সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


চুনী-পিকে-বলরাম ও যুবক সুনীল গাভস্কর। ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

।। ফুটবল ক্রিকেট নাটক পাড়া ।।

ছোটকা ক্রিকেটের পোকা। আর খেলার খবর ভীষণ খুঁটিয়ে পড়ত। তখনকার ক্রীড়া সাংবাদিকরা শুধু কলকাতার খবর লিখতেন না। সারাদেশে স্কুল লেভেলের ফুটবল বা ক্রিকেটে কোন আগামী তারকা উঠে আসছে তাদের খবরও লেখা থাকত। তাই সে সময় খেলাধুলোর জগতের লোকেরা যখন কলকাতা ফুটবলের চুনী-পিকে-বলরাম নিয়ে কথা বলছে, ছোটকা তখন স্কুল ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দেওয়া একটি নতুন ছেলের কথা বলছেন। ভারতে আসা ইংল্যান্ড স্কুল ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ছেলেটি ১১৪ রান করেছিল। পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়া শুরু হল। বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলতে নেমে চারটি টেস্টে ৩০৯ রান দু’ দুটো সেঞ্চুরি। রঞ্জি ট্রফি খেলছে। মাইসোরের বিরুদ্ধে মাত্র পাঁচটা বল খেলে শূন্য রানে আউট। পরের মাসে আবার সেঞ্চুরি রাজস্থানের বিরুদ্ধে ১১৪ রান। বাবা ক্লাব ক্রিকেটে নামী খেলোয়াড়। কাকা ভারতীয় টেস্ট খেলেছেন। ছোটবেলায় মা মীনার সঙ্গে ক্রিকেট খেলত সে। হাঁটু গেড়ে বসে মা ছেলেকে বল দিতেন। ছোট্ট ব্যাটসম্যান ব্যাট চালাত। একদিন সরাসরি মায়ের নাকে বল মেরে দিল সে। রক্তারক্তি কাণ্ড। মা কিন্তু একটুও বকেননি। ভালো করে জলে রক্তাক্ত নাক ধুয়ে ফেলে আবার খেলা শুরু করলেন। মায়ের এই ঘটনা চিরকাল তাকে সাহস যুগিয়েছে। আরও ছোট্টবেলায় জন্মের পরে পরেই বদলে যাচ্ছিল ছেলেটি। ভাগ্যিস এক কানে জন্মগত একটা ফুটো ছিল। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নারায়ণ মাসুরেকর দেখেই চিনতে পারলেন মায়ের পাশে শুয়ে রাখা অন্য কোন বাচ্চাকে। পাশের বেডে কানে ফুটোওয়ালা সেই বাচ্চাটিকে খেলতে দেখা গেল। বাচ্চাদের স্নান করাতে গিয়ে অসাবধানে পালটে গিয়েছিল সে। ১৯৭১এ ৬ মার্চ টেস্ট জীবন শুরু করার অনেক আগেই ছোটকা সুনীল মনোহার গাভাসকারের খবর রাখতেন।

আমার বড় দুই জেঠিমা যেভাবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রাশভারী হয়ে উঠেছিলেন আমার মা কিন্তু তেমনটা নয়। তাই আমার কাকাদের বা পিসিমণির কাছে মা খুব প্রিয়। তবে তার থেকেও বোধ হয় আমার খুড়তুতো জ্যাড়তুতো বা পিসির ছেলেদের কাছে মা বেশি আপনার। এমনকি, কীরা কাকিমার দুই মেয়ে রোজিন আর শ্যাননও মাকে খুব ভালোবাসে।

