মঙ্গলবার ২৫ মার্চ, ২০২৫

পুরুষ আলতাপরী। ছবি: সংগৃহীত।

ছুটির দিন হলেও গেল সপ্তাহের রবিবার সকাল থেকে নাওয়া খাওয়ার সময়টুকু ছাড়া এক মুহূর্ত বিশ্রাম নিইনি। কারণ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর্বত-প্রমাণ উত্তরপত্র। জমা দেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে অথচ সেই পর্বত টেবিলে দন্ডায়মান। তাই সকাল থেকেই ম্যারাথন খাতা দেখা চলছে। দুপুরে খেয়ে অন্যান্য রবিবারের মতো বিশ্রাম নিতে পারিনি। একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলে কোমর ব্যথা করে। তাই মাঝে মাঝে চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কোমরটাকে আরাম দেওয়ার পাশাপাশি মাথাটাকেও হালকা করছিলাম। তখন বিকেল সাড়ে তিনটে হবে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অন্যমনস্কভাবে বাইরে তাকিয়েছিলাম। হঠাৎ কানে এল একটা শব্দ — হুই-হুই হুই-হুই হুইরি, হুই-হুই হুই-হুই হুইরি …। শব্দটার যেন আমার জানালার পাশ থেকেই আসছে। জানালার বামদিকেই আমগাছ। ওদিকে নজর দিতেই দেখি অদ্ভুত সুন্দর দেখতে একটা পাখি আম গাছের ডালে বসে ডাকছে, আর ডাকার সময় তার লেজটাকে উপর-নিচে মৃদু ঝাঁকুনি দিচ্ছে। এক লহমায় আমি ফিরে গেলাম আমার কৈশোরবেলায়, আমার গ্রামে।
স্কুলে যাওয়ার পথে দলুইপাড়ার বড় অশ্বত্থ গাছটার মাথা থেকে এদের উড়তে দেখেছি। হাটপাড়ায় নদীর ধারে আমাদের সেই মাটির দেওয়াল স্কুলের সামনে থাকা বড় বটগাছটা থেকেও এদের মাঝে মাঝে উড়ে যেতে দেখেছি। আর আমাদের বাড়ির পিছনে থাকা বড় শিরিষ, অর্জুন আর আম গাছে এদের দল বেঁধে বসে থেকে ওই রকম হুই-হুই হুই-হুই হুইরি, হুই-হুই হুই-হুই হুইরি ডাক শুনেছি। কিন্তু তারপর দীর্ঘ চার দশক এরা কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল? কেন এরা এতদিন আমার নজরে পড়েনি? হয়তো আমার নজর প্রকৃতি-বিমুখ হয়ে গিয়েছিল বলেই ওদের দেখতে পাইনি। এতদিন বাদে যখন আমার জানালার পাশেই এসে পড়েছে ছবি তো একটা তুলতেই হবে! দ্রুত মোবাইল ফোনটা হাতে তুলে নিলাম। কিন্তু ক্যামেরা রেডি করতে করতে সে লাফ দিয়ে চলে গেল একটু উপরের ডালে। ওখানে থাকলে ছবি তোলা প্রায় অসম্ভব কারণ জানালা থেকে পাতার আড়াল হচ্ছে। দৌড়ে চলে গেলাম সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ের জানালায়। জানালা খোলাই ছিল। সবে মোবাইল ফোনের ক্যামেরা তাক করেছি। অমনি সে ফুরুৎ। কোন দিকে যে সে গেল ভাল করে বুঝে উঠতে পারলাম না। একা গেল নাকি সঙ্গে আরও কেউ কেউ গেল তা দেখতে পেলাম না কারণ আম গাছের মাথা ছিল আমার দৃষ্টির বাইরে। ছবি তুলতে না পারায় একটু হতাশ হলাম ঠিকই কিন্তু এতদিন বাদে পাখিটাকে দেখতে পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৯২: দুর্গা টুনটুনি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০৭: লুকাবো বলি, লুকাবো কোথায়?

