![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Sundarban_82A.jpg)
টিয়ার ছানারা। ছবি: সংগৃহীত।
রাত দশটা বাজতে চলল। গোটা পাড়া শুনশান হয়ে গিয়েছে। বারান্দায় বসে মা আর আমার দু’জোড়া চোখ নির্নিমেষ খুঁজছে নিকষ অন্ধকারে সামনের রাস্তায় দ্রুত এগিয়ে আসা টর্চ লাইটের কোনও আলো। সেই কাকডাকা ভোরে বাবা কলকাতায় রওনা দিয়েছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা জমা দিতে। প্রত্যন্ত সুন্দরবনের এক অজ গাঁ থেকে আজ থেকে ৪৩ থেকে ৪৪ বছর আগে কলকাতায় গিয়ে সেই দিনেই ফিরে আসা ছিল খুবই দুঃসাধ্য। গ্রামের পথে আবার সাপ-খোপের ভয় তো আছেই। তাই বাবার জন্য আমাদের টেনশন হওয়াটা স্বাভাবিক।
অবশেষে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাবা পা রাখল উঠোনে। আমাদের উৎকন্ঠার শেষ। কিন্তু বাবার হাতে একটা খাঁচা কেন? ও মা! খাঁচার ভেতর একটা বাচ্চা টিয়াপাখি! মা, ঠাকুমা ও আমার কৌতুহল তখন ঝুঁকে পড়েছে খাঁচাটার উপর। বাবা বলল, “হাতিবাগান থেকে কিনে নিয়ে এলাম।”
অবশেষে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাবা পা রাখল উঠোনে। আমাদের উৎকন্ঠার শেষ। কিন্তু বাবার হাতে একটা খাঁচা কেন? ও মা! খাঁচার ভেতর একটা বাচ্চা টিয়াপাখি! মা, ঠাকুমা ও আমার কৌতুহল তখন ঝুঁকে পড়েছে খাঁচাটার উপর। বাবা বলল, “হাতিবাগান থেকে কিনে নিয়ে এলাম।”
বাবা টিয়াপাখিটার নাম দিয়েছে পিটু। কী সুন্দর মখমলের মতো নরম সবুজ পালক। ঠোঁটটা টুকটুকে লাল। আমাদের মাটির বাড়ির দালানে পিটুর স্থান হয়েছে। আমাদের সুন্দরবন এলাকায় টিয়াপাখি ছোট থেকেই আমি দেখে আসছি। ঝাঁক ঝাঁক টিয়া ধান পাকলে মাঠে এসে ধান খায়। গাছে পেয়ারা পাকলে ঠুকরে ঠুকরে পাকা পেয়ারা খায়। সবুজ পাতার আড়ালে ওদের সহজে দেখা না গেলেও ‘কিঁইয়াক কিঁইয়াক’ ডাক শুনেই বোঝা যেত ওরা হাজির। কলা, আপেল, পেয়ারা, ছোলা—নানারকম খাবার দেওয়া হচ্ছে পিটুকে। বাটি করে জলও দেওয়া হয়েছে খাঁচার ভেতর। জানতাম, টিয়াপাখি কথা বলতে শেখে। ফলে যে যার মতো কথা শেখানোর চেষ্টা করতে লাগল। তবে আমি শুধু শিস দিতাম ওর সামনে গিয়ে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/12/Sundarban_B.jpg)
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮১: সুন্দরবনের পাখি—বেনে বউ
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/12/Rabindranath-4.jpg)
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-১০৫: রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন মহর্ষিদেবকে
ধীরে ধীরে পিটু বড়ো হয়ে উঠতে লাগল। সে তখন ফলমূল ছাড়াও ডাল-ভাত-সবজিতে বেশ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। কথা শেখানোর অত্যাচারে মনে হয় সে কিছুই শিখতে পারেনি। আসলে সারা বছরের সিলেবাস একটা ক্লাসে শেষ করতে গেলে যা হয়! পিটু কিন্তু ইতোমধ্যে আমাদের পরিবারের একটা গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছে। গলায় কোনো কালো বেড়ি দাগ তৈরি না হওয়ায় বাবা বলেছিল, এটা স্ত্রী