সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ কি দীর্ঘদিন যাবৎ ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যারাও রয়েছে। তাহলে কিন্তু আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্যটির ক্রনিক কিডনির সমস্যা বা সিকেডি (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) হওয়ার ঝুঁকি থাকছে। আমাদের দেহের রেচনতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি। কিডনি মূলত আমাদের রক্ত থেকে অতিরিক্ত জল বা তরলকে পরিশ্রুত করে এবং শরীরের সমস্ত বর্জ্য পদার্থকে বর্জন করতে সাহায্য করে। আর কিডনি যদি ঠিকমত কাজ করতে না পারে তাহলে আমাদের শরীরে জলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং বর্জ্য পদার্থগুলি জমে রক্তকে দূষিত করে দিতে থাকে। এর ফলে দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। এবং নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে।

কিডনি সঠিক ভাবে কাজ করতে না পারলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো মারণ রোগেরও সম্মুখীন হতে হয়। নানান শারীরিক সমস্যার জন্য ক্রনিক কিডনি ডিজিস হতে পারে। তবে এর প্রধান দুটি কারণ হল উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। এটা আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে সমগ্ৰ পৃথিবীর তুলনায় ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবেন। আর এর ফলস্বরূপ আমাদের কিডনির সমস্যাও ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে।
 

কীভাবে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করে?

উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে সুগারের বেড়ে গেলে (যা ডায়াবেটিসের জন্য হয়) দেহের সমস্ত রক্তবাহগুলি ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে, এমনকি কিডনিতে সরবরাহকারী রক্তবাহগুলিও নষ্ট হতে থাকে। এর ফলে এই রক্তবাহগুলির রক্তকে পরিশ্রুত করার ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই অক্সিজেন এবং পরিপোষক পদার্থ (নিউট্রিয়েন্টস) সঠিক পরিমাণে কিডনিতে পৌঁছতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলে কিডনির নিজস্ব কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং ফিল্টারিং ক্ষমতা কমতে থাকে। এর ফলে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল রক্তচাপকে আরও বেশি বাড়িয়ে দিতে থাকে।

ডায়াবেটিস ক্রনিক কিডনি ডিজিসের অন্যতম প্রধান কারণ। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি তিন জন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একজন এই ধরনের কিডনির সমস্যায় ভুগছেন।

আরও পড়ুন:

হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে বিগড়ে যায় কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, বিশ্বকে অবাক করে অসাধ্যসাধন করে দেখাচ্ছেন গবেষকরা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৬: গরমে কক্ষনও ডিম খেতে নেই?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৬: লিঙ্গ পরিচিতিতে খাদ্যাভ্যাসের রাজনীতি

 

ঝুঁকির কারণগুলি জানুন ও সতর্ক থাকুন

রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস দুটোকেই সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। কারণ বেশিরভাগ মানুষই দীর্ঘদিন পর্যন্ত জানেন না যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে, বা রক্তের সুগারের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এর ফলে কিডনিও যে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটাও আমাদের মধ্যে অনেকেরই অজানা থেকে যায়। তাই পরিবারের কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের সমস্যার থেকে থাকে তাহলে মোটামুটি ৪০ বছরের পর থেকেই নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করলে সেখান থেকে বোঝা যেতে পারে যে কিডনির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে।

আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১০: তত্ত্বতালাশ

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫১: সর্বত্র নিরবিচ্ছিন্ন প্রচার প্রয়োজন, তবেই বাড়বে মাছ নিয়ে সচেতনতা, উপকৃত হবে আমজনতা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩২: কি ‘উপহার’ সাজিয়ে দেব

কিডনির সমস্যা সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভোগা ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের একটু বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তাই নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ মাপা এবং ডায়াবেটিস থাকলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে কিডনিকেও ভালো রাখা যাবে। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান, তামাক জাতীয় পদার্থ খাওয়া থেকে বিরত থাকলে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলে যেমন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তেমনি আপনার কিডনি ও দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুস্থ থাকবে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৭: পঞ্চমের কথা মতো ড্রাম ছেড়ে অমরুতের পিঠের উপর স্যাম্পল রিদম বাজাতে শুরু করলেন ফ্রাঙ্কো!

স্বাদে-গন্ধে: মুরগির ঝোল কিংবা ঝাল নয়, এবার বানিয়ে ফেলুন দই মুরগি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৯: প্লেগে কন্যার মৃত্যু, সেই শোক অবনীন্দ্রনাথের ছবিতে পায় ভিন্নতর মাত্রা

 

কীভাবে বুঝবেন আপনার কিডনির সমস্যায় ভুগছেন

প্রথমদিকে সাধারণত কোনওরকম শারীরিক সমস্যা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ-এর ক্ষেত্রে বোঝা যায় না। দেখা গিয়েছে কিডনি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত কোনওরকম সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন না। তাই সতর্ক থাকাটাই এই সমস্যার থেকে বাঁচার প্রধান উপায়। যেমন ওজন কমে যাওয়া, খিদে না পাওয়া, ক্লান্তি, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসা, দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রায় ভোগা, পেশিতে খিচুনি হওয়া, পায়ের পাতা বা গোড়ালি ফুলে যাওয়া এবং মাথা ব্যথার লক্ষণকে কখনওই অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকদের মতে মোটামুটি ৫০ বছরের পর থেকে নিয়মিত কিডনির বিভিন্ন পরীক্ষা করানো উচিত। আর ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভোগা ব্যক্তিদের এই বিষয়গুলি সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ খাওয়া খুবই জরুরি।

* প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান (health-science): ড. দোলন দাস, (Dolan Das) শারীরবিদ্যার অধ্যাপিকা, কল্যাণী মহাবিদ্যালয়।

Skip to content