বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


মা দুর্গা।

দাম্পত্যের সেই প্রথম দিন থেকেই তাই প্রণয়ের ওপর রাগ হবার সঙ্গে সঙ্গে বাবলির প্রণয়ের প্রতি সত্যি ভীষণ করুণা হয়। সে বারবার সব নির্যাতন সহ্য করেও প্রণয়কে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে। সে জানে বসুন্ধরা ভিলার কেউই প্রণয়কে পছন্দ করে না এবং তার যথেষ্ঠ সংগত কারণ আছে। কিন্তু এমন তো নাও হতে পারতো, বিয়ের পর তার জীবনটা তো স্বাভাবিক সুন্দর সুখ-আনন্দেমোড়া স্বপ্নের মতো হতে পারতো। এত ভয়ঙ্কর দূর্ভাগ্য দিয়ে তার কৈশোর শুরু হয়েছিল সেই যন্ত্রণার তো শেষ হতে পারতো। কিন্তু কেন তাকে ক্রমশ গরলপানে নীলকণ্ঠ করে তুলছেন ঈশ্বর?
কিন্তু এই যন্ত্রণা ক্রমশ আরও বাড়ল। খুব নিয়মিত না হলেও অরুণাভ’র সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হতো বাবলির। অরুণাভ নিজেই কয়েকবার বাবলির বরের সঙ্গে আলাপ করতে চেয়েছে। বাবলির সঙ্গে অরুণাভ হয়তো সেই কলেজের বন্ধুর মতোই মিশতে চেয়েছে। বিবাহিতা বান্ধবীর সঙ্গে পরকীয়া করার মতো বেপরোয়া বা বিকৃতমনা সম্ভবত কোনওটাই অরুণাভ নয়। তবে প্রণয়কে প্রথমবার বা বাইরে থেকে দেখেও তাঁর মনের ভিতরটা আন্দাজ করা যায় না। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। সবজি বা ফলের মতোই বাইরেটা দেখে বোঝা যায় না ভিতরটা ভালো না পোকাধরা। যেমন বাবলিকে দেখে কারও বোঝার উপায় নেই সে তার প্রতিদিনের যন্ত্রণা লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এটা বাবলির ভয়ের কারণ ছিল, অন্য কাউকে নয়, নিজেকেই ভয় পেতো বাবলি। নিজের কাছে নিজের হেরে যাবার ভয়।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৩৮: ক্ষত

শারদীয়ার গল্প: তখন বিকেল/৩

অথচ প্রণয়ের সব অবিচারের পরেও সে সব সহ্য করছে কেন? কিসের টানে বসুন্ধরা ভিলায় রয়েছে? অসহায় তরুণকান্তি? সেটা একটা বড় কারণ নিশ্চয়ই! কিন্তু সেটা কি একমাত্র কারণ? এ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চায় না বাবলি! তবু তাকে এ প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়! অন্য কেউ নয়। একা একা আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ প্রশ্ন বাবলিকে করে বাবলির প্রতিচ্ছবি।
আরও পড়ুন:

শারদীয়ার গল্প: গৌরী এল দেখে যা লো /১

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

এর মধ্যেই পুজো এসে গেল। বসুন্ধরা ভিলা সাজল বটে কিন্তু যেন প্রাণহীন সে আয়োজন। স্বজনহারিয়ে আত্মীয়েরা উৎসবে মাতবেন কী করে? বসুন্ধরা চলে যাবার বছর এমন হয়েছিল, স্বর্ণময়ী বলেছিলেন সে বার নিয়ম মেনে কেবল ঘটপুজো হবে। স্বর্ণকে বিনয়কান্তি বলেছিলেন
—তোমার মনে আছে স্বর্ণ, মা স্বপ্নে দেখেছিলেন লালপাড় শাড়ি পরা।
একজন বউ হাতে ডাব বসানো মঙ্গলঘট নিয়ে বসুন্ধরা ভিলার সদরদরজা দিয়ে ভিতরবাড়িতে এলেন। কিন্তু তিনি কোথায় যে গেলেন অনেক খোঁজাখুঁজি পরও মা যেন তার হদিস করতে পারলেন না। অনেক পরেভিতরবাড়িতে যে লম্বা উঠোন ছিল তার শেষমাথায় গিয়ে দেখেন ডাবশুদ্ধ সেই মঙ্গলঘট সেখানে বসানো আর তার চারপাশে গোল করে আলপনা দেওয়া।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭০: সুন্দরবনের পাখি: লাল কাঁক

পরদিন ভোরবেলা আমায় ডেকে মা সেই স্বপ্নের কথা বলে বললেন এ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করবেন। বসুন্ধরা ভিলার কল্যাণে এই পরিবারের সকলের কল্যাণে এই পুজোর আয়োজন। ঘটপুজো হলে বোধহয় মা সবথেকে বেশি দুঃখ পাবেন।

এবার স্বর্ণময়ী চলে গিয়েছেন অমৃতলোকে। সুরঙ্গমা বিনয়কান্তিকে একইভাবে বলেছিলেন এবার ঘটপুজো করার কথা। সেজবৌমাকে বিনয়কান্তি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বসুন্ধরার সেই পুরনো স্বপ্নের কথা। স্বর্ণময়ীকে বলা কথাগুলো।

সেই বার ঠাকুরদালানে বসুন্ধরার সুবিশাল ফ্রেমেবাঁধানো ছবি রেখে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। এ বার বসুন্ধরা আর স্বর্ণময়ীর ছবি রেখে পুজোর আয়োজন হল। খাওয়াদাওয়া হল। নিয়মমেনে পুজো হল। ইভেন ম্যানেজমেন্ট এর লোকজন ছুটোছুটি করে ভিড় সামলালেন। তবে এ বছরের জলসাতে তেমন কোন আকর্ষণ ছিল না। এমনিভাবেই পুজোর চারটে দিন কেটে গিয়ে বিজয়া দশমী এল। বরণ হল, সিঁদুরখেলা হল।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৪: অরাজকতার ফল ও একটি দুঃস্বপ্ন

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

প্রতিমা বিসর্জন শেষে শান্তিজল নিতে সকলে ঠাকুরদালানে এসেছেন। বিনয়কান্তিও এসেছেন। এই ক’দিনে মাত্র দু’বার তিনি ঠাকুরদালানে পা রেখেছেন। মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি আর সন্ধিপুজোয়। বাকী বোধন সপ্তমী অষ্টমী নবমীর সন্ধ্যারতি সব তাঁর ঘরের বারান্দায় বসে দেখেছেন। শান্তিজল শেষ হতেই দেবীঘটকে প্রাণাম করতে গিয়ে বিনয়কান্তি যেন হুমড়ি খেয়ে ঠাকুরদালানে পড়ে গেলেন। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content