সিনেমা থিয়েটারের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সেকালে নিজেদের আড়াল করে রাখতেন। সাধারণ মানুষ তাঁদের ধরাছোঁয়ার নাগাল পেত না। তাই তাঁদের সেই আড়ালে রাখা জীবন নিয়ে ভক্ত-দর্শকের মনে এত কৌতূহল ছিল। রূপোলি জগতের নায়ক-নায়িকাদের সেই আড়াল-আবডালের লুকোচুরি সেই রহস্যময়তা কিছুদিন আগেও বজায় ছিল। কিন্তু যবে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা শুরু হল। তবে থেকে নায়ক-নায়িকাদের অস্তিত্ব সঙ্কট শুরু হল। তাঁরা আড়ালের পর্দা সরিয়ে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলেন সেই সঙ্গে শুরু হল সংখ্যার লড়াই। অনুগামী বা ফলোয়ারের সংখ্যার লড়াই। তারকারা কখন কে কোথায় কী করছেন? সকালে কী ব্রেকফাস্ট করলেন? কোন পোশাক পরলেন? মূহুর্তে ভক্ত-অনুগামীরা জেনে যাচ্ছেন। আর একেকটি এই সংবাদ-কণা হাজারে-হাজারে ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ সেই অগণিত ভক্ত মারফৎ রক্তবীজ দৈত্যের মতো আরও শতসহস্র হয়ে মিডিয়া সমুদ্রে আছড়ে পড়ছে। এতেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মানে বাড়ছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। উত্তমকুমার-সুচিত্রা সেনকে দেখা যেত না। তাই তাঁদের প্রেম দেখতে হাজারে হাজারে উৎসাহী তাঁদের জুটির এক-একটি ছবি দেখতে চার-পাঁচ-ছয়বার এসে হলে ভিড় করতেন। তাঁরা মলে বা হলে গিয়ে ছবির কথা প্রচার করতেন না। আজ দুনিয়াটা বদলে গিয়েছে। ১৯৭৫ সালে অমিতাভ বচ্চন দিওয়ার ছবির আকাশচুম্বী সাফল্যের জন্যে চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকের কল্পনায় দেখা অতিমানবীয় চরিত্রটিকে লক্ষ মানুষের মনে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে শুধু মন প্রাণ ঢেলে অভিনয় করেছিলেন। আলো পোশাক পরিচ্ছদ ক্যামেরা মাইক শুটিং দেখতে থাকা হাজার হাজার মানুষকে ভুলে গিয়ে তিলে তিলে নিজেকে বিজয় বর্মা করে তুলেছিলেন। আজ ২০২১-২২-এ সেই অমিতাভ বচ্চনকে একইভাবে পরিশ্রম করে ভালো অভিনয় করার সঙ্গে সঙ্গে ছবি প্রোমোশনে আসমুদ্র হিমাচল ছুটে বেড়াতে হয়। সকাল-সন্ধে অগুণিত নিউজ চ্যানেলে নাতি-নাতনির বয়সী সঞ্চালকের সামনে এসে নিয়ম করে প্রশ্নোত্তরে অংশ নিতে হয়। এ সবটাই যুগের চাহিদা। আর যদি রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্র ফেসবুক করতেন ব্যাপারটা কী রকম হতো ভাবতে ভাবতে লাইব্রেরি ঘরের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে সুবর্ণকান্তি।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-১৫: যিনি বিপদ ঘটান, বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ তিনিই দেখান

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৩: আচমকা রাতের পার্টিতে হাজির পুলিশ

গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!

খেলাধুলার মাঠে ছোটকার জড়িয়ে পড়াটা স্বাভাবিক ছিল। সে সময়টা আমাদের ফুটবলের গৌরবের অধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই ক্লাব ফুটবলে পাকাপাকি জায়গা করে নেওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় গুণের অনেকগুলোই কমলকান্তি’র ছিল। পারিবারিক ব্যবসায় কোনওরকম ভাবে অংশ না নিলেও কেকে একটা বাঁধা মাশোহারা পেতেন। তখনও জার্সির গায়ে স্পন্সরশিপের তালি লাগা শুরু হয়নি। কিন্তু ক্লাবগুলো বড় বড় সংস্থার আর্থিক সাহায্যের কথা প্রচার করত। বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিসও সেভাবেই ফুটবলকে উৎসাহিত করত। তখন জলসা খুব চালু। রাত জেগে লোকজন বড় বড় জলসাতে নামী শিল্পীদের গান শুনতে যেত। নামীদামি জনপ্রিয় চিত্রতারকারা সেই সব জলসার উজ্জ্বলতা ও উচ্ছলতা বৃদ্ধি করতেন। ছোটকা এমন সব জলসার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। মানে ছোটকার মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানি টাকা খরচ করত। বিনিময়ে হাজার হাজার দর্শকের ভিড়ে আমাদের বিজনেস হাউসের প্রবল প্রচার হতো। কোম্পানির অ্যাডভার্টাইজমেন্ট খাতে বছরে একটা মোটা টাকা খরচ হতো। আর খাতায়-কলমে না হলেও ছোটকা কোম্পানির অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করতেন।
আরও পড়ুন:

অজানার সন্ধানে, মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করে ছাড়েন চাকরি, দিন কাটে অনাহারে, কে এই ভারতের ফেভিকল ম্যান?