কী যেন নাম পাখিটার! স্মৃতির পাতা হাতড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই খুঁজে পেলাম —সয়ালি বা সহেলি। সাধারণত এরা সাত-আটটা পাখি দল বেঁধে থাকে বলে অনেকে বলে সাত-সয়ালি বা সাত-সহেলি। কিন্তু এই পাখিটাকেই চমৎকার একটা নাম দিয়েছিলেন সাহিত্যিক বনফুল। অনেকদিন আগে তাঁর লেখা অনবদ্য উপন্যাস ‘ডানা’ পড়েছিলাম। সেখানে এই পাখিটার অপরূপ রূপের জন্য উপন্যাসের চরিত্র কবি-র মুখ দিয়ে এই পাখিটির একটা চমৎকার নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু নামটা আদৌ মনে করতে পারলাম না। ঝটপট বইয়ের আলমারি থেকে টেনে বার করলাম ‘ডানা’ উপন্যাস। খুব বেশি সময় লাগল না খুঁজে পেতে। বনফুল পাখিটার নাম দিয়েছিলেন ‘আলতা-পরী’। এই অনন্য নামকরণের অংশটা উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
এক ঝাঁক ছোট্ট পাখি উড়ে গেল। উড়ে গিয়ে বসল দূরের আমগাছটায়।
“মিনিভেট।” — উদ্ভাসিত মুখে বলে উঠলেন বৈজ্ঞানিক। তারপর ঘাসের ওপরেই বসে পড়লেন চোখে দূরবীন লাগিয়ে। কবির দিকে আবার ফিরে চাইলেন। দৃষ্টি উৎফুল্ল।
“মিনিভেট! বাংলা নাম সয়ালী, এগুলো ছোট সয়ালী। অনেকগুলো এসে বসেছে, দেখতে পাবেন এখনই। ওই গাছটার ওপরই ফোকাস করুন। উড়লেই দেখবেন পেটের নীচে ডানার নীচে টুকটুকে লাল। পিঠের ওপরটা কালচে গোছের, মানে — গ্রেইশ ব্রাউন, দেখুন ভাল ক’রে।”
কবি চোখে দূরবীন লাগিয়ে আমগাছের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। হঠাৎ দেখতে পেলেন।
“দেখেছি। বাঃ, চমৎকার তো! কি নাম বললেন?”
“সাত সয়ালী।”
“পছন্দ হ’ল না, আমি ওর নাম দিচ্ছি আলতা-পরী-”

শিকার মুখে আলতাপরী। ছবি: সংগৃহীত।

সাহিত্যিক বনফুলের দেওয়া আলতাপরী নামটা যে কতখানি সার্থক তা এই পাখির রূপ যে একবার দেখেছে সে বুঝতে পারবে। বুলবুল পাখির চেয়ে সামান্য ছোট এই পাখিটির আসল রূপ পুরুষের। মাথা-সহ পিঠের উপর ও লেজ পুরোটাই চকচকে কালো কিন্তু গলার কাছ থেকে পেটের দিকে রং কমলা লাল ও গাঢ় লাল রঙের মিশ্রণ। দেখলে মনে হবে যেন পুরো পাখিটাকে কোনও চিত্রশিল্পী কালো রঙ করার পর গলার কাছ থেকে পুরো পেট অঞ্চল তুলি দিয়ে লাল রঙ করে দিয়েছে। গলার কাছে লাল ও কালোর সীমারেখা একেবারে সরলরেখার মতো সোজা। লাল ও কালোর এই অদ্ভুত কন্ট্রাস্ট যে কোনও মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। দেখা গেছে সাধারণত ৫-৮টা পুরুষ পাখি একসঙ্গে ঘোরে। অবশ্য কখনও কখনও দলে বেশি পাখিও দেখা যায়। শীতকালে দলে সদস্যের সংখ্যা বাড়ে। ঘন পাতাবহুল গাছ ওদের খুব পছন্দ। ঘন সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে এডাল-ওডাল লাফিয়ে কিংবা এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে উড়ে ওরা পোকামাকড় শিকার করে। যখন এরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে উড়ে যায় তখন পেট ও ডানার নিচে আলতার মতো উজ্জ্বল লাল রঙ নিচে থেকে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। আর ঠিক তখন মনে হয় সূর্যের আলো পড়ে ওদের ওই লাল রং যেন ঝলসে উঠল। ডানা মেলে আমাদের কল্পনাজগতের সুন্দরী পরীরা যখন উড়ে যায় তখন আমাদের কল্পনার মনোজগতে যে ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হয় এই পাখিদেরও উড়ে যাওয়ার সময় মনে হয় সাহিত্যিক বনফুলের একই অনুভূতি হয়েছিল। আর তাই সাত-সয়ালী বা সাত-সহেলি পাখির নাম দেন আলতাপরী। এমন সুন্দর নাম আমার পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-৫৪: রবীন্দ্রনাথের ‘মুকুট’ ত্রিপুরার ইতিহাসাশ্রিত গল্প

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৯: সে এক স্বপ্নের ‘চাওয়া পাওয়া’

