ছবি:সত্রাগ্নি।
উপহার
সুমনা ধর প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্থিতাবস্থা মানে স্ট্যাটাসকো বজায় রাখতে। উচ্চবিত্তেরা ‘ওপেন রিলেশনশিপ’ বা মুক্ত দাম্পত্যে থেকে এই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতেই অভ্যস্ত। বসুন্ধরা ভিলায় বড় হওয়ার তনিমার পক্ষে যা স্বপ্নেরও অতীত। স্ত্রী বা পুরুষ দু’জনেই তাঁদের মধ্যে তৃতীয় কারও উপস্থিতির কথা আন্দাজ করতে পারে। বলা হয় যে নারীদের ইন্সটিঙ্কট বা সহজাত অনুমান শক্তি পুরুষের থেকে বেশি। তা নয়। পুরুষের মধ্যে দ্বিচারিতা না থাকলে দাম্পত্য অস্বীকার করতে না চাইলে একজন পুরুষ-ও খুব সহজে দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে দিয়েই আসল সত্যিটা খুঁজে বের করে ফেলবে। তাঁর স্ত্রীর দোটানা তাঁর পালিয়ে বেড়ানো সবকিছু বুঝতে পারবে।
তনিমাও পেরেছিল। শ্বশুরমশাই চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত নিজে এসে বসুন্ধরা ভিলায় সকলের কাছে মার্জনা চেয়েছিলেন। এমনকি তনিমার কাছেও দুঃখপ্রকাশ করে গিয়েছিলেন। চন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রী বসুন্ধরা ভিলায় এসে, এক সকালে এক কাপড়ে ট্যাক্সি নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় চলে আসা তনিমার সঙ্গে একটু একা কথা বলতে চেয়েছিলেন। উত্তর না হবে সেটা জেনেও তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন তনিমা কী চায়?
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫১: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—পশুর, ধুধুল ও হাবল
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-২০: অনিরুদ্ধ চাইলেই সুমনাকে ছেড়ে নতুন বৌ নিয়ে সংসার করতে পারবে না
বসুন্ধরা ভিলার নিজের ঘরের জানলা থেকে নিচে ঘন সবুজ লনের দিকে চোখ রেখে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে ছিল তনিমা। তারপর জানলা থেকে ফিরে নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলেছিল—
—আমি এই সম্পর্কে সমস্ত রকমের ইতি চাই। আজ নয় যেদিন ও বাড়ি থেকে সকালে চলে এসেছিলাম সেইদিন থেকে।
—আমি এই সম্পর্কে সমস্ত রকমের ইতি চাই। আজ নয় যেদিন ও বাড়ি থেকে সকালে চলে এসেছিলাম সেইদিন থেকে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৫: বসু পরিবার-এ উত্তমকুমার দিনভর একটি শব্দই রিহার্সাল করেছিলেন, কোনটি?
মাত্র কিছুদিন হল তনিমা চক্রবর্তী বাড়িতে পুত্রবধু হিসেবে গিয়েছে। চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত বা তাঁর স্ত্রী এখনও বসুন্ধরা ভিলার এই মেয়েটিকে ভালোভাবে চিনে উঠতে পারেননি। এত সুন্দর নরম স্বভাবের মেয়ে যে দৃঢ়ভাবে এত কঠিন কথা বলতে পারে তা তাঁরা সেদিন আন্দাজও করতে পারেননি। তাঁরা জানতেন না যে বাড়ির মেয়েদের শরীরে বসুন্ধরা দত্তের রক্ত বইছে। সঙ্গে দুটো গাড়ি বোঝাই করে তাঁরা তনিমার বিয়ে এবং বৌভাতে পাওয়া উপহারের সমস্ত শাড়ি গহনা নিয়ে এসেছিলেন। তারা তনিমা সেইসব উপহার ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তনিমা, শ্বশুরমশাইয়ের পায়ে হাত রেখে বলেছিল—
—আমাকে ক্ষমা করবেন আমার কথায় দয়া করে দুঃখ পাবেন না। ভাববেন না এটা আমার ঔদ্ধত্য। এ বাড়ি থেকে যে গহনা দেওয়া হয়েছে সেটা আপনি আমার মাকে ফেরত দিয়ে দিন। আপনাদের বাড়ি থেকে পাওয়া সমস্ত গহনা আপনারা রেখে দিন। এ বাড়ি এবং ও বাড়িতে যা শাড়ি বা অন্যান্য যা কিছু আমি উপহার পেয়েছি। সেগুলো আমি নিতে পারবো না। আমি এই বিয়ের কোনরকম অস্তিত্ব আমার মনের মধ্যে রাখতে চাই না। এগুলো দয়া করে কোথাও দান করে দেবেন।
