
ছবি: সংগৃহীত।
অকাট্য যুক্তি। বলাবাহুল্য এরপর অরুণাভ কেন কেউই আইন-আদালতের পথে যেতে চাইবেন না। পুলিশ তো এমনিতেই এই কেসটা নিয়ে আর এগোতে চাইবে না। চারদিকে যা ঘটে তাতে পুলিশের দম নেবার ফুরসত নেই। তারকবাবুকে দিয়ে যথাস্থানে খবর পৌঁছে দেওয়া হল পেশাগত কারণেই অরুণাভ এটা নিয়ে আর এগোতে চাইছেন না।
মা-বাবাকে বলেছিলেন—
—ওকালতি করলে কি তুমি বেশি রোজগার করতে?
—পাগল! হাবিজাবি মাথায় যা আসে তাই লিখি, লোকে সেটা ক্ষমাঘেন্না করে পড়ে। এটাই ঢের! জগদীশ্বরের কৃপায় আবার লোকে ভালোও বলে, তাই প্রকাশক আবার পরের বই ছাপেন। আইনের অত ধারা-উপধারা আমি মনেই রাখতে পারতাম না। রোজগার তো দূরের কথা ওকালতি অফিসের ভাড়াটাও জুটতো না!
মা-বাবাকে বলেছিলেন—
—ওকালতি করলে কি তুমি বেশি রোজগার করতে?
—পাগল! হাবিজাবি মাথায় যা আসে তাই লিখি, লোকে সেটা ক্ষমাঘেন্না করে পড়ে। এটাই ঢের! জগদীশ্বরের কৃপায় আবার লোকে ভালোও বলে, তাই প্রকাশক আবার পরের বই ছাপেন। আইনের অত ধারা-উপধারা আমি মনেই রাখতে পারতাম না। রোজগার তো দূরের কথা ওকালতি অফিসের ভাড়াটাও জুটতো না!
বাবার তীব্র অনুমানশক্তি বসুন্ধরা ভিলা বা বিনয়কান্তি দত্তের প্রভাব সব কিছু প্রণয়কে ঢালের মতো আড়াল করে রাখল। এই প্রথম প্রণয় বাবলিকে নিয়ে- দিল্লি হয়ে পুরো রাজস্থান কাটিয়ে ১৫ দিন বাদে বসুন্ধরা ভিলায় ফিরল।
বাবলিকে দেখে মনে হল নতুন বিয়ের পর যেন হানিমুন সেরে ফিরল। একথা বলা হয় যে প্রতিটি ঘটনার কার্যকারণ থাকে। ওদের দেখে মনে হলো অরুণাভ বাবলির জীবনে এসেছিল বাবলিকে আবার প্রণয়ের কাছে ফিরিয়ে দেবে বলে। অরুণাভ বাবলিকে একসঙ্গে দেখে প্রণয়ের হিংসা তাকে অপহরণ করার ছক তারপর সেই ঘটনা হাতের বাইরে চলে যাওয়ার মুহূর্তে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাড়ির কথায় নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঔদ্ধত্য ভুলে আত্মসমর্পণ। এই সব কিছু প্রণয়কে একেবারে বদলে দিল। সেই বদলটা বাইরের নয় ভেতর থেকে বদলে গেল প্রণয়কান্তি দত্ত।
বাবলিকে দেখে মনে হল নতুন বিয়ের পর যেন হানিমুন সেরে ফিরল। একথা বলা হয় যে প্রতিটি ঘটনার কার্যকারণ থাকে। ওদের দেখে মনে হলো অরুণাভ বাবলির জীবনে এসেছিল বাবলিকে আবার প্রণয়ের কাছে ফিরিয়ে দেবে বলে। অরুণাভ বাবলিকে একসঙ্গে দেখে প্রণয়ের হিংসা তাকে অপহরণ করার ছক তারপর সেই ঘটনা হাতের বাইরে চলে যাওয়ার মুহূর্তে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাড়ির কথায় নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঔদ্ধত্য ভুলে আত্মসমর্পণ। এই সব কিছু প্রণয়কে একেবারে বদলে দিল। সেই বদলটা বাইরের নয় ভেতর থেকে বদলে গেল প্রণয়কান্তি দত্ত।
আরও পড়ুন:

বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৪৬: পরামর্শ চায় অরুণাভ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০২: দ্বারকানাথের বেলগাছিয়ার বাগানবাড়ি
কিন্তু এতদিনের যে ভুল যে অন্যায় প্রণয় করেছে তার মাশুল তো তাকে দিতেই হবে। এক ভয়ংকর মাশুল দিতে হল তাকে।
ন-কাকিমা সুজাতার দাদা কর্ণেল শুকদেব বসুরায় তখন গলায় দূরারোগ্য ক্যানসার রোগে একেবারে জীবনের শেষপর্যায়ে। তাঁর একান্ত শেষ ইচ্ছা তিনি একবার দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীকে দর্শন করতে চান। প্রণয়রা যখন কলকাতায় ছিল না, তখন দিল্লি থেকে হঠাৎ ডাক্তার সমেত শুকদেব বসুরায় ও তার মেয়ে জামাই এলেন। এই বসুন্ধরা ভিলায় গেস্টরুমে এসে উঠলেন। দিল্লিতে নিজের বাড়ি হয়ে বাবলি প্রণয়কে নিয়ে রাজস্থান বেড়াতে গিয়েছে জানতে পেরে সুজাতা ভয়ংকর অশান্তি শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেকোনও কারণেই হোক আমার ন’ কাকা তরুণকান্তি মানুষটা বেশ কয়েক বছর যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যে অশান্তি এড়িয়ে যেতে তিনি চুপ করে থাকতেন। এখন যেন তার আর কোনও ভয় নেই। ন’কাকা তো অবশ্য জানেন না এর মধ্যে বাবলি আর প্রণয়কান্তির মধ্যের সমীকরণটা অনেকটা বদলে গিয়েছে। সেটা জানতে পারলে হয়তো এর পরবর্তী ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটতোই না।
ন-কাকিমা সুজাতার দাদা কর্ণেল শুকদেব বসুরায় তখন গলায় দূরারোগ্য ক্যানসার রোগে একেবারে জীবনের শেষপর্যায়ে। তাঁর একান্ত শেষ ইচ্ছা তিনি একবার দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীকে দর্শন করতে চান। প্রণয়রা যখন কলকাতায় ছিল না, তখন দিল্লি থেকে হঠাৎ ডাক্তার সমেত শুকদেব বসুরায় ও তার মেয়ে জামাই এলেন। এই বসুন্ধরা ভিলায় গেস্টরুমে এসে উঠলেন। দিল্লিতে নিজের বাড়ি হয়ে বাবলি প্রণয়কে নিয়ে রাজস্থান বেড়াতে গিয়েছে জানতে পেরে সুজাতা ভয়ংকর অশান্তি শুরু করেছিলেন। কিন্তু যেকোনও কারণেই হোক আমার ন’ কাকা তরুণকান্তি মানুষটা বেশ কয়েক বছর যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যে অশান্তি এড়িয়ে যেতে তিনি চুপ করে থাকতেন। এখন যেন তার আর কোনও ভয় নেই। ন’কাকা তো অবশ্য জানেন না এর মধ্যে বাবলি আর প্রণয়কান্তির মধ্যের সমীকরণটা অনেকটা বদলে গিয়েছে। সেটা জানতে পারলে হয়তো এর পরবর্তী ভয়ঙ্কর ঘটনাটা ঘটতোই না।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৭: রাতচরা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৪: শ্রীমার গৃহী ভক্তদের সন্ন্যাসদীক্ষা
দাদাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সাধারণভাবে একজন বোনের তার দাদার এই শারীরিক অবস্থায় যতটা মানসিক দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে থাকার কথা আমার ন-কাকিমার সুজাতার মধ্যে তার বিন্দুমাত্র ছিল না। কারণ একজন মানুষের ভালো খারাপ তার চারিত্রিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। যাইহোক দক্ষিণেশ্বর দর্শন করে এসে তারপর দিনের বিমানে অসুস্থ কর্নেল শুকদেব বসুরায় দিল্লি ফিরে যাবেন। মাত্র দুটো দিনের জন্য তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। যাবার আগে বাবলি ছিল না তাই আমার মা ন’কাকাকে হুইলচেয়ারে করে একতলার গেস্টরুমে নিয়ে গিয়েছিলেন। এজেন্সির লোকেরা থাকেন কিন্তু ন’কাকার তাদের সঙ্গে যেতে ভাল লাগবে না। তাই তাঁর সঙ্গে বাড়িরই কেউ থাকেন। গেস্ট রুমে রয়েছেন কর্ণেল শুকদেব বসুরায়। অসুস্থ মানুষ তাঁকে দেখে খুব কষ্ট হয়। যিনি তার মৃত্যুকে শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অনুভব করছেন তাঁর মানসিক স্থিতি আন্দাজ করা যায়। বিয়ের পরে একবারই ন’কাকা দিল্লিতে কর্নেল বসুর রায়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখনও প্রণয় হয়নি। সুজাতা সন্তানসম্ভবা হতে বসুন্ধরা ভিলার নিয়মমতো তাকে বাড়িতেই রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু সুজাতা কলকাতায় নয় দিল্লিতে গিয়ে চিকিৎসা ও সন্তান প্রসবের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বড়ঠাকুমা বসুন্ধরার পরামর্শে আমার ঠাকুমা স্বর্ণময়ী কোন বাধা দেননি। প্রণয়ের ছ’মাস বয়স পর্যন্ত সুজাতা দিল্লিতেই ছিলেন।
আরও পড়ুন:

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১৪: আমি তাইতে কি ভয় মানি!

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’
সেদিন ন’কাকাকে নিয়ে গেস্টরুমে ঢোকার পর ইশারায় কাগজ চেয়ে নিয়ে কর্নেল বসুরায় কিছু একটা লিখেছিলেন। ডাক্তার সে লেখা দেখার পর আমার মাকে বললেন—
—কর্ণেল বসুরায়, মিস্টার দত্তর সঙ্গে একা কথা বলতে চাইছেন।
ন’ কাকা তরুণকান্তি দত্ত সঙ্গে সঙ্গেই ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন
—আমি একা কথা বলতে রাজি নই। আমার এই বৌদি আমার জীবনের সব জানেন ওঁর সামনেই যা কথা বলার বলতে হবে।
—কর্ণেল বসুরায়, মিস্টার দত্তর সঙ্গে একা কথা বলতে চাইছেন।
ন’ কাকা তরুণকান্তি দত্ত সঙ্গে সঙ্গেই ঘোর আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন
—আমি একা কথা বলতে রাজি নই। আমার এই বৌদি আমার জীবনের সব জানেন ওঁর সামনেই যা কথা বলার বলতে হবে।
আরও পড়ুন:

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪৬: আলাস্কার আকাশে অহরহ ব্যক্তিগত বিমান ওঠানামা করে

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৫: ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা এবং চলচ্চিত্র
এর উত্তরে কথা বলতে না পারা কর্নেল শুকদেব বসুরায় দুহাত জড়ো করে মিনতি করেছিলেন আমার মা সুরঙ্গমা ন’কাকাকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ডাক্তারও ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। এরপর কাগজে লিখে কর্নেল সুকদেব বসুরায় ঠিক কী জানিয়েছিলেন সেটা আশ্চর্যভাবে মাকে ন’কাকা তখন জানাননি। জানিয়েছিলেন আরও কিছুদিন পর ন’কাকিমা সুজাতা প্রণয় বাবলি এবং আমার মা ও বাবাকে নিজের স্টুডিওঘরে ডেকে।
ন’কাকার এরকম ব্যবহারে মা-বাবা এমনকি কাকিমা সুজাতাও ভয়ংকর অবাক হয়েছিলেন। অচেনা তরুণকান্তিকে দেখে বাবলি ও প্রণয় দুজনেই বেশ ঘাবড়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তী মুহূর্তেই যে এক ভয়ংকর হতাশা তাদের গ্রাস করবে এটা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।—চলবে।
ন’কাকার এরকম ব্যবহারে মা-বাবা এমনকি কাকিমা সুজাতাও ভয়ংকর অবাক হয়েছিলেন। অচেনা তরুণকান্তিকে দেখে বাবলি ও প্রণয় দুজনেই বেশ ঘাবড়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তী মুহূর্তেই যে এক ভয়ংকর হতাশা তাদের গ্রাস করবে এটা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com