পুরুষ আলতাপরীর তুলনায় স্ত্রী আলতাপরী কিন্তু যথেষ্ট বিবর্ণ। স্ত্রী পাখিদের পিঠের দিকের রং ধূসর ও জলপাই হলুদ রঙের। এদের পেটের দিকের রঙ প্রায় পুরোটাই হলুদ। লেজের নিচের দিকেও থাকে কালোর সাথে হলুদ পালক। চঞ্চু থেকে চোখ হয়ে কিছুদূর পর্যন্ত মোটা কালো দাগ দেখে মনে হবে যেন কোনও শিল্পী মোটা তুলি কালো রঙে চুবিয়ে নিয়ে লম্বা টান দিয়েছে। চঞ্চুর পেছনে অর্থাৎ মাথার সামনের দিকের রং হলুদ। কালচে ডানার ওপরেও রয়েছে হলুদ রঙের দুটি ছোপ। বাচ্চা পুরুষ পাখিদেরও প্রথম প্রথম স্ত্রী পাখিদের মতো রং হয়। কিন্তু পরিণত হলে হয়ে ওঠে আলতাপরী। পুরুষ আলতাপরীর ডানাতেও কমলা লাল রঙের ছোপ থাকে। যখন ডানা মেলে এরা উড়ে যায় তখন উপর থেকে দেখলে মনে হবে কালো ডানার মাঝ বরাবর কমলা রঙের চওড়া ফিতে কেউ বেঁধে দিয়েছে। এদের লেজের নিচের দিকের রঙও সিঁদুরে লাল। কালো মাথার মধ্যে দিয়ে ডাগর ডাগর দু’খানি কালো চোখ চকচক করতে থাকে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের চঞ্চুর রঙও হয় কুচকুচে কালো। পতঙ্গ শিকারকারী পাখিদের মতো উপরের চঞ্চুর আগার দিক হয় নিচের দিকে সামান্য বাঁকা। পায়ের রঙও কালো। অর্থাৎ পুরুষের সারা শরীর জুড়ে লাল আর কালো এবং স্ত্রীর শরীর জুড়ে হলুদ ও কালো ছাড়া অন্য কোনও রঙের অস্তিত্ব নেই। তবে আমার মতে, পুরুষ আলতাপরী রূপের ঝলকে স্ত্রীদের টেক্কা দিলেও স্ত্রীরা কিন্তু খুব পিছিয়ে নেই। ওদের শরীরে লাল রং নেই বলে আলতাপরী বলা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে জানি না। তবে হলুদপরী তো বলাই যায়! মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ধরলে এরা লম্বায় হয় প্রায় ৮ ইঞ্চি। এদের লেজটা গোড়ার দিকে সরু হয়ে প্রান্তের দিকে কিছুটা চওড়া হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০৬: ভারতীয় পারিবারিক জীবনে স্নেহময় জ্যেষ্ঠর ভূমিকায় রামচন্দ্র কতটা আকর্ষণীয়?

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-২০: জ্ঞান ও অজ্ঞান

আলতাপরীদের প্রিয় খাদ্য হল পোকামাকড়। এরা গাছপালার গায়ে বসে থাকা পোকামাকড় যেমন শিকার করে তেমনই উড়ন্ত পোকামাকড়কেও বাঁশপাতি, ফিঙে বা দোয়েলের মতো চমৎকার কায়দায় শিকার করতে পারে। এরা পুরোপুরি বৃক্ষবাসী। মাটিতে নেমে আসতে এদের কখনওই দেখা যায় না। আগেই বলেছি, এরা ছোট ছোট দলে থাকে। এক গাছ থেকে দল বেঁধে আর এক গাছে যখন উড়ে যায় তখন মিষ্টি সুরে ‘হুই-হুই হুই-হুই হুইরি’ শব্দ করতে করতে ওড়ে। ওড়ার সময় সাধারণত দলপতি সামনে ওড়ে, বাকিরা তাকে অনুসরণ করে। কখনও কখনও অবশ্য পুরুষ আলতাপরীকে একাকী দেখা যায়। তখন বুঝতে হবে প্রজনন ঋতু এসে গিয়েছে। ও তখন সঙ্গিনী খুঁজে বেড়াচ্ছে।

ডুমুর গাছে একা বসে আলতাপরী। ছবি: সংগৃহীত।

আলতাপরীর প্রজনন ঋতু হল এপ্রিল থেকে জুলাই মাস। এই সময় পুরুষ ও স্ত্রী আলতাপরী মাটির উপর তিন থেকে পনেরো মিটার উচ্চতার মধ্যে বাসা বাঁধে। বাসা বাঁধার জন্য গাছের দুটো ডালের মধ্যবর্তী ইংরেজি ‘V’ এর মতো জায়গাকে বেছে নেয়। বিভিন্ন গাছের বা ঘাসের সরু শিকড় আর বাকলের তন্তু হল বাসার প্রধান উপাদান। এগুলোর সাথে মাকড়সার জাল জড়িয়ে বাসাকে শক্তপোক্ত করে গাছের শাখার সঙ্গে আটকে দেয়। বাসার বাইরের দিকে দেয় শ্যাওলা ও মাকড়সার ডিমের খোলার প্রলেপ। এর ফলে বাসা দূর থেকে দেখে বোঝা যায় না। বাসার রং গাছের কান্ডের রঙের সাথে প্রায় মিশে যায়। এতে শত্রু পাখির দৃষ্টি এড়ানো যায়। অগভীর এই বাসায় স্ত্রী আলতাপরী এক একবারে দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে। ফিকে সবুজ রঙের ডিমের উপর গাঢ় বাদামি ও হালকা বেগুনি রঙের ছোপ দেখা যায়। ডিম লম্বায় হয় প্রায় ০.৯ ইঞ্চি ও চওড়ায় প্রায় ০.৬৭ ইঞ্চি। স্ত্রী ও পুরুষ আলতাপরী উভয়ে মিলেই পালা করে তা দেয়। আর বাচ্চারা জন্মালে তাদের প্রতিপালনের দায়-দায়িত্ব বাবা ও মা উভয়ে পালন করে।