—আমাকে ক্ষমা করবেন আমার কথায় দয়া করে দুঃখ পাবেন না। ভাববেন না এটা আমার ঔদ্ধত্য। এ বাড়ি থেকে যে গহনা দেওয়া হয়েছে সেটা আপনি আমার মাকে ফেরত দিয়ে দিন। আপনাদের বাড়ি থেকে পাওয়া সমস্ত গহনা আপনারা রেখে দিন। এ বাড়ি এবং ও বাড়িতে যা শাড়ি বা অন্যান্য যা কিছু আমি উপহার পেয়েছি। সেগুলো আমি নিতে পারবো না। আমি এই বিয়ের কোনরকম অস্তিত্ব আমার মনের মধ্যে রাখতে চাই না। এগুলো দয়া করে কোথাও দান করে দেবেন।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
চন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত মনে মনে ভেবে এসেছিলেন যে পুত্রবধূ হিসেবে তিনি পরিবারের সম্পত্তির একটা অংশ লিখে দেবেন। কিন্তু তনিমার মানসিক দৃঢ়তা দেখে সেই প্রস্তাব করতে সাহস করলেন না।
বসুন্ধরা ভিলায় বিয়ে হয়ে যাবার পরেও সানন্দার মতো তনিমারও নিজস্ব ঘর ছিল। বিয়ের পরে সানন্দা যতবার এসেছে সে ঘরেই থাকতো। বিচ্ছেদ হবার পরেও মাঝেমধ্যে সে ঘরেই আসে কিন্তু সে বসুন্ধরা ভিলায় পাকাপাকি ভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে না। দাদু স্বয়ং বিনয়কান্তি দত্তকে সে জানিয়ে দিয়েছে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকাতে সে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে। এই একইভাবে আমার পিসিমণির ছোট ছেলে গৌরব মানে বুবু কোন দিন বসুন্ধরা ভিলায় রাত কাটায়নি। বিনয়কান্তিও কোনওদিন জোর করেননি।
বসুন্ধরা ভিলায় বিয়ে হয়ে যাবার পরেও সানন্দার মতো তনিমারও নিজস্ব ঘর ছিল। বিয়ের পরে সানন্দা যতবার এসেছে সে ঘরেই থাকতো। বিচ্ছেদ হবার পরেও মাঝেমধ্যে সে ঘরেই আসে কিন্তু সে বসুন্ধরা ভিলায় পাকাপাকি ভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেবে না। দাদু স্বয়ং বিনয়কান্তি দত্তকে সে জানিয়ে দিয়েছে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকাতে সে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে। এই একইভাবে আমার পিসিমণির ছোট ছেলে গৌরব মানে বুবু কোন দিন বসুন্ধরা ভিলায় রাত কাটায়নি। বিনয়কান্তিও কোনওদিন জোর করেননি।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯০: সাহেবের বেশ না-পরে ফিরেছিলেন সাহেবের দেশ থেকে
কোর্টকাছারি হয়নি। নিয়ম মেনে মিউচ্যুয়াল সেপারেশান হয়ে গেল। স্বাভাবিকভাবে অ্যালিমনি বা খোরপোশের কথা উঠতে পারে তাই তনিমা তার অ্যাফিডেভিটে উল্লেখ করেছিল তার কোনও খোরপোশ চাই না।
এই বিবাহবিচ্ছেদ মামলা শেষ হতেই তিন ছেলের মধ্যে ছোট অনিরুদ্ধকে নিয়মমাফিক সর্বমোট পারিবারিক সম্পত্তির এক পঞ্চমাংশের সম-অর্থমূল্য দিয়ে তাকে বাড়ি এবং ফার্ম ছেড়ে যেতে বলা হয়। তিন ছেলের তিনভাগ আর চন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রীর দুটি ভাগ। এরপর আর এই কাহিনিতে তাঁদের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তখন রঘুরামন কোথায়?—চলবে।
এই বিবাহবিচ্ছেদ মামলা শেষ হতেই তিন ছেলের মধ্যে ছোট অনিরুদ্ধকে নিয়মমাফিক সর্বমোট পারিবারিক সম্পত্তির এক পঞ্চমাংশের সম-অর্থমূল্য দিয়ে তাকে বাড়ি এবং ফার্ম ছেড়ে যেতে বলা হয়। তিন ছেলের তিনভাগ আর চন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রীর দুটি ভাগ। এরপর আর এই কাহিনিতে তাঁদের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তখন রঘুরামন কোথায়?—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।