বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

যে কোনও কাল, তা সে গরম বর্ষা শীত যাই হোক না কেন, তার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, থাকে নিজস্ব কিছু চাহিদাও। এই গরমকালের কথাই যদি ধরি, তাহলে দেখা যাবে এই সময় শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য নানা পদ্ধতি অনুসরণ করি আমরা। সেটা পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, দৈনিক কাজকর্ম–সবকিছুতেই প্রতিফলিত হয়। এই সময় যেমন ঠান্ডা খাওয়ার খুব বাতিক দেখা যায় আমাদের মধ্যে। নানা ধরনের ঠান্ডা পানীয়, ঠান্ডা ফল, ঠান্ডা দই, এমন কি নিম বেগুন উচ্ছে, তেঁতুলের টক—সবকিছুকেই ঠান্ডা খাবারের তালিকাভুক্ত করি আমরা। আর একটা জিনিস এ সময়ে সবাই খুব খেতে চান বা খেতে পছন্দ করেন— সেটা হল পান্তা ভাত।
পান্তা ভাত। সেটাও কিন্তু এক ধরনের ভাত, বলা যায় বিশেষ ধরনের ভাত। যে ভাত আমরা খাই সেই ভাত সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে দিলে সেটা কিছুটা আয়তনে বাড়ে। তার মধ্যে একটু গন্ধরাজ লেবু, সামান্য নুন, কাঁচা লঙ্কা, কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা তেল মিশিয়ে দিলেই সেটা হয়ে যায় পান্তা ভাত। গ্রামেগঞ্জে এখনও খেটে খাওয়া মানুষেরা সক্কালবেলা এক থালা পান্তা ভাত খেয়ে কাজে বেরিয়ে যান। এমনি ভাতের থেকে পান্তা ভাতে অনেক বেশি এনার্জি বা ক্যালরি পাওয়া যায়। যে জন্যই শ্রমজীবী মানুষদের কাছে পান্তা ভাত এক মহার্ঘ খাদ্য।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৬: গরমে কক্ষনও ডিম খেতে নেই?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮: রামচন্দ্রের কৈশোর, ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র: এক অনন্য উত্তরণ

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫২: প্রাকৃতিক উপায়ে মাছের ফলন বাড়াতে পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি

শুধু যে বাঙালিরাই পান্তা ভাত খায়, তা কিন্তু নয়। বিহার ওড়িশা, অসমেও পান্তা ভাত খুব জনপ্রিয় একটি খাদ্য। আর বাংলাদেশে নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রধান অনুষঙ্গ হল পান্তা ভাত। সংস্কৃতে পান্তা ভাতকে বলা হয় কাঞ্জিকা। এছাড়া পাখাল, পোখালো, পাখালা, পাখাল ভাত নামেও বিভিন্ন রাজ্যে পান্তাভাত পরিচিত।

আমরা সবাই জানি যে, ভাত কার্বোহাইড্রেট প্রধান একটি খাদ্য। কার্বোহাইড্রেটের প্রধান ভাগ তিনটি। শর্করা বা সুগার, শ্বেতসার বা স্টার্চ এবং সেলুলোজ বা খাদ্য ফাইবার। ভাত-সহ নানা ধরনের খাদ্যশস্যে সবথেকে বেশি থাকে শ্বেতসার জাতীয় কার্বোহাইড্রেট এবং অবশ্যই সেলুলোজ। আমাদের দেহের চালিকাশক্তি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আসে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য উপাদান থেকে। পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ৫০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সঞ্চিত থাকে। দেহে ঘাটতি দেখা দিলে এই সঞ্চয় থেকে পূরণের চেষ্টা করা হয়। প্রকৃতিজাত কার্বোহাইড্রেট দেহের পক্ষে সবথেকে বেশি উপকারি, যেমন নানা ধরনের খাদ্য শস্য, শাকসব্জি ও ফলমূল।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬০: রাতদুপুরে বিপন্নকে বাঁচাতে হাটখোলার পাট আড়তের টাকা এসেছিল জোড়াসাঁকোয়

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-২: এখানে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা, বাণিজ্যনীতি এবং বৈদেশিক নীতির চর্চা করা হয়েছে

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১১: নাথানিয়্যাল গোবিন্দ সোরেনের গল্প

ভাত শুধু যে শুধু সহজপাচ্য খাদ্য তাই নয়, দেহের পক্ষে প্রচণ্ড উপকারিও বটে। ১০০ গ্রাম ঢেঁকি ছাঁটা চাল থেকে শক্তি পাওয়া যায় ৩৪৯ কিলো ক্যালরি। কলে ছাঁটা চাল থেকে ৩৪৫ কিলো ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেট মেলে যথাক্রমে ৭৯ এবং ৭৭.৪ গ্রাম, প্রোটিন যথাক্রমে ৬.৪ এবং ৮.৬ গ্রাম, ফ্যাট ০.৪ এবং ০.৬ গ্রাম। এছাড়া নানা ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেলস ভাতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। সাধারণ ভাতকে জল দিয়ে গেঁজিয়ে বা ফার্মেনটেড করে তৈরি হয় পান্তা ভাত। এর ফলে এর পুষ্টি মূল্য অনেক বেড়ে যায়। যেমন ১০০ গ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ৩.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, সেখানে পান্তাভাতে থাকে ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম আয়রন, মানে প্রায় ২১ গুণ বেশি। এছাড়া নানা ধরনের মিনারেলস যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক– এগুলোর পরিমাণও পান্তা ভাতে বেড়ে যায়। কিছুটা কমে যায় সোডিয়ামের পরিমাণ। বেড়ে যায় বিভিন্ন মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও। কিছুটা হলেও কমে যায় কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের পরিমাণ। পান্তা ভাতের সঙ্গে শরীরে অনেক জলপ্রবেশ করে বলে, গরম কালে শরীরে কখনও জলাভাব দেখা দেয় না। যে জন্য আমাদের ত্বক থাকে সজীব এবং সতেজ।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৬: রতনপুর মহামায়া দর্শন

ইংলিশ টিংলিশ: ‘be verb’ এবং ‘have verb’ এর ব্যবহার জানেন? সহজ উপায়ে শিখে নিতে ভিডিয়ো ক্লিপটি দেখুন

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৮: সলিল চৌধুরীর সুরারোপিত গান খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতেন পঞ্চম

পান্তা ভাত খেলে কতটা শরীর ঠান্ডা হয় সেটা কেউ থার্মোমিটার দিয়ে কখনও মেপে দেখেনি। এখানে শরীর ঠান্ডা বলতে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান এবং জলের বেশি বেশি করে প্রবেশ এবং শরীরের এনার্জি বেড়ে যাওয়া—এমনটাই বোঝানো হয়ে থাকে। আমরা যারা শহুরে মানুষ, এই গরমকালের সপ্তাহে দুই-এক দিন পান্তা ভাত খেতেই পারি। সঙ্গে শাকসব্জি, ঝুরো আলু ভাজা, মাছ ভাজা, কাসুন্দি, শুকনো ডাল, শুঁটকি মাছ, আলু সেদ্ধ, বেগুন পোড়া—মিলিয়ে মিশিয়ে সবই চলতে পারে।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content