বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫


(বাঁদিকে) মা শালিক বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে। (ডান দিকে) শালিকের ছানা। ছবি: সংগৃহীত।

 

“শালিক শালিক শালিক
ওরা রোদে পোড়ে, ছায়ার ঘোরে,
ওরা রৌদ্র-ছায়ার মালিক।”

কবি শামসুর রহমান শালিক পাখিকে যথার্থভাবে রৌদ্রছায়ার মালিক বলেছেন, কারণ এই পাখি ছায়া-রোদ, গ্রাম-শহর, মাঠ-ঘাট-প্রান্তর কোথায় নেই! সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত এদের বিচরণ জঙ্গল থেকে বাড়ির উঠোন। শালিক পাখি চেনে না এমন বাঙালি পাওয়া মুশকিল। ছোটবেলায় শালিক পাখিকে চিনতাম ‘বনি’ (উচ্চারণ বোনি) পাখি হিসেবে। সুন্দরবন অঞ্চলের গ্রাম্য মানুষ আজও এদের বনি পাখি বলে। মেদিনীপুর অঞ্চলেও এই নাম প্রচলিত। ‘বাণী’ শব্দ থেকে কি ‘বনি’ নামের উৎপত্তি? এদের পোষ মানানো যায় এবং মানুষের কথা ভালোই নকল করতে পারে। বাণী অর্থাৎ কথা বলতে পারে বলেই হয়তো এমন আঞ্চলিক নাম হয়েছে।

আমাদের বাড়িতে কেউ না মানলেও স্কুলের অনেক ছাত্র-ছাত্রী বা আমার আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীকে দেখতাম জোড়া শালিক দেখলে কপালে দু’হাত ঠেকিয়ে নমস্কার করতে। বলতে শুনেছি, “দিনটা ভালো যাবে।” এ নিয়ে একটা লোকগানও শুনেছি ছোট থেকে—“জোড়া শালিক দেখা ভালো সকালে, বিকালে…”। একটা শালিক দেখলে নাকি দিন ভালো যায় না। পরে বুঝেছি, এ নেহাত কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। শালিক জোড় বা বিজোড় দেখার সঙ্গে মানুষের ভবিতব্যের কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। তবে এ থেকে এটুকু বোঝা যায় যে, শালিকের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বহু পুরোনো, অবিচ্ছেদ্য।
আমাদের বাড়িতে খাঁচায় কখনও শালিক পাখি পোষা না হলেও আমাদের অনেক আত্মীয় ও আমার অনেক বন্ধুর বাড়িতে খাঁচায় পুষতে দেখেছি। পোষা শালিকের খাঁচার পাশে এসে অন্য শালিকদের চ্যাঁচামেচি করতেও দেখেছি। কেউ কেউ তো খাঁচার তারে ঠোক্কর দিত বন্দি শালিককে বের করার জন্য। তবে আমাদের গ্রামের বাড়িতে শালিকদের বংশপরম্পরায় খাওয়ানোর ব্যবস্থা ছিল সকাল-বিকাল। সকালে যখন চা-বিস্কুট খাওয়া হত তখন ওদের জন্যও বরাদ্দ থাকত বিস্কুট। মা বা বাবা, পরে আমাদের ভাইবোনের মধ্যে কেউ না কেউ বিস্কুট ভেঙে টুকরো করে ছুঁড়ে দিত সামনের চাতালে। প্রথম প্রথম এক জোড়া শালিক আসত। পরে তাদের বাচ্চারাও আসত।

এ ভাবে ওদের নাতি-পুতি হলে তারাও আসতে লাগল বিস্কুট খেতে। কোনও কোনও দিন বিস্কুট না থাকলে আমরা মুড়ি ছড়িয়ে দিতাম। এতে ওদের তেমন কোনও ভাবান্তর দেখিনি। ওরা যা পেত তাতেই খুশি হত। কিছুদিন আগে স্কুলে যাওয়ার পথে দেখলাম একজন লোকের কাঁধে একটা শালিক বসে আছে। লোকটি বাজারের মধ্যে দিয়ে দিব্যি হেঁটে চলেছে, আর শালিকটিও এদিক-ওদিক ঘাড় বেঁকিয়ে লোকজন দেখছে। বোঝা গেল, এটি পোষা শালিক। এই ঘটনা দেখে চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বছর আগেকার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮৭: সুন্দরবনের পাখি — ফিঙে

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭১: ধর্মকার্যের জন্য টাকা জোগাড় করা আর সাদা কাপড়ে ময়লা লাগিয়ে ধোয়া, দুই-ই সমান

