স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
হঠাৎ করে নাক বন্ধ! খুব মামুলি একটি সমস্যা। এবং সমাধান তো হাতের মুঠোয়। দোকান থেকে একটা নাকের ড্রপ কিনে এনে যত খুশি নাকে ঢাল। নাক খুলে যাবে আধ মিনিটেই। একেবারে যাকে বলে ম্যাজিক রেমিডি। কিন্তু নাকের ড্রপ শুধু উপসর্গটাকেই কমাতে পারে, যে কারণে নাক বন্ধ হচ্ছে, সেই কারণটাকে কিন্তু কমাতে পারে না। যদি কারও বারে বারে নাক বন্ধ হয়, তাহলে নেপথ্যের কারণটিকে অবশ্যই খুঁজে বার করতে হবে এবং চিকিৎসার প্ল্যানিং সেই ভাবেই করতে হবে।
নাকের ড্রপে থাকে অক্সিমেটাজলিন, ন্যাফাজলিন, সোডিয়াম ক্রোমোগ্লাইকোট ফিনাইলএফরিন ইত্যাদি নানা ধরনের রক্তনালী সংকোচনকারী রাসায়নিক পদার্থ। কিন্তু এগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে নাকের মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতি হয়। পরবর্তীকালে নাক আর খুলতে চায় না। দীর্ঘদিন নাকের ড্রপ ব্যবহারের প্রয়োজন হলে নরমাল স্যালাইন ড্রপই ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া এক গ্লাস বা প্রায় ২০০ মিলি উষ্ণ জলে একটু নুন ফেলে দিয়ে সেই জল কিছুটা করে নাক দিয়ে টেনে নিয়ে মুখ দিয়ে বার করে দিলে নাক পরিষ্কার হয়ে যায়। একে বলে নাসা পান বা নাসা ধৌতি। আজকাল বাজারে ন্যাসাল ওয়াশ কিট বেরিয়ে গেছে,যা খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৬: গলা সাধলেই লতাকণ্ঠী?
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১১: মাতৃরূপে প্রথম পুজোগ্রহণ
অনেক কারণেই নাক বন্ধ হতে পারে। তবে সবথেকে বেশি হয় আচমকা ঠান্ডা লাগলে। এটা হয় নানা ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য, যার ফলে নাকের ভিতরে রক্ত এবং অক্সিজেন সঞ্চালন কমে যায়। একে বলে ইস্কিমিক স্টেজ। এই স্টেজে নাক বন্ধ, হাঁচি, নাকে জ্বালা ইত্যাদি হয়। কয়েক ঘণ্টা বাদে নাক দিয়ে জল ঝরে, জ্বর জ্বর লাগে। একে বলে হাইপেরিমিক স্টেজ। জীবাণু সংক্রমনের ফলে নাকে পাকা সর্দি দেখা যায়। এরপর সব উপসর্গ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। একে বলে স্টেজ অফ রেজুলেশন।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৩: সুন্দরবনের গ্রামরক্ষক দেবতা আটেশ্বর
এক কথায় ইনফ্লুয়েঞ্জার সব উপসর্গ দেখা যায় ঠান্ডা জনিত কারণে নাক বন্ধ থাকার জন্য। ঠান্ডা লাগার কারণ ছাড়াও অ্যালার্জির কারণে বারে বারে নাকে প্রদাহ হলে, পলিপ হলে, নাকের পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলে, সাইনাসে ইনফেকশন হলে, নাকের ভিতর টিউমার হলে, গলায় প্রদাহ অর্থাৎ ফ্যারিনজাইটিস বা টন্সিলাইটিস ইত্যাদি নানা কারণেও নাক বন্ধ থাকতে পারে। ভাসোমোটর রাইনাইটিস নামক একটি রোগে নাক দিয়ে সব সময় জল ঝরে কিন্তু সর্দি হয় না। সঙ্গে থাকতে পারে নাক বন্ধ। আবার শিশুরা নাকে কিছু ঢুকিয়ে রেখে বলতে ভুলে গেলে বা ভয়ে না বললে পরবর্তীকালে নাক বন্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন:
বিচিত্রের বৈচিত্র: যে উপদেশ গিয়েছি ভুলে…/২
প্রথম আলো, পর্ব-৫: বিশ্বের প্রথম ঘড়ি কোনটি? আবিষ্কারক কে?
কেন নাক বন্ধ হয়?
নাক বন্ধর নেপথ্যে কি কারণ আছে, সেটা আগে খুঁজে বার করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে নাকের ড্রপ দু’ফোঁটা করে দিনে দু’ তিনবার দেওয়া যেতেই পারে। সঙ্গে ফুটন্ত জলের ভাপ, হাঁচি-কাশি থাকলে অ্যালার্জির ট্যাবলেট বা সিরাপ। এর ফলে তিন-চার দিনেই নাক খুলে যায়। কিন্তু বারে বারে হলে নিশ্চয়ই সাবধান হতে হবে। ডাক্তার দেখাতে হবে। সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি হয় সাইনুসাইটিস তবে সাইনাসের এক্সরে করে, রক্ত পরীক্ষা করে, সাইনোসকপি করে, প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান করে রোগ কনফার্ম করে ট্রিটমেন্ট প্ল্যানিং করতে হবে।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৪: মুহূর্ত মিলায়ে যায় তবু ইচ্ছা করে, আপন স্বাক্ষর রবে যুগে যুগান্তরে
কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১০: সাবিত্রীদেবীর দৃষ্টিতে টুকরো সময়
অ্যালার্জি থাকলে দীর্ঘদিন অ্যালার্জির চিকিৎসা করতে হবে। নাকে পলিপ বা টিউমার থাকলে অপারেশন করে সেটা বার করতে হবে। নাকের পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলে সেপটোপ্লাসটি অপারেশন করে সেটা সোজা করতে হবে। মোদ্দা কথা হল, বারে বারে নাক বন্ধ হলে আগে নেপথ্যের কারণটি খুঁজে বার করতে হবে এবং সেই মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে নাকের ড্রপ দেওয়া কখনওই নাক বন্ধ দূর করার স্থায়ী সমাধান নয়।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।