টিয়া। ছোটোবেলায় টিয়ার স্ত্রী-পুরুষ বোঝা যায় না, একইরকম দেখতে হয়। পুরুষ টিয়া হলে দেড় বছর বয়সের মধ্যে গলায় পাশাপাশি একটা গোলাপি ও একটা কালো রঙের বেড়ি দাগ তৈরি হয়। অবশ্য পিটুর গলা ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যেত হালকা হলদেটে একটা বেড়ির মতো দাগ আছে। স্ত্রী টিয়ার এরকম হালকা দাগ থাকে। যাইহোক, সবার আদরে পিটু বেড়ে উঠছিল বহাল তবিয়তে। পিটুর খাঁচার দরজা সবসময়ই খোলা থাকত। সে তার ইচ্ছেমত খাঁচার ভেতরে যেত। কখনও খাঁচার ওপরেই বসত। আর বেশিরভাগ সময় সারা ঘর ঘুরে বেড়াত। বাড়িতে কোনও বেড়াল ছিল না, এটাই রক্ষে!
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Sundarban_82B.jpg)
পাকা আম ভক্ষণরত টিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
এ ভাবেই কেটে গেল প্রায় তিন বছর। ফাল্গুন মাসের শেষ। তখনও শীতের মিঠে রোদ গায়ে মাখতে নেশা জাগে। আমাদের গ্রামের মাঠে মাঠে খেসারি কলাই পাকতে শুরু করেছে। সকাল থেকেই মাঠে মাঠে গ্রামের মেয়েরা খেসারি কলাইয়ের গাছ ওপড়াচ্ছে। সেদিন ছিল একটা রবিবার। আমাদের মাঠেও পাড়ার কয়েকজন মহিলাকে দিয়ে খেসারি কলাই ওপড়ানো হচ্ছিল। আমি, বাবা আর ভাই আর মা গিয়েছিলাম মাঠে। পিটু ছিল বাড়িতেই, যেমন সবসময় থাকে। আধঘন্টা পর আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। মা উঠোনে পা দিয়েই চিৎকার করে উঠল, “সর্বনাশ হয়েছে!” দেখি মায়ের দৃষ্টি নিবদ্ধ মেঝেতে পড়ে থাকা দু’তিনটে সবুজ পালকের ওপর। স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে রইলাম আমি আর বাবা। আমরা বাকরুদ্ধ। মায়ের চোখ দিয়ে গড়াতে লাগল অশ্রুধারা। বুঝতে বাকি রইল না, পিটু খাদকের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। আমি, বাবা, মা সবাই বাড়ির আশেপাশে অনেক খুঁজলাম, যদি মৃত পিটুকেও পাওয়া যায়। কিন্তু না। পিটুর খাদক আমাদের জন্য ওই দু’তিনটে পালক ছাড়া আর কিছুই রেখে যায়নি। মা পিটুকে হারিয়ে সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় কাঁদতে লাগল। তিন বছর ধরে আমাদের পরিবারের সবার প্রিয় সদস্য পিটুর জন্য ভেঙে পড়লাম আমরাও। আজও জানতে পারিনি সাপ, নাকি বেড়াল, নাকি অন্য কোনো প্রাণী ছিল পিটুর খাদক।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/12/Maa-sarada.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭৮: মা সারদার ‘পরকে আপন করা’
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Pisah-Pahar_Novel_EP-97.jpg)
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৯৭: ভাগ নুনিয়া, ভাগ
