রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১২৮৯ বঙ্গাব্দ। মহারাজা বীরচন্দ্র তাঁর প্রিয়তমা রানি ভানুমতীর অকাল মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান। শোকাকুল হৃদয়ে রাজা কবিতা লিখে শোকভার লাগবে সচেষ্ট। ঠিক এমনই একটা সময়ে মহারাজা বীরচন্দ্রের হাতে আসে তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথের ‘ভগ্ন হৃদয়’। রাজার বিরহী অন্তরে এই কাব্যগ্ৰন্হ এতটাই নাড়া দেয় যে, কবিকে অভিনন্দন জানানোর জন্য বীরচন্দ্র তাঁর ব্যক্তিগত সচিব রাধারমণ ঘোষকে পাঠিয়ে দিলেন কলকাতা। স্বাভাবিক ভাবেই রাজার অভিনন্দন পেয়ে আপ্লুত তরুণ কবি।
এ প্রসঙ্গে ‘জীবনস্মৃতি’তে কবি লিখেছেন—”…মনে আছে, এই লেখা বাহির হইবার কিছুকাল পরে কলিকাতায় ত্রিপুরার স্বর্গীয় মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্যের মন্ত্রী আমার সহিত দেখা করিতে আসেন। কাব্যটি মহারাজের ভালো লাগিয়াছে এবং কবির সাহিত্য সাধনার সফলতা সম্বন্ধে তিনি উচ্চ আশা পোষণ করেন, কেবল এই কথাটি জানাইবার জন্যই তিনি তাঁহার অমাত্যকে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন।”
আরও পড়ুন:
ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৪৬: ‘রাজর্ষি’ অবলম্বনে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছেন ‘বিসর্জন’ নাটক
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৮: শিশুর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছিলেন দ্বারকানাথ
ভগ্নহৃদয়’ কিংবা ‘রাজর্ষি’র সূত্র ছাড়াও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজপরিবারের যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল এর অনেক আগেই। আর এই যোগাযোগের একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও ছিল। বীরচন্দ্র মাণিক্যের পিতা মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য এক সময় গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সাহায্য প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই সময়ে ইংরেজ রাজপুরুষ ও কলকাতা সমাজে দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রচণ্ড প্রভাব।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৮: রামানুজ ভরত ও লক্ষ্মণ, আনুগত্যের প্রকাশে দু’জনেই অনন্য
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৮: কপোত-কপোতী
মহারাজ কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য সেই রাজনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার পান মূলত দ্বারকানাথ ঠাকুরের সক্রিয় সহযোগিতায়। ‘রাজর্ষি’র ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহের জন্য রবীন্দ্রনাথ মহারাজা বীরচন্দ্রকে যে পত্র দিয়েছিলেন তাতে তিনি পূর্ব পরিচয়ের এই প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছিলেন।—চলবে।
* ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাংলা ভাষার পাঠকদের কাছে পান্নালাল রায় এক সুপরিচিত নাম। ১৯৫৪ সালে ত্রিপুরার কৈলাসহরে জন্ম। প্রায় চার দশক যাবত তিনি নিয়মিত লেখালেখি করছেন। আগরতলা ও কলকাতার বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে ইতিমধ্যে তার ৪০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ত্রিপুরা-সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস ভিত্তিক তার বিভিন্ন গ্রন্থ মননশীল পাঠকদের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও সে-সব উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। রাজন্য ত্রিপুরার ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সম্পর্ক, লোকসংস্কৃতি বিষয়ক রচনা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সঞ্জাত ব্যতিক্রমী রচনা আবার কখনও স্থানীয় রাজনৈতিক ইতিহাস ইত্যাদি তাঁর গ্রন্থ সমূহের বিষয়বস্তু। সহজ সরল গদ্যে জটিল বিষয়ের উপস্থাপনই তাঁর কলমের বৈশিষ্ট্য।