে শুধুমাত্র নিজের আন্দাজকে ভরসা করে মেয়েটি বলে উঠল—
—স্যার আমি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই?
“আমার সঙ্গে?” “কী ব্যাপারে?” এই সহজ পাল্টা প্রশ্নগুলো টপকে একটা তীক্ষ্ণ আচমকা প্রশ্ন
—আপনি কে?
প্রথমবার প্যাডেল করার আগেই সাইকেলের চেইন পড়ে যাওয়ার মতো ঝঞ্ঝাটে থতিয়ে যাওয়া উত্তর—
—আমি মানে দিয়া! দিয়া সাহা!
—আমায় চেনেন?
—না, তবে মনে হয় আপনি।
—দু’ মিনিট বাদে আমার ক্যাবিনে পাঠান!
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮২: সুন্দরবনের পাখি—টিয়া

মেয়েটির উত্তর শেষ হতে না দিয়েই মাঝবয়েসী লোকটিকে কথাটা বলে ঘরের দিকে হাঁটা দিলেন টেক সলিউশন কলকাতার ফাউন্ডার সিইও অতনু সেন! বড় বড় পা ফেলে দূরের খোলা জানালার আলোর দিকে অপসৃয়মান ঝকঝকে অতনু সেনকে দেখতে দেখতে দিয়া ভাবছিল, ঠিক সিনেমায় যেমন হয়।—চলবে।

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা, পরের পর্ব আগামী রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content