ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
তুলসীর সঙ্গে ভারতীয় নারীর শুদ্ধতা জড়িয়ে থাকা রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। ভোরের প্রথম পবিত্র আলোকরশ্মি যখন বাড়ি উঠানের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তুলসী গাছের মাথায় পড়ে তখনই ভারতীয় নারী স্নান শেষে সিক্তবসনে দাঁড়িয়েছেন তুলসী বেদীর সামনে, তার সিক্ত কেশরাশি থেকে চুইয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু জলে ধারা, তিনি জল দান করছেন এবং প্রদক্ষিণ করছেন তুলসীবেদীকে। আবার সন্ধ্যায় সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালানোর মাধ্যমে সংসারের সকল অন্ধকার কাটিয়ে আলোকরশ্মি ফোটানো। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত কষ্ট, কত বিবর্ণতা, কত কলঙ্ক লেগে যায়; মন অস্থির হয়। প্রতিদিনের শুরুতে সেই অস্থির মনকে কিছুটা হলেও প্রশমিত করে প্রাতঃকালীন তুলসী আরাধনা। হরি অর্থাৎ নারায়ণ পুজোর শেষে অনেকেই একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খায়। কারণটা হল পবিত্রতাকে আত্মস্থ করে নিজের শরীরও মনকে পবিত্র ও সুস্থ রাখা।
এই সব কারণেই প্রাচীন ভারতীয় বেদ ও পুরানে তুলসী পাতা এবং তার থেকে পাওয়া নির্যাসের ব্যবহার উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। বৃক্ষের দেবত্বে উন্নয়ন ভারতীয় পরম্পরায় নতুন নয় তাই ভারতীয় লোকোকথায় বর্ণিত আছে যে মর্তবাসীনি তুলসী, বিষ্ণুপ্রেমে পাগল হয়ে ভবঘুরে হয়ে পৃথিবীর কোথাও স্থান না পেয়ে ভগবান নারায়নের শরণাপন্ন হন। কিন্তু বৈকুণ্ঠ ধামের দরজা বন্ধ করে দেন বিষ্ণুপত্নী লক্ষী। অপমানিত তুলসী বিষ্ণুর আঙিনায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকে। দেবী লক্ষ্মীর অভিশাপে তুলসীর পা দুটি আস্তে আস্তে শিখরে পরিণত হয়, হাত থেকে জন্ম নেয় পাতা ও অবশেষে সমগ্র তুলসী দেহ পুরোপুরি রূপান্তরিত হয় তুলসী গাছে এবং তার সুবাস চারিধারে ছড়িয়ে পড়ে। ভগবান বিষ্ণু তুলসীর এমন একনিষ্ঠ প্রেম দেখে খুশি হয়ে তাকে বিষ্ণুপ্রিয়া নাম দেন এবং আশীর্বাদ করেন যে এখন থেকে পৃথিবীতে তুলসী দেবী পুজিত হবে। তুলসীকে পবিত্র সুমঙ্গলী সতী নারীরূপে সধবা গৃহবধূরা প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় তুলসী গাছের পুজো করবেন। এই কারণবশতই প্রত্যেক হিন্দু বাড়ির উঠোনেই তুলসী গাছ রাখা হয় এবং জলদান ও পুজো করা হয়। আবার কথিত আছে ভগবান বিষ্ণু নিজেই শালোগ্রাম শিলায় রূপান্তরিত হন তুলসীকে বিবাহ করবার জন্য।
বিজ্ঞানসম্মতভাবে শালগ্রাম শীলা কিন্তু কোনও পাথর নয়। এটি এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাষ্ম বা ফসিল যেটি নেপালের গন্ধকী নদীতে পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে প্রাণিবিদ্যা অনুযায়ী সেফালোপড গোত্রের সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যুর পর তাদের দেহটি জীবাশ্মে পরিণত হয় যেটি অ্যামোনাইট জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি। এই জীবাশ্মটির গায়ে কখনও কিছু ছাপও দেখতে পাওয়া যায়। কৃষ্ণ বর্ণের এই জীবাশ্মটি নারায়ণ শিলা হিসাবে আজও হিন্দুদের কাছে পুজিত। সম্পূর্ণ মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে লৌকিক আচার মেনে তুলসী গাছের সঙ্গে শালগ্রাম শিলার বৈবাহিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় সাধারণত কার্তিক মাসে শুক্লপক্ষের প্রবোধিনী একাদশী অথবা দ্বাদশীর দিনে। তুলসী বিবাহের অর্থই হলো বর্ষার শেষ এবং হিন্দুদের বিবাহের সময় আগত। পদ্মপুরাণে তুলসী বিবাহের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ আছ।
বেদ পুরানে যুগ থেকে তুলসী গাছ ভারতীয় সংস্কার ও সংস্কৃতিতে মিশে থাকলেও একটা কথা পাঠকরা শুনলে অবশ্যই আশ্চর্য হবেন যে, যিশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করার পর যে স্থানে সমাধি স্থল করা হয়েছিল সেইখানেই তুলসী গাছ দেখা গিয়েছিল। এই কারণবশতই হয়তো অনেক গির্জায় আজও তুলসী গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ‘সেন্ট বেসিল ডে’ উৎসবে তুলসী গাছের বেশ গুরুত্ব আছে বলে জানা যায়।
এক নজরে
কী কী উপাদানে ভরপুর?
খুব তাজা তুলসী পাতা ও তার সংলগ্ন ডাটির নিদ্রাসে প্রচুর পরিমাণে ফেনোলিক যৌগ পাওয়া যায়। এই ফেনোলিক যৌগ খুব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। ফেনোলিক যৌগ সেসকুইটারপেনস এবং মেনোটারপেনস পাতার নির্যাস এর উল্লেখযোগ্য উপাদান।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: মর্ত্যের অমৃত রসুন
দশভুজা: পিকনিক দল থেকে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু: তাঁর লেন্সের বিস্তৃতি ছিল বিস্ময়কর
চিকিৎসাশাস্ত্রে এর ব্যবহার
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়
মস্তিষ্কের বিকাশে
আলসার নিরাময়
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ
রক্ত তৈরিতে
লিভারকে সুস্থ রাখতে
কৃমি নিবারণে
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২১: ক্যানসার মানেই মৃত্যু?
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৪: পুতুলের মাথায় কোঁচকানো সোনালি চুল, চোখ দুটো কেমন যেন অদ্ভুত, কিন্তু এটা আমায় কে পাঠালো?
শর্করা নিয়ন্ত্রণ
বাতের সমস্যায়
ত্বকের যত্ন
ফুসফুস জনিত সমস্যার সমাধানে
হাঁপানির সমস্যা
জ্বালা যন্ত্রণা উপশমে
ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