শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


নিয়ন্ত্রণ। অলঙ্করণ: প্রচেতা।

এই ঘটনার কথা বসুন্ধরা ভিলার মাত্র একজন ছাড়া কেউ জানতেন না। ক্লাবের সুনামের কথা চিন্তা করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ উপস্থিত সমস্ত গেস্টদের কাছে এই ঘটনার বাইরে প্রকাশ করতে মানা করেছিলেন। ক্লাবে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন সে কথা ভেবেই কর্তৃপক্ষের এই অনুরোধ উপস্থিত অতিথিরা মেনে নিয়েছিলেন। বসুন্ধরায় ভিলায় যিনি জানতেন তিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ। না আমার মা সুরঙ্গমা নন। ন’ কাকা তরুণকান্তিও নন। সানন্দাও নয়।
আসলে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া তেই প্রণয়ের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়েছিল বাবলির উপর আর সে একটা তুচ্ছ কারণে বাবলির গায়ে হাত তুলেছিল। যে কারণে বাবলি বসুন্ধরা ভিলা ছেড়ে যেতে চেয়েছিল। আমার মায়ের অনুরোধে যায়নি। প্রণয়ের পক্ষে এই দুর্ব্যবহারটা খুব স্বাভাবিক এজন্য কেউই বাবলির কাছে আলাদা করে কারণ জানতে চায়নি। কিন্তু শ্রীতমা জানতে চেয়েছিল। প্রণয় বেপরোয়া প্রণয় অবাধ্য, খারাপ ব্যবহার করে সবকিছু মেনে নেবার পরেও শ্রীতমা বুঝতে পারছিল না যে এমন কি ঘটল যার জন্য প্রণয় সরাসরি হাত তুলে বসলো। বয়সে বড় দিদির মত বলে বাবলি সেদিনের সব ঘটনা শ্রীতমাকে বলেছিল। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেছিল—

—আসলে প্রণয়ের জন্য আমার খুব করুণা হয়। সেজমা মানা করলো বাবা মানা করলেন সেই জন্য থেকে গেলাম। খানিকটা এই অর্ধোন্মাদ মানুষটার জন্যও থাকলাম। আসলে ও যে আমার গায়ে হাত তুলেছে সেটাও আমাকে মারেনি। ওর নিজেকে কষ্ট দিয়েছে নিজেকে মেরেছে। নিজের জেদ নিজের বেপরোয়া সিদ্ধান্তে যে কত বড় ভুল করেছে আর সেটা বাড়ির মধ্যে নয়। বাইরে। পাঁচটা লোকের সামনে। সেই ভয়ংকর ভুলটা যখন ওর মাথার মধ্যে আসছে তখন আর ও নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি। তাই আমাকে মেরেছে। কোথাও গিয়ে মুখ দেখাতে পারছে না। তাই ওই মানুষটার জন্য দয়া হল, করুণা হল। তাই ওকে ছেড়ে গেলাম না।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৫: প্রণয় যে ভীতু, কাপুরুষ বাবলির আর সেটা বুঝতে বাকি নেই

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫৪: একে একে

ইতিহাসে অনেক মহীয়সী নারীর কথা আমরা জানি। বসুন্ধরা ভিলার নারীরাও বিশিষ্ট বসুন্ধরা দত্তকে আমরা জেনেছি। স্বর্ণময়ীকে জেনেছি। আমার মা সুরঙ্গমাকে দেখেছি। কীরা কাকিমাকে দেখেছি। আমার বোন সানন্দাকে দেখেছি। আবার শ্রীতমার কাছ থেকে বাবলিকে অন্যভাবে দেখলাম চিনলাম জানলাম।

কিন্তু গৌরবের মনের মধ্যে কি ঘটছিল সেটা আমরা কেউ জানতেও পারেনি আন্দাজও করতে পারিনি। বাবা প্রায়ই বলতেন, গৌরবের মতো একটা জুয়েল ছেলেকে বসুন্ধরা গ্রুপ স্রেফ ভাগ্নে বলে পেয়ে গিয়েছে। বাবার বড় দাদার অনুরোধে ইউকের লয়েডস ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ও এককথায় চলে এসেছে। দাদা একদিন বলছিলেন মাইনে পার্কস এসব কিছু জিজ্ঞেস করেনি। কিছুদিন আগেই ওর সঙ্গে কথা বলছিলাম বলবে এই মুহূর্তেই ওর কাছে ইউকে এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেকগুলো অফার আছে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৭: সুন্দরবনের নদীবাঁধের ভবিতব্য

