সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


অলঙ্করণ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

খাওয়া নিয়ে আমাদের প্রচুর বাধা নিষেধ। শীতকালে দই খেতে নেই। গরমকালে ডিম মাছ মাংস খেতে নেই। খেয়ে উঠে জল খেতে নেই। সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই—ইত্যাদি ইত্যাদি। আজকের আলোচনা শুধু ডিম নিয়ে। এমনিতে তো ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, বাতের ব্যথা বাড়ে, পেটের গন্ডগোল হয় ইত্যাদি বহু উল্টোপাল্টা ধারণা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। এ ধারণাগুলোর কিন্তু কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

প্রথমেই একটা কথা জানিয়ে রাখি, দেহ গঠনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় যে আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য দরকার, তার সবকটি থাকে একমাত্র ডিমেই। সেই জন্যই ডিমকে বলা হয় কমপ্লিট ফুড। প্রোটিন প্রধান খাদ্যের মধ্যে এখনও ডিম অপেক্ষাকৃত সস্তা। একটু মাছ-মাংস খেতে যেখানে দিনে অন্তত ৫০ টাকা প্রতিদিন লাগে, সেখানে পাতে ডিম রাখলে দশ টাকা দিয়েই চালিয়ে নেওয়া যায়।
একটা ডিমের গড় ওজন প্রায় ৬০ গ্রাম, যাতে প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকে মাত্র ৬ গ্রাম করে, যা সহজেই হজম করা যায়। এছাড়া থাকে ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, ১.৫ মিলিগ্রাম লোহা এবং আট গ্রাম অন্যান্য খনিজ পদার্থ। এছাড়া থাকে ভিটামিন সি বাদে প্রায় সব ভিটামিন। জল থাকে মাত্র ৩৫ গ্রাম, কোলেস্টেরল ৭০০ মিলিগ্রাম। শক্তি মেলে মাত্র ৭০ কিলো ক্যালরি। তাই ডিম খেয়ে কেউ মোটা হন না।

শীত গ্রীষ্ম বর্ষা—ডিম খাওয়া যায় যে কোনও সময়ই। ডিম খেলে শরীরে গরম হয় না, পেটও গরম হয় না। এসব গল্প কথা। যে জন্য রোগীদের খাদ্য তালিকায় সিদ্ধ ডিমের স্থানটি বরাবরের জন্য বাধা। অনেক বাড়িতে বসন্ত হাম-সহ নানা ভাইরাস ঘটিত রোগ দেখা দিলে ডিমের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়, অথচ এই সময় শরীরে বাড়তি পুষ্টির জন্য ডিম অবশ্যই খাওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৫: শরীর ফিট রাখতে রোজ ভিটামিন টনিক খাচ্ছেন?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭: ভারতের উত্তরাধিকার, কৌরব ও পাণ্ডবগণ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৯: প্লেগে কন্যার মৃত্যু, সেই শোক অবনীন্দ্রনাথের ছবিতে পায় ভিন্নতর মাত্রা

তবে আমাদের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে গরমকালে ডিম খেতে হবে একটু সাবধানে। কারণ ৩০-৩৫ ডিগ্রি গরমে ডিম নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে, যদি তাদের ঠিকমতো ফ্রিজে সংরক্ষণ করা না হয়। বাড়িতে ডিম এনে রান্না করার সময় খুব সহজেই সেই ডিম ভালো না খারাপ, তা গৃহিণীরা বুঝে ফেলেন। এ সময় রাস্তাঘাটে কিংবা রেস্তরাঁয় কক্ষনও ডিম খাবেন না। এসব জায়গায় পচা ডিমের ছড়াছড়ি। রান্নার গুণে তাদের পচনত্ত চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যদি খেতেই হয়, বাড়িতে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে সিদ্ধ করে খেতে হবে। বেশি তেল মশলা দিয়ে কষিয়ে খেলে ডিমের পুষ্টি মূল্য কমে যায়, দীর্ঘদিন খেলে পেটের পক্ষ সেটা খুব একটা নিরাপদও নয়।
আরও পড়ুন:

তুষারপাতের সেই দিনগুলি, পর্ব-৫: অগত্যা আর কিছু করার নেই, সব কাজ বাতিল করে তখনই ছুটতে হল

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩২: কি ‘উপহার’ সাজিয়ে দেব

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৭: পঞ্চমের কথা মতো ড্রাম ছেড়ে অমরুতের পিঠের উপর স্যাম্পল রিদম বাজাতে শুরু করলেন ফ্রাঙ্কো!

ডিম কিন্তু খেতে হবে পুরো সিদ্ধ করে। একসময় হাফ বয়েল বা অর্ধ সিদ্ধ ডিম খাওয়ার খুব প্রচলন ছিল। কিন্তু এর ফলে সালমোনেলা গ্রুপের নানা ব্যাকটেরিয়া পেটে ঢুকে নানা সমস্যা তৈরি করত। যে জন্য পুষ্টি বিজ্ঞানীরা কাঁচা ডিম বা অর্ধ সিদ্ধ ডিম খেতে বারণ করেন। ডিমের সাদা অংশে অ্যালবুমিন নামে একটি উন্নত মানের প্রোটিন থাকে, যা আর কোনও খাদ্য উপাদানে
পাওয়া যায় না। দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে বহিরাগত জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে এই অ্যালবুমিন।

ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল থাকে বলে একসময় হার্ট এবং প্রেসারের রোগীদের ডিম খেতে বারণ করা হতো। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রমাণ হয়েছে যে, ডিমের কুসুমের ওই সামান্য কোলেস্টেরল হার্টের তেমন কোনও ক্ষতি করতে পারে না। তবে অতিরিক্ত নয়, সপ্তাহে দু-তিনটে ডিম ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে বয়স্করা অবশ্যই খেতে পারেন।
আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: ঘি খেতে ভালোবাসেন? ঘিয়ের এই ১০টি গুণ জানতেন?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০: তত্ত্বতালাশ

দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’

ডিম হাসের না মুরগির খাবেন, এ প্রশ্ন অনেকে করেন। সিদ্ধ অবস্থায় দুটোরই পুষ্টিমূল্য প্রায় সমান। তবে হাঁসের ডিম আকারে বড় হয়, স্বাদও একটু অন্যরকম। খেতেও ভাল লাগে। ডিম দেশি ভালো না পোল্ট্রির, এই তর্কও অনেকেই তোলেন। পোল্ট্রির ডিমের কুসুম একটু ফ্যাকাসে বলে অনেকে খেতে চান না। অপরদিকে দেশি ডিমের কুসুম ঘন হলুদ রঙের, যা অনেকেরই পছন্দ। অথচ পুষ্টি কিন্তু পোল্ট্রির ডিমেই বেশি। দেশি মুরগি যেসব শাক-সব্জি খুঁটে খায়, তা থেকে সরাসরি ক্যারোটিন পায়। এই ক্যারোটিন হল, ভিটামিন এ-এর প্রাক অবস্থা, যে জন্য দেশি ডিমের কুসুম লাল। অপরদিকে পোল্ট্রির মুরগিকে সুষম পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া হয়, যা থেকে তারা সরাসরি ভিটামিন এ পায়, এজন্য তাদের ডিম ফ্যাকাসে বা সাদাটে। সঠিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ হয় বলে, পোল্ট্রির ডিম অবশ্যই বেশি পুষ্টিকর।

শেষ কথা হল, ডিম ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। পাতে তাই রোজ একটা করে ডিম রাখতেই পারেন, যদি না আপনার কোনও বড় অসুখ হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মতোই ডিম খাবেন। এই গরমেও সুসিদ্ধ ডিম অবশ্যই খেতে পারেন।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content