![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Barandala.jpg)
ছবি: সংগৃহীত।
১৫ এপ্রিল ১৯৩২ বিনয়কান্তি ও স্বর্ণময়ীর বিয়ে হয়েছিল বাংলা সন ১৩৩৯, ২রা বৈশাখ। আর বৌভাত হয়েছিল রবিবার ১৭ এপ্রিল। বাখুণ্ডার খুড়োমশাই তখন দেহ রেখেছেন, খুড়িমা বেঁচে। মা বসুন্ধুরার ইচ্ছে তাই খুড়িমা তার ছেলে বউমা-সহ খরচখরচা দিয়ে কলকাতার গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে এনে রেখেছিলো বিনয়। গুহ বাড়ির কর্তাবাবু গিরিজা শংকর গুহ সপরিবারে স্বর্ণময়ীদের বরানগরের বাড়িতে বরযাত্রী গিয়েছিলেন। কত্তা মা যাননি, বসুন্ধরার সঙ্গে গ্রে স্ট্রিটের বাড়িতে থেকে গিয়েছিলেন। বেনারস থেকে বাচ্চা মহারাজ আসতে পারবেন সেটা তিনি নিজেও ভাবেননি। ঠাকুরের কৃপায় বেলুড়মঠে মিশনের কি একটা জরুরি কাজে তাঁকে আসতে হল। সেই সুবাদে বৌভাতের সকালে এসে স্বর্ণময়ীকে আশীর্বাদ করে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে বেনারস থেকে কৈলাশজি আসতে পারেননি কিন্তু দুই ছেলে ছেলের বৌদের পাঠিয়েছিলেন। বিয়ের দিন গিরিজাশংকর গুহ একটা সোনার মেডেল-এর লকেট লাগানো হার দিয়ে স্বর্ণকে আশীর্বাদ করেছিলেন। জলপানি-সহ ম্যাট্রিক পাশ করার পর বিনয়কে দেওয়া সোনার মেডেলের মতোই দেখতে। সেই মেডেলে খোদাই করে লেখা ছিল অনেক কথা। স্নেহের বিনয়কান্তি এই স্বর্ণপদক-এর চেয়েও উজ্জ্বল হোক তোমার ভবিষ্যৎ। সদা বিজয়ী ভব। আশীর্বাদক গিরিজা শংকর গুহ বাখুণ্ডা ফরিদপুর। ক্লাইভ রোতে বিনয়কান্তির অফিস ঘরের দেওয়াল আলমারিতে সাজানো ছিল সেই স্বর্ণপদক। পরে অফিস ঝাঁ চকচকে হয়ে লোয়ার রডন স্ট্রিটে উঠে এল রিসেপশনের গোটা দেওয়াল জুড়ে অসংখ্য সার্টিফিকেট অ্যাওয়ার্ড কিন্তু সব কিছুর মধ্যমণি বহুবারের কর্তাবাবুর দেওয়া সেই সোনার মেডেল। স্বর্ণকে দেওয়া আশীর্বাদী হারের লকেটে একটাই কথা লেখা ছিল ‘সুখে থেকো’।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Basundhara-EP22.jpg)
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-২২: বিনয়কান্তি জানতেন, আত্মীয়-স্বজনের ভিড়ে শ্রাদ্ধ পর্যন্ত তনিমা থাকবে না
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Love-and-Relationships.jpg)
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১: প্রাক-কথন
গ্রে স্ট্রিটের বাড়ির পাশের একটা মাঠে ম্যারাপ বেঁধে লোকজনের আপ্যায়ন ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। তারাপদবাবু তখন অবসর নিয়েছেন। কিন্তু বিয়ের আগেরদিন থেকে বিয়ের পরদিন পর্যন্ত বিনয় তাঁকে সস্ত্রীক এনে রেখেছিল । স্বর্ণর বাবা অ্যাডভোকেট আনন্দমোহন বসুর এক মক্কেলের কাছেই লজের ব্যবসা ছিল। সেখানে খান পাঁচেক ঘর বুক করা হয়েছিল। তারই একটা তারাপদ বাবুদের থাকার ব্যবস্থা। পরিবেশনের দায়িত্বে অফিসের ইয়ং ব্রিগেড ভাঁড়ার সামলেছেন তারাপদবাবু। বউভাতের দিন সকালে তারাপদবাবুর সঙ্গে লোক দিয়ে গোটা শ্যামবাজার হাতিবাগান গ্রে স্ট্রিট অঞ্চলের ভিখারিদের পেট ভরে মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিল বিনয়কান্তি।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Pisach-pahar-EP-71.jpg)