আমাদের পাড়ার অমূল্যদা একবার ঝড়ে পড়ে যাওয়া বাসা থেকে একটা শালিকের বাচ্চা উদ্ধার করে পুষেছিল। আঘাত লাগার জন্য ছোটো থেকেই শালিকটা খুঁড়িয়ে হাঁটত। সেও দেখেছি অমূল্যদার কাঁধে বসে পাড়ায় পাড়ায় দিব্যি ঘুরে বেড়াত। আর আমার স্কুল হল শালিকদের আঁতুড়ঘর। দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে দেখছি স্কুলের বারান্দায়, ছাদে এবং সামনের মাঠে ওদের অবাধ বিচরণ ও কলকাকলি। বারান্দা ও বিভিন্ন ক্লাসরুমের ভেন্টিলেটর হল ওদের বাসা বানানোর জায়গা। মাঝে মাঝে ক্লাস চলাকালীন জানালায় এসে বসে বা লাফাতে লাফাতে ক্লাসে ঢুকেই পড়ে। খুব সাহস ওদের। আর মাঝে মাঝে সবাই মিলে ক্যাচোর-ম্যাচোর করে এমন চিৎকার জুড়ে দেয় যে কান ঝালাপালা হয়ে যায়।

পায়রা, কাক ও চড়ুইয়ের পর মানুষের খুব কাছাকাছি থাকা পাখি হল শালিক। বেশিরভাগ সময় এক জোড়া বা দু’জোড়া শালিক দেখা যায়। প্রতি জোড়ে অবশ্যই একটা স্ত্রী ও একটা পুরুষ শালিক থাকে। এ জোড় ওদের আমরণ থাকে। ওরা সত্যিকারের ‘অমরসঙ্গী’। তবে স্ত্রী-পুরুষ চেনা খুব মুশকিল, কারণ খালি চোখে একইরকম দেখতে। আকারও একইরকম। পাশাপাশি জোড়া পায়ে লাফিয়ে কিংবা লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে ওরা খাবার সংগ্রহ করে। আবার পাশাপাশি বসে আদর্শ দম্পতির মতো কখনও মৃদু স্বরে নিজেদের মধ্যে প্রেমালাপ করে তো কখনও গলা উঁচিয়ে ঝগড়া করে। কখনও পাঁচিলে বা কার্নিশে বা গাছের ডালে বসে একা একা আপন মনে ঘাড় বেঁকিয়ে নানারকম শব্দ করে। তবে অন্য এলাকা থেকে কোনও শালিক ওদের এলাকায় ঢুকলে সবাই মিলে রীতিমতো চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। বট, অশ্বত্থ ইত্যাদির মতো বড় গাছে বা কোনও বড় বিল্ডিং-এ অনেক শালিককে একসঙ্গে থাকতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০২: অন্ধকারে কে?

উপন্যাস: আকাশ এখনও মেঘলা

এদের সাহস নিয়ে আগেই লিখেছি। একবার আমার স্কুলের মাঠে হাঁটু-সমান ঘাসের মধ্যে থেকে হঠাৎ শালিকদের প্রবল চেঁচামেচির সঙ্গে লাফালাফি নজরে এল। ব্যাপারখানা বোঝার জন্য এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল একটা গোখরো সাপ ঘাসের জঙ্গলে ফনা উঁচিয়ে আছে, আর তাকে ঘিরে রয়েছে কয়েকটি শালিক। আমি একটা লাঠি নিয়ে এগোতে শালিকগুলো আমার উপর বিরক্ত হয়ে একটু দূরে সরে গেল। কিন্তু এই সুযোগে সাপটা ঘাসের জঙ্গলে থাকা ইঁদুরের গর্তের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল। আমি হতাশ হয়ে ফিরে আসার পর শালিকগুলো ফের ওই জায়গায় গিয়ে সাপটাকে খোঁজার চেষ্টা করল। কিন্তু দেখতে না পেয়ে এমন চেঁচামেচি শুরু করল যে মনে হল ওরা আমার ব্যর্থতাকে বিদ্রূপ করছে! শুধু সাপ নয়, বেজি, বাজ, চিল ইত্যাদি দেখতে পেলেও ওরা চেঁচামেচি করতে থাকে। এদের চলাফেরা, আচার আচরণের মধ্যে মানুষের প্রতি একটা “ডোন্ট কেয়ার” মনোভাব দেখা যায়। খাবার-দাবারের ব্যাপারেও এদের তেমন কোনও বাছবিচার নেই। পোকামাকড়, পতঙ্গ, শস্য, ফল—সবই রয়েছে এদের খাবারের তালিকায়।

