অলঙ্করণ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
স্টেরয়েড নিয়ে আমাদের ভীষণ আতঙ্ক। এটা ঠিক কী জিনিস, খায় না মাথায় দেয়, সে সম্বন্ধে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে এই ধারণাটা আছে যে এটি একটি ভয়ঙ্কর ওষুধ! অথচ এই ভয়ংকর ওষুধেই দিনের পর দিন লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ বেঁচে যাচ্ছে সারা পৃথিবীতে।
করোনা মহামারীর কথাই ধরা যাক। কত ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, কত রকম ভাইরাস নিধনকারী ওষুধের নাম আমরা এই সময় শুনলাম। সেগুলো নিয়ে বহু টাকার ব্যবসাও হল। ডক্সিসাইক্লিন, এজিথ্রোমাইসিন, এমনকি নানা ধরনের ভিটামিন অব্দি করোনার সময় বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেল। রেমসিডিভির বলে একটি ওষুধ তো কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলল। বছর দেড়েক এমন চলার পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিষ্কার জানিয়ে দিল, করোনা নিরাময়ে এগুলো সেই অর্থে কোনও কার্যকরী ওষুধ নয়। সেরা কার্যকরী ওষুধ হল স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ।
করোনা মহামারীর কথাই ধরা যাক। কত ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, কত রকম ভাইরাস নিধনকারী ওষুধের নাম আমরা এই সময় শুনলাম। সেগুলো নিয়ে বহু টাকার ব্যবসাও হল। ডক্সিসাইক্লিন, এজিথ্রোমাইসিন, এমনকি নানা ধরনের ভিটামিন অব্দি করোনার সময় বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেল। রেমসিডিভির বলে একটি ওষুধ তো কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলল। বছর দেড়েক এমন চলার পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিষ্কার জানিয়ে দিল, করোনা নিরাময়ে এগুলো সেই অর্থে কোনও কার্যকরী ওষুধ নয়। সেরা কার্যকরী ওষুধ হল স্টেরয়েড গ্রুপের ওষুধ।
আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলি। বাড়াবাড়ি হয়ে যাওয়াতে আমি করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেপিসি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হয়েছিলাম। ১৩ রাত সেখানে ভর্তি থেকেছিলাম একটি কেবিনে। প্রথম পাঁচ দিন আমাকে স্টেরয়েডেই চুবিয়ে রাখা হয়েছিল অর্থাৎ ইনট্রা ভেনাস স্টেরয়েড, যা দিনে প্রায় চার পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলত। সঙ্গে চলত অন্যান্য নানা ধরনের ওষুধও। তবে আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলাম সেখানকার ডাক্তার সিস্টার স্টাফদের মরণপণ লড়াই এবং স্টেরয়েড ওষুধের দাক্ষিণ্যে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বহুনিন্দিত এবং বহুবন্দিত ওষুধ হল স্টেরয়েড। কখনও জীবনদায়ী, কখনও জীবন সংহারক। কাকে বলে স্টেরয়েড? এটা আসলে এক ধরনের হরমোন। হরমোন কাকে বলে একটু জেনে নিই। আমাদের দেহে নালী বিহীন নানা অন্তক্ষরা গ্রন্থি বা এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ড থাকে। যেমন মস্তিষ্কে পিটুইটারি গ্রন্থি, পুরুষদের টেস্টিস বা শুক্রাশয় এবং মহিলাদের ওভারি বা ডিম্বাশয়। এদের নিঃসৃত রস রক্তের সঙ্গে মিশে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ কিছু কোষ, কলা, গ্রন্থি বা কোনও দেহাংশের উপর কাজ করে। এর ফলে সম্পন্ন হয় নানা শারীরবৃত্তীয় কাজ। এই রসের নামই হরমোন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বহুনিন্দিত এবং বহুবন্দিত ওষুধ হল স্টেরয়েড। কখনও জীবনদায়ী, কখনও জীবন সংহারক। কাকে বলে স্টেরয়েড? এটা আসলে এক ধরনের হরমোন। হরমোন কাকে বলে একটু জেনে নিই। আমাদের দেহে নালী বিহীন নানা অন্তক্ষরা গ্রন্থি বা এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ড থাকে। যেমন মস্তিষ্কে পিটুইটারি গ্রন্থি, পুরুষদের টেস্টিস বা শুক্রাশয় এবং মহিলাদের ওভারি বা ডিম্বাশয়। এদের নিঃসৃত রস রক্তের সঙ্গে মিশে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশেষ কিছু কোষ, কলা, গ্রন্থি বা কোনও দেহাংশের উপর কাজ করে। এর ফলে সম্পন্ন হয় নানা শারীরবৃত্তীয় কাজ। এই রসের নামই হরমোন।