বুধবার ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪


কান্যকুব্জপ্রদেশে গাধি নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর সত্যবতী নামে পরমাসুন্দরী একটি কন্যারত্ন ছিলেন। ভৃগুমুনির পুত্র ঋচীকমুনি সেই কন্যাটিকে প্রার্থনা করেন। গাধিরাজা ঋচীকমুনিকে বলেন, ‘হে মুনিবর যদি আপনি এমন হাজারটি ঘোড়া কনেপণ হিসেবে দিতে পারেন, যার কানের ভিতরের অংশ লাল আর বাইরের অংশ কালো, তবেই আমি আমার কন্যাকে আপনার হাতে সমর্পণ করব।” রাজার এমন এক অদ্ভুত প্রার্থনা সত্ত্বেও ঋচীকমুনি রাজার কথায় রাজি হলেন। ঋচীকের প্রার্থনায় বরুণদেব কনেপণ দেওয়ার জন্য এমন আশ্চর্য দ্রুতগামী অশ্ব দান করলেন ঋচীকমুনিকে। সেই কনেপণ দিয়ে ঋচীকমুনির বিবাহ হল। ঋচীক গাধিকন্যাকে পত্নী হিসেবে লাভ করে অত্যন্ত সুখে দিন কাটাতে লাগলেন। তারপর একদিন ভৃগুমুনি সস্ত্রীক এসে উপস্থিত হলেন। উদ্দেশ্য নিজের প্রিয় পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ করা।
অনেকদিন পর পিতার দেখা পেয়ে পুত্র অত্যন্ত খুশি হলেন। পিতাও পুত্রকে বিবাহিত দেখে প্রাণভরে আশীর্বাদ করলেন। পুত্রবধূ সত্যবতীও সেবা করে প্রসন্ন করলেন শ্বশুরকে। সত্যবতী ভৃগুমুনির প্রভাবের কথা বিলক্ষণ জানতেন। আর নিজের মায়ের গোপন ইচ্ছার কথাও ভৃগুমুনিকে জানিয়ে রেখেছিলেন। গাধিরাজার পত্নী সত্যবতীর মাতা কন্যাসন্তানের জননী ছিলেন। মনে মনে পুত্রসন্তানের ইচ্ছাও পোষণ করতেন। আর কন্যাকে জানিয়েছিলেন এই ইচ্ছার কথা। কন্যা বুঝলেন, এই সেই স্থান যেখানে বললে মাতারও ইচ্ছাপূরণ হতে পারে। পুত্রবধূর সেবায় সন্তুষ্ট ভৃগুমুনি অতিযত্নে তৈরি চরু পুত্রবধূর হাতে তুলে দিলেন। ভৃগুমুনি পাত্রের চরুকে দুভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। আর এও বলে দিয়েছিলেন, একটি অংশ সত্যবতীর আর অপরটি তাঁর মায়ের। সত্যবতীর মাতা ভুল করে সত্যবতীর ভাগের চরু ভক্ষণ করেন।
আরও পড়ুন:

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৫: পরশুরামের আশ্রমে এসে পৌঁছলেন পাণ্ডবেরা

হোমিওপ্যাথি: অর্শে কষ্ট পাচ্ছেন? রেহাই পেতে জেনে নিন কী করবেন, কী করবেন না

ডায়াবেটিস থাকবে দূরে, জেনে নিন কোন ফল কতটা পরিমাণে খাবেন, আর কোনটা খেতে হবে সাবধানে, দেখুন ভিডিয়ো

এদিকে, ভৃগুমুনি সত্যবতীর ভাগের চরুতে ব্রহ্মতেজ আর সত্যবতীর মায়ের অংশের চরুতে ক্ষত্রতেজ নিহিত করেছিলেন। চরু বদল হওয়ার সংবাদ যখন ভৃগুমুনির কানে পৌঁছলো তিনি প্রমাদ গুনলেন। ছুটে এলেন পুত্রের কাছে, সত্যবতীর কাছে। পুত্রবধূকে উদ্দেশ্য বললেন, ‘কল্যাণি! একি অনর্থ করেছো? এ ভুলের জন্য তুমি ব্রাহ্মণসন্তান লাভ করলেও সে হবে ক্ষত্রিয়ের মত আচরণকারী। আর তোমার মাতার পুত্র ক্ষত্রিয়সন্তান হওয়া সত্ত্বেও ব্রাহ্মণের মতো স্বভাববিশিষ্ট হবেন’।

