শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

যুবক করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে থাকাকালীন তাঁর বার বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হচ্ছিল। পঞ্চম বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পরে হৃৎস্পন্দন চালু না মনে করা হয়েছিল, তিনি আর বেঁচে নেই। ঠিক সে সময়ই এক চিকিৎসক পরীক্ষামূলক ভাবে নিজের জ্ঞানের প্রয়োগে উদ্যোগী হন।
একটানা ৪৫ মিনিট বিশেষ পদ্ধতিতে সিপিআর (কার্ডিয়োপালমোনারি রিসাসিটেশন) দিয়ে ওই যুবকের হৃৎস্পন্দন চালু করেন। করোনাকালে ঘটনাটি ঘটে বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালে। আর সেই হৃদ্‌রোগ চিকিৎসক হলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী যাদবপুরের বাসিন্দা ডাঃ অরিজিৎ ঘোষ। ডাঃ অরিজিৎ ঘোষের এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এর একটি গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:

কালি-কলমের মেলা

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-১২: স্ট্যানলি ম্যাথুজ— একজন কিংবদন্তি, লড়াই আবেগ আর মেহনতী জনতার বন্ধু

ঘটনাটি ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর। হঠাৎ করে সর্বজিৎ সিংহের বুকে যন্ত্রণা হয়। এবং এর পরে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন, সর্বজিৎ সিংহের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। তাঁকে দ্রুত বার্মিংহাম সিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁর বেশ কয়েক বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্প করাও বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ হৃৎস্পন্দন। শক এবং সিপিআর পদ্ধতিতেও কোনও কাজের কাজ হচ্ছিল না।

এমন সময় ডাঃ অরিজিৎ ঘোষ শেষ চেষ্টা করার প্রস্তাব দেন। তাঁর পরিকল্পনা মতো তিনি সিপিআর-এর সঙ্গে ‘ডাবল সিকুয়েন্সিয়াল এক্সটার্নাল ডিফিব্রিলেশন’ দিতে শুরু করেন। এর অর্থ হল, সর্বজিৎকে তাঁর পিঠ, বুক এবং বগলের মাঝে একাধিক বার দু’দিক থেকে শক দেওয়া হল। এ ভাবে টানা প্রায় ৪৫ মিনিট চলার পরে যুবকের বন্ধ হৃৎস্পন্দন ফের চালু হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৫: শরীর ফিট রাখতে রোজ ভিটামিন টনিক খাচ্ছেন?

সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-১৩: পয়লা বৈশাখের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’— অসম্প্রদায়িক চেতনার বিশ্ব ঐতিহ্য

অরিজিৎ ঘোষের কথায়, “এই পদ্ধতি নতুন নয়, ১৯৯৩ থেকেই সবার জানা। যদিও কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাবের বাইরে এর প্রয়োগ তেমন ভাবে হয় না। সেই পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়েছিল, সর্বজিৎ সিংহের ক্ষেত্রে ওই বিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা দরকার।” তিনি আরও জানান, এই বিশেষ পদ্ধতি চলাকালীন সর্বজিতের মস্তিষ্কের কোষকে বাঁচিয়ে রাখতে অ্যানাস্থেটিস্টরা কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন সাপোর্ট দিচ্ছিলেন। তাঁর পরে স্টেন্ট বসানো হয়।

হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলছেন, “এটি এখনও খুব প্রচলিত পদ্ধতি নয়। কিছু গবেষণাপত্রে এই পদ্ধতিতে রোগীকে বাঁচানোর উল্লেখ আছে। তবে আরও কয়েকটি সা‌ফল্য দেখতে হবে।”

Skip to content