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৪: মা সারদার সন্তানসম শিষ্যের দেহরক্ষা

প্রণয়ের কথাটাকে প্রথমে গুরুত্ব দিলেও পরে মন থেকে প্রায় উড়িয়ে দিয়েছিল গৌরব। কিন্তু কি একটা অজানা কারণে মান্থলি মিটিংয়ে চিনুদাদা জানিয়েছিল, প্রণয় কে না জানিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের ফাইল প্রসেস না করে ইনসিওরেন্স কোম্পানিকে ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্ট ক্লিয়ারেন্স দেওয়াটা সেও ভালোভাবে নেয়নি। প্রণয়ের কি জানানো উচিত ছিল এবং তাকে বলা উচিত ছিল যে ফাইলটা আটকে রেখে সে ঠিক কাজ করেনি। কিন্তু তাকে বাইপাস করাটা কোম্পানির মধ্যে স্টাফেজ এর কাছে একটা ভুল বার্তা নিয়ে যাবে। যেটা কোম্পানির ইন্টিগ্রিটির পক্ষে ঠিক নয়। ব্যক্তিগতভাবে চিনুদাদার পদক্ষেপ আমার ভালো লাগেনি।

এই কথাগুলো মিটিংয়ে না বলে আলাদা করে গৌরবের সঙ্গে বলা যেত। কিন্তু এই ঘটনার যে এত গভীর প্রতিক্রিয়া হবে সেটা বুঝলে চিনুদাদা কখনওই এটা করত না। বড় জেজ্যামণির শরীর খারাপ থাকায় মেজ্যাঠামণি বিকাশকান্তি সেদিন রিভিউ মিটিং চেয়ার করছিলেন। আর এমনই দুর্ভাগ্য রিজিওনাল লেবার কমিশনে একটা মিটিংয়ে চিনু দাদার থাকার কথা ছিল তারকবাবু নিজে সেখানে থেকে চিনুদাদাকে গ্রুপের রিভিউ মিটিংয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমার স্থির বিশ্বাস বসুন্ধরা ভিলা এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ওরিয়ান বা কালপুরুষ তারক নিয়োগী সেদিন রিভিউ মিটিংয়ে উপস্থিত থাকলে পরিস্থিতি হয়তো সামলানো যেত। প্রণয়ের উপস্থিতিতে গৌরব চিনুদাদার সমালোচনা ভালোভাবে নিতে পারেনি। অত্যন্ত ধীরস্থির ঠান্ডা মস্তিষ্কের ছেলে গৌরব উঠে দাঁড়িয়ে জানিয়েছিল।
—আমি ইমোশনাল সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে হয়তো প্রসিডিওর ভুল করে ফেলেছি। গ্রুপের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে শাস্তি পেতে হবে।
রিভিউ মিটিংয়ের চেয়ারম্যান বিকাশ কান্তি দত্ত বাধা দিতে গিয়েও পারলেন না গৌরব না থেমে একই গতিতে বলে গেল—
—কোম্পানির নিয়মে এপ্রিল মাসের যে ইনক্রিমেন্ট হয়েছে সেটা আমার ক্ষেত্রে হবে না। ফাইন্যান্স এক্সিকিউটিভ হিসেবে আমি এখনই আমার ডিপার্টমেন্টকে আমার স্যালারি রিভিশনের অ্যাডভাইস করছি।
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৮: পুরীতে ‘নির্জন সৈকতে’র শুটিংয়ে একসঙ্গে চার চারটি শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন ছায়া দেবী

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫১: কচ, দেবযানী ও মহান শুক্রাচার্য— প্রেম, প্রতিহিংসা, উদারতায় অনন্য তিন দৃষ্টান্ত?

গৌরবের সিদ্ধান্তে সেদিন সকলে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। মনে মনে আনন্দ পেলেও প্রণয় কান্তি নিজেও এতটা আশা করেনি। সব শুনে বেশ রাতে বাবার কাছে ফোন এসেছিল তারক বাবুর কাছ থেকে। তিনি একটাই কথা বলেছিলেন। সাংঘাতিক কথা।
—বোধহয় ঝড় উঠলো।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

Skip to content