ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।
আগের সপ্তাহে আমরা অনিদ্রার সমাধান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ‘স্লিপ হাইজিন’ সংক্রান্ত কিছু কথা বলেছিলাম। আজ বাদবাকি সমাধান নিয়ে কিছু কথা বলব।
প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব সেটি হল অনিদ্রাজনিত সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা করার প্রবণতা অধিকাংশক্ষেত্রেই দেখা যায়। ঘুমোতে যাওয়ার আগে এবং ঘুমোনোর সময় তাঁরা ভীষণ সচেতন হয়ে যান এটা ভেবে যে, ‘আদৌ আমি ঘুমোতে পারব তো? যদি না পারি তাহলে কী হবে? তাহলে তো কাল সকালে যে যে কাজগুলো আমার করার কথা সেগুলো একটাও ঠিকঠাকভাবে করতে পারব না!’ প্রথমেই বলি ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঘুমোতে পারব কি না এটা না ভাবার চেষ্টা করুন। আপনি ঘুম নিয়ে যত বেশি সচেতন বা উদ্বিগ্ন হবেন ততই কিন্তু আপনার অনিদ্রার সমস্যা বাড়বে । বরং এভাবে ভাবতে চেষ্টা করুন ঘুম হলে হবে না হলে না হবে। ‘কী হবে বড়জোর? মরে তো যাব না আমার ঘুম না হলে’, কয়েদিন একটু সমস্যা হতে পারে। সমস্যাটার সম্মুখীন হয়েই দেখুন না কাটিয়ে উঠতে পারেন কি না সমস্যাকে? এইভাবে কিছুদিন ঘুম সম্পর্কে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে, বরং খানিকটা ক্যাসুয়ালভাবেই ঘুমোতে যান। দেখবেন কিছুদিনের মাথায় আপনার নিশ্চিতভাবে ঘুম আসতে শুরু করবে।
দ্বিতীয়ত, আমি আমার অনেক ইসমনিয়ার রোগীদের দেখেছি জোর করে তাঁরা ঘুমোনোর চেষ্টা করেন । চোখ বন্ধ করে বালিশ আঁকড়ে ধরে যতই ঘুমোনোর চেষ্টা করুন না কেন ওইভাবে জোর করে কিন্তু কখনওই ঘুম আসবে না। আমাদের অন্যান্য সহজাত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মতো ঘুমও আমাদের শরীরের একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া, সুতরাং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মতো ঘুমও হতে বাধ্য, কিন্তু জোর করে তা হওয়া সম্ভবপর নয়। যখন দেখছেন আপনার কিছুতেই ঘুম আসছে না, তখন জোর করে শুয়ে না থেকে বরং বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন। উঠে পড়ে টেবিলে বসে এমন কোনও গল্প বা উপন্যাস পড়ুন যা আপনার স্নায়ুর জন্য অনুত্তেজক বা হালকা রিল্যাক্সিং কোনও মিউজিক চালিয়ে মেডিটেশন করতে থাকুন। দেখবেন একটা সময়ের পর আপনার ঝিমুনি আসবে। ঝিমুনি আসারপর পর ধীরে ধীরে উঠেআলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ুন। দেখবেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ঘুমোতে গেলে, কোনওরকম জোরাজুরি ব্যতিরেকে আপনি নিজের থেকেই ঘুমিয়ে পড়বেন একসময়।
তবে উল্লেখ্য, এই অভ্যাসগুলির নিয়মিত চর্চায় থাকার পরেও যদি দেখেন অনিদ্রা পিছু ছাড়ছে না বা আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মের ক্ষতি হচ্ছে, খিদে কমে যাচ্ছে, ওজন কমে যাচ্ছে কিংবা আপনি হতাশায় ভুগছেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার সমস্যা আরও গভীরে। সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ জীবনে ফিরে যান।
যোগাযোগ: ৯৪৩৩২৯১৮৭৭