শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আগের পর্বে আমরা অনিদ্রার কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই পর্বে আমাদের আলোচনার বিষয় হল অনিদ্রার সমাধান। কয়েকটি বিষয় আলোচনার মধ্যে দিয়ে আমরা অনিদ্রার সমাধানগুলি একঝলকে দেখে নেব।

স্লিপ হাইজিন

আমরা অনেকেই একটি বিশেষ পরিভাষার সঙ্গে পরিচিত— ‘স্লিপ হাইজিন’। অধিকাংশ মানুষেরই কিন্তু স্লিপ হাইজিন পরিভাষাটি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। কী এই স্লিপ হাইজিন? স্লিপ হাইজিন বা ঘুমের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত দিকটিতে লক্ষ্য রাখার জন্য কিন্তু আমাদের নজর রাখতে হবে রাত্রে যেন আমাদের আহার হয় পরিমিত। অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে আমাদের শরীরের বেসাল মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি পায়, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হয় এবং ঘুমের বিঘ্ন ঘটায়। পাশাপাশি চা, কফি বা অ্যালকোহল জাতীয় উত্তেজক পানীয় রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে খেলে অবধারিতভাবে ঘুমের সমস্যা হবে। বিশেষত চা, কফি আপনি যদি ঘুমোতে যাওয়ার ছ-ঘণ্টার মধ্যে খান তাহলে কিন্তু অনিদ্রার সমস্যা বাড়তে বাধ্য। চা, কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে চেষ্টা করুন বিকেলের দিকে খেতে এবং খাওয়ার ছ-সাত ঘণ্টা পরে ঘুমোতে যেতে। সেরকমই অনেকে ভাবেন অ্যালকোহল হয়তো অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ঘুমের জন্য অ্যালকোহল পান করার অভ্যাস রীতিমতো নেশায় পর্যবসিত হয়, যার ফলে অনিদ্রার সমস্যা তো মেটেই না উপরন্তু বাড়ে। মনে রাখা প্রয়োজন অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ বা অ্যালকোহল পান—এই দুই অভ্যাসই কিন্তু অনিদ্রা বাড়ায় এবং অন্যান্য বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই নিজে থেকে উপযাচক হয়ে অনিদ্রার সমস্যা দূর করার জন্য ঘুমের ওষুধ খাওয়া বা অ্যালকোহল পান করার অভ্যাস কখনওই তৈরি করবেন না। এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে।

নির্দিষ্ট সময় মেনে ঘুমোতে যান

ঘুমোতে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে ঘুমোতে যান, অর্থাৎ আজ যদি আপনি রাত দশটায় শুতে যান এবং পরের দিন সকাল ছ-টায় ওঠেন তাহলে তার পরের দিনগুলোতেও সেই সময় অনুযায়ীই ঘুমোতে হবে আপনাকে। এই নির্দিষ্ট সময়চক্র মেনে ঘুমানোর পদ্ধতিকে বলা হয় স্লিপ সাইকেল। একটা নির্দিষ্ট স্লিপ সাইকেল মেনে চললে আপনার শরীর ও মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছবে, আপনার স্লিপ সাইকেল এবং আপনার শরীর ও মগজ প্রতিদিন সেইভাবেই কাজ করবে।

বিছানার ব্যবহার

আপনার বিছানা আপনি ব্যবহার করবেন কেবলমাত্র ঘুম বা যৌনক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। আজকাল অনেক বাচ্চাদের বা বড়দেরও দেখি বিছানায় বসে পড়াশোনা করতে বা ল্যাপটপ নিয়ে কাজকর্ম করতে। যে সংযোগসূত্রটি আপনার ঘুম এবং বিছানার মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্বন্ধ ও সংযোগ তৈরি করে, যার ফলে আপনি বিছানায় গেলেই আপনার মগজ আপনার শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত হতে বলে। আপনি যদি দিনের অধিকাংশ সময়টাই বিছানায় কাটান তাহলে পারস্পরিক সংযোগসূত্রটি নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

সামগ্রিক পরিবেশ

ঘুমোতে যাওয়ার আগে খেয়াল রাখুন আপনার ঘরের সামগ্রিক পরিবেশ যেন আপনার ঘুমের জন্য অনুকূল হয়। ঘরের তাপমাত্রা, আলো এবং শব্দ চলাচলের দিকটিতেও খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে মোটা পর্দা ব্যবহার করুন। পাশাপাশি ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করাটাও ভীষণ জরুরি। প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা এক্সারসাইজ করুন, দশ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে অনিদ্রার সমস্যা প্রায় নব্বই শতাংশ লাঘব হয়ে যাবে।

এই নিয়মগুলি প্রাথমিকভাবে মেনে চললেই কিন্তু আপনার অনিদ্রার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন অচিরেই এবং পেয়ে যেতে পারেন এক সুস্থ ও তরতাজা জীবন।

যোগাযোগ: ৯৪৩৩২৯১৮৭৭


Skip to content