একথা শুনে সত্যবতী অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে বারংবার ভৃগুমুনিকে অনুরোধ করতে থাকলেন, যেন তাঁর পুত্রটি ব্রাহ্মণাচারসম্পন্ন হন, সত্পথগামী হন। সত্যবতীর তীব্র ইচ্ছা বিফলে গেল না। ভৃগুমুনি বললেন, ‘তোমার ইচ্ছাই ফলপ্রসূ হবে। তোমার পুত্র মহাত্মা, সত্পথগামী হবেন। তবে পৌত্র ক্ষত্রিয়মনস্ক হবেন।’ মহাতেজা ভৃগুমুনির কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। যথাসময়ে সত্যবতীর একটি সন্তান জন্মে। সেই সন্তান জমদগ্নিনামে খ্যাত হন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে বেদাদিশাস্ত্র অধ্যয়ন করে বহু পণ্ডিততব্যক্তিকে অতিক্রম করেন। জমদগ্নিমুনির সন্তানই ছিলেন পরশুরাম। আর সত্যবতীর মাতাও যথাসময়ে সন্তানবতী হন। সত্যবতীর সে ভ্রাতা ছিলেন বিশ্বামিত্র। তিনি ক্ষত্রিয়বংশে জন্মেও ব্রহ্মজ্ঞানী হন।
আরও পড়ুন:

হাতে সময় কম? ধ্যান করতে চান বাড়িতেই? মনের মতো পরিবেশ তৈরি করুন এ ভাবে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১২: সে এক ‘বউঠাকুরাণীর হাট’ [১০/০৭/১৯৫৩]

ইংলিশ টিংলিশ: আজকে এসো দেখি Prefix আর Suffix কাকে বলে

এ তো গেল মহাভারতের বনপর্বের কথা। শান্তিপর্বেও পরশুরামের জন্মবৃত্তান্ত রয়েছে। সেখানে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে পূর্বশ্রুত পরশুরামজন্মবৃত্তান্ত বলছেন। তবে এই দুই গল্পের মধ্যে সামান্য ফারাক রয়েছে। শান্তিপর্বের আখ্যানটিতে কৃষ্ণ বলছেন, ভৃগুপুত্র ঋচীক পত্নী সত্যবতীর গুণে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর পুত্রের জন্য চরুপাক করেন। শুধু সত্যবতীর জন্যই নয়, ঋচীকমুনি সত্যবতীর মাতা অর্থাৎ নিজের শ্বশ্রূমাতার জন্যও চরুপাক করেন। শান্তিপর্বের আখ্যানে ভৃগুমুনির দেখা মেলে না। বাকি ঘটনা তার গতিতেই এগিয়েছে।
আরও পড়ুন:

বাইরে দূরে, পর্ব-৮ ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৮: এখানে এসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা…আবার সূর্য ডুবলে বাড়ি ফিরে যাই

খাই খাই: জিলিপি খেতে ভালোবাসেন? তাহলে আর দেরি কেন? ঝটপট বানিয়ে ফেলুন গরম গরম আনারসের জিলিপি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৪০: রবীন্দ্রনাথকে দারোয়ান ভেবে দৌড়ে পালিয়েছিল চোর

মুখে মুখে আখ্যানমালা বেড়ে চলে, এগিয়ে চলে আপনগতিতে। কখনও এসে পড়ে অতিরঞ্জন। একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না বটে, জমদগ্নি আর বিশ্বামিত্রের জন্মের নেপথ্যে কে রয়েছেন। ভৃগুমুনি নাকি ভৃগুপুত্র ঋচীকমুনি! তবে মায়েদের ছোট একটা ভুলের জন্য ক্ষত্রিয়ের বংশে জন্মেও বিশ্বামিত্র হলেন ব্রাহ্মণভাবাপন্ন আর জমদগ্নি বয়ে নিয়ে চললেন ক্ষাত্রতেজ যা তাঁর মধ্যে প্রকট না হলে চারিয়ে গিয়েছিল পুত্র পরশুরামের মধ্যে। এতটাই প্রবল ছিল সে তেজ যে একসময় ক্ষত্রিয়কুল নির্বংশ হয়েছিল এই তেজের প্রভাবে।

Skip to content