এর পর কেটে গেল আরও দু’তিনটে বছর। পিটুর স্মৃতি মনের কোণে উজ্জ্বল থাকলেও তার জন্য শোকের ভার স্বাভাবিক নিয়মেই অনেক হাল্কা হয়ে গেল। ঠিক এই সময় মার্চ মাসের এক রোববারের বিকেলে আমার এক জ্যাঠতুতো দাদা একটা বাচ্চা টিয়াপাখি খাঁচায় ভরে নিয়ে হাজির হল আমাদের বাড়িতে। পিটুকে যখন বাবা কিনে এনেছিল তার থেকে এটা আর একটু বড় হবে। জানতে পারলাম, গাছের কোটরে বাসার ভেতর থেকে গোপালদাদা একে ধরেছে। মুহূর্তে পিটুর স্মৃতি জ্বলজ্বল করে উঠল মনে মধ্যে। বাবা গোপালদাকে বকুনি দিল, “যা, এক্ষুনি একে বাসায় রেখে দিয়ে আয়।” মা বাধা দিয়ে বলল, “আহা, এনেইছে যখন, থাক না।” মায়ের সাথে আমিও বায়না জুড়লাম পুষব বলে। অগত্যা বাবা গোপালদাকে বলল, “আচ্ছা, রেখে যা। আর পাঁচ টাকা নিয়ে যা। জিলিপি কিনে খাবি।” পিটুর খাঁচাটা গোয়ালঘরের মাচাতে তোলা ছিল। ঝুল ঝেড়ে সাফসুতরো করে পিটুর খাঁচাতেই স্থান হল এই নতুন সদস্যের। বাবা এর নাম দিল—বুলু।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Sundarban_82C.jpg)
বামদিকে স্ত্রী ও ডানদিকে পুরুষ টিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
যথারীতি পিটুর মতোই বুলুকে শেখানো-পড়ানো, খাওয়ানো শুরু হল। তবে পিটুর অকালমৃত্যু আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, বুলুকে খাঁচার বাইরে ঘুরে বেড়ানোর শিক্ষা দেব না। দেড় বছর পরে বুলুও আমাদের বুঝিয়ে দিল যে সেও পিটুর মতো স্ত্রী টিয়া, কারণ গলায় কোনও গোলাপি ও কালোরঙা বেড়ি তৈরি হল না। পিটুর তুলনায় বেশি ছটপটে বুলু। বাবা ওকে খাঁচার দরজা খুলে খাবার দিত। আমি ও মা খাবার দিতে গেলে আঙুলে ঠোক্কর দিত। তাই বাবা ছাড়া আর কেউ ওকে খাবার দিত না। সে বাবার বাম হাতে বসে ডান হাত থেকে খাবার খেত। কখনও কখনও বাবার হাত থেকে গুটি গুটি পায়ে বেয়ে কাঁধে উঠে যেত। বাবা ওকে বলতে শিখিয়েছিল— “খোকা খেতে দাও”। এক্কেবারে স্পষ্ট উচ্চারণ করত। অনেকক্ষণ পর বাবাকে দেখতে পেলে ‘খোকা খেতে দাও, খোকা খেতে দাও’ বলে চিৎকার করতে করতে খাঁচার ভেতর লাফালাফি শুরু করে দিত।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Mahakavya_2.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৯৬: রাজনৈতিক পরিসরে অখ্যাতি ও সন্দেহর আবিলতা থেকে কি মুক্তি সম্ভব?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/12/Panchatantra_EP-69.jpg)
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৯: টাকা-পয়সা থাকলে চোর-ডাকাতকেও লোকে সম্মান দেখায়
এ ভাবে বুলুকে নিয়ে নিশ্চিন্তে কেটে গেল প্রায় চার বছর। সারা বছর বুলু থাকত আমাদের দালানে চালা থেকে ঝোলানো খাঁচায়। মে মাসের সেদিন সন্ধ্যের আগে আকাশ কালো করে মেঘ ছেয়ে গেল দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে। আকাশ চিরে দিতে লাগল মুহূর্মুহু বিদ্যুৎ। মেঘেদের গর্জন শুরু হল। হঠাৎই পুরো আকাশটা যেন আলোয় ভরে গেল। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক প্রবল গর্জনে পুরো আকাশ যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেল। আমি, ভাই, বোন ও মা বাড়িতে ছিলাম। আমরা রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সবাই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বসেছিলাম। কিছুক্ষণ পর মেঘেদের গর্জন কমে এল। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হল। মা দরজা খুলে বেরিয়েই আর্তনাদ করে উঠল, “বুলু মরে গিয়েছে!”
