ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
কবিপক্ষ চলছে। কাজেই রবীন্দ্রনাথ দিয়েই শুরু করি। ভাবতে পারেন, আম খাওয়ার সঙ্গে আবার রবীন্দ্রনাথের কী সম্পর্ক! সম্পর্ক অবশ্যই আছে। কারণ আমজনতার মতো রবীন্দ্রনাথও আম খেতে খুব ভালোবাসতেন। শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, ঠাকুরবাড়িতে কাঁচা আম এবং পাকা আম দিয়ে সেই সময় নানা রকম রেসিপি তৈরি হতো। তার মধ্যে একটি ছিল আমশোল। গরমকালে কাঁচা আম দিয়ে শোল মাছ রান্না করা হতো অল্প তেল মশলা মিশিয়ে। এই পদটিরই নাম হল আমশোল, যেটি বিশ্বকবির ভীষন পছন্দের পদ ছিল।
সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই রসনা পরিতৃপ্ত করতে আমের স্থান এক নম্বরে। রাজা-বাদশা থেকে ফুটপাতবাসী সবারই পছন্দের তালিকায় সব সময় থাকে আম। আম পাওয়া যায় বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। বলা যেতে পারে এই সময়টাই আমের সিজন। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বছরই নানা ধরনের আম মেলে। তবে সময়ের আম বা সিজনাল ম্যাঙ্গোর স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই অতুলনীয়। বাজারে নানা প্রজাতির আম নানা নামে পাওয়া যায়। আমরা হিমসাগর, লেংড়া, ফজলি, চৌসা, লক্ষণ ভোগ, গোলাপ খাস, আলফানসো—এই নামগুলোর সঙ্গে বেশি পরিচিত। প্রতিটি আমের পুষ্টি মূল্য প্রায় এক হলেও স্বাদে গন্ধে কিন্তু পার্থক্য আছেই।
সভ্যতার আদি লগ্ন থেকেই রসনা পরিতৃপ্ত করতে আমের স্থান এক নম্বরে। রাজা-বাদশা থেকে ফুটপাতবাসী সবারই পছন্দের তালিকায় সব সময় থাকে আম। আম পাওয়া যায় বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকে শ্রাবণের শেষ পর্যন্ত। বলা যেতে পারে এই সময়টাই আমের সিজন। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে সারা বছরই নানা ধরনের আম মেলে। তবে সময়ের আম বা সিজনাল ম্যাঙ্গোর স্বাদ এবং পুষ্টি দুটোই অতুলনীয়। বাজারে নানা প্রজাতির আম নানা নামে পাওয়া যায়। আমরা হিমসাগর, লেংড়া, ফজলি, চৌসা, লক্ষণ ভোগ, গোলাপ খাস, আলফানসো—এই নামগুলোর সঙ্গে বেশি পরিচিত। প্রতিটি আমের পুষ্টি মূল্য প্রায় এক হলেও স্বাদে গন্ধে কিন্তু পার্থক্য আছেই।
গরমের শুরুতে বাজারে প্রথমে আসে কাঁচা আম। তিন ভাবে এই কাঁচা আম পাওয়া যায়। যদি অকাল ঝড়ে কাঁচা অবস্থায় আম পড়ে যায়, তাহলে সেগুলো বাজারে চলে আসে। আবার কিছু আম পাকার পরেও ভীষণ টক থাকে। সেগুলোকে কাঁচা অবস্থায় পেড়ে ফেলে বাজারে বিক্রি করা হয়। আবার যদি কোনও ধরনের আমের অতিরিক্ত ফলন হয়, তখন কাঁচা অবস্থায় তার কিছুটা পেড়ে নেওয়া হয়। কাঁচা আম আমরা মুখের স্বাদেই খেতে পছন্দ করি। আমচুর, কাসুন্দি দিয়ে নানা ধরনের আচার, আম তেল, মোরব্বা, সরষে আম, কিংবা কুচি করে কেটে একটু বিট নুন ছড়িয়ে কাঁচা আম খাওয়ার যে তৃপ্তি, সেটা একবার যে খেয়েছে সে ছাড়া কেউ বুঝবে না। যে জন্য কাঁচা আমের কথা মনে পড়লে আমাদের রসনা তাড়াতাড়ি সিক্ত হয়। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে শুধু মুখের স্বাদের জন্যই কাঁচা আম খাওয়া হয়, কাঁচা আম ভীষণ পুষ্টিকরও বটে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৮: শুঁটকি মাছে কি আদৌ কোনও পুষ্টিগুণ আছে?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬২: প্রথম রবীন্দ্রজীবনী
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪: একজন জ্ঞানী পণ্ডিত এবং ব্যবসায়ীর মধ্যে রাজা কাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া. পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!
এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, বিটা ক্যারোটিন ও আলফা ক্যারোটিন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইত্যাদি থাকে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাবোনয়েডস থাকার ফলে রোগ প্রতিরোধে এবং দেহকোষের ক্ষতিপূরণ রোধে কাঁচা আম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাইট্রিক, ম্যালিক এবং টারটারিক অ্যাসিড থাকে কাঁচা আমে। তবে কাঁচা আম খাবার সময় বোঁটার জায়গায় যে আঠালো রস থাকে সেটা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মুখের দিকটা একটু কেটে বাদ দিয়ে বাকি অংশ খেতে হবে। এই রস থেকে মুখের ভিতরে এবং ঠোঁটে ঘা হতে পারে। তবে কাঁচা আম কিন্তু একসঙ্গে খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, হজম করতে অসুবিধা হতে পারে। তাছাড়া কাঁচা আমের যে কোনও প্রিপারেশনে সঙ্গে অনেকটা পরিমাণ নুন পেটে চলে যায়। প্রেশারের রোগীরা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। তবে যাদের ব্লাড সুগারের জন্য পাকা আম খাওয়া নিষেধ, তারা এই সময়টা মনের সুখে প্রতিদিনই অল্প পরিমাণ কাঁচা আম খেতে পারেন। যদি সম্ভব হয় কাঁচা আম পোড়ার পানা খাবেন। এটা শুধু রুচিকর নয়, পুষ্টিকরও বটে।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১০: প্রশিক্ষক গুরু বিশ্বামিত্র, নারীহত্যা না মানবধর্ম?
পোন্নিয়িন সেলভান ২: ছোটবেলার ভালোবাসার সামনে ‘পরদারেষু মাতৃবৎ’ও দুর্বল হয়েছিল
অজানার সন্ধানে: মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করে ছাড়েন চাকরি, দিন কাটে অনাহারে, কে এই ভারতের ফেভিকল ম্যান?
এইবার আসি পাকা আমের কথায়। একেবারে পুষ্টির ছড়াছড়ি। ১০০ গ্রাম আম থেকে শক্তি মেলে মাত্র ৮০ কিলো ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেট ১৬ গ্রাম। প্রোটিন এবং ফ্যাট নামমাত্র। পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন (১২২০ ইউনিট)। এছাড়া অন্যান্য ভিটামিন এবং কাঁচা আমে যে সব খনিজ লবণ পাওয়া যায় তার সবকটিই মেলে পাকা আমে এবং বেশি পরিমাণে। প্রচুর ভিটামিন-এ থাকার জন্য আমাদের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে এবং ত্বকের জেল্লা বাড়াতে পাকা আমের কোনও জুড়ি নেই। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বলে পাকা আম বায়ু ও পিত্ত নাশক, রুচিকর, পুষ্টিকর, বল কারক, কফবর্ধক, বীর্যবর্ধক এবং মাংস বৃদ্ধি কারক। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস থাকার ফলে পাকা আম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দেহ কোষ ধ্বংসকারী ফ্রি রাডিক্যালসকে নষ্ট করে। গবেষণায় জানা গিয়েছে, ক্যানসার প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে পাকা আম। গ্লুটামিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি৬-এর উপস্থিতির জন্য পাকা আম আমাদের স্মৃতি রক্ষাকারী কোষগুলোর সক্রিয়তা বাড়ায়। অ্যানিমিয়া কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, গরমের শরীরের ক্লান্তি কমাতে, মানসিক চাপ অবসাদ এবং হৃদরোগ কমাতে পাকা আমের লা জবাব।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৪: স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ‘রাত-ভোর’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১০: কিশোর কণ্ঠের উপর যেন এক অলিখিত দাবি ছিল পঞ্চমের
স্বাদে-আহ্লাদে: বিকেল হলেই জমিয়ে প্রেম বা আড্ডা, সঙ্গে যদি থাকে ভেজিটেবিল চপ
কিন্তু প্রশ্ন হল, ডায়াবেটিক রোগীরা কি পাকা আম খেতে পারেন? অবশ্যই পারেন। তবে সামান্য পরিমাণে, প্রতিদিন দু-তিন টুকরোর বেশি নয়। সুস্থ মানুষেরা রোজ ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম আম নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। একটা প্রমাণ সাইজ আমের ওজন তিন থেকে চারশো গ্রাম। আঁটি বাদ দিলে যে দুটো টুকরো পাওয়া যায় তাতে ২৫০ গ্রামের মতো থাকে। এই পরিমাণ আম নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
শেষ কথা হল, যদি আপনার বড় কোনও অসুখ না থাকে, তাহলে এই গরমের দুটো মাস চুটিয়ে আম খান। দেখবেন আপনার ত্বকের জেল্লা বেড়ে গিয়েছে, এনার্জি লেভেল বেড়ে গিয়েছে, নিজেকে বেশ ইয়ং মনে হচ্ছে।
শেষ কথা হল, যদি আপনার বড় কোনও অসুখ না থাকে, তাহলে এই গরমের দুটো মাস চুটিয়ে আম খান। দেখবেন আপনার ত্বকের জেল্লা বেড়ে গিয়েছে, এনার্জি লেভেল বেড়ে গিয়েছে, নিজেকে বেশ ইয়ং মনে হচ্ছে।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।