শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: গৌতম চক্রবর্তী।

ছোটবেলায় ঠাকুমার কাছে শুনতাম, কাজের মধ্যে দুই, খাই আর শুই। সে সব তো আয়েসি এবং বিত্তবান লোকদের জন্য। সাধারণ মানুষ, যারা দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা খাটেন, তাদের পরম আশ্রয় রাতে অন্তত সাত-আট ঘণ্টার নির্বিঘ্ন ঘুম। এই ঘুমই আমাদের সকলের এনার্জি। যারা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে প্রতিরাতে ঘুমোতে পারেন, তাদের মত সুখী মানুষ আর নেই। এই ঘুমই তাদের পরের দিন আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার শক্তি যোগায়। কিন্তু এই নিরবিচ্ছিন্ন শান্তির ঘুমের জন্য দরকার ঠিকঠাক বালিশ বিছানা চাদর। কেমন বিছানায় এবং বালিশে শুলে আপনার ঘাড়ে-কোমরে ব্যথা হবে না, অথচ ঠিকঠাক ঘুমোতে পারবেন, সেটা এবার জেনে নিন।

সাবেকি কালের চৌকির জায়গায় এখন ইংলিশ খাট আর বক্স খাটের ছড়াছড়ি। এবং তাতেও যথারীতি নরম গদি। আগে চৌকির শক্ত পাটাতনের উপর একটা তোষক আর চাদর পেতে শুতাম আমরা এবং সেটাই ছিল আদর্শ বিছানা। কারণ এভাবে শোওয়ার ফলে আমাদের শিরদাঁড়া সঠিক অবস্থানেই থাকত। রাতে ঘাম হলে সেই ঘাম শুষে নিত চাদর আর তোষক। মাঝেমধ্যে সেগুলো ঝেড়েঝুড়ে রোদে দিলেই ল্যাঠা চুকে যেত। আমাদের বাপ ঠাকুরদারা সেগুলোতেই সুখনিদ্রা গিয়েছেন।
এখন আমরা খাট ব্যবহার করছি বেশি। ইংলিশ খাট যেগুলোতে খাটের পাঠাতনের কাঠগুলোর মধ্যে বেশ ফাঁক থাকে, সেগুলো বক্স খাটের চেয়ে ভালো। কারণ তোষক ও গদিতে শোষিত ঘাম ও বাষ্প বার হওয়ার একটা পথ থাকে। যেটা বক্স খাটের পাটাতনে থাকে না–যেজন্য তোষক এবং গদি গুলো সব সময় স্যাঁতসেঁতে, জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে।

তিন ধরনের গদি ব্যবহার করে থাকি আমরা। স্পঞ্জের গদি, স্প্রিংয়ের গদি এবং নারকেলের ছোবড়ার সঙ্গে রাবার মিশিয়ে তৈরি রাবারাইজড কয়ারের গদি। স্পঞ্জ বা ফোমের গদি তৈরি হয়ে ল্যাটেক্স রাবার বা পলিইউরেথেন দিয়ে। এই বিছানায় শুলে দারুন আরাম লাগে, কিন্তু বেশি দিন শোওয়ার পর গদির মাঝখানটা ডেবে যায়। ফলে শিরদাঁড়ার স্বাভাবিক বক্রতা বজায় থাকে না। ঘাড়ে পিঠে কোমরে ব্যথা হয়। বারে বারে ঘুম ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৯: পাকা আম খাবেন, নাকি কাঁচা আম?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৪: ভয়ংকর গর্ভ

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫: অল্প ক্ষতি স্বীকার করে হলেও ভবিষ্যতে বড় লাভের কথা চিন্তা করা দরকার

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৩: গগনেন্দ্রনাথের‌ ঘুড়ি ওড়ানো

স্প্রিংয়ের গদি আবার দু’রকমের। কমদামি স্প্রিংগুলো ডেবে যায়, দেহটা ‘ৎ’-র মতো হয়ে যায়। নিটফল শিরদাঁড়ায় ব্যথা এবং ঘুমের দফা রফা। দামি স্প্রিংগুলো দেখতে ছোট, সংখ্যায় অনেক, কাপড়ে মুড়ে পাশাপাশি থাকে, শুলে খুব বেশি ডেবে যায় না। ফলে শিরদাঁড়া স্বাভাবিক থাকে, দেহে ব্যথাও হয় না। তবে স্প্রিং শক্ত না হলে রোগাদের অসুবিধে না হলেও মোটা ব্যক্তিদের সমস্যা হবেই। স্পঞ্জের বিছানাই যদি কিনবেন, এমন গদি কিনবেন, যাতে স্প্রিংগুলো ভালো হয়। গদির উপর দেড় থেকে দুই ইঞ্চি তোষক পেতে শোবেন। দারুণ ঘুম হবে। রাবারাইজড গদি এগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভালো। নারকেল ছোবড়ার সঙ্গে রাবার মিশিয়ে তৈরি এই গদি না শক্ত না নরম গোছের। এতে শুলে শিরদাঁড়ার স্বাভাবিক বক্রতা বজায় থাকে, ব্যথা বেদনা হয় না, ফলে ঘুমেরও ব্যাঘাত হয় না।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৫: যে ছিল আমার ‘ব্রতচারিণী’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১১: ‘কটি পতঙ্গ’ ছবিতে পঞ্চমের সুরে কিশোর নিজেকে উজাড় করে দেন

ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-২: কপালে জমেছে ঘাম, শুকিয়ে গিয়েছে জিভ, পেছন থেকে ভেসে আসছে গা ছমছমে শব্দ

পুরোনো দিনের মানুষেরা এখনও নারকেল ছোবড়ার গদি পছন্দ করেন। শিরদাঁড়ার পক্ষে এগুলো নিঃসন্দেহে ভালো। তবে বড্ড ভারী। ঝাড়পোছ করা মুশকিল। রোদে দেওয়াও ঝামেলা। তাছাড়া সহজেই ধুলো জমে যায় বলে অ্যালার্জির রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যাদের নারকেল ছোবড়ায় অ্যালার্জি আছে। সারারাত হেঁচে মরলে, ঘুমোবেন আর কখন!

কাজেই খুব নরমও নয়, আবার খুব শক্তও নয়, এমন গদি শিরদাঁড়ার পক্ষে আদর্শ। গদির উপর এক থেকে দেড় ইঞ্চি পুরো তোষক পেতে নেবেন। আরও ভালো হয়, যদি গদি আর তোষকের মাঝখানে আধ ইঞ্চিপুরু, চার ফুট বাই দু’ফুট চওড়ার একটি ম্যাসানাইট বোর্ড বা প্লাইউড পেতে রাখেন।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৯: কুরদার ইকো রিসর্ট—অনাবিস্কৃত এক মুক্তা

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৫: প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবপ্রজন্ম-মীনমিত্রের পরামর্শে গ্রামগঞ্জেও মাছচাষ বিকল্প আয়ের দিশা দেখাতে পারে

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২০: দুর্নীতির দুর্বিপাকে পিতৃতান্ত্রিক দ্বন্দ্ব

 

কীভাবে শোবেন?

বিছানার ব্যবস্থা তো হল, এবার শোবেন কীভাবে অর্থাৎ শোওয়ার সঠিক পদ্ধতিটি কী? শক্ত বিছানায় চিৎ হয়ে শোওয়াই ভালো। দুই হাঁটুর নিচে একটা কোলবালিশ রেখে শুলে শিরদাঁড়াটা ঠিকঠাক থাকে। পাশ ফিরলে কোল বালিশটাকে রাখতে হবে হাঁটু দুটোর মাঝখানে। এতে আরাম হবে, ঘুমও হবে।
 

কেমন হবে বালিশ?

নরম বালিশে শোবেন। বালিশটা যেন খুব উঁচু না হয়। দুটো বালিশে কখনও শোবেন না। ইঞ্চি চারেক পুরু বালিশ প্রাপ্তবয়স্কদের পক্ষে ভালো। বালিশটা লম্বায় ২০ ইঞ্চি আর চওড়ায় ১৬ ইঞ্চি হলে ভালো হয়। বালিশটা শুধু আপনার ঘাড়ের নিচে নয়, পিঠের উপরাংশের নিচ পর্যন্ত রাখুন। শুয়ে আরাম পাবেন, ঘুমও দ্রুত আসবে। বুকের নিচে বালিশ রেখে ঘাড়টাকে নিচু করে বই পড়বেন না। আপনার কাছ থেকে ঘাড়ের দূরত্ব যতটা, ততটাই হওয়া উচিত আপনার বালিশের উচ্চতা।

অনেক নতুন তথ্য জানলেন, তাই না!ঘুম হল শান্তির জিনিস। আমাদের বালিশ বিছানা তোষক যেন ঘুমের সময় অশান্তির কারণ না হয়,সেটা তো একটু মাথায় রাখতেই হবে।

* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content