মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


আগামীতে এই ব্যাঘ্র শাবকদের ভবিষ্যৎ কি সুরক্ষিত। ছবি: সংগৃহীত।

আজ থেকে কয়েকশো বছর আগেও এই উপমহাদেশে প্রচুর বাঘ ছিল। শোনা যায়, অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে আজকের কলকাতার চৌরঙ্গি অঞ্চলেও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ভয়ে সন্ধ্যের পর বাড়ি থেকে কেউ বেরোত না। ষোড়শ শতাব্দীতে ভারতে মোগলদের আগমনের পর থেকে বাঘেদের জীবনে অন্ধকার ঘনানো শুরু হয়। তীর-ধনুকের পাশাপাশি বল্লম ও বন্দুক দিয়ে বাঘ শিকার ছিল মোগল বাদশা-শাহজাদাদের নেশা। মোগল বাদশা আকবর বাঘ শিকারের প্রতিযোগিতা করতেন ও সর্বোচ্চ শিকারকারীকে পুরস্কার দিতেন। জাহাঙ্গির হাতির পিঠে চেপে বাঘ শিকার করতে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর রাজত্বের প্রথম ১২ বছরে তো তিনি বাঘ ও সিংহ মিলিয়ে ৮৬ টি শিকার করেছিলেন।

তবে এদেশে ব্রিটিশদের আগমনের পর থেকে ব্যাঘ্র হত্যার পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। বাঘ শিকার হয়ে ওঠে সাহস প্রদর্শনের এক খেলা। বাঘ শিকার করে তার চামড়া ও মাথার খুলি সংগ্রহ করা হয়ে ওঠে আভিজাত্যের চরম নিদর্শন। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর কোনও সাহেব বাঘ শিকার করলে তাকে পুরস্কৃত করার প্রথা চালু হয়েছিল। জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষকদের দিয়ে জঙ্গলে ড্রাম পিটিয়ে আস্তানা থেকে বাঘকে বার করে আনা হত, আর তারপর গাছের ওপর থেকে বা হাতির পিঠ থেকে শিকারি সাহেব গুলি ছুঁড়ে বাঘ মারত। ব্রিটিশরাজ পঞ্চম জর্জ রাজপদে অভিষিক্ত হওয়ার পর ভারতে এসে নেপালে ১০ দিনের মধ্যে ৩৯টি বাঘ হত্যা করেছিলেন।
ব্রিটিশদের দেখাদেখি এদেশের ছোটখাট রাজা-মহারাজারাও মেতে ওঠেন ব্যাঘ্রনিধনে। জানা গিয়েছে, উদয়পুরের মহারাজা, গৌরীপুরের রাজা ও রেওয়ার মহারাজা পাঁচ শতাধিক বাঘ হত্যা করেছেন। মহীশূরের মহারাজা ও তাঁর অতিথিরা মিলে ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৭ সালের মধ্যে শতাধিক বাঘ নিধন করেন। তঙ্ক-এর নবাব মহম্মদ আমির খান হত্যা করেন ছয় শতাধিক বাঘ। সরগুজার শিকারী রামানুজ শরণ সিং দেও এবং জয়পুরের শিকারি কেশরী সিং সারা জীবনে যথাক্রমে ১১০০ ও ১০০০ বাঘ নিধন করেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী সামসের জঙ বাহাদুর রানা ৪৩৩টি বাঘ হত্যা করেছিলেন। ১৮৭৫ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার বাঘকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল সাহেব এবং দেশিয় রাজা ও শিকারিরা।

ব্রিটিশ বন্যপ্রাণ চিত্রগ্রাহক এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পথপ্রদর্শক ফ্রেডেরিক ওয়াল্টার চ্যাম্পিয়নের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে গত শতকের চল্লিশের দশকের শেষের দিকে বিখ্যাত শিকারী জিম করবেট যখন তাঁর বন্দুক তুলে রেখে দেন কার্যত তখন থেকেই ভারতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের সূত্রপাত হয়। যদিও সংরক্ষণের আধুনিক ধারণার প্রয়োগ দেখা যায় ১৯৫০ সালের পর থেকে। ব্রিটিশ শাসক যেসব গেম পার্ক তৈরি করেছিল সেগুলিকে ক্রমে ক্রমে ন্যাশনাল পার্ক ও স্যাংচুয়ারিতে রূপান্তরিত করা হয়। বেশ কিছু দেশিয় রাজার ব্যাঘ্র শিকার ক্ষেত্রকে ব্যাঘ্র সংরক্ষিত অরণ্যে রূপান্তরিত করা হয়।

