স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
অ্যান্টিবায়োটিকের নাম শুনলে অনেকেই চমকে ওঠেন। ডাক্তারবাবুকে অনুরোধ করেন, ‘ওটা ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া যায় না। কি বড় বড় সাইজের ক্যাপসুল! খেলে তো রক্ষে নেই! মাথা ঘোরা, চোখ অন্ধকার, শরীর দুর্বল—আরও কত কি!’ আসলে অসুখ হলে শরীর এমনিতেই খুব দুর্বল হয়। ক্যাপসুলের বড়সড় চেহারা আর বাজারি দাম শরীরকে আরও দুর্বল করে দেয়। কাজেই ক্যাপসুল খেয়ে শরীর দুর্বল হওয়া, যত না শারীরিক তার থেকে অনেক বেশি মানসিক।
কাকে বলে অ্যান্টিবায়োটিক? আমাদের শরীরে যে কোনও অসুখের পিছনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণুর সংক্রমণ। এরা ভাইরাস হতে পারে, ব্যাকটেরিয়া হতে পারে, ফাঙ্গাসও হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক হল ব্যাকটেরিয়া নিধনকারী নানা ধরনের রাসায়নিক। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে কোনও সংক্রমণ হলে, তখন আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে কোনও উপায় থাকে না। অ্যান্টিবায়োটিক সবসময় যে ক্যাপসুল মোড়কে থাকবে তা নয়, এমনি ট্যাবলেট, ডাস্ট, কোনও সময় আবার মলম ইত্যাদি নানা ফর্মেও থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪১: চোখ ঠিক রাখতে মাছের মুড়ো?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
অ্যান্টিবায়োটিক একদিকে যেমন জীবনদায়ী ওষুধ, তেমনি তার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। কোনওটার কম, কোনওটার বা বেশি। আবার ব্যক্তিভেদে এর তারতম্যও হয়। একবার মাত্র ব্যবহার করে যেমন তাৎক্ষণিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তেমনি হতে পারে দীর্ঘদিন একটানা ব্যবহার করলে। যে জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধান ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কখনও ব্যবহার করা উচিত নয়। অভিজ্ঞ কথাটি আমি এখানে খুব সচেতন ভাবেই প্রয়োগ করলাম। এ পোড়া দেশে অভিজ্ঞর চেয়ে অনভিজ্ঞ, এক কথায় আনাড়ি ডাক্তারের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া খুব বিপদে না পড়লে কেইবা ডাক্তারের কাছে যান! পাড়ার দোকানি যা দু’চারটে বড়ি বা ক্যাপসুল দেন, তাই দিয়েই সামলাতে চান অনেকেই। তার ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৮: সুন্দরবনে বিচিত্র অবয়বের দেবতা জ্বরাসুর
পরিযায়ী মন, পর্ব-১০: চটকপুরের নিরালায়
যে কোনও অ্যান্টিবায়োটিক নির্দিষ্ট মাত্রায়, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে, নির্দিষ্ট দিন ধরে খেতে হয়– ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। ওমুকে বলল, এটা কড়া ওষুধ, আর আপনিও মাঝপথে বন্ধ করে দিলেন—এমনটা করবেন না। এতে ক্ষতি হয় মারাত্মক। খোঁচা খাওয়া আধমরা রোগ জীবাণু গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পূর্ণোদ্যমে দেহ জুড়ে ‘নেত্য’ শুরু করে আপনার বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলবে। বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া নিশ্চয়ই খারাপ, তার চেয়েও বেশি খারাপ ৫ দিনের জায়গায় ২ দিন খেয়ে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া। বা রোজ ডাক্তারবাবু চারটি করে খেতে বললে, দুটি করে খাওয়া।
আরও পড়ুন:
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২০: অক্টোবর মাসের ষোলো, কী হল! কী হল?
ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৪: মধুপুর ধাম, বাণেশ্বর মন্দির ও ধলুয়াবাড়ি সিদ্ধ নাথ শিবমন্দির
অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে পেট ব্যথা, পায়খানা, বমি, চুলকোনি, শ্বাসকষ্ট-সহ যে কোনও অসুবিধা দেখা দিলে, ওষুধটি বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। সব অ্যান্টিবায়োটিক সবার সহ্য হয় না, তা সে যত নামি দামিই হোক না কেন! পরিবর্তে অন্য কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য ডাক্তার বাবু পরামর্শ দেন। শেষ কথা হল, অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনও অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।