বন লেবু গাছ মূলত গুল্ম জাতীয় গাছ। উচ্চতা হয় ১২-১৩ ফুট। ৭ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৩ থেকে ৬ সেন্টিমিটার চওড়া পাতাগুলি দেখতে প্রায় লেবু পাতার মতোই। লেবু গাছের মতো এই গাছের পাতার কক্ষ থেকেও দুটি করে কাঁটা বের হয়। পাতার কক্ষ থেকে সাদা রংয়ের ছোট ছোট ফুল জন্মায়। ফুলগুলিও সুগন্ধযুক্ত। ফুল থেকে যে ফল হয় তা দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার লম্বা। এর ডিম্বাকার ফল তিন কোণা। কাঁচা ফলের রং সবুজ, আর পাকলে হলুদ। ফল থেকে পাখির চঞ্চুর মতো একটা সূচালো অংশ বেরিয়ে থাকে। দেখলে মনে হবে ছোট ছোট তেশিরা লেবু। প্রতিটি ফলের মধ্যে চারটি বড় আকারের চ্যাপ্টা বীজ থাকে।
আরও পড়ুন:
বন লেবু প্রকৃতপক্ষে ম্যানগ্রোভ সহযোগী উদ্ভিদ। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে বন লেবু গাছ খুব কম দেখা যায়। জোয়ারের জল চড়ার যে অংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পৌঁছয় সেই অঞ্চলেই মূলত এদের দেখা যায়। বন লেবুর লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতা বেশ ভালো। তবে সুন্দরবন অংশে বিশেষ করে ভারতীয় সুন্দরবন অংশে বন লেবু গাছ বর্তমানে অতি বিরল। আই ইউ সি এন-এর তালিকায় এই গাছকে বিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শোনা যায়, অতীতে বন লেবু ফল ফুটিয়ে জুস তৈরি করা হত। বলাবাহুল্য এর স্বাদ অনেকটা লেবুর রসের মতই হতো।
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:
আরও পড়ুন:
নামের শেষে বানি কথাটা থাকার কারণ মনে হয় বাইন বা বানি গাছের পাতার সাথে এই গাছের পাতার অনেকটা সাদৃশ্য। পাতাগুলি ডিম্বাকার আর আগার দিকটা গোল। পাতার ওপর দিকের রঙ উজ্জ্বল সবুজ, চকচকে এবং পাতা অপেক্ষাকৃত পুরু। পাতার নিচের দিকে রং ফ্যাকাশে। পাতার বৃন্ত ও নরম কান্ডের রঙ হালকা বাদামি রঙের হয়। পাতার কক্ষ থেকে সাদা রঙয়ের ছোট ছোট অসংখ্য ফুল থোকা আকারে জন্মায়। ফল বেশ ছোট ও উপবৃত্তাকার।
কাঁচা অবস্থায় রং থাকে সবুজ আর পাকলে হলদে বা বাদামি রঙের হয়। ৮ থেকে ১০ মিলিমিটার লম্বা ও চার থেকে পাঁচ মিলিমিটার চওড়া ফলগুলো রসালো আর ফলের গায়ে লম্বালম্বি ভাবে ছয় থেকে দশটি ভাঁজ থাকে। তবে ফল দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। আর প্রতি অংশে থাকে দুটি করে বীজ। জলে ভেসে বীজ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। টাগরি বানি গাছ মূলত জ্বালানি হিসেবে স্থানীয় মানুষ ব্যবহার করে তবে অনেক সময় বেড়া দেওয়ার কাজে বা চামচ তৈরি করতে এর কাঠ ব্যবহৃত হয়।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।