বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

পাড়া-বেপাড়ার জলসায় একটা সময় কণ্ঠী শিল্পীদের খুব জনপ্রিয়তা ছিল। রফিকণ্ঠী, হেমন্ত কণ্ঠী, লতাকণ্ঠী, কিশোরকণ্ঠী ইত্যাদি। পরবর্তীকালে এই কণ্ঠী শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই চিরকালের জন্য হারিয়ে গিয়েছেন স্বকীয়তার ছাপ রাখতে না পারার জন্য। ব্যতিক্রম অবশ্যই কুমার শানু। জনপ্রিয় হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজস্ব গায়কী ঘরানা তৈরি করে ফেলেন এবং শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে টিকে যান। কিশোর কুমারের গায়কীতেও একসময় সায়গল সাহেবের প্রভাব ছিল। কিন্তু তিনি অল্প দিনের মধ্যেই নিজস্ব স্টাইল এবং ঘরানা তৈরি করে ফেলে প্রবাদ-প্রতিম শিল্পীতে পরিণত হন।
অনেক শিল্পীই চান লতা কিংবা আশাকণ্ঠী হতে, কিন্তু ক’জন আর তা পারেন! আসলে যতই সাধ্য সাধনা করা হোক না কেন, একজনের গলা পুরোপুরি আর একজনের মতো কখনওই হতে পারে না, বড় জোর তার কাছাকাছি যেতে পারে। কেন একজনের গলা অবিকল অন্যজনের মতো হয় না, সেটারই বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা করছি এ বার।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৫: টনিক খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো?

প্রথম আলো, পর্ব-৪: পৃথিবীর প্রথম সুর ও সঙ্গীত কোনটি?

গলার স্বর তৈরিতে ফুসফুস, শ্বাসনালী, ভোকাল কর্ড, ফ্যারিংস, তালু, দাঁত, জিভ, ঠোঁট—সবারই কিছু না কিছু ভূমিকা আছে। এই গলার স্বর তৈরির ব্যাপারটা অনেকটা বাদ্যযন্ত্রের স্বর সৃষ্টির মতো। ধরা যাক একটা হারমোনিয়াম। এর ‘বেলো’ আমাদের ফুসফুস। ‘রিড’ ভোকাল কর্ড, ঠোঁট, জিভ, তালু, দাঁত ইত্যাদি। ‘রেজোনেটর’ বা বাদ্যযন্ত্রের ফাঁকা অংশ, যা অনুরণন সৃষ্টি করে ও স্বরে মিষ্টতা আনে, তাহলে নাক, ফ্যারিংস ও সাইনাস।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৭: সে কোন প্রভাতে হইল মোর সাধের ‘নবজন্ম’

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৫: সফল হোগি তেরি আরাধনা

শ্বাস নেওয়ার সময় আমরা যে বাতাস নাক মুখ দিয়ে গ্রহণ করি, তা ভোকাল কর্ডের ফাঁক দিয়ে শ্বাসনালী ও তার শাখা প্রশাখা বেয়ে ফুসফুসে পৌঁছে যায়। ফুসফুস সংকুচিত হলে বাতাস আবার আগের পথেই ফিরে গিয়ে ধাক্কা মারে ভোকাল কর্ড দুটোকে। ভোকাল কর্ডে শুরু হয় কম্পন। ছড়িয়ে পড়ে জিভ, তালু, দাঁত, ঠোঁটে। সৃষ্টি হয় শব্দ বা স্বর। রেজোনেটর এই স্বরে যুক্ত করে মিষ্টতা। যে হারমোনিয়ামের রেজোনেটর যত ভালো, তার স্বর তত মিষ্টি। ঠিক তেমনি আমাদেরও। ফুসফুসের সংকচন ক্ষমতা, শ্বাসনালী বা ট্রাকিয়ার বায়ুস্তম্ভের পরিমাণ, ভোকাল কর্ডের কম্পন ক্ষমতার উপর স্বরের তীব্রতা নির্ভর করে। এই পিচের ফলেই কারও গলার স্বর রুক্ষ হয়, কারওবা সুরেলা। এছাড়া ফুসফুসের সংকোচন-প্রসারণের উপর গলার স্বরের তীক্ষ্ণতা নির্ভর করে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১২: সুন্দরবনের আর এক ব্যাঘ্রদেবতা বড় খাঁ গাজী

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৪: হাজরা মোড়ে নাম না জানা কচুরিখানা

এগুলো জন্ম থেকেই একেক জনের একেক রকম নির্দিষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীকালে পরিবেশের প্রভাব ও গলা সাধায় এগুলো আরও পরিণত হতে থাকে। বংশের প্রভাবও এর উপর কাজ করে। কেউ যদি নিয়মিত গলার রেওয়াজ করেন, তবে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত স্বরের কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো কমানো যেতে পারে কিংবা পিচের কিছু পরিবর্তন ঘটানো যেতে পারে। কিন্তু হুবহু আরেকজনের মতো গলা কখনওই হতে পারে না।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content