মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


বাগুইআটি থেকে দুই কিশোর নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে এক জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে বসিরহাটের মর্গে। অন্য জনের এখন পর্যন্ত কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ দুই কিশোরের নাম অভিষেক নস্কর (১৬) এবং অতনু দে (১৫)। বাগুইআটির আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অভিষেক ও অতনু দু’জনেই হিন্দু মহাবিদ্যাপীঠ স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। থাকে বাগুইআটির আট নম্বর ওয়ার্জে। জানা গিয়েছে, বাগুইআটির জগৎপুরের বাসিন্দা দুই কিশোর গত ২২ অগস্ট থেকে নিখোঁজ। পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগও দায়ের করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট চার জন সন্দেহভাজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। যদিও মূলচক্রীকে এখনও ধরা যায়নি বলে সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন:

শম্ভু, শম্ভু, শিব মহাদেব শম্ভু, খুদার ইবাদত যাঁর গলায় তাঁর আর কাকে ভয়?

গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে কাঁধে ঝোলা নিয়ে ঘুরে বেড়ান রাধা, ‘চলমান পাঠাগার’ তাঁর পরিচয়!

পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনায় পুলিশ সোমবার অভিজিৎ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তাঁকে জেরা করে আরও পুলিশ আরও তিন জনের খোঁজ পেয়েছে। সেই সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। গত ২২ অগস্ট নিখোঁজ দুই কিশোরকে মোটরবাইক কেনার নাম করে সত্যেন্দ্র চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলেন, শামিম আলি, শাহিন আলি এবং দিব্যেন্দু দাস। জানা গিয়েছে, তারা রাজারহাটের একটি বাইকের শোরুমে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে তারা সোজা বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়েতে ধরে এগিয়ে যায়। অভিজিৎকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, নিখোঁজ দুই কিশোরকে গাড়ির মধ্যেই ফাঁস লাগিয়ে খুন করেছে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, শুধু সত্যেন্দ্র, অভিষেক, অতনু নয়, গাড়িতে আরও কয়েক জন ছিলেন। চলন্ত গাড়ির মধ্যেই অভিষেক ও অতনুর গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়। এর পর, খানিকটা এগিয়ে রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে ছুড়ে ফেলা হয় একটি দেহ। আরও কিছুটা এগিয়ে আরেকটা দেহ ফেলা হয়।
সোমবার পুলিশ অভিজিতকে জেরা করে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার সব থানা এলাকায় খোঁজ নেওয়া শুরু করা হয়। এর মধ্যে বসিরহাট মর্গে তিনটি অশনাক্ত দেহের খোঁজ পায় পুলিশ। ওই তিনটি দেহের মধ্যে ওই দুই কিশোরের দেহ আছে বলে পুলিশ অনুমান করে। এর পর এক জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয়রা সত্যেন্দ্র চৌধুরীর বাড়িও ভাঙচুর করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৩ অগস্ট একটি দেহ পাওয়া যায় ন্যাজাট থানা এলাকায়। আর ২৫ অগস্ট আর একটি দেহ পাওয়া যায় হাড়োয়া থানা এলাকায়। অপহরণ করেই কি খুন? না কি অন্য কোনও রহস্য আছে? বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। দুই পড়ুয়াকে খুনের কারণ অবশ্য এখনও পরিষ্কার হয়নি। তবে দুই কিশোরকে কী ভাবে খুন করা হয়েছে তার কিছু কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যা রীতিমতো হাড় হিম করা। পুলিশ জানতে পেরেছে, দুই কিশোরকে তার পরিচিতরাই ‘অপহরণ’ করে খুন করেছে। অতনুর পরিবারের সঙ্গে সত্যেন্দ্র চৌধুরীর পুরনো সম্পর্ক। দুই বাড়ির একে অপরের পরিচিতও। তদন্ত চলছে।
পুলিশ সূত্রে এও জানা গিয়েছে, গত ২২ অগস্ট অতনু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেছিল। তর পরই সত্যেন্দ্রর তাঁকে ফোন করে। অতনুর পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, দশম শ্রেণির পড়ুয়া অতনু বাইক কেনার জন্য সত্যেন্দ্রকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু টাকা দেওয়া হয়ে গেলেও বাইক কেনা হয়নি। গত ২২ অগস্টই নাকি সত্যেন্দ্র নিজেই ফোন করে অতনুকে ডাকে বাইক কেনার জন্য। অতনু খুশি মনেই তুতো ভাই অভিষেককে নিয়ে সেই যে বেরোয়, তারা আর ফেরেনি।
আরও পড়ুন:

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৪: হরধনু ভঙ্গ করলেন দাশরথি

বরণীয় মানুষের স্মরণীয় সঙ্গ, পর্ব-৮: কবিগুরুকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল: কাননদেবী /৩

বসিরহাট থেকে যে কিশোরের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তার বাবা জানিয়েছেন, ‘‘আমার ভাগ্না গত ২২ তারিখ আমার বাড়িতে এসেছিল। দুজনে বিকেল ৩টে-৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরয়। মাঝে মধ্যেই ওরা দুজন এরকম বেরয়। আমি ওদের কোনও ফোনে পাইনি। মাকে ও ফোন করে বলে, ‘আমি আসছি।’ এই শেষ ফোন। আর ওদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়নি।
তিনি এও জানিয়েছেন, ‘নিউটাউন থানায় অভিযোগ জানাই। পুলিশ এর পর ওদের ফোন নম্বর ট্র্যাক করতে শুরু করে। এ সবের পাশাপাশি এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে মেসেজ আসে। ভাগ্নার বাড়িতেও ফোনে তাই বলা হয়। যদিও টাকা কোথায় দিতে সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। প্রথমে পুলিশ মনে করেছিল ওরা ঘুরতে গিয়েছে। কিন্তু দিন দশেকের পর ছেলের মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এর পর আমাদের ফোনেও অপহরণের মেসেজ আসে। সেই মতো এক কোটি টাকা দাবি করা হয়। ছেলের দেহ বসিরহাটের একটি পুকুরে পাওয়া গিয়েছে। যদিও ভাগ্নার দেহ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’’
এ প্রসঙ্গে বসিরহাট পুলিশ জেলার জোবি থমাস জানান, ‘‘দুই কিশোরের দেহ গত ২৩ অগস্ট এবং ২৫ অগস্ট ন্যাজাট এবং মিনাখাঁ থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেহ দুটি শনাক্ত করার জন্য একাধিক থানায় খবর দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে বাগুইআটি থানার পক্ষ থেকে জানান হয়, বাগুইআটি এলাকার দুই ছাত্রকে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা নিখোঁজ। মঙ্গলবার দেহ দু’টিকে তারাই শনাক্ত করেছে। সেই সঙ্গে বাগুইআটি থানা জানিয়েছে, দেহ দু’টি ওই নিখোঁজ দুই ছাত্রের।’’

Skip to content