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৮: কোষার ভান্ডার ছররি থেকে কুঠাঘাট হয়ে কুরদার

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৪: মাছের বাজারের দুনিয়ায় আলিপুরের ‘নেট বাজার’ তালিকায় শীর্ষে

এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু এই জলসার সূত্রেই ছোটকার যোগাযোগ হল শ্যামবাজারের থিয়েটার পাড়ার প্রযোজকদের সঙ্গে। জনপ্রিয় চিত্রতারকারা তখন নিয়ম করে বৃহস্পতিবার সাড়ে ছটা শনি রবি ও ছুটির দিন তিনটে ও সাড়ে ছটায় শ্যামবাজার পাড়ায় নাটক করছেন। কাহিনি নাটকীয়তা আলো ও শব্দের মায়া জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীদের চোখের সামনে দেখতে পাবার আকর্ষণে শোয়ের পর শো হাউসফুল হতো। সঙ্গের দুর্দান্ত অভিনয়টুকু উপরি পাওনা বোনাস! সেটা তো যৌথ পরিবারের যুগ। স্বাভাবিকভাবে কুচোঁকাঁচা বাচ্চাদের বাদ দিলেও একএকটি পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব মিলিয়ে কমপক্ষে আট দশ জনের দল। বিয়েবাড়ি ভাইফোঁটা একসঙ্গে হবার এসব উপলক্ষ তো আছেই। এমনকী দুর্গাপুজোর মন খারাপের একাদশীর পর মন ভালো করা এইসব নাটক পারিবারিক পার্বণ হয়ে উঠেছিল।

স্বাভাবিকভাবে প্রথমদিকে শ্যামবাজারের নাটক অর্থলগ্নীর একটা উপায় হয়ে উঠলো। টালিগঞ্জের সিনেমায় যত টাকা লগ্নি করতে হতো তার থেকে কমে একেকটি নাটক প্রযোজিত হতো। আর সিনেমায় লগ্নি করার টাকা অনেকটা চোখ বেঁধে অন্ধকারে ঢিল মারার মতো। নামী তারকাদের নিয়েও কখন যে কোন ছবির নৌকো ফুটো হয়ে সলিল সমাধি নেবে সেটা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। নাটকের ক্ষেত্রে নামী অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মাস মাইনেতে কাজ করেন। নাটকের প্রযোজনার জন্য একটা বাঁধা খরচা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু নাটকের কাটতি না হলে চাকচিক্যের রদবদল করে বিজ্ঞাপন বাড়িয়ে মাঝপথেও নাটকের বিক্রি বাড়ানোর একটা চেষ্টা করা যেতে পারে। ছবি তো পরীক্ষায় লেখা খাতার মত। খাতা জমা পড়ে গেলে আর রদবদলের উপায় নেই। এই পরীক্ষা শব্দটা লেখার পরেই সুবর্ণর মনে হল এক্কেবারে হালে বোধহয় সেই উপায়টাও আছে। তবে সে বিতর্কিত প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬১: চাষাবাদ নিয়েও রবীন্দ্রনাথ ভেবেছেন

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৮: শুঁটকি মাছে কি আদৌ কোনও পুষ্টিগুণ আছে?

ইংলিশ টিংলিশ: ‘নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারা’ বা ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে’কে ইংরেজিতে কী বলে?

দাবা বা তাসের নেশা নাকি খেলা দেখতে দেখতে হয়। মদ গাঁজা বা সিগারেটের নেশাও তেমনি। আজকাল প্রায় শোনা যায় সার্টিফিকেট দেখে নাকি বন্ধুত্ব করা যায় না। যথার্থ কথা। বন্ধুত্ব বন্ধুত্বই হিসেব কষে পারিবারিক মান মর্যাদা দেখে মানে বায়োডাটা দেখে বন্ধুত্ব হয় না। কিন্তু চড়ুই-এর ঝাঁকে ফিঙে দেখা যায় কি? গায়ের রং তো উনিশ-বিশ। কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়লেও কাকে কোকিলে একসঙ্গে আড্ডা মারে না। নেহাৎ ঠেলায় না পড়লে বাঘে গরুতে তো একঘাটে জল খায় কি? তাই বন্ধুত্বে মনের, ভাবনার সহবতের মিল বা কম্প্যাটিবিলিটিটা ভীষণ জরুরি।

অনেকের মতো বসুন্ধরা ভিলার কমলকান্তি দত্ত বা ‘কে কে’ সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। ভুলে গিয়েছিলেন বলেই মঞ্চেপড়া মায়াবী আলোর পিছনের ঘন অন্ধকারের চটচটে আঠালো কালিমায় জেরবার হয়ে গিয়েছিল।—চলবে

ছবি সৌজন্য: সত্রাগ্নি

 

বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-১৭

অনেকে বলেন দাম্পত্যজীবনের অশান্তিই দূর্ভাগ্যজনক পরিণতির কারণ। তবে বিবাহোত্তর শান্তির খোঁজই দাম্পত্য-অশান্তির উৎস নাকি দাম্পত্য-অশান্তির কারণেই তাঁরা শান্তির সন্ধানে কিনা সেটা গবেষণার বিষয়। তাঁরা এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি নিজেদের মতো করে সামলে নিতে হয়ত জানতেন বা জানেন। ছোটকা সামলাতে পারেননি।

* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content