বুলুর শোকে সেদিনও আমরা খুব কেঁদেছিলাম। আমাদের অসতর্কতায় যেভাবে পিটুর প্রাণ গিয়েছিল, সেভাবে আমাদের অজ্ঞতায় প্রাণ গেল বুলুর। বজ্র-বিদ্যুতের বিপদ থেকে বাঁচতে আমরা ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিলাম, অথচ বুলুর কথা মাথাতেই এল না। সে রয়ে গিয়েছিল দালানে। বজ্রনাদের দুর্দম অভিঘাত সহ্য করার ক্ষমতা ওইটুকু ছোট্টো পাখির ছিল না।
বুলুর শোকে সেদিনও আমরা খুব কেঁদেছিলাম। আমাদের অসতর্কতায় যেভাবে পিটুর প্রাণ গিয়েছিল, সেভাবে আমাদের অজ্ঞতায় প্রাণ গেল বুলুর। বজ্র-বিদ্যুতের বিপদ থেকে বাঁচতে আমরা ঘরের মধ্যে আশ্রয় নিলাম, অথচ বুলুর কথা মাথাতেই এল না। সে রয়ে গিয়েছিল দালানে। বজ্রনাদের দুর্দম অভিঘাত সহ্য করার ক্ষমতা ওইটুকু ছোট্টো পাখির ছিল না।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Sundarban_82D.jpg)
কোটর বাসার সামনে পুরুষ টিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
এর পর থেকে আমরা আর কখনও কোনও পাখি বাড়িতে পুষিনি। তবে টিয়াদের ঝাঁক বেঁধে ধানক্ষেতে বসা বা উড়ে যাওয়া প্রায়শই দেখতাম। ধানক্ষেতে টিয়াপাখি তাড়ানোর জন্য ক্যানেস্তারা পেটানো হত। সে ছিল ভারি মজার অভিজ্ঞতা। ক্ষেতের মাঝে একটা বাঁশ পুঁতে তাতে একটা টিনের পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হত। টিনের পাত্রের সাথে একটা দড়ি বাঁধা থাকত, আর দড়ির প্রান্ত থাকত বাড়িতে। মাঝে মাঝে ওই দড়ি ধরে টান দিলে বাঁশের সাথে টিনের আঘাতে বেশ জোরে শব্দ তৈরি হত। আর তাতেই ভয় পেয়ে টিয়ার দল উড়ে পালাত।
ভারতীয় টিয়া ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। এদের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘Psittacula krameri’, উপপ্রজাতি ‘Manillensis’।
ভারতীয় টিয়া ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। এদের বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘Psittacula krameri’, উপপ্রজাতি ‘Manillensis’।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/12/Shyam-Benegal.jpg)
শ্যাম বেনেগল সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে পারতেন
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/12/Special-Story-1.jpg)
গল্পবৃক্ষ, পর্ব-১২: দর্দরজাতক
পূর্ণবয়স্ক টিয়া লম্বায় হয় প্রায় ১৬ ইঞ্চি। আর ওজন প্রায় ১২৫ গ্রাম। প্রায় দেড় বছর বয়স হলে এরা প্রজননে সক্ষম হয়। তখন একটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ টিয়া জোড় বাঁধে। এই জোড় অবশ্য স্থায়ী নয়। পরের বার তারা ভিন্ন সঙ্গী নির্বাচন করতেই পারে। জোড় বাঁধার পর তারা প্রজননের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকে। সাধারণত