ছবি: প্রতীকী। সৌজন্য: সত্রাগ্নি।
।।উইংসের আড়ালে।।
ভোরবেলায় দরজা ধাক্কানোর শব্দে ধড়মড় করে উঠে বসে শিবানী। ভয়ে ভয়ে দরজা খুললো। অবাক হয়ে দেখল দরজা আসলাম দাঁড়িয়ে। খবর না পাঠালে কখনও আসলাম আসে না। আসলাম একটা খাম দিল। বলল আগের দিন রাতেই একজন এটা শিবানীজির নাম করে দিয়ে গিয়েছে। অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তাই আসলাম আর আসেনি। জরুরি কিছু হবে হয়তো সেই জন্য সকাল সকাল দিতে এসেছে। আসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজাটা বন্ধ করে খামটা খুলে ফেলল শিবানী। একটা ছোট কাগজ। হোটেলের প্যাড। তাতে রুম নম্বর ফোন নম্বর আর নাম লেখা। নাম দেখে শিবানী চমকে উঠল। সিংহানিয়া। এই হাতের লেখা তার খুব চেনা। তারমানে সিংহানিয়াজি এখন বম্বেতে। তার মানে কি মা কালী মুখ তুলে চাইলেন? মায়ের ছবিতে মাথা ছুঁইয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে নিল। জুহুতারা রোডে হোটেলে পৌঁছতে হবে। বহুদিন পর ট্যাক্সি নিল শিবানী। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে সিংহানিয়াজির কাছে পৌঁছতে হবে। বাঁচতে হবে তাকে।
এগ্রিমেন্টের পাঁচ হাজার টাকা আর মাসের বাড়িভাড়া দিয়ে সিংহানিয়া শিবানীকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে গেল। শিবানী গিয়ে উঠলো রিজেন্টপার্কের সেই পুরনো ফ্ল্যাটে। আগে শুনেছিল বাড়িটা নাকি ভাড়া যার ভাড়া সিংহানিয়া মেটায়। ভুল শুনেছিল। বাড়িটার মালিক সিংহানিয়া নিজে। তবে বেনামে কেনা। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ বহুকষ্টে জমানো বা ধারের টাকায় কেনা বাড়ি জমি সম্পত্তি নিজের নামে না হওয়া পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় দু’ চোখের পাতা এক করতে পারে না। অথচ পয়সাওয়ালা ক্ষমতাবান মানুষজন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অন্য লোকের নামে জমি বাড়ি গাড়ি সম্পত্তি করে রাখে। টাকার জোরে ক্ষমতার জোরে সে সম্পত্তি মার যাবার কোন সম্ভাবনাই নেই।
—শিবানী কলকাতার ছবিতে একটা দুটো ড্যান্স সিকোয়েন্সে নেচে তোমার চলবে না। বম্বের ক্যারিয়ারটা বলবার মতো কিছু হয়নি। ছবিতে সাইড রোলে এস্টাবলিশ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। এখন কলকাতায় কিছু নাটক হচ্ছে তাতে ক্যাবারে ড্যান্স থাকছে। আমি একটা প্রোডাকশনে টাকা লাগিয়েছি। মানুষজন ভিড় করে দেখতে আসছে। মোটামুটি ভালো পয়সা পাওয়া যাচ্ছে। তুমি এটা শুরু কর সেই সঙ্গে নাটকের ছোট ছোট রোলে অভিনয় করার চেষ্টা করো। এখনও তোমার চেহারা চটক যথেষ্ট ভালো। মনে হয় নাটকে তুমি টিকে যাবে।
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-৩০: ক্যামেরা স্টেডি হতেই শিবানী আউট অফ ফ্রেম!
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১০: সুন্দরবনের রক্ষয়িত্রী বনবিবি
নাচ দিয়ে শুরু করলেও শিবানী মনে প্রানে অভিনয় শেখার চেষ্টা করছিল। আসলে সে তো অভিনেত্রী হতেই চেয়েছিল ভেবেছিল নাচটা তাকে বাড়তি সুবিধে দেবে। একেবারে নর্তকী হয়ে বেঁচে থাকতে চায়নি। বম্বেতে তো ছাপ লেগে গিয়েছিল। এখানে যখন সুযোগ পেয়েছে তখন চেষ্টা তাকে করতেই হবে। পরিচালকের কথা খুব মানতো। নাচের সিন হয়ে গেলেও উইংসের আড়ালে দাঁড়িয়ে রাতের পর রাত পার্ট শুনতে শুনতে সংলাপ প্রায় মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। আচমকা একদিন সুযোগ এসে গেল।
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭: গৃহিণী সারদার প্রথম দক্ষিণেশ্বর আগমন
—শিবানীর মুখটা ডার্ক রাখিস বডিতে লাইট ফেলবি। ইন্টারভেলের পরে সেকেন্ড সিনে মিত্রার জায়গায় আজ ওর এন্ট্রি আছে।
পাখি সব করে রব, পর্ব-২: দুর্লভ পরিযায়ী পাখি ল্যাপউইং
পরিযায়ী মন, বর্ণময় ইংল্যান্ড: লন্ডনের অন্যতম আকর্ষণ বাকিংহাম প্রাসাদের রক্ষী বদল অনুষ্ঠান
পর্দার অন্তরালে কী কী পরিবর্তন পরিমার্জন রদবদল হতে থাকে সেটা নাটকের মজে থাকা মশগুল দর্শক বুঝতেই পারেন না। সেদিনও পারলেন না। আর এতদিন নজরের আড়ালে থাকা মিত্রার অতটুকু একটা সাধারণ চরিত্রকে অভিনয় গুনে একেবারে অন্যরকম করে মঞ্চে নিয়ে এলো শিবানী। প্রথম দিন প্রক্সি দিতে এসে বারবার হাততালিতে ভরিয়ে দিল প্রেক্ষাগৃহ। শিবানী এটাই চেয়েছিল সিনেমার ক্ষেত্রে। পারেনি। নাটক এসে পারল। শিবানী বুঝল যে এতদিন সে ভুল রাস্তায় ঘুরপাক খেয়েছে। মিত্রা যে একমাস অভিনয় করতে পারেনি শিবানী তখন প্রতি রাতে বিরতির প্রথমে নাচ সামলে বিরতির পরে মিত্রার চরিত্রে প্রক্সি দিয়েছে। নাটকের ডিরেক্টর পরিমল নাগ শিবানীকে ডেকে বললেন—
—শিবানী তুই কি নাচ ছেড়ে অভিনয়টাই করবি?
—আমি পারবো তো।
—পারছিস তো। মিত্রার জায়গায় লোকে তো তোকে নিয়ে নিয়েছে।
—আর মিত্রা ফিরে এলে?
—ফিরে এলে কী
—তখন কি হবে?
—তুই-ই করবি।
—আর মিত্রা? না না পরিমলদা নাচ ছেড়ে আমি সত্যি সত্যি অভিনয় করতে চাই। আপনাদের মতো গুরুর কাছে খুব ভালো করে অভিনয় শিখতে চাই। কিন্তু এই নতুন রাস্তায় পা দেবার আগে আমি কারও কাজ কেড়ে নিতে পারব না। কারও চোখের জল ফেলে আমার ভালো হবে না।—চলবে।
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-৩২
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com