শনিবার ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫


প্রায় গোটা শহর ভেঙ্গে পড়ল বসুন্ধরা ভিলার গেটের বাইরে। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে বালিগঞ্জ প্লেস আসার রাস্তাটা কার্যত অবরুদ্ধ। উল্টো দিকে ফার্ন রোডের দিক থেকেও একই অবস্থা। এই প্রথম বসুন্ধরা ভিলার গাড়ি বারান্দার নিচে ডাক্তাররা প্রেস কনফারেন্স করলেন। শহরের সিনিয়র ডাক্তারদের মেডিকেল টিম জানালেন, বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজের কর্ণধার বিনয়কান্তি দত্তের শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট অবনতি হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি পরলোকগমন করেছেন। সরকারি তরফে জানানো হল, তাঁরা প্রবাদপ্রতিম শিল্পোদ্যোগী বিনয়কান্তি দত্তের মৃত্যুতে রাজ্যের বিধানসভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।

বিনয়কান্তি দত্ত বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্সের বোর্ডে এবং কলকাতার বেশকিছু বেসরকারি স্কুল-কলেজের এক্সিকিউটিভ কমিটিতে বিশিষ্টজন হিসেবে আজীবন সদস্য ছিলেন। সেখানে ছুটি ঘোষণা করা হল। বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজের অধীনে কলকাতা শহর নানা রাজ্যের সমস্ত অফিসে কাজ বন্ধ রাখা হল। কলকাতা অফিসের কর্মীরা এজেন্সির সঙ্গে মিলিত হয়ে বিনয়কান্তি দত্তের শেষকৃত্যের আয়োজন করতে শুরু করলেন। দিল্লির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শোকবার্তা এল। রাজ্যের মুখ্যসচিব-সহ বিশিষ্ট কয়েকজন মন্ত্রী এসে বসুন্ধরা ভিলায় শোক জানিয়ে গেলেন। তবে এখনকার মতো গানস্যালুট দেবার রীতি তখন ছিল না। থাকলে নিশ্চয়ই বিনয়কান্তি দত্তের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হতো না।
এ বাড়ির যে কোনও কর্মকাণ্ডে যে মানুষটি নিঃশব্দে তাঁর দায়িত্ব পালন করে এসেছেন সেই তারক নিয়োগী আজ অক্ষম। বিনয়কান্তির শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল, এটা বাবু জানতেন। এ ভাবেই যে একদিন তাঁর জীবনপ্রদীপের আলো নিভে যাবে, সেটাও জানতেন এই বিচক্ষণ প্রৌঢ়। কিন্তু সত্যি সত্যি যখন যবনিকা পতন ঘটল, তখন তারক নিয়োগী আর সহ্য করতে পারলেন না। শিশুর মতো কাঁদতে কাঁদতে একসময় অজ্ঞান হয়ে গেলেন। মেডিকেল টিমের ডাক্তাররা দ্রুত তাকে সুস্থ স্বাভাবিক করে তুললেন। আচমকা এই বিপদের মুহূর্তে তাঁর শারীরিক দুর্বলতার বিষয়ে তারক নিয়োগী যথেষ্ট লজ্জিত হয়ে পড়েছিলেন। ক্রমশ নিজেকে সামলে নিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বিনয়কান্তি দত্তের ফুলে ঢাকা মরদেহের পায়ের কাছে বসে থাকলেন।

ইন্ডাস্ট্রিতে তারক নিয়োগীকে সকলে চেনেন। মহাকরণ থেকে লালবাজার হাইকোর্ট থেকে ভবানীভবন সর্বত্র তারক নিয়োগীর অবাধ যাতায়াত এবং পরিচিতি। বিশিষ্ট মানুষজন যাঁরা শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন তাঁদের অধিকাংশই তারক নিয়োগীর কাছে এসে তাঁর পিঠে হাত রেখে তাঁকেও সান্ত্বনা দিয়েছেন। তিনি বসুন্ধরা ভিলার কেউ নন কিন্তু এই শহরের এই রাজ্যের এই দেশের যত মানুষ বিনয়কান্তি দত্তকে চেনেন, তাঁদের একটা বড় অংশ বিনয়কান্তির ছায়াসঙ্গী তারক নিয়োগীকেও চেনেন। খুব সম্মানীয়জন হলে তারকবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াচ্ছেন তাঁদের হাত ধরে মাথা নুইয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুন:

বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৫১: প্রায়শ্চিত্ত

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৫: রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন মহর্ষিদেবকে