সুন্দরবনের বাঘেদের আর এক প্রিয় শিকার বন্য শূকর। ছবি: সংগৃহীত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ও ভারতে বাঘের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৪০ হাজার। কিন্তু ১৯৭২ সালে প্রথম বাঘ গণনায় দেখা যায় এদের সংখ্যা মাত্র ১৮২৭! ভয়ঙ্কর এই তথ্য দেখে ভারত সরকারের টনক নড়ে। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন (IUCN) ওই বছর দিল্লিতে একটি জরুরি সভা আহ্বান করে ঘোষণা করে ভারতের এখনই বাঘ হত্যা ও বাঘের চর্ম রপ্তানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন (১৯৭২) লাগু হয়। আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংস্থা ডবলুডবলুএফ (WWF) প্রধানমন্ত্রী গান্ধীর সহযোগিতায় ব্যাঘ্র প্রকল্প গড়ে তুলতে তহবিল গঠন করে। ১৯৭৩ সালে নয়টি অরণ্যে তৈরি হয় ব্যাঘ্র প্রকল্প।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪১: সুন্দরবনে বাঘে-মানুষে সংঘাত

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৪: উদয়পুর অভিযানে মগ সৈন্যরা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরের চূড়া ভেঙে দিয়েছিল

ব্যাঘ্র প্রকল্প চালু হওয়ার পর ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেশে বাঘের সংখ্যা বেশ দ্রুত হারেই বাড়ছিল। ১৯৭২ সালে ১৮২৭ থেকে ১৯৮৫ সালে সংখ্যাটা বেড়ে ৪৫০০ হয়ে যায়। আশা জাগে বন্যপ্রাণপ্রেমীদের মনে। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে পুণরায় বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমতে শুরু করে। পাচারকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হতে থাকে বাঘের চামড়া, নখ ও হাড়। চিনের লৌকিক চিকিৎসায় বাঘের হাড় বহুদিন ধরে ব্যবহৃত হয়। তাই বিপুল অর্থের বিনিময়ে বাঘের হাড় চিনে পাচার হয়। তাছাড়া দেখা গেল যে, এর মধ্যে আয়তন কমেছে ব্যাঘ্র সংরক্ষিত বনের। নড়েচড়ে বসে সরকার। ১৯৯৭ সালের মধ্যে ৩৩ হাজার বর্গ কিমি বনভূমি জুড়ে ২৩ টি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প তৈরি হয়। ২০০৬ সালে ব্যাঘ্র গণনায় দেখা গেল সারা দেশে জীবিত বাঘের সংখ্যা মাত্র ১৪১১। প্রমাদ গুণল সারা দেশ। নজরদারি আরও আঁটোসাঁটো করা হল। ২০১৪ সালে এর ফল পাওয়া গেল। বাঘের সংখ্যা বেড়ে হল ২২২৬। এর মধ্যে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৭৬। আর ২০১৮ সালের গণনায় দেখা যাচ্ছে দেশে বাংলার বাঘের সংখ্যা ২৯৬৭। এর মধ্যে সুন্দরবনে ছিল ৮৮ টি বাঘ। ২০২০-২১ সালের গণনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৯৬। ২০২২ সালে জাতীয় বাঘ গণনা শুরু হয়েছে।

