শচীনকর্তা ও কিশোর। ছবি: সংগৃহীত।
‘পড়োশন’ ছবির শুটিং চলার সময় কিশোরের চরিত্র ‘বিদ্যাপতি’র সামগ্রিক প্রভাব বাকি সব চরিত্রের ওপর ব্যাপকভাবে পড়েছিল। এতটাই প্রভাব পড়েছিল যে, একসময় মেহমুদ ও সুনীল দত্ত বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তাঁদের মনে হচ্ছিল, কিশোরের ছায়ার তলায় তাঁরা যেন কিছুটা হলেও ফিকে হয়ে যাচ্ছেন। তাই বেশ কিছু সংলাপ ও দৃশ্যায়নে পরিবর্তন করা আবশ্যিক পড়ে। তবু কিছুতেই কিছু তফাত করা গেল না। ছবি মুক্তি পাওয়ার পর কিশোর দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে একজন পার্শ্বচরিত্র শুধু বাজিমাতই নয়, একেবারে কিস্তিমাত করে দিতে পারে।
তবুও যে কথা ঘুরে ফিরে আসছিল বারবার, অভিনয় নয় একাধারে গায়ক হওয়ার অদম্য ইচ্ছেই ছিল তাঁর। সে পথ যেন কিছুটা প্রশস্ত হল এ বার। ‘দূর কা রাহি’, ‘দূর গগন কি ছাওঁ মে’ প্রভৃতি ছবিতে তিনি আসলেন কিছুটা গম্ভীর চরিত্রে, মোদ্দাকথা যেমন মনমাতানো, নির্মল ও হালকা স্বাদের চরিত্রে তাঁর আনাগোনা ছিল, তার বাইরে। পর্দায় তাঁর এই রূপ কিছুটা অপছন্দ হল দর্শকের। ছবিও বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলল না।
তবুও যে কথা ঘুরে ফিরে আসছিল বারবার, অভিনয় নয় একাধারে গায়ক হওয়ার অদম্য ইচ্ছেই ছিল তাঁর। সে পথ যেন কিছুটা প্রশস্ত হল এ বার। ‘দূর কা রাহি’, ‘দূর গগন কি ছাওঁ মে’ প্রভৃতি ছবিতে তিনি আসলেন কিছুটা গম্ভীর চরিত্রে, মোদ্দাকথা যেমন মনমাতানো, নির্মল ও হালকা স্বাদের চরিত্রে তাঁর আনাগোনা ছিল, তার বাইরে। পর্দায় তাঁর এই রূপ কিছুটা অপছন্দ হল দর্শকের। ছবিও বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলল না।
এ ঘটনায় বেশ আঘাত পেয়েছিলেন কিশোর। কারণ, চেনা ছকের বাইরে কিছুটা পরীক্ষামূলক ভাবেই কাজটা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে এতেও হল এক শাপে বর। ততদিনে ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘আরাধনা’-র গান লোকের মুখে মুখে। সেই গতিবেগ কিছুটা কাজে লাগিয়েই তিনি আরও একাগ্র হলেন তাঁর প্লেব্যাক লক্ষ্যের দিকে। সে সময় স্ত্রী রুমা দেবীও তাকে সেই মর্মে এক চিঠি লিখিছিলেন যে, আর অভিনয় নয়, শুধু গানের দিকেই যেন তিনি মন দেন এ বার।
‘আরাধনার’র কথা যখন উঠল, তখন শচীনকর্তা ও কিশোর জুটির কিছু গল্প হওয়া অতীব প্রয়োজন। আগেই বলেছি, সন্ধেবেলা মুড়ি-চপ খাওয়ার মতোই এগিয়ে চলুক এই সহজ লোকের সহজ-সরল গল্প। ছোট থেকে সুযোগ পেলেই কিশোর সায়গল এবং শচীন দেব বর্মণের গান করে প্রশংসা কুড়োতেন লোকজনের থেকে। এ কথা অনেকেরই হয়তো জানা।
‘আরাধনার’র কথা যখন উঠল, তখন শচীনকর্তা ও কিশোর জুটির কিছু গল্প হওয়া অতীব প্রয়োজন। আগেই বলেছি, সন্ধেবেলা মুড়ি-চপ খাওয়ার মতোই এগিয়ে চলুক এই সহজ লোকের সহজ-সরল গল্প। ছোট থেকে সুযোগ পেলেই কিশোর সায়গল এবং শচীন দেব বর্মণের গান করে প্রশংসা কুড়োতেন লোকজনের থেকে। এ কথা অনেকেরই হয়তো জানা।
আরও পড়ুন:
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-8: চলতি কা নাম কিশোর
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৬: অবশেষে চার হাত এক হল, পঞ্চম-আশা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুরু করলেন দ্বিতীয় ইনিংস
তো কিশোর যখন বম্বে পাড়ি দিয়েছিলেন রুপোলি পর্দা এবং পর্দার পিছনে খ্যাতি অর্জনের জন্য তখন, পিতৃস্থানীয় গুরু শচীনকর্তার সঙ্গে দেখা করার লোভ সামলাতে পারলেন না কিছুতেই। দেখা করার পর যখন কিশোর বর্মণবাবুকে তাঁর নিজের কিছু গান শোনালেন, তা শুনে উচ্ছ্বসিত শচীনকর্তা প্রথম দিনেই তাঁকে দিয়ে তাঁর ছবিতে গান গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। সে সময় পাশে হাফ প্যান্ট পরে হারমোনিয়াম বাজাচ্ছিলেন আমাদের সবার প্রিয় পঞ্চমদা।
সে যাই হোক, এরপর ‘বাহার’, ‘বাজি’, ‘ফান্টুশ’ ছবিতে শচীনকর্তার সুরে কিশোরের গান সুপারহিট হল। কিশোরের গায়ক স্বত্তার পিছনে এসডি বর্মণের অনস্বীকার্য অবদান। কিশোর এ কথা বারবারই স্বীকার করেছেন। তাঁদের মধ্যে মজারও অন্ত ছিল না। সঙ্গীতঅন্ত প্রাণ বর্মণবাবু কখনও বা সকাল ছয় টায় আবার কখন রাত বারোটায় কিশোরের বাড়ির সামনে এসে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে চিৎকার করে বলতেন, ‘আরে ও কিশোর, ঘুমোচ্ছ নাকি। সে যাক, বাদ দাও। একটা টিউন বেঁধেছি। কেমন হয়েছে বলতো, একবার গলা মেলাও তো দেখি।’
সে যাই হোক, এরপর ‘বাহার’, ‘বাজি’, ‘ফান্টুশ’ ছবিতে শচীনকর্তার সুরে কিশোরের গান সুপারহিট হল। কিশোরের গায়ক স্বত্তার পিছনে এসডি বর্মণের অনস্বীকার্য অবদান। কিশোর এ কথা বারবারই স্বীকার করেছেন। তাঁদের মধ্যে মজারও অন্ত ছিল না। সঙ্গীতঅন্ত প্রাণ বর্মণবাবু কখনও বা সকাল ছয় টায় আবার কখন রাত বারোটায় কিশোরের বাড়ির সামনে এসে গাড়ির হর্ন বাজিয়ে চিৎকার করে বলতেন, ‘আরে ও কিশোর, ঘুমোচ্ছ নাকি। সে যাক, বাদ দাও। একটা টিউন বেঁধেছি। কেমন হয়েছে বলতো, একবার গলা মেলাও তো দেখি।’
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১২: আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৫: টনিক খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো?
‘তিন দেভিয়া’, ‘গাইড’, ‘আরাধনা’, ‘চুপকে চুপকে’ আর কত নাম যে নেওয়ার আছে তাঁদের মেলবন্ধনের, তার হিসেবে মেলানো মুশকিল। ‘মিলি’ ছবির সঙ্গীত গ্রহণের সময় শচীনকর্তা বেশ অসুস্থ। তাঁকে চলেও যেতে হল ছবি মুক্তির কয়েক মাসের মধ্যেই। সে সময় মর্মব্যাথী কিশোরের গলায় তাই বোধহয় ‘বড়ি সুনি সুনি হ্যায়’ এক অন্য মাত্রা পেয়েছিল।
আবার কোনও এক সময়ে ফিরে আসা যাবে জুনিয়র বর্মণ পঞ্চম-কিশোরের ঝংকার জুটির কথায়। কিছু আগে কথা উঠেছিল কিশোরের প্রথম স্ত্রী রুমা দেবীর। ১৯৫১ সালে তাঁদের বিয়ে নিয়ে ঘোরতর অমত ছিল কিশোরের পরিবারের। মুক্ত ও স্বাধীন ব্রাহ্ম সমাজ মনস্ক রুমা দেবী এবং আপাত গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের থেকে আসা কিশোরের বিয়েতে আপত্তি ছিল দাদামণিরও। যদিও পরে সময়ের সঙ্গে সে-সব গ্রহণ করা হয় সহজ ভাবেই।
আবার কোনও এক সময়ে ফিরে আসা যাবে জুনিয়র বর্মণ পঞ্চম-কিশোরের ঝংকার জুটির কথায়। কিছু আগে কথা উঠেছিল কিশোরের প্রথম স্ত্রী রুমা দেবীর। ১৯৫১ সালে তাঁদের বিয়ে নিয়ে ঘোরতর অমত ছিল কিশোরের পরিবারের। মুক্ত ও স্বাধীন ব্রাহ্ম সমাজ মনস্ক রুমা দেবী এবং আপাত গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের থেকে আসা কিশোরের বিয়েতে আপত্তি ছিল দাদামণিরও। যদিও পরে সময়ের সঙ্গে সে-সব গ্রহণ করা হয় সহজ ভাবেই।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯: ঠাকুরের ঘরণী সারদার গার্হস্থ্য জীবন
কলকাতার পথ-হেঁশেল: অফিসপাড়ার ক্যান্টিন ডেকার্স লেনে কোলাহল
সুগায়ক অমিত কুমার তাঁদের দু’জনের সুযোগ্য সন্তান। এরপর কিশোরের দ্বিতীয় স্ত্রী মধুবালা ছিলেন তাঁর সময়কার বহু ছবির জনপ্রিয় নায়িকা। যদিও তাদের এই বৈবাহিক জীবনের ৯টি বছর খুব একটা সুখকর ছিল না। দীর্ঘ দিন রোগভোগে শয্যাশায়ী মধুবালার শেষ জীবনে, তাঁর পাশে সর্বদাই ছিলেন ব্যস্ত কিশোর।—চলবে।
* ঋত্বিক চক্রবর্তী, পেশাগত ভাবে একটি বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। কর্মসূত্রেই স্পেনে থাকা। কাজের কাজ ও অকাজ করে সময় পেলেই বইপড়া, গান শোনার চেষ্টা আর পাঁচটা বাঙালির মতোই মজ্জাগত। রুজি রোজগারের বাইরে নিজের মনের জন্য কিছু পুষ্টি সঞ্চয়ে উন্মুখ। তাই পেশা আর নেশার টানাপোড়েনে পড়ে থাকা আর এক বাঙালি।