রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ঝড়ের অপেক্ষায়। ছবি: সত্রাগ্নি।

প্রণয়কান্তি আজ খুব খুশি। ভিতরের জমে থাকার সমস্ত রাগ সমস্ত অভিমান আক্ষেপ হিংসার বিষ সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে আজ। ক্লাবের কাউন্টারে বসে তরল আগুনে ভরা গ্লাস শেষ করছে সে। বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা গৌরব সেনগুপ্তকে এতখানি হতভম্ব হতে কেউ কখনও দেখেনি। আসলে তার সঙ্গে বসুন্ধরা ভিলার কেউ যে এ ভাবে কথা বলতে পারে সেটা গৌরব হয়তো ভাবতে পারেনি। আর এটাই প্রণয়কে অদ্ভুত একটা পাশবিক আনন্দ দিচ্ছে।
আজ এখনও তার চেনা পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা এসে জোটেনি। না হলে মনের সুখে আজ একটু জুয়া খেলতো প্রণয় কান্তি দত্ত। আজ তার প্রতি ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্না জুয়াতেও নিশ্চয়ই জিতিয়ে দিতেন তাকে। বহুদিন আগে একটা ক্লাবের দিওয়ালি পার্টিতে বাবলি গিয়েছিল সঙ্গে। প্রণয়ের ভালোরকম নেশা হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরের ভালোলাগাটুকু তখন কেটে গিয়েছে বাবলির। হম্বিতম্বি করলেও প্রণয় যে সারাক্ষণ হেরে যাওয়ার ভয়ে একজন ভীতু কাপুরুষ বাবলির সেটা বুঝতে বাকি নেই। তাই প্রণয়ের সঙ্গে কোন পার্টিতে গেলে সে ড্রাইভার ছাড়া যেত না। এমনিতেই গাড়িতে বাবলির ভয় তখনও ছিল এবং আজও কাটেনি। দিওয়ালির রাত প্রণয় যথারীতি জুয়া খেলছিল। বাবলির হ্যান্ডব্যাগে একটা ছোট্ট পার্সে তাদের বেডরুমের চাবি আর গাড়ির একটা এক্সট্রা চাবি থাকে। তাতে কিছু টাকাও রাখা থাকে। বাবলির বারণ না শুনে জুয়ার বাজি হারতে হারতে প্রণয়ের ওয়ালেটে থাকা সব টাকা শেষ। বাবলির কাছে এসে সে বাবলির পার্সটা চেয়ে নিয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪: গৌরবকে বসুন্ধরা ভিলার কারও কাছ থেকে শুনতে হল তারা বহিরাগত

এই দেশ এই মাটি, পর্ব-৩৬: সুন্দরবনের নদীবাঁধের হাল হকিকত

ক্লাবের মাঝখানে জাগলিং শো চলছিল বাবলি সেখানেই বসেছিল। মাঝে মাঝে ঘুরে তাকাচ্ছিল প্রণয়ের দিকে। প্রণয়ের সঙ্গের মদ্যপ বন্ধুদের আদিম উল্লাস শুনে আন্দাজ করছিল প্রণয় হারছে। কিন্তু পরিণতিটা যে কত ভয়ংকর হতে পারে সেটা বাবলি, ভাবতেও পারেনি। অনেকক্ষণ পর খেয়াল হল চেঁচামেচি বন্ধ হয়েছে। ফিরে দেখলেও প্রণয় কাত হয়ে চেয়ারে প্রায় অচৈতন্য। আর সেই চেয়ারের দিক থেকে রমেশ আগরওয়াল বলে প্রণয়ের বন্ধু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাবলি টেবিলের দিকে এগিয়ে আসছে। রমেশের সঙ্গে বাবলি মুখে আলাপ আছে। ছোটবেলা থেকে কলকাতায় বড় হয়েছে পরিষ্কার বাংলা বলতে পারে। কিছু লোকের মুখ চোখ দেখলেই শরীরের মধ্যে একটা অস্বস্তি হয় ঘেন্না করে। রমেশ সেরকমই লোক। যথেষ্ট বয়স কিন্তু এখনও বিয়ে করেনি। রমেশকে আসছে দেখি বাবলি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আর তার দৃষ্টি থেকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠলো- সেন্স নেই তো? জানতাম! ওই জন্যই আমি ওর সঙ্গে ড্রাইভার ছাড়া কোনও পার্টিতে আসি না। আমি ড্রাইভারকে ডাকছি।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৮: চল্লিশ পার হলেই নিরামিষ?