সাত-সহেলি বা আলতাপরী পাখিরা ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। ইংরেজিতে এদের বলে Scarlet Minivet । বিজ্ঞানসম্মত নাম Pericrocotus flammeus । ভারতীয় উপমহাদেশে এদের চারটি উপপ্রজাতি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সুন্দরবনসহ ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অংশে যে উপপ্রজাতি পাওয়া যায় সেটি হল Pericrocotus flammeus semiruber ।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৮: সকালবেলাই হাঁটতে হবে?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৯o: মা সারদার কথায় ‘ঈশ্বর হলেন বালকস্বভাব’

আমার আমগাছে পুরুষ আলতাপরীটিকে একাকী দেখে এবং এত বছর আমার দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় যদিও আমার মনে সন্দেহ জন্মে ছিল যে এরা সুন্দরবন অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে স্কুলের বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে ধারণাটাকে পাল্টাতেই হল। যেহেতু আমার স্কুল গ্রামীণ এলাকায় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশই গ্রামের ছেলে মেয়ে সুতরাং নিশ্চিতভাবে কেউ কেউ পাখিটিকে চিনবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি মোবাইল ফোনে পাখিটির ছবি বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের দেখালাম। বেশ কয়েকজন ছাত্র আমাকে নিশ্চিত করল পাখিটির ব্যাপারে। ওদের বর্ণনা শুনে মনে হল ওরা এই আলতাপরীর কথাই ঠিকঠাক বলছে। তবে ওদের মুখে এও শুনলাম যে পাখিগুলিকে ওরা নিয়মিত দেখতে পায় না।

স্ত্রী আলতাপরী। ছবি: সংগৃহীত।

আমার আমগাছে পুরুষ আলতাপরীটিকে একাকী দেখে এবং এত বছর আমার দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় যদিও আমার মনে সন্দেহ জন্মে ছিল যে এরা সুন্দরবন অঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্ত কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে স্কুলের বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে ধারণাটাকে পাল্টাতেই হল। যেহেতু আমার স্কুল গ্রামীণ এলাকায় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশই গ্রামের ছেলে মেয়ে সুতরাং নিশ্চিতভাবে কেউ কেউ পাখিটিকে চিনবে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি মোবাইল ফোনে পাখিটির ছবি বিভিন্ন ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের দেখালাম। বেশ কয়েকজন ছাত্র আমাকে নিশ্চিত করল পাখিটির ব্যাপারে। ওদের বর্ণনা শুনে মনে হল ওরা এই আলতাপরীর কথাই ঠিকঠাক বলছে। তবে ওদের মুখে এও শুনলাম যে পাখিগুলিকে ওরা নিয়মিত দেখতে পায় না।

সুন্দরবনের বসতি এলাকার বাইরে জঙ্গল এলাকায় আলতাপরীরা রয়েছে কিনা সে তথ্য আমি জানি না। তবে বসতি এলাকায় এদের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে আগের মতো আর নেই। যেহেতু এরা বট, অশ্বত্থ, তেঁতুল, অর্জুন ইত্যাদি গাছে বাসা বানায় তাই সুন্দরবন অঞ্চলে এইসব গাছের সংখ্যা নিদারুণভাবে হ্রাস পাওয়ায় আলতাপরীরা যে ঘর বাঁধতে সমস্যায় পড়েছে তা বলাবাহুল্য। আবার সুন্দরবন অঞ্চলে কৃষিকাজে কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার যে জীববিবর্ধনের নিয়ম অনুসারে পতঙ্গভূক পাখিদের বিপন্ন করবে সে তো জানা কথা। প্রকৃতির এই অপরূপ সদস্যকে আগামীদিনে সুন্দরবনে যদি টিকিয়ে রাখতে হয় তবে আমাদেরকে আলতাপরী বা সাত-সহেলির প্রকৃত সহেলী হয়ে উঠতে হবে।—চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content