বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


আর কিছুদিনের মধ্যেই দুয়ারে মদ মিলবে। এই মুহূর্তে সরকারি আয়ের সিংহভাগটাই মদ নির্ভর। পাড়ায় পাড়ায় মদের দোকান। মদ খেয়ে বেলেল্লাপনা, হুল্লোড়বাজি এখন যে কোনও পুজো পার্বণ কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ। কবির ভাষা ধার করে বলতে হয়, এখন ক্ষুধার রাজ্যে এদেশ মদ্যময়।

পানীয় মদ বলতে আমরা ইথাইল অ্যালকোহলকেই বুঝি। আঙুর, বার্লি, ঝোলা গুড়, যব, গম, আলু, খেজুর, চাল বা ভাত, আপেল মহুয়া ফল-সহ অনেক খাদ্যবস্তু থেকেই মদ তৈরি হয়। দীর্ঘদিন ধরে যদি বেশি পরিমাণে মদ্যপান করা যায় তাহলে প্রথমে বারোটা বাজে লিভারের। তারপর দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের। মদ খাওয়ার পর তা রক্ত বাহিত হয়ে পৌঁছে যায় ফুসফুসের বায়ু থলিতে, মস্তিষ্কে, সুষুম্না রসে, দেহে সঞ্চিত চর্বিতে এবং অবশ্যই লিভারে। শতকরা দশ ভাগ ইউরিন, ঘাম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বার হয়ে যায়।
লিভারে পৌঁছে নানা উৎসেচক বা এনজাইমের সংস্পর্শে অ্যালকোহল জারিত হয়ে প্রথমে অ্যাসিট্যালডিহাইড, এরপর অ্যাসিটেট এবং শেষে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জলে পরিণত হয়। অ্যালকোহলের জন্যই লিভারের ল্যাকটেট নামক উৎসেচকটি খুব বেশি পরিমাণে বার হয়ে উৎপন্ন করে ফ্যাটি অ্যাসিড, ইউরিক অ্যাসিড এবং গ্লিসারল। এগুলোর কোনওটিই কিন্তু শরীরের পক্ষে ভালো নয়।

অতিরিক্ত মদ্যপানে লিভারের নানা বিপাকীয় কাজ এবং দূষিত পদার্থকে নিরাপদ পদার্থে পরিণত করার প্রক্রিয়া অর্থাৎ ডিটক্সিফিকেশন ব্যাহত হয়। চর্বি বা ফ্যাট বিপাকে বিভ্রাটের জন্য রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং পক্ষঘাতের সম্ভাবনা। মৃত্যুও হতে পারে। এরপর লিভারের কোষের পরিবর্তন শুরু হয়। কোষে চর্বি জমতে থাকে। একেই বলে ফ্যাটি লিভার।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৬: মাছের তেল হার্ট অ্যাটাক আটকায়?

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৫: আমার পায়ে ঝিঁ ঝিঁ, আমি জ্ঞান হারিয়েছি

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২১: আবার কালাদেও?

অতিরিক্ত মদ খেলে ফ্যাটি লিভার অবশ্যই হবে। আবার জীবনে এক ফোঁটা মদ স্পর্শ করেননি, এমন মানুষেরও ফ্যাটি লিভার দেখা যায়,যখন তিনি অপুষ্টিতে ভোগেন। বিশেষ করে খাদ্যে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দিলে। বহু গরীব, অভাবী মানুষ মদ না খেয়েও শুধুমাত্র অপুষ্টির জন্য ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন।

ফ্যাটি লিভারের প্রায় সময় কোনও উপসর্গই থাকে না। আলট্রাসোনোগ্রাম করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তখন দেখা যায় লিভারের কোষের অন্তত ৩০ শতাংশর ফ্যাটি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। এরপরেও মদ খাওয়া চলতে থাকলে লিভারের বাকি কোষ গুলো দ্রুত নষ্ট হতে থাকে। নষ্ট বা মৃত কোষগুলোর জায়গায় তন্তু জাতীয় কোলাজেন টিস্যুর জন্ম হয়। লিভারের কোষগুলোর মৃত্যু এবং নতুন কোষের জন্ম একই সঙ্গে চলতে থাকে। লিভারের স্বাভাবিক চেহারা নষ্ট হয়ে গুটি গুটির মতো দেখায়।
আরও পড়ুন:

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন. পর্ব-৫: হিচককের লন্ডন, হিচককের সিরিয়াল কিলার

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৭: কবিকন্যার সঙ্গে নগেন্দ্রনাথের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও কবির সঙ্গে ঘটেনি

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪: আমারে তুমি অশেষ করেছ

মৃত লিভার কোষগুলোর মধ্যে যেসব শিরা-উপশিরা থাকে, সেগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বাধা পায়। দেখা দেয় পোর্টাল হাইপারটেনশন অর্থাৎ পোর্টাল শিরায় রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। এইসব পরিবর্তনের ফলে লিভারের যে রোগটি হয়, তার নাম সিরোসিস অফ লিভার।

প্রথমদিকে তেমন কোনও উপসর্গ না থাকলেও পরবর্তীকালে পেট ভার, অরুচি, পেট খারাপ, গ্যাস-অম্বল, বমি ভাব, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, জন্ডিস ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। বাড়াবাড়ি পর্যায় পেটে জল জমে যায়, যাকে বলে উদরি বা অ্যাসাইটিস। হাত পা ফুলে যায়, রক্ত বমি হয় এবং রোগী দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেন। সিরোসিস পুরোপুরি নিরাময় না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় অবশ্যই।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৬: নারীবিদ্বেষ— অসুখ নাকি রাজনীতি

দীর্ঘদিন মদ্যপানের ফলে যেমন ফ্যাটি লিভার এবং সিরোসিস হতে পারে, তেমনি হতে পারে অপুষ্টি জনিত কারণেও। বিশেষ করে প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের অভাবে। ভাইরাল হেপাটাইটিসের পরেও এমনটা হতে পারে। কাজেই মদ হইতে সাবধান। পাশাপাশি নজর দিতে হবে পুষ্টিকর খাবারের দিকেও।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

আপনার রায়

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে দফা বৃদ্ধি করা জরুরি?

Skip to content