গ্রামের দিকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ধানের বীজতলা ফেলার জন্য যখন মাঠে লাঙল দেওয়া হয় তখন শালিকদের সেখানে হাজির হয়ে মাটি থেকে বের হওয়া কেঁচো ও পোকাদের ধরে খেতে দেখা যায়। মাঠে গোরু বাঁধা থাকলেও তাদের ক্ষুরের আঘাতে মাটি থেকে বেরিয়ে আসা পোকা খাওয়ার জন্য আশেপাশে দেখা যায়। ক্ষেতে জলসেচ করার সময় মাটি থেকে কেঁচো ও পোকামাকড় বেরিয়ে আসে বলে ওই সময় শালিকদের ক্ষেতে দেখা যায়। আবার দল বেঁধে ফলন্ত বট, অশ্বত্থ গাছে ফল খেতেও দেখা যায়। তাছাড়া মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি গৃহস্থের খাবার তো আছেই।

(বাঁদিকে) তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা শালিক দম্পতির। (ডান দিকে) খাবারের সন্ধানে শালিক দম্পতি। ছবি: লেখক।

শালিককে হিন্দিভাষীরা ময়না বলে। বাংলায় অবশ্য শালিকই বলা হয়। ইংরেজিতে বলে ‘Common Myna’। বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘Acridotheres tristis tristis’ (অ্যাক্রিডোথেরেস ট্রিসটিস ট্রিসটিস)। দক্ষিণ কাজাকস্তান, উজবেকিস্তান, পূর্ব ইরান, দক্ষিণ চিন, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভূটান এবং ভারত হল এদের আবাসস্থল। শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে ভিন্ন উপপ্রজাতি দেখা যায়। এদের আকার বুলবুল পাখির থেকে কিছুটা বড়ো, আবার পায়রার থেকে সামান্য ছোটো। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত লম্বা প্রায় ন’ইঞ্চি। বেশ গোলগাল চেহারা। মাথা, গলা ও ঘাড় কালো হলেও মাথার রঙ গাঢ় কালো এবং গলা ও ঘাড়ের রং ক্রমশ ফিকে কালো। বুকের রং আরও ফিকে কালো। ডানার উপরের ও পেটের পালক চকোলেট রঙের। ডানার শেষ প্রান্ত ও লেজের উপরের পালকের রং কালো বা গাঢ় খয়েরি। তবে ওড়ার সময় ডানায় কয়েকটা সাদা পালকের উপস্থিতি বোঝা যায়। আবার লেজের প্রান্তেও কয়েকটি সাদা পালক থাকে। লেজের তলা ও পেটের পেছনের দিকের রং সাদা। এদের চঞ্চু ও পায়ের রঙ গাঢ় হলুদ। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল এদের চোখ। লালচে-খয়েরি চোখকে ঘিরে উপবৃত্তাকার পালকহীন গাঢ় হলুদ চামড়া চোখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

সকাল ও বিকেলে এদের চঞ্চলতা থাকে অনেক বেশি। গ্রীষ্মকালে দুপুরের সময় কোনও ছায়াচ্ছন্ন জায়গায় বসে এরা বিশ্রাম নেয়। বিশ্রামের সময় সাধারণত পুরুষ শালিক ‘কিক-কিউ-কিউ-কিউ’, ‘কিউ-কিউ-কিউ-চারর-চারর’, ‘চাক-চা-চা-চারর-চারর’ ইত্যাদি নানারকম শব্দ করে ডাকে। আর মাঝে মাঝে পালক ফুলিয়ে সঙ্গিনীর মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসে। আবার খুব গরমে দুপুরের দিকে কোথাও জল পেলে পালক ভিজিয়ে স্নান করতেও দেখা যায়। ভারী অদ্ভুত এদের হাঁটার ধরণ। খাবার খোঁজার সময় সাধারণত লম্বা লম্বা পদক্ষেপে হাঁটতেই দেখা যায়। মাথাটা তখন সামনে-পেছনে এমনভাবে আন্দোলিত হয় যে দেখে মনে হয় বেশ রাশভারী প্রকৃতির পাখি। হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে সামান্য একটু দূরত্ব উড়ে গিয়ে ফের হাঁটা শুরু করে। হাঁটার মাঝে মাঝে আবার জোড়া পায়ে কিছুটা লাফিয়ে যেতেও দেখা যায়।
আরও পড়ুন:

ভাসাবে দোঁহারে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৬: জীবন নিয়ে কৌতুক আর ‘যৌতুক’

এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস হল এদের প্রজননের সময়। তবে এর অন্যথা হতেও দেখা যায়। কখনও কখনও বছরে দু’বার প্রজনন হতেও দেখা গিয়েছে। ভেন্টিলেটরে, অ্যাসবেসটস বা টিনের চালার নিচে কাঠামোয়, দেওয়ালের ফাঁকে, কার্নিশে, গাছের কোটরে—এমনই নানা জায়গায় শালিক বাসা বানায়। অনেক সময় কাক, চিল, কাঠঠোকরা বা টিয়া পাখির পরিত্যক্ত বাসাও ওরা ব্যবহার করে। রেল স্টেশনে শেডের নিচে কাঠামোয় এদের বাসা দেখা যায়। বাসা বানানোর ক্ষেত্রে এদের সৌন্দর্যবোধের অভাব বড়ই প্রকট। যেনতেন প্রকারে যা খুশি উপকরণ দিয়ে বাসা বানায়। উপকরণের মধ্যে রয়েছে ছেঁড়া কাগজ, প্লাস্টিক, ঘাস, খড়, ন্যাকড়া, দড়ি, সুতো ইত্যাদি। বাসা বানানোর ও ডিমে তা দেওয়ার দায়িত্ব স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের। সাধারণত এক একবারে একটা স্ত্রী শালিক ৪-৫ টি নীলচে রঙের ডিম পাড়ে। ডিমগুলো লম্বাটে আর শক্ত খোলকযুক্ত। ডিমের উপরে কোনও ছিট দাগ নেই। ১৭-১৮ দিন তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চারা বেরিয়ে আসে। এর পর ২২-২৪ দিন ধরে মা ও বাবা শালিক বাচ্চাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নেয়। তারপর তারা বাবা মায়ের সঙ্গে খাবার সংগ্রহে বেরোয়। ন’মাস থেকে এক বছর বয়সে এরা প্রজননক্ষম হয়। স্থানভেদে এদের আয়ু ৪-১২ বছর হতে পারে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০১: অর্জুন প্রমাণ করলেন, রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে মিথ্যাচারের কোনও স্থান নেই

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১১১: মৃণালিনীর মৃত্যুর পর বিবাহ-প্রস্তাবের মুখোমুখি রবীন্দ্রনাথ

শালিক পাখি এতটাই নিজেদের অভিযোজিত করতে সক্ষম যে গ্রাম থেকে শহর, পাহাড় থেকে উপকূল, শীতল এলাকা থেকে রুক্ষ এলাকা—সর্বত্র এরা বেঁচে থাকতে পারে। আর তাই এদের বিপন্নতার কোনও আপাত-সম্ভাবনা নেই। বরং শালিক পাখিকে নিয়ে বহু দেশ পড়েছে গভীর সমস্যায়। ২০০০ সালে আইইউসিএন (IUCN) দ্বারা প্রস্তুত বিশ্বের সবচেয়ে উপদ্রব সৃষ্টিকারী ১০০ প্রজাতির তালিকায় থাকা তিনটি পাখির মধ্যে শালিককে অন্যতম হিসেবে স্থান দেওয়া হয়েছে। অষ্টাদশ শতকে ফরাসিরা তাদের অধিকৃত মরিশাস দ্বীপে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনের জন্য দক্ষিণ ভারতের পণ্ডিচেরী থেকে কয়েকটি শালিক নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেয়। এতে প্রথম প্রথম ফরাসিদের উদ্দেশ্য পূরণ হয়। তখন মরিশাসে আইন প্রণয়ণ করা হয় যে শালিক পাখি হত্যা করা জরিমানাযোগ্য অপরাধ।

সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে দেশি শালিক পাখিকে বহু দেশের প্রশাসন নিজেদের দেশে আমদানি করে, যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার নানা দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, স্পেন, ইজরায়েল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, ফিজি, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ইত্যাদি। অস্ট্রেলিয়াতে ১৮৬৩ ও ১৮৭৩ সালে ভিক্টোরিয়াতে পোকামাকড় দমনের জন্য শালিক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর ওদের এতটাই বংশবৃদ্ধি হয়েছে যে ওদের দৌরাত্মে বহু স্থানীয় প্রজাতির পাখি এখন অবলুপ্তির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু কি তাই, এরা ফসল খেয়ে চাষির ক্ষতি করছে, আগাছার বীজ খেয়ে মলের সঙ্গে অন্যত্র সেই বীজ ত্যাগ করে দ্রুত আগাছা বিস্তার করছে এবং পাখিদের বেশ কিছু রোগও ছড়াচ্ছে।

(বাঁদিকে) দুই শালিকের ঝগড়া ও লড়াই। (ডান দিকে) জোড়া শালিক। ছবি: সংগৃহীত।

অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বহিরাগত প্রজাতি হিসেবে শালিক সমস্যা তৈরি করেছে। তবে সুন্দরবন অঞ্চলে শালিক কারও ক্ষতি করেছে বা কারও বিরক্তির উদ্রেক করেছে বলে জানা নেই। তাই রূপে, আচরণে ও স্বভাবে রৌদ্রের মতো উজ্জ্বল শালিক পাখি সুন্দরবনবাসীর কাছে তথা সমস্ত বাঙালির কাছে আদরণীয়। কারণ যুগ যুগ ধরে ওরা অজান্তেই আমাদের সবার পরিবারের, আমাদের সবার পাড়ার সদস্য হয়ে উঠেছে। ওরা প্রকৃত অর্থেই রৌদ্র-ছায়ার মালিক। —চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’ -এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content