সুন্দরবনের বাঘের প্রিয় শিকার চিতল হরিণ। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ১৯৭৩ সালে চালু হয়। এখানে বাঘের সংখ্যা হ্রাসের হার সারা দেশের তুলনায় কম হলেও সমস্যা অন্যত্র। সুন্দরবন অঞ্চলে ব্যাঘ্র সংরক্ষিত বনের আয়তন ২৫৮৫ বর্গ কিমি হলেও এর মধ্যে ১৪৩৭.৪ বর্গ কিমি এলাকায় রয়েছে জনবসতি। আর বাঘের সংরক্ষণ ভূমির আয়তন ১৪৭৪ বর্গ কিমি। প্রতি ১০০ কিমি অরণ্য সাধারণত ২-৩ টি বাঘের বিচরণক্ষেত্র হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ১৪৭৪ বর্গ কিমি এলাকা ৪৪/৪৫টি বাঘের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু এখানে বাঘের সংখ্যা রয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে বাঘেদের মধ্যে অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম হচ্ছে অনেক বেশি। লোকালয়ে বাঘের হানার এটাও একটা অন্যতম কারণ। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের হ্রাস সুন্দরবনের বাঘেদের কাছে বর্তমানে অন্যতম বড়ো বিপদ।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৪: কোন সকালে মুক্তির অপেক্ষায় ‘ত্রিযামা’

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?

মানুষের সৃষ্ট বিপদের বাইরেও রয়েছে আর এক বিপদ। তা হল পরিবেশগত বিপদ। বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরবন-গবেষক ও অধ্যাপক শরিফ মুকুল জানিয়েছেন যে পরিবেশগত বিপদ হল সুন্দরবনের বাঘেদের কাছে আপাতত সবচেয়ে বড়ো বিপদ। কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে সমুদ্রের জলতলের বৃদ্ধি সুন্দরবনের এক বিরাট অংশকে নিমজ্জিত করে দেবে ২০৭০ সালের মধ্যে। আর সুন্দরবনের যে অংশগুলি নিমজ্জিত হবে তার মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের ব্যাঘ্র সংরক্ষিত এলাকা থাকবে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ সংক্রান্ত আইপিসিসি (IPCC: Intercontinental Panel on Climate Change)-এর সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন।

বাঘের চোরাশিকার সুন্দরবনের এক অন্যতম বিপদ। ছবি: সংগৃহীত।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উষ্ণতা বৃদ্ধি ও সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধির বর্তমান ধারা বজায় থাকলে ২১০০ সালে সুন্দরবন অঞ্চলে সমুদ্রের জলস্তর সর্বনিম্ন ৩৮ সেমি থেকে সর্বোচ্চ ৯৮ সেমি বাড়তে পারে। আর তা যদি হয় তবে ২০৫০ সালের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘের বাসস্থানের ৯৬.২ শতাংশ এলাকা ও ২০৭০ সালের মধ্যে ৯৯.৪ শতাংশ এলাকা হারিয়ে যাবে।

তবে বাঘেদের বাসস্থান যখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসবে এবং তার ফলে সুন্দরবনের বাঘেদের অস্তিত্ব চরম সংকটের মুখে থাকবে তখন বাঘেদের থাকার উপযোগী একমাত্র বনাঞ্চল টিকে থাকার সম্ভাবনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর গেঁওয়া গাছ (Excoecaria agallocha) সমৃদ্ধ সুন্দরবনের অরণ্য। কারণ এই অঞ্চল তুলনায় উঁচু এবং এখানে লবনাক্ততাও অপেক্ষাকৃত বেশি থাকবে। গেঁওয়া গাছের বিশেষত্ব হল এর লবন-সহন ক্ষমতা অন্য সমস্ত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের তুলনায় বেশি। আর এই গাছের কাঠ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায় না বলে উপকূল থেকে জনবসতি সর্বত্র বিনা প্রতিকূলতায় এরা বেড়ে উঠতে পারে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৬: রামায়ণে রামচন্দ্রের যাত্রাপথ সুগম হওয়ার কারণেই কি সীতার উপস্থিতি?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৯: ইন্দুমতী ও সুরবালা