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২১: ক্যানসার মানেই মৃত্যু?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৪: কবির ভালোবাসার নজরুল
রাসায়নিক দিক থেকে হরমোনকে প্রোটিন এবং স্টেরয়েড, এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রোটিন হল গ্রোথ হরমোন, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ও অগ্ন্যাশয়ের গ্ল্যান্ডের হরমোন ইত্যাদি। আর স্টেরয়েড হরমোন হল আমাদের দুই কিডনির উপরে অবস্থিত দুটো অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড নিঃসৃত হরমোন।
স্টেরয়েড লাইফ সেভিং ড্রাগ। কিন্তু অপপ্রয়োগ হলে লাইফ কিলিং ড্রাগও বটে! নানা ধরনের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, চোখের অসুখ, বাতরোগ, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, হঠাৎ শক, জ্ঞানলোপ, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাঁপানি-সহ নানা রোগে স্টেরয়েড দারুণ কাজ করে। সঠিক রোগ নির্বাচন করে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট দিন ধরে প্রয়োগ করলে ভালো কাজ করে স্টরয়েড। প্রায় ক্ষেত্রেই ম্যাজিকের মতো। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের রোগীকে একটি মাত্র স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে ডাক্তারবাবু তার শ্বাসকষ্ট ভ্যানিশ করে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই তার কাছে দেবতার আসন পেতে পারেন। কিন্তু মুশকিল হল, পরবর্তীকালে সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আকছার স্টেরয়েড খেয়ে যান অনেক রোগীই। বিশেষ করে হাঁপানি এবং বাতের রোগীরা। এর ফল প্রায় ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয়।
স্টেরয়েড লাইফ সেভিং ড্রাগ। কিন্তু অপপ্রয়োগ হলে লাইফ কিলিং ড্রাগও বটে! নানা ধরনের প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন, অ্যালার্জি, চর্মরোগ, চোখের অসুখ, বাতরোগ, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, হঠাৎ শক, জ্ঞানলোপ, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাঁপানি-সহ নানা রোগে স্টেরয়েড দারুণ কাজ করে। সঠিক রোগ নির্বাচন করে সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট দিন ধরে প্রয়োগ করলে ভালো কাজ করে স্টরয়েড। প্রায় ক্ষেত্রেই ম্যাজিকের মতো। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের রোগীকে একটি মাত্র স্টেরয়েড ইনজেকশন দিয়ে ডাক্তারবাবু তার শ্বাসকষ্ট ভ্যানিশ করে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই তার কাছে দেবতার আসন পেতে পারেন। কিন্তু মুশকিল হল, পরবর্তীকালে সঠিক চিকিৎসা না করিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আকছার স্টেরয়েড খেয়ে যান অনেক রোগীই। বিশেষ করে হাঁপানি এবং বাতের রোগীরা। এর ফল প্রায় ক্ষেত্রেই মারাত্মক হয়।
আরও পড়ুন:
ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-৪: পুতুলের মাথায় কোঁচকানো সোনালি চুল, চোখ দুটো কেমন যেন অদ্ভুত, কিন্তু এটা আমায় কে পাঠালো?
