সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

ঋতু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়৷ এর কারণ মূলত তাপমাত্রার তারতম্য। দিনের বেলা হয়তো তাপমাত্রার পারদ যথেষ্ট বেশি, রাতে আবার তুলনায় অনেক কম। আবহাওয়ার এই তারতম্যের ফলে কিছু ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস সক্রিয় হয়ে দ্রুত বংশবিস্তার করে। এই কারণেই সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস ঘটিত রোগ তো আছেই এর সঙ্গে পরিবেশ দূষণও অসুখবিসুখে একটি বড় ভূমিকা নেয়।
 

ঋতু পরিবর্তনে সাধারণত কী কী রোগ দেখা যায়?

প্রধানত ঋতু পরিবর্তনে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর হয়। এই রোগগুলি প্রধানত ভাইরাস ঘটিত। তাই এগুলিকে ভাইরাল ফ্লু বলে। নাক দিয়ে জল পড়া, গলা ব্যথা, জ্বর আসা-ভাইরাল ফ্লু-এর লক্ষণ। ঋতু পরিবর্তনে আরও কিছু রোগ দেখা যায়। যেমন, চিকেন পক্স, মামস, হাম প্রভৃতি। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়াও হতে পারে। কারও কারও উদরাময়জনিত রোগও দেখা যায়। সাধারণত এটি বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। যেমন, কলেরা, রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া ইত্যাদি। জলবাহিত রোগের মধ্যে ট্রাইফয়েড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পতঙ্গবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া এই ধরনের