আমাকে বাড়ি পৌঁছতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমি নিজেই টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড হয়ে তারতলা মাঝেরহাট স্টেশন ঘুরে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি এখন যতই তাড়াহুড়ো করি না কেন উড়ে উড়ে যেতে পারব না। এর মধ্যে আমি মাকে দু-দুবার ফোন করে জানতে চেয়েছি কারও ফোন এসেছিল কিনা? মা না বলেছে।
বাড়ি পর্যন্ত ট্যাক্সিকে নিয়ে যেতে আমাকে অনেক কসরৎ করতে হয়েছে। মেনরোড থেকে এতটা ভেতরে লোকটি যাবে না। আমি তাকে বোঝাই আমার তাড়াতাড়ি বাড়ি পোঁছনো খুব জরুরি। বাড়ির সামনে পৌঁছনো পর থামতে বলতেই লোকটি খেপে গেল। এত সরু রাস্তা গাড়ি ঘোরাবার জায়গা নেই। আমি বললাম আমি গাড়ি ঘুরিয়ে আনার পর ট্যাক্সি ছাড়ব। লোকটি খানিকটা শান্ত হল।
বাড়িতে ঢুকতেই মা বলল
—বুনি ফোন করেছিল। আবার করবে।
আমি অবাক। হঠাৎ বুনি ফোন করেছিল এতদিন বাদে? নববর্ষে বিজয়ার পর আর ভাইফোঁটায় নিয়ম করে ফোন করে বুনি। কিন্তু নিয়মিত খোঁজখবর রাখার মতো যোগাযোগ নেই। আমিও করি না। আজ আচমকা ফোনে আমি যথেষ্ঠ অবাক এবং আশঙ্কিত! এটাই কি সেই খবর?
বাড়ি পর্যন্ত ট্যাক্সিকে নিয়ে যেতে আমাকে অনেক কসরৎ করতে হয়েছে। মেনরোড থেকে এতটা ভেতরে লোকটি যাবে না। আমি তাকে বোঝাই আমার তাড়াতাড়ি বাড়ি পোঁছনো খুব জরুরি। বাড়ির সামনে পৌঁছনো পর থামতে বলতেই লোকটি খেপে গেল। এত সরু রাস্তা গাড়ি ঘোরাবার জায়গা নেই। আমি বললাম আমি গাড়ি ঘুরিয়ে আনার পর ট্যাক্সি ছাড়ব। লোকটি খানিকটা শান্ত হল।
বাড়িতে ঢুকতেই মা বলল
—বুনি ফোন করেছিল। আবার করবে।
আমি অবাক। হঠাৎ বুনি ফোন করেছিল এতদিন বাদে? নববর্ষে বিজয়ার পর আর ভাইফোঁটায় নিয়ম করে ফোন করে বুনি। কিন্তু নিয়মিত খোঁজখবর রাখার মতো যোগাযোগ নেই। আমিও করি না। আজ আচমকা ফোনে আমি যথেষ্ঠ অবাক এবং আশঙ্কিত! এটাই কি সেই খবর?
বুনির বিয়েতে আমার যাওয়া হয়নি। মার সদ্য তখন চোখের ছানি কাটানো হয়েছিল। তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা স্ট্যালিনের বাবা এম করুণানিধির মতো চোখ সবসময় কালো চশমায় ঢাকা। ভদ্রলোকের চোখে কোন ইনফেকশন ছিল কিনা জানি না। কিন্তু দিনে রাতে সর্বক্ষণ সর্বত্রই এই কালো চশমাটাই আইকনিক চেহারা। করুণানিধি পেশায় চিত্রনাট্যকার ছিলেন। এছাড়াও গল্প কবিতা নাটক প্রবন্ধ লিখেছেন।
যাই হোক বুনির বিয়েতে না যাওয়ার অন্যতম কারণ নিশ্চয়ই আফিফা। দুবাই থেকে তার ধনী স্বামীকে নিয়ে আফিফার আগমন আমি খুব একটা ভালোভাবে নিতে পারব না। বুনি বুদ্ধিমতী। এটা বুঝেছিল বলেই এ নিয়ে আর কিছু কথা তোলেনি। বুনির বর বম্বেতে ব্যবসা করে বুনি ওখানেই থাকে। পরে অনেকবার বলেছে একবার ঘুরে আসতে। যাব যাব করে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
যাই হোক বুনির বিয়েতে না যাওয়ার অন্যতম কারণ নিশ্চয়ই আফিফা। দুবাই থেকে তার ধনী স্বামীকে নিয়ে আফিফার আগমন আমি খুব একটা ভালোভাবে নিতে পারব না। বুনি বুদ্ধিমতী। এটা বুঝেছিল বলেই এ নিয়ে আর কিছু কথা তোলেনি। বুনির বর বম্বেতে ব্যবসা করে বুনি ওখানেই থাকে। পরে অনেকবার বলেছে একবার ঘুরে আসতে। যাব যাব করে আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
আরও পড়ুন:
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১৩: বৃদ্ধার ঘন নীল চোখ দুটো যেন আমায় বিদ্ধ করল
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩১: বিড়াল ঘাঁটলেই কি ডিপথেরিয়া হতে পারে?
একবার ভাবলাম ফোনটা করি। তারপরে ভাবলাম শ্বশুরবাড়িতে নিশ্চয়ই কাজকর্মে ব্যস্ত। সময় করে নিজেই ফোন করবে। ছোটবেলায় আমাদের কোন অরবিট বা কক্ষ থাকে না। বড় হতে হতে ক্রমশ নিজের একটা নির্দিষ্ট গতিপথ তৈরি হয়ে যায়। ইচ্ছে করলেই সেই অরবিট থেকে ছিটকে যাওয়া যায় না।
একজন গল্প লিখিয়ে হিসেবে আমি দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি হয়তো আন্দাজ করতে পারি। কিন্তু তাতে ফাঁক থেকে যায়। ঠিক ঠিক উপলব্ধি হয়তো হয় না। কারণ বৈবাহিক জীবন যাপন আমার হয়ে ওঠেনি। বুনিকে বিয়ের পর এত দিনের মধ্যে এক-দু’ বার আমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখে যা মনে হয়েছে বুনি আগের থেকে অনেক চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। ওর স্বামী ব্যবসায়ী মানুষ। পারিবারিক অনুষ্ঠানে বুনি একাই আসে তিনি আসেন না। মানে বুনি তাঁকে তার বিয়ের আগের পরিমন্ডলে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় বলা যেতে পারে।
আসলে ব্যস্ত থাকার এমন একটা ওজর সব জায়গায় ব্যবহার করা যায়। কারণ এই শব্দটা শোনবার পর কেউই আপনার ব্যস্ততার সরেজমিন তদন্ত করবে না এটা আপনি জানেন। আর ব্যস্ততার আড়ালে আপনি দিব্যি পালিয়ে বেড়াতে পারেন। আমি আপনি সবাই জানি এই যে ব্যস্ততার কারণে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এটা একটা মিথ্যে যুক্তি। আমার আপনার মনের ইচ্ছে যদি থাকে তাহলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা সেই বিশেষ কারোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে পারি। তাদের অনুষ্ঠানের মুহূর্তে যেতে না পারলেও তার আগে বা পরে পৌঁছবার একটা সদিচ্ছা থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারি। এ সব থেকে আমার মনে হয়েছে যে বুনি, তার দাম্পত্য জীবনটাকে মানিয়ে নিয়েছে। বুনি বুদ্ধিমান তাই এ নিয়ে কোথাও কখনও কোনও অনুযোগ করেনি। তাই জ্ঞানীগুণীজনের আপ্ত্যবাক্য মেনে জীবন যা দিয়েছে সেটাতেই খুশি থাকার চেষ্টা করেছে। সুখে বা আনন্দে আছে কিনা সেটা বুনি জানে।
একজন গল্প লিখিয়ে হিসেবে আমি দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি হয়তো আন্দাজ করতে পারি। কিন্তু তাতে ফাঁক থেকে যায়। ঠিক ঠিক উপলব্ধি হয়তো হয় না। কারণ বৈবাহিক জীবন যাপন আমার হয়ে ওঠেনি। বুনিকে বিয়ের পর এত দিনের মধ্যে এক-দু’ বার আমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখে যা মনে হয়েছে বুনি আগের থেকে অনেক চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। ওর স্বামী ব্যবসায়ী মানুষ। পারিবারিক অনুষ্ঠানে বুনি একাই আসে তিনি আসেন না। মানে বুনি তাঁকে তার বিয়ের আগের পরিমন্ডলে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয় বলা যেতে পারে।
আসলে ব্যস্ত থাকার এমন একটা ওজর সব জায়গায় ব্যবহার করা যায়। কারণ এই শব্দটা শোনবার পর কেউই আপনার ব্যস্ততার সরেজমিন তদন্ত করবে না এটা আপনি জানেন। আর ব্যস্ততার আড়ালে আপনি দিব্যি পালিয়ে বেড়াতে পারেন। আমি আপনি সবাই জানি এই যে ব্যস্ততার কারণে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এটা একটা মিথ্যে যুক্তি। আমার আপনার মনের ইচ্ছে যদি থাকে তাহলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমরা সেই বিশেষ কারোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে পারি। তাদের অনুষ্ঠানের মুহূর্তে যেতে না পারলেও তার আগে বা পরে পৌঁছবার একটা সদিচ্ছা থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারি। এ সব থেকে আমার মনে হয়েছে যে বুনি, তার দাম্পত্য জীবনটাকে মানিয়ে নিয়েছে। বুনি বুদ্ধিমান তাই এ নিয়ে কোথাও কখনও কোনও অনুযোগ করেনি। তাই জ্ঞানীগুণীজনের আপ্ত্যবাক্য মেনে জীবন যা দিয়েছে সেটাতেই খুশি থাকার চেষ্টা করেছে। সুখে বা আনন্দে আছে কিনা সেটা বুনি জানে।
আরও পড়ুন:
বর্ষাকালে একটুতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু, কী ভাবে আটকাবেন? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের জরুরি পরামর্শ
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫: চন্দ্রমণির বধূবরণ
আচমকা ফোনটা বেজে উঠলো। চিন্তাস্রোত কেটে গিয়ে চমকে উঠলাম। তবে কি বুনির ফোন? তবে কি সেই খবর? কি আশ্চর্য আমি এত দুশ্চিন্তা করছি কেন? আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য তো আমাকে ফোন করতে পারে।
—হ্যালো, কে বুনি?
—হ্যাঁ, কি করে বুঝলে?
—মা যে বলল তুই ফোন করেছিলি, আবার ফোন করবি বলেছিস।
—ও।
একটা কথা খোঁজা বিরতি। আমিই শুরু করলাম
—তারপর বল তোর কি খবর!
—আমি? আছি।
বুনির গলায় সেই আক্ষেপ। যেটা আমার মনে হয়েছিল। প্রসঙ্গ বদলাতে হবে।
—তোর বাচ্চারা কেমন আছে?
—তারা মহানন্দে আছে।
—বাঃ।
—তোর তো এক ছেলে এক মেয়ে।
—হ্যাঁ?
—ছেলে না মেয়ে কে বড়?
—ছেলে। তুমি কেমন আছো?
—হ্যালো, কে বুনি?
—হ্যাঁ, কি করে বুঝলে?
—মা যে বলল তুই ফোন করেছিলি, আবার ফোন করবি বলেছিস।
—ও।
একটা কথা খোঁজা বিরতি। আমিই শুরু করলাম
—তারপর বল তোর কি খবর!
—আমি? আছি।
বুনির গলায় সেই আক্ষেপ। যেটা আমার মনে হয়েছিল। প্রসঙ্গ বদলাতে হবে।
—তোর বাচ্চারা কেমন আছে?
—তারা মহানন্দে আছে।
—বাঃ।
—তোর তো এক ছেলে এক মেয়ে।
—হ্যাঁ?
—ছেলে না মেয়ে কে বড়?
—ছেলে। তুমি কেমন আছো?
আরও পড়ুন:
বাস্তুবিজ্ঞান: পর্ব-২২: বাস্তুশাস্ত্র মতে, লাল রং শৌর্য ও বিজয়, আর গেরুয়া হল ত্যাগ ও বৈরাগ্যের প্রতীক
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৮: হৃদয়ে আমার দিয়েছে ঢেউ, ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ
এবার অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত লাগছে। মিছিমিছি টেনসন করছিলাম। কার্টিসি কল! নিছক সৌজন্য!
—আমি ফার্স্ট ক্লাস। শরীর ডিসটিংশন। তারপর বল হঠাৎ অ্যাদ্দিন বাদে আমায় মনে পড়ল কেন?
হঠাৎ বুনি একটু থমকে বলল—“বলছি!!” বুনির গলাটা কিরকম কান্নাভেজা শোনালো! নাকি আমার মনের ভুল?
—বুনি? কী হয়েছে?
—আজ তোমায় একটা খুব খারাপ খবর দিতে ফোন করেছি । আগে অনেকবার ভেবেছি তোমায় ফোন করি। এটা ওটা করে আর করে ফোন করা হয়নি।
আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গেল।
—ওসব এখন ছাড় না কি হয়েছে আমায় সেটা বল
—আফিফা মারা গিয়েছে।
—কী? কী বললি?
আমার মাথা কাজ করছে না। এতদিন যাকে ভুলে ছিলাম। সর্বশক্তি দিয়ে মন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। সে যেন আচমকা সমস্ত অতীত সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এতক্ষণে ও প্রান্তে বুনি নিশ্চিন্তে কাঁদতে পারছে।
—কিক- কি হয়েছিল?
—আগুনে পুড়ে ?
—সুইসাইড!!
—জানি না।
—আমি ফার্স্ট ক্লাস। শরীর ডিসটিংশন। তারপর বল হঠাৎ অ্যাদ্দিন বাদে আমায় মনে পড়ল কেন?
হঠাৎ বুনি একটু থমকে বলল—“বলছি!!” বুনির গলাটা কিরকম কান্নাভেজা শোনালো! নাকি আমার মনের ভুল?
—বুনি? কী হয়েছে?
—আজ তোমায় একটা খুব খারাপ খবর দিতে ফোন করেছি । আগে অনেকবার ভেবেছি তোমায় ফোন করি। এটা ওটা করে আর করে ফোন করা হয়নি।
আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটে গেল।
—ওসব এখন ছাড় না কি হয়েছে আমায় সেটা বল
—আফিফা মারা গিয়েছে।
—কী? কী বললি?
আমার মাথা কাজ করছে না। এতদিন যাকে ভুলে ছিলাম। সর্বশক্তি দিয়ে মন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। সে যেন আচমকা সমস্ত অতীত সঙ্গে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এতক্ষণে ও প্রান্তে বুনি নিশ্চিন্তে কাঁদতে পারছে।
—কিক- কি হয়েছিল?
—আগুনে পুড়ে ?
—সুইসাইড!!
—জানি না।
আমি দুম করে ফোনটা কেটে দিলাম। ভাগ্যিস মা তাঁর ঘরে ঠাকুরের আসনের সামনে বসে সন্ধ্যে দিচ্ছে। না হলে একটা সম্পূর্ণ অজানা অতীতকে মায়ের সামনে উপস্থিত করতে হতো।
আচমকা ঘরের আয়নার দিকে চোখ গেল। সেখানে আমি কিশোরী বয়সের আফিফাকে দেখলাম। আবছায়া। ধোঁয়াটে। কিন্তু সেই আফিফা। ওর চুলগুলো লালচে ছিল। উজ্জল ফর্সা রং। চোখটা কটা একটু বাদামি। মেম সাহেবের মতো দেখতে। ওই কিশোর বয়সেই আফিফার বড় বড় বাদামি চোখের দিকে তাকানো যেত না। প্রেমে পড়ার বয়েস সেটা নয়, কিন্তু ভাল লাগার কোন বয়স হয় না। কাউকে দেখতে না পেলে মন খারাপের কোনও বয়স হয় না। কারও চোখের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে আরও একটু বড় হতে হয়েছিল। কিশোরী বয়সের মতোই মাথার চুলটা একদিকে ফেলা থাকত আফিফার।
এখন যাকে দেখছি তারও চুলটা একপাশে ফেলা; ঠিক আগের মতো। শুধু চোখ সেই বাদামি চোখ দুটোয় এখন জ্বলন্ত আগুনের আভা। আবার আমার নাকে এলো সেই চামড়া পোড়া মাংস পোড়া গন্ধ।—চলবে।
আচমকা ঘরের আয়নার দিকে চোখ গেল। সেখানে আমি কিশোরী বয়সের আফিফাকে দেখলাম। আবছায়া। ধোঁয়াটে। কিন্তু সেই আফিফা। ওর চুলগুলো লালচে ছিল। উজ্জল ফর্সা রং। চোখটা কটা একটু বাদামি। মেম সাহেবের মতো দেখতে। ওই কিশোর বয়সেই আফিফার বড় বড় বাদামি চোখের দিকে তাকানো যেত না। প্রেমে পড়ার বয়েস সেটা নয়, কিন্তু ভাল লাগার কোন বয়স হয় না। কাউকে দেখতে না পেলে মন খারাপের কোনও বয়স হয় না। কারও চোখের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে আরও একটু বড় হতে হয়েছিল। কিশোরী বয়সের মতোই মাথার চুলটা একদিকে ফেলা থাকত আফিফার।
এখন যাকে দেখছি তারও চুলটা একপাশে ফেলা; ঠিক আগের মতো। শুধু চোখ সেই বাদামি চোখ দুটোয় এখন জ্বলন্ত আগুনের আভা। আবার আমার নাকে এলো সেই চামড়া পোড়া মাংস পোড়া গন্ধ।—চলবে।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।