পরিযায়ী মন, পর্ব-১৮: পীঠস্থানের প্রতি-বেশিরা

মোবাইল বের করার জন্য ব্যাগে হাত রাখতে যেতেই রমেশ বাবলির হাতটা ধরে ফেলল। বাবলির পা থেকে মাথা পর্যন্ত আগুন ছুটে গেল। বাবলির নাক থেকে গরম নিঃশ্বাস বের হচ্ছে। জড়ানো গলায় রমেশ বলল—
—ওয়েট ওয়েট। গাড়ি তো আর তোমার নয় ম্যাডাম!
নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারে না বাবলি কথাগুলো কি সে ঠিক শুনল?
—হোয়াট ডু ইউ মিন?
— সেটাই তো বলছি। প্রণয় আমার কাছে শেষমেশ গাড়িটা বাজি ধরেছিল। অ্যান্ড হি লস্ট! মানা করলাম, শুনল না। নাও দ্য কী ইস উইথ মি!
একহাতে তখনও বাবলির কনুইটা ধরে আছে রমেশ আগরওয়াল। অন্য হাতে ব্লেজারের পকেট থেকে গাড়ির চাবি টা বের করে দোলাতে থাকে।
দাঁত ঘষটে বাবলি উত্তর দেয়
—আপনিও সেন্সে নেই মিঃ আগরওয়াল! আমার হাতটা ছাড়ুন!
—প্রণয় কান্তি দত্ত তোমাকেও বাজি ধরেছে এবং হেরেছে। ইয়োর বেডরুম কিস আর অলসো উইথ মি। তুমি সেন্সে রয়েছো। সুতরাং তুমি এর মানেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ। ন্যাচারালি আয় হ্যাভ এভ্রি রাইটস টু হোল্ড ইউর হ্যান্ডস বেবি।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫০: লক্ষ্মণ—ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭৯: কবির ভালোবাসার পশুপাখি

রমেশ আগরওয়াল এর মত লোকজন নিজেদের লেডি কিলার বলে মনে করে। কিন্তু বাবলি, দিল্লিতে পাঞ্জাবি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বড় হয়েছে। ভয় পেয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার মত বঙ্গ ললনা সে নয়। তাই একটাও কথা না বলে বাঁ হাত দিয়ে রমেশ আগরওয়াল-এর গালে সপাটে চড় কষিয়ে দিল। বাবলি এ যুগের দ্রৌপদী দুঃশাসনের হাতে অপমানিত হয়ে সখা কৃষ্ণের শরণাপন্ন না হয়ে নিজেকে রক্ষা করতে জানে। আচমকা এরকম একটা চড়ের আঘাতে টাল সামলাতে না পেরে নেশাগ্রস্ত রমেশ আগরওয়াল মাটিতে লুকিয়ে পড়ল। সারা ফ্লোরের লোক চমকে উঠল। ফ্লোর ম্যানেজার ছুটে এলেন। বাবলি তাকে জানিয়ে দিল—
—মিঃ দত্তকে একটু টেক কেয়ার করুন। আমি বাড়ি ফিরে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
মোবাইল ফোনে ড্রাইভারকে ধরে ক্লাব গেটে নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল বাবলি।—চলবে।

টানাপোড়েন। অলঙ্করণ : প্রচেতা।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

Skip to content