গাছের গায়ে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া কোনও গর্ত কিংবা কাঠঠোকরা বা বসন্তবৌরির পরিত্যক্ত বাসা কিংবা কোনও বাড়ির গায়ে কোটরের খোঁজ করে। বাসা নির্বাচন হয়ে গেলে বাসায় স্ত্রী পাখি ২-৬টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী টিয়া প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চারা বেরিয়ে এলে বাবা-মা উভয়ে মিলে তাদের পরিচর্যার দায়িত্ব নেয়। বাবা বা মা টিয়া খাবার নিয়ে এলে গর্তের মধ্যে থেকে বাচ্চারা যখন মুখ বার করে তখন সে দৃশ্য দেখতে অপূর্ব লাগে। ৪০-৫০ দিনের মধ্যে বাচ্চারা উড়তে সমর্থ হয়। এদের গড় আয়ু ১৫ বছর হলেও পোষা অবস্থায় ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2025/01/Sundarban_82E.jpg)
ধানের ক্ষেতে টিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
ক্ষেতের ফসলে ভাগ বসায় বলে চাষির কাছে খুব অপছন্দের পাখি হল টিয়া। ফলবাগানের মালিকদেরও অপছন্দ। ফল যত না খায় তার থেকে বেশি আঁচড়ে-কামড়ে নষ্ট করে। ভারতীয় টিয়ারা খুব সহজে পোষ মানে বলে বাড়িতে পোষার জন্য টিয়ার বাসা থেকে বাচ্চা চুরি করার ঘটনা প্রায়শই ঘটে। ফাঁদ পেতেও পরিণত টিয়া ধরা হয়। তাছাড়া ফসল চাষে কীটনাশকের বহুল ব্যবহারের ফলে বিষক্রিয়ায় টিয়া মারা যাচ্ছে বা বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। নগরায়নের জন্য জঙ্গল ধ্বংস ও বৃক্ষচ্ছেদন কেড়ে নিয়েছে টিয়াপাখিদের থাকার জায়গা। আর তাই সুন্দরবন অঞ্চলসহ দেশের সর্বত্র দিন দিন টিয়ায়াপাখির সংখ্যা কমছে। যদিও আইইউসিএন জানাচ্ছে যে ভারতীয় টিয়াদের আপাতত কোনও বিপন্নতা নেই, কিন্তু কোথাও কোথাও এদের সংখ্যা যথেষ্ট কমেছে। যেমন আমাদের সুন্দরবন এলাকায় গত ৩০/৪০ বছর আগে যত টিয়া দেখা যেত এখন আর তত দেখা যায় না। ধানক্ষেতগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিয়াদের ‘উপদ্রব’ থেকে মুক্ত।
তবুও মাঝে মাঝে যখনই কোনও টিয়ার ঝাঁক উড়ে যেতে দেখি মনে হয় ওদের মধ্যে আমাদের পিটু আর বুলুও উড়ে যাচ্ছে। যখনই কোথাও ‘কিঁইয়াক কিঁইয়াক’ শব্দ শুনি, তখনই সেই শব্দ অনুসরণ করে চোখ পাতার আড়ালে খোঁজ করতে থাকে আমাদের পিটু ও বুলুকে। মনে হয় এই বুঝি কানে ভেসে আসবে সেই চেনা ডাক—‘খোকা খেতে দাও’! —চলবে।
তবুও মাঝে মাঝে যখনই কোনও টিয়ার ঝাঁক উড়ে যেতে দেখি মনে হয় ওদের মধ্যে আমাদের পিটু আর বুলুও উড়ে যাচ্ছে। যখনই কোথাও ‘কিঁইয়াক কিঁইয়াক’ শব্দ শুনি, তখনই সেই শব্দ অনুসরণ করে চোখ পাতার আড়ালে খোঁজ করতে থাকে আমাদের পিটু ও বুলুকে। মনে হয় এই বুঝি কানে ভেসে আসবে সেই চেনা ডাক—‘খোকা খেতে দাও’! —চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।