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭১: সাইকেল ও জীবন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/02/Sarada-Devi.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫১: জয়রামবাটির যথার্থ রক্ষয়িত্রী
পিটারসন সাহেব বউভাতের রিশেপসনে স্বর্ণর হাতে একটা দামী হীরের নেকলেস দিয়ে হাসতে হাসতে বলে ছিলেন, ”আজ থেকে আমার দেখা সেরা রত্নটির মালিক তুমি। তাই তোমার কাছে এইসব হিরের নেকলেসের সত্যিই কোনও মূল্য নেই।’ এরপরেও উইলিয়ম পিটারসন কিছু টাকা বউভাতের রাতে আতসবাজি পোড়ানোর খরচ হিসেবে তারাপদবাবুকে দিয়ে গিয়েছিলেন। বিনয়কান্তি মানা করেছিলেন পরদিন আরও কিছু টাকা দিয়ে তারাপদবাবুকে বলেছিলেন বউভাতের ম্যারাপের তলায় আশপাশের সমস্ত গরিব মানুষকে মাছভাতের পঙতিভোজের ব্যবস্থা করতে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Panchatantra-EP46.jpg)
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/monsoon.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৪: পুণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
ঠাকুরদালানে স্বর্ণময়ীর শ্রাদ্ধাদির ব্যবস্থা হয়েছে ছেলেরা বসে একে একে মাতৃশ্রাদ্ধের করণীয় সারছে, নিজের ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় বসে দূর থেকে বিনয়কান্তি স্বর্ণময়ীর স্বর্গযাত্রা দেখছিলেন। আজ তিনি কারও সঙ্গে বার্তালাপ করেননি। আত্মীয়-অনাত্মীয় বাড়ির বিশিষ্ট কুটুম্বেরা বা সমাজের নানান ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মানুষজন। বিনয়কান্তি আজ ছুটি চেয়েছিলেন একা একা সারাটা দিন শুধু স্বর্ণময়ীকেই উৎসর্গ করতে। সংসারে সময় দিতে না পারার জন্যে কোনওকালে স্বর্ণর কোনও অভিযোগ ছিল না।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Lakshminath-Hemendra-Pragya.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯২: মহর্ষিদেব নাতজামাইকে দিয়েছিলেন সোনার কলম
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/06/Mahakavya-EP681.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৮: আনন্দের নির্বাসন থেকে উত্তরণের উপায়?
স্বর্ণ মনেপ্রাণে চাইত বিনয়কান্তির গরিমা যেন সারা জগতে ছড়িয়ে পড়ে কাগজেপত্রে লোকমুখে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব শহরের বিশিষ্টজনেরা যখন বিনয়ের প্রশ্নংসায় উচ্ছ্বসিত হতেন স্বর্ণর চরম আনন্দ চরম সুখের ক্ষণ ঠিক তখন। চোখ বুজে জগদীশ্বরকে প্রণাম জানাতেন আর উপলব্ধি করতেন এই অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষটি তাঁর স্বামী, তাঁর সন্তানদের পিতা। এ সব স্বর্ণই বিনয়কান্তিকে একান্তে বলেছেন। এইসব ভাবতে ভাবতে কী যে হল…
হঠাৎ তারকবাবুকে ডেকে পাঠালেন বিনয়কান্তি। —চলবে।
হঠাৎ তারকবাবুকে ডেকে পাঠালেন বিনয়কান্তি। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।