দশভুজা: পিকনিক দল থেকে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু: তাঁর লেন্সের বিস্তৃতি ছিল বিস্ময়কর
স্টেরয়েডের দীর্ঘ এবং অনিয়মিত ব্যবহার থেকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত সোডিয়াম থেকে বেড়ে যেতে পারে রক্তের চাপ। ফুলে যেতে পারে হাত-পা-মুখ। ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস লবণ কমে গিয়ে দেখা দিতে পারে মাংসপেশির দুর্বলতা। হাড়ের ক্ষয় রোগ। এছাড়া ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার, ঘা শুকোতে দেরি, পুরনো রোগ নতুন করে ফিরে আসা, মহিলাদের দাড়ি-গোঁফ গজানো-সহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। সামান্য সর্দি-কাশি হলেও সারতে চায় না। এত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও এমন কিছু জটিল রোগ আছে, যেখানে স্টেরয়েড না খেলে বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। তবে মোটা হওয়ার জন্য বা যৌন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যারা স্টেরয়েড খান, তারা সাবধান! ম্যাজিক প্রত্যাশা করতে গিয়ে ট্রাজিক পরিণতি হতে পারে।
আরও পড়ুন:
পাহাড়ের উপর ছবির মতো সুন্দর শ্রবণবেলাগোলা— চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের এক অজানা অধ্যায়
অজানার সন্ধানে: অঙ্কই ধ্যানজ্ঞান, মোটা বেতনের চাকরি নির্দ্বিধায় ছেড়ে দেন আইআইটি-র শ্রবণ
স্টেরয়েড কিন্তু সত্যিই লাইফ সেভিং ড্রাগ, করোনার সময় আমি নিজেই সেটা বুঝেছি। নানা কারণে আমাদের বিপদ হতে পারে। আগুনে পুড়ে, কোনও দুর্ঘটনার ফলে, হার্ট অ্যাটাক বা কোনও ওষুধ থেকে শক, যেখানে রোগীর প্রেশার-পালস ভীষণ কমে গিয়েছে, ঘাম হচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অর্থাৎ রোগীর জীবন সংশয় দেখা দিয়েছে—সে ক্ষেত্রে স্টেরয়েড সত্যিই লাইফ সেভিং। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রোগীকে ফিরিয়ে আনতে পারে। হাঁপানি, বাতরোগ, লিম্ফোমা অর্থাৎ লিম্ফ গ্ল্যান্ডের ক্যানসার, সোরিয়াসিস ইত্যাদি রোগে ডাক্তারের পরামর্শ মতো দীর্ঘদিন স্টেরয়েড খেতে হয়। মুখে যে স্টেরয়েড খেতে দেওয়া হয়, সেটার ডোজ ডাক্তারবাবুরা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনেন।
ধরা যাক, প্রথম সপ্তাহে তিনটে করে, তারপর দুটো করে, তারপর একটা করে—এই ভাবে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো স্টেরয়েড গ্রহণ করলে কখনওই কোনও বিপত্তি দেখা দেয় না। মুখে খাওয়া স্টেরয়েডের থেকে যেগুলো ইনহেলার বা নেজাল স্প্রে-র মাধ্যমে শরীরে নেওয়া হয়, সেগুলো অনেক অনেক বেশি নিরাপদ। দীর্ঘদিন ধরে, বছরের বছর পর নিয়ে গেলেও তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায় না। তবে যাই করুন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কক্ষনও স্টেরয়েড ব্যবহার করবেন না।
ধরা যাক, প্রথম সপ্তাহে তিনটে করে, তারপর দুটো করে, তারপর একটা করে—এই ভাবে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো স্টেরয়েড গ্রহণ করলে কখনওই কোনও বিপত্তি দেখা দেয় না। মুখে খাওয়া স্টেরয়েডের থেকে যেগুলো ইনহেলার বা নেজাল স্প্রে-র মাধ্যমে শরীরে নেওয়া হয়, সেগুলো অনেক অনেক বেশি নিরাপদ। দীর্ঘদিন ধরে, বছরের বছর পর নিয়ে গেলেও তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা যায় না। তবে যাই করুন, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কক্ষনও স্টেরয়েড ব্যবহার করবেন না।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।