সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালিত হয়। হৃদরোগ মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কিছু ঝুঁকির কারণকে পরিবর্তন করা না — যেমন পারিবারিক ইতিহাস, লিঙ্গ বা বয়স প্রভৃতি। তবে হৃদরোগের ঝুঁকিকে চেষ্টা করলে কিছুটা হলেও কমানো যায়। তার অনেক উপায়ও রয়েছে। তাই হার্টের সুস্বাস্থ্যের জন্য সাতটি জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, যেগুলি ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
 

১. ধূমপান বা তামাক জাতীয় নেশা বর্জন

সুরক্ষিত হার্টের জন্য আপনি যা যা করতে পারেন তার মধ্যে একটি হল ধূমপান বন্ধ করা। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারও বন্ধ করতে হবে। আপনি ধূমপায়ী না হলেও, ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ ধূমপান এড়াতে যেন ভুলবেন না। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের কী কী ক্ষতি হয়, সে কথা বেশির ভাগ মানুষই জানেন। কিন্তু যাঁরা পরোক্ষ ভাবে ধূমপান করেন, তাঁদের ক্ষতি কতটা— সে বিষয়ে অনেকেরই ধারণা থাকে না। একাধিক গবেষণা বলছে, পরোক্ষ ধূমপান এবং সরাসরি ধূমপানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সমান।
তামাকের রাসায়নিক পদার্থ হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। সিগারেটের ধোঁয়া রক্তে অক্সিজেন কমিয়ে দেয়, যা রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন বাড়ায়। কারণ, শরীর ও মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে হার্টকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। যদিও ভালো খবর হচ্ছে, হৃদরোগের ঝুঁকি ধূমপান ছাড়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই কমতে শুরু করে। সিগারেট ছাড়া এক বছর পর হৃদরোগের ঝুঁকি একজন ধূমপায়ীর তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

 

২. নিয়মিত শারীরচর্চা করুন

শরীরচর্চা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তাই প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট শারীরচর্চা করতে হবে। শুধু হার্টের সুরক্ষা নয়, শারীরিক কার্যকলাপ আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করবে। এমনকি, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো শারীরিক সমস্যায়ও ভালো ফল পাওয়া যায়।
সপ্তাহে ১৫০ মিনিট অ্যারোবিক করলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে। নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার, সাইক্লিং করলেও মিলবে উপকার। এছাড়া বাগান করা, গৃহস্থালির কাজ, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা, কুকুরকে হাঁটানো ইত্যাদি করুন। অর্থাৎ রোজ দিন কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।
 

৩. স্বাস্থ্যকর খাবার

স্বাস্থ্যকর খাবারও হার্টের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাসের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। কেমন খাবার খাদ্য তালিকায় থাকলে ভালো?
শাক-সবজি, মটরশুঁটি, শিম এবং মরসুমি ফল।
চর্বিহীন মাংস এবং মাছ।
কম চর্বিযুক্ত বা চর্বিহীন দুগ্ধজাত খাবার।
শস্য।
স্বাস্থ্যকর চর্বি, যেমন অলিভ ওয়েল।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে লবণ, চিনি, প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট, অ্যালকোহল, স্যাচুরেটেড ফ্যাট (রেড মিট এবং পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য) এবং ট্রান্স ফ্যাট (ভাজা, ফাস্ট ফুড, চিপস, বেকড পণ্য ) জাতীয় খাবার এড়াতে হবে বা নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেতে হবে।

আরও পড়ুন:

হোমিওপ্যাথি: শ্বেতি ঠিক কেন হয়? এই রোগ কি পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব?