ভারতে গত তিন দশকে সুন্দরবনে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের কোর এলাকা বেড়েছে ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে মাছ ধরার অনুমতিপ্রাপ্ত এলাকা ৮৯২.৩৮ বর্গ কিমি থেকে কমে হয়েছে ৫২৩ বর্গ কিমি। এমনকি ব্যাঘ্র সংরক্ষিত এলাকার বাইরের এলাকাতেও লাইসেন্স ছাড়া মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যাওয়া নিষেধ। এর ফলে বাঘের সংখ্যা যে বাড়ছে তা নিয়ে বাঘ-বিশেষজ্ঞরা মোটামুটি নিশ্চিত। বাঘ বেড়েছে বাংলাদেশের সুন্দরবনেও। কিন্তু সুন্দরবনে বাঘের বসতি এলাকা যদি ডুবেই যায় তবে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে লাভ কী হবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দু’দেশের সুন্দরবন অঞ্চলের মধ্যে ট্রান্সবাউন্ডারি করিডোর চাই। ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অবিচ্ছেদ্য। ফলে দু’ দেশের সুন্দরবনের মধ্যে বাঘেদের যাতায়াত হয়। যাতায়াতের এই পথকে আরও সুগম করা দরকার। সত্যিই যদি আগামী দিনে বাঘেদের বসতি এলাকা নিমজ্জিত হতে শুরু করে তখন যেন তারা অনায়াসে চেনা পথ ধরে উঁচু জায়গায় চলে আসতে পারে। তখন টিকে থাকা গেঁওয়া গাছের জঙ্গলই হবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের নয়া বাসভূমি। এজন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক দু’দেশের মধ্যে যৌথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা জরুরি।

সুন্দরবনে বাঘের তাড়া খাওয়া হরিণের দল। ছবি: সংগৃহীত।

শুধু সুন্দরবন নয়, ভারতের সমস্ত সংরক্ষিত অরণ্য অরণ্য-হ্রাসের সমস্যা কবলিত। বনবাসী মানুষের সঙ্গে বনবিভাগের সংঘাত সর্বজনবিদিত। মানবসভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বেড়েছে জনবসতি। অরণ্য ধ্বংস করে তৈরি হয়েছে গ্রাম। আবার সেই গ্রাম একদিন উন্নয়নের ছোঁয়ায় পরিণত হচ্ছে শহরে। অরণ্যের উপরে নির্ভরশীল জনজাতি রাজনৈতিক দলগুলির অন্যতম ভোটব্যাঙ্ক। সুন্দরবনের বাঘকে রক্ষা করলে ভোট আসবে না। তাই ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করার দিকে নজর সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর। ভারতের জাতীয় পশুকে বাঁচানো ও তার বাসভূমিকে রক্ষা করার বিষয় কোনও রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে স্থান পায় না।

সুতরাং চুলোয় যাক অরণ্য, চুলোয় যাক বাঘ! বরং অরণ্যের আদিমতাকে ধ্বংস করে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগাও অরণ্যের গায়ে! অরণ্যের বুক চিরে তৈরি হোক ব্রিজ, স্কাইওয়াক, সড়ক ও রেলপথ! অরণ্যের স্তব্ধতাকে খান খান করে দিক মাইক, ইলেকট্রিক হর্ন আর মানুষের সমবেত উল্লাসধ্বনি! অরণ্যের নিকষ অন্ধকার দূর করে দিতে হাজির হোক বিজলি বাতি! পর্যটনপ্রেমীদের জন্য জঙ্গলের মাঝে গড়ে উঠুক হোটেল ও হোমস্টে! পর্যটকদের সান্ধ্য বিনোদনে মুখরিত হোক অরণ্যের আদিমতা! ট্রলার, লঞ্চ ও পর্যটকদের সমবেত শব্দ ছাপিয়ে যাক পাখিদের কলকাকলি আর স্রোতের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ! অন্যদিকে সভ্যতার অগ্রগতি আর উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলুক পৃথিবীর উষ্ণতা! ফুলে উঠুক সমুদ্রতল!
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৮: অভিভাবিকা মা সারদা

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩১: আমার মতে, তোর মতো কেউ নেই

কিন্তু ব্যাঘ্রশাবক তো শিক্ষা চায় না, আলো চায় না, গাড়ি চায় না, রাস্তা চায় না, বিনোদন চায় না, পর্যটকদের দেখতে চায় না। তার বাঁচার জন্য দরকার নিরাপদ অরণ্য আর খাবার। তার নিশ্চিন্ত যাপনের জন্য দরকার নিরিবিলি একান্ত অরণ্য। আর দরকার সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ। মানুষের চাহিদার অন্ত নেই। কিন্তু বিড়াল গোষ্ঠীর বৃহত্তম আকারের সদস্য তথা সুন্দরবনের পাহারাদার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এর বেশি চাহিদা নেই।—চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।

Skip to content