দু’দিন পর সকালবেলায় রবীন্দ্রসদনে বিনয়কান্তির স্মরণসভায় অনেক বিশিষ্ট শিল্পপতি এমপি এমএলএ সরকারি আমলা মন্ত্রী আমন্ত্রিত। বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স যৌথভাবে মিলে এই স্মরণসভার আয়োজন করেছেন। রবীন্দ্রসদনের উপর থেকে নিচে পর্যন্ত বিনয়কান্তি দত্তের একটা বিরাট অবয়ব। এর আগে কারও স্মরণসভায় এমনটা দেখা যায়নি। সভায় রাজ্যের মুখ্যসচিব বিধানসভার স্পিকার-সহ অতি বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত। পাদপ্রদীপের আলোয় মঞ্চের অনেকটা ভিতরে অন্ধকারের মধ্যে উজ্জ্বল বিনয়কান্তি দত্তের সুবিশাল পোট্রেট। এমনভাবে রাখা আছে যেন মঞ্চের মধ্যে শূন্যে ভাসছে সে ছবি। সামনে অসংখ্য প্রদীপ জ্বলছে। আগুন জ্বালানোর নিষেধ আছে তাই প্রদীপের আকারে জ্বলা আলো। নিচের বেদিতে অসংখ্য পুষ্পস্তবক মালা।

শহর ও রাজ্যের অতি বিশিষ্ট জনেরা সেই ছবির দু’পাশে ভি আকারের মতো সাজানো আসনে বসে আছেন। এমন এক মহতি সভার প্রথম বক্তা হিসেবে যাঁর নাম মঞ্চে ঘোষিত হল তিনি মঞ্চে ছিলেন না। তিনি ছিলেন দর্শক আসনে। নিজের নাম শুনে কয়েকমুহূর্ত বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন তারক নিয়োগী। প্রাথমিক বিস্ময় কাটিয়ে ধীরে ধীরে মঞ্চে এসে পোডিয়ামের মাইক টেনে বলতে শুরু করলেন তারকবাবু।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৭: পাঞ্চালীকে আশীর্বাদ করে আলিঙ্গনাবদ্ধ করলেন গান্ধারী

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৩: সুন্দরবনের পাখি—চড়াই

—আজ নিয়ে দ্বিতীয় বার এরকম থতমত খেয়ে গেলাম। আমাদের ক্লাইভ রো-র ছোট অফিস ছেড়েআমরা যখন লোয়ার রডন স্ট্রিটের ঝাঁ চকচকে নতুন অফিসে এলাম। একরাশ মানীগুণী লোকের মধ্যে আমার মতো একজন অতিসাধারণ কর্মীকে ফিতে কাটতে বলে বিকেডি এরকমই চমকে দিয়েছিলেন। আজও উপর থেকে হয়তো তিনি প্রভাব বিস্তার করছেন। আমি ওপার বাংলার লোক। উনিও যে ওপার বাংলার সেটা অনেক পরে জেনেছি। আমি পাবনা জেলার রাঘবপুর আর উনি ফরিদপুরের বাখুণ্ডা। পাবনা ইনস্টিটিউশনে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম। পরে পাবনা কলেজ বলা হত। জাতি-দাঙ্গায় আমার গোটা পরিবার খুন হয়ে যায় আমি একা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসি। বনগাঁয় এক আত্মীয়ের কাছে এসে উঠি। সকাল-সন্ধ্যা চাকরির চেষ্টা করতাম। কোনক্রমে ওরিয়েন্টাল ইন্সুরেন্স কোম্পানির এক এজেন্টের দালালির কাজ পাই । কিন্তু সারাদিন না খেয়ে ঘুরে ঘুরেও ক্লায়েন্ট পেতাম না, গাড়ি ভাড়াতেই পয়সা চলে যেত খাবার জুটত না। একটা চাকরির জন্য আমি তখন মরিয়া।

শুধু অফিসের লোকজন নয়, শহরের নানা স্তরের মানুষজন কলেজের কমবয়সী ছেলেমেয়েরা রবীন্দ্রসদন ভরিয়ে ফেলেছে, দোতলায় সিঁড়ির ধাপে ধাপে মানুষ বসে আছেন। প্রথম কয়েকটা রো-তে শহরের বিশিষ্ট মানুষদের জন্য জায়গা ছেড়ে খানিকটা অংশ বসুন্ধরা ভিলার সদস্যদের জন্য আলাদা করা ছিল সেখানে আমরা সকলে বসে। বাবু হঠাৎ কি ভেবে থমকে, চোখের চশমা খুলে-দুচোখ চেপে ধরলেন। বুঝলাম বাবু নিজের বাঁধ-না মানা আবেগকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। ঝাপসা হয়ে আসা চশমার মোটা কাচ রুমাল দিয়ে মুছে নিয়ে বললেন—
—আজ অনেক বিশিষ্ট মানুষ এসেছেন বিকেডির সম্বন্ধে বলবেন। আমি যা বলব সেসব আমার স্মৃতিকথা। আমি দেখছি হলে কোথাও একটুও দাঁড়াবার জায়গাও নেই, আপনাদের সকলের কাছে আমার একটা সবিনয় প্রশ্ন আছে। আমার এই ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা কি আমি আর বলব? আপনারা না বললে আমি কোনও দুঃখ পাবো না। তাহলে আমার পরবর্তী বক্তারা বলবার সুযোগ পাবেন, আপনাদের মতো আমিও তাঁদের কথা শুনতে পারব।
—আপনি বলুন স্যার! আজ আমরা আপনার কথাই শুনবো।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৫: শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষতায় বীরবিক্রম

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৭: ভাগ নুনিয়া, ভাগ

দোতলার জমাটবাঁধা অন্ধকার থেকে অনেকগুলো কমবয়সী যুবক-যুবতীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। মঞ্চ থেকে দুহাত উঁচু করে তারকবাবু তাদের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন। তারপর একটু থেমে আবার বলা শুরু করলেন—
—উইলিয়াম পিটারসন তখন লন্ডনে ছিলেন আমি ক্লাইভ রো-এর অফিসে বিকেডি-র সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।চাকরি খুঁজতে খুঁজতে তখন ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। সকাল দশটার সময় স্লিপ নিয়ে বেয়ারা গেল ফিরে এসে বলল সাহেব বলেছেন আজকে খুব ব্যস্ত অনেক দেরি হবে দেখা করতে। আমি কিন্তু ফিরে আসিনি। ক্লাইভের ছোট অফিস এখনকার অফিসের মত অত বড় রিসেপশন বা বসার জায়গা ছিল না। নিচের সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে টানা বারান্দা। পাশে পরপর ঘর আমি সেই বারান্দাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন দুপুর হয়ে গেছে । আমার মনে কোন ক্ষোভ নেই কারণ বিকেডি প্রথমেই জানিয়েছেন আজ তিনি ব্যস্ততার আছেন। অনেকটা সময় লাগবে তবু অপেক্ষা করছি। হঠাৎ কাঁধে একটা হাতের ছোঁয়া ঘুরে তাকাতে দেখলাম স্বয়ং বিনয়কান্তি দত্ত।

আমার কাছে মার্জনা চেয়ে বললেন, আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রেখেছি আসুন। আমি মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছি এ বার হয়তো উনি আমার ইন্টারভিউ নেবেন। কিন্তু নিজের অফিস ঘরে না গিয়ে পাশে লাগোয়া খাবারঘরে নিয়ে গেলেন আমায়। বললেন, বসুন সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তো! আমি বলেছিলাম স্যার আমার না খেয়ে খেয়ে উপোস থাকা অভ্যাস হয়ে গেছে। একদিন খেয়ে ফেললে পরের দিন আবার খিদে পেয়ে যাবে। উইলিয়াম পিটারসনের অনুমতি ছাড়া তো কিছু হবার নয় তাই উনি আমাকে এক মাসের টেম্পোরারি কাজে নিয়েছিলেন। এরপর বহুদিন কেটে গেছে আমাদের কোম্পানি তখন অনেক বড় হয়েছে তখনও অবশ্য ক্লাইভ রো-র অফিসেই আমরা বসি। একদিন বিকেডিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সেদিন আপনি আমাকে কাজটা দিলেন কেন আর ডেকে দুপুরে খাওয়ালেনই-বা কেন? বিকেডি বলেছিলেন ঋণশোধ করেছিলাম। আমি তো অবাক কারঋণ? কিসের ঋণ?

উনি বলেছিলেন, অনেকদিন আগে ঠিক একইভাবে পিটারসন সাহেব আমাকে এই কোম্পানিতে চাকরি দিয়েছিলেন। সেদিনও সাহেব খুব ব্যস্ত ছিলেন আমি ঠিক আপনি যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেদিন যখন আমি নিজের অফিস রুম থেকে লাঞ্চের জন্য খাবার ঘরে যাচ্ছিলাম সত্যি সত্যি সেদিন আমি আপনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি যে অপেক্ষা করছেন সেটাও মনে ছিল না। কিন্তু আচমকা দরজার ওপারে বারান্দায় আপনাকে দেখে আমার নিজের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি আবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি আমাকে দুপুরে খাইয়েছিলেন কেন ? বিকেডি বলেছিলেন আমাদের অভাব জিনিসটা সাহেবরা ঠিক বুঝতে পারেন না । খিদের জ্বালাটাও জানেন না। সাহেব সেদিন আমাকে খুব দামি চা বিস্কিট খাইয়েছিলেন। আমি খিদের জ্বালা সহ্য করেছি। তাই আপনাকে পেট ভরে খাইয়েছিলাম। উনি আমার সারাজীবনের খাবার ব্যবস্থা করে গিয়েছেন।
এরপরপ্রৌঢ় তারক নিয়োগী সেদিন আর কোনও কথা বলতে পারেননি। উইংসের পাশে তাঁকেধরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই সারাক্ষণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলেন সেই সত্তরোর্দ্ধ প্রৌঢ় মানুষটি। দাদুর মৃত্যুর পর বেশিদিন বাঁচেননি তারকবাবু । ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন:

শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭০: অনিশ্চিত ফলের পিছনে না ছুটে নিশ্চিত ফল-প্রদায়ক কাজের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত

এরপর বসুন্ধরা এবং…. এর শেষ দৃশ্যের প্রস্তুতি। যেখান থেকে আমি এই লেখা শুরু করেছিলাম সেই অসমাপ্ত লেখায় ফিরতে হবে এবার। বাবা গত এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত একটানা লিখে যাচ্ছেন বসুন্ধরা ভিলার আত্মকথা । অন্যলেখায় বাবার নামকরণ করে লেখা শুরু করতেন কিন্তু এই লেখায় কোন নামকরণ করেননি। মা জানতে চেয়েছেন—
—কী ব্যাপার নাম দাওনি কেন?
—এটা একজনের নয় অনেকের আত্মজীবনী। এত বছর কলম ঘষছি কিন্তু এরকমটা কখনও কিছু লিখিনি। লেখা শেষ হলে নাম ঠিক করব। অন্য সময় কিছুটা লেখার পর মাকে টেলিফোন করে লাইব্রেরি করে ডেকে বাবা লেখা শোনাতেন কিন্তু এই লেখার ক্ষেত্রে তা একবারের জন্যও করেননি। আর এমন গতিতে লিখছেন যেন পুজোসংখ্যার লেখা জমা দিতে হবে। রাতে মা হয়তো বলেছেন—
—কি ব্যাপার বলতো! তুমি তো এরকম নাওয়া খাওয়া ভুলে লিখতে না। এটা তো কোন ফরমায়েশি লেখা নয় ! তোমার এতো তাড়া কিসের?
—সময় বড্ড কম, অনেক কিছু লিখতে হবে।
—মানে?
বাবা নিজেকে সামলে বলেছেন—
—না না, কবে আবার অন্য কোন লেখার চাপ এসে যাবে তখন এই লেখাটা আর হয়ে উঠবে না!
—ও!

সেদিন রোববার বাবা কাকভোরে প্রায় সাড়ে চারটের সময় উঠে পড়েছিলেন,- মা জানতে চেয়েছিলেন —
—এত ভোরে কোথায় যাচ্ছ?
—লেখাটা পড়ে আছে, শেষ করতে হবে!
মা অনুযোগ করে বলেছিলেন
—আশ্চর্য বাবা রোববার একটু শুতেও দাও না!
—তুমি ঘুমোও না!
মা সাড়ে সাতটা নাগাদ স্নান সেরে নিজে হাতে বাবার কফি করে নিয়ে গিয়ে লাইব্রেরি ঘরে গিয়েছিলেন। ভেজানো দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে দেখলেন। টেবিলে ক্লিপবোর্ডের উপরে চশমা এবং খোলা কলম। খানিকটা লেখা হয়েছে, বাবা চোখ বুজে লেখার টেবিলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন। মা হেসে কফি নিয়ে গিয়ে বাবার পাশে টেবিলে ঠক করে কফি কাপটা রাখলেন।
—ভালো করে বিশ্রাম না নিলে কী লেখা আসে! নাও ওঠো কফি খাও!

এরপর বাকিটা আর মা কখনওই আমাদের বলেননি, আমরা লাইব্রেরি ঘরের কলিং বেলের শব্দ শুনেছিলাম একটানা। ভোরবেলা কলিংবেলের তীব্র তীক্ষ্ণএকটানা শব্দে সারা বসুন্ধরা ভিলা জেগে উঠেছিল। ছুটে এসেছিল লাইব্রেরি ঘরে। যেখানে সাহিত্যিক অমলকান্তি দত্ত তাঁর লেখার টেবিলে চিরবিশ্রামে আর তার পায়ের কাছে উদভ্রান্তের মতো বসে টেবিলে লাগানো কলিং বেলের বোতাম টিপে ধরে বসে আছেন সুরঙ্গমা।
 

(বসুন্ধরা এবং… খণ্ড ১, ২ ও ৩ -এর পরিসমাপ্তি)

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content