আজকের আলোচনা মাধ্যমিক ইংরেজি পরীক্ষার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে — PHRASAL VERB

ছোটদের যত্নে: শিশু জলে ডুবে গেলে তৎক্ষণাৎ কী করণীয়? প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরামর্শে শিশু বিশেষজ্ঞ

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-২৮: অনুপুষ্টিতে ভরপুর পুঁটিমাছ ছোটদের দৃষ্টিশক্তির বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে ভুঁড়ি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস-সহ হৃদরোগের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দেয়।
উচ্চতা ও বয়স অনুযায়ী অজন কত হওয়া উচিত তা বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই)-এর মাধ্যমে জানা যায়। কারও বিএমআই ২৫ বা তার বেশি অতিরিক্ত ওজন হিসাবেই বিবেচিত হয়। বেশি ওজন হলে সাধারণত উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। আপনার পেটে কতটা পরিমাণ চর্বি আছে তা পরিমাপ করার জন্য কোমরের পরিধিও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে, পুরুষদের কোমর ৪০ ইঞ্চি এবং মহিলাদের জন্য ৩৫ ইঞ্চির বেশি হলেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এ বিষয়েও সতর্ক হতে হবে।
 

৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন

কিছু মানুষ অবৈজ্ঞানিক ভাবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। যেমন কেউ কেউ অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া করেন, আবার কেউ নিয়ন্ত্রণহীন মদ্যপান বা ধূমপান করেন। এগুলো বর্জন করতে হবে। মনে রাখবেন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ভালো উপায় হল শরীরচর্চা, ধ্যান, যোগা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন:

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-২১: পাশার সভায় অপমানিত দ্রৌপদী নির্বাক কুরুবৃদ্ধদের ধিক্কার দিয়ে উঠলেন

মনের আয়না: হস্তমৈথুন স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, অযথা উদ্বিগ্ন হবেন না—মত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩: এক ফ্লপ মাস্টার জেনারেল-র ‘মর্যাদা’ [২২/১২/১৯৫০]

আপনি কি রক্তাল্পতায় ভুগছেন? তাহলে ডায়েটে রাখুন এগুলি

 

৬. পর্যাপ্ত ঘুম

যাঁদের পর্যাপ্ত পরমাণ ঘুম হয় না তাঁদের স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতা প্রভৃতি সমস্যা দেখা যায়। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কর প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। দরকার হলে ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন। মনে রাখবেন, ভালো ঘুমের জন্য সময়ে বিছানায় যেতে হবে, আবার রোজ একই সময়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। শোবার ঘর অন্ধকার এবং শান্ত রাখুন, যাতে ঘুম আসে সহজেই। আপনি যদি মনে করেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো সত্ত্বেও সারাদিন ক্লান্ত লাগছে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ অপর্যাপ্ত ঘুম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেই সঙ্গে জেনে নিতে হবে আপনি ‘অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র শিকার কি না। ‘অবসট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র সাধারণ লক্ষণ হল জোরে নাক ডাকা, ঘুমের সময় অল্প সময়ের জন্য শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠে হাওয়া-বাতাসের জন্য হাঁপাতে থাকা ইত্যাদি।

 

৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ কোলেস্টেরল হার্ট এবং রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করলে আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনার হার্টের কোনও সমস্যা আছে কিনা। নিয়মিত স্ক্রিনিং-ই আপনাকে বলতে পারে আপনার শারীরিক অবস্থা ঠিক কী রকম এবং আপনার কী করণীয়।
 

উচ্চ রক্তচাপ

১৮ বছর বয়সের পর থেকেই নিয়মিত রক্তচাপে নজর দেওয়া উচিত। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ, তাই বছরে অন্তত দু’বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেই হবে। বয়স ১৮ থেকে ৩৯-এর মধ্যে হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকিপূর্ণ হলে বছরে একবার আপনার পরীক্ষা করা উচিত। ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী লোকেদের বছরে কমপক্ষে একবার রক্তচাপ পরীক্ষা করা দরকার।
 

কোলেস্টেরল বা লিপিড প্রোফাইল

প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারণত প্রতি চার থেকে ছয় বছরে একবার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কোলেস্টেরল স্ক্রিনিং সাধারণত ২০ বছর বয়সের পর থেকে শুরু হয়। তবে আপনার যদি অন্যান্য ঝুঁকি যেমন হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে এর আগেও পরীক্ষা করা যেতে পারে।
 

টাইপ-২ ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসও হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ। আপনার যদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে, যেমন অতিরিক্ত ওজন বা ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাহলে নিয়মিত স্ক্রিনিং করাতে হবে। আর ঝুঁকি না থাকলে ৪৫ বছরের পর থেকে স্ক্রিনিং শুরু করতে পারেন।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content