(বাঁদিকে) কাঁচা করঞ্জা ফল। ছবি: সংগৃহীত। (মাঝখানে) পুষ্পশোভিত করঞ্জা শাখা। ছবি: লেখক। (ডান দিকে) খলসি গাছ। ছবি: সংগৃহীত।
খলসি (Aegiceras corniculatum)
ডিম্বাকার পাতার শীর্ষদেশ একটু খাঁজ কাটা এবং ভেতরের দিকে চাপা। পাতার উপরের দিকের রং গাঢ় সবুজ হলেও নিচের দিকে রঙ হালকা সবুজ। এদের পাতায় লবণগ্রন্থি থাকায় সেই গ্রন্থির মাধ্যমে এরা অতিরিক্ত লবণ কেলাস আকারে ত্যাগ করে। সেই লবণ পাতার ওপরে সঞ্চিত হয়। খলসি গাছের ফল দেখতে ভারি সুন্দর। ২-৩ সেন্টিমিটার লম্বা ফলগুলো দেখতে গরুর শিং এর মতো বা লঙ্কার মতো, কিছুটা বাঁকা ও আগার দিক সূচালো। ফলের রং সবুজ হলেও গোড়ার দিকে বাদামি বা গোলাপি রঙের ছিট থাকে। প্রতি ফলে একটা করে বীজ থাকে। গাছ থেকে ফল খসে পড়ার পর ফলের মধ্যে বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে।
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫২: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— গর্জন, ভোলা ও নোনা ঝাউ
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯১: এক আলমারি বই : রাণুর বিয়েতে কবির উপহার
লৌকিক চিকিৎসা
(বাঁদিকে) খলসি ফল। ছবি: সংগৃহীত। (ডান দিকে) করঞ্জা গাছ। ছবি: লেখক।
করঞ্জা (Pongamia pinnata)
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭০: পাভেল কোথায়?
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা
এ গাছ আমাদের এই এলাকায় অনেক পাওয়া যায়।” আমি তো মানতে নারাজ। পাঁচমারি পাহাড়ের গাছকে বলে কিনা এই এলাকার করঞ্জা গাছ! সত্যি বলতে কি আমি বিশ্বাস করিনি। দুটি গাছের মধ্যে একটি গাছ খুব দ্রুত বাড়তে লাগল। বেশ কয়েক বছর পর বড় গাছটায় ফুল এল। সেই বেগুনি রঙয়ের ছোট ছোট ফুল থোকা আকারে গাছ থেকে নিচের দিকে ঝুলে আছে। ফুল দেখে বাবা আবার বলল, “এ ১০০ শতাংশ করঞ্জা গাছ।” এরপর আর বাবার কথাকে অমান্য করা যায় না, কারণ আমার চেয়ে এ ব্যাপারে বাবার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। পরে অন্যত্র আমাদের এলাকাতেও এই গাছ নজরে এল। একই রকম ফুল, একই রকম ফল। আমার আর সংশয় রইল না। মধ্যপ্রদেশের পাহাড় থেকে বোকার মতো এমন গাছের বীজ আনলাম যা কিনা আমাদের এলাকার স্বাভাবিক গাছ! নিজের বোকামির জন্য হাসি পাচ্ছিল। তবে গাছটা তো চিনলাম। বোকামিও মাঝে মাঝে কার্যকরী হয়!
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
এক টাকার কয়েনের আকারের শুঁটিগুলোর রঙ হয় কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর শুকিয়ে গেলে ধূসর। প্রায় গোলাকার শুঁটিগুলোর আগা হয় সামান্য সূচালো, আর প্রতি শুঁটিতে একটি করে বৃক্কাকার বীজ থাকে। গোড়া থেকে করঞ্জা গাছ কেটে নিলে কাটা অংশ থেকে প্রচুর শাখা বেরিয়ে পুনরায় বৃক্ষে পরিণত হয়। আবার মাটির ওপরের দিকে থাকা শাখা মূল থেকে চারা গাছ জন্মাতেও দেখা যায়। ফলে করঞ্জা গাছকে বংশবিস্তারের জন্য কেবল বীজের উপর নির্ভর করতে হয় না। করঞ্জা গাছ মাঝারি ধরনের লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং বেশ কিছুদিন নোনা জলে নিমজ্জিত থাকলেও দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। আর বহু ধরনের মৃত্তিকা ও জলবায়ুতে যে এর বাঁচার ক্ষমতা রয়েছে সে তো আগেই বলেছি। সুন্দরবন অঞ্চলে এই গাছ নদী, খাঁড়ি ও খালের দু’পাশে এককভাবে কিংবা সুন্দরী, গরান, ভোলা, অনন্তকাঁটা ইত্যাদি গাছের সাথে একসাথে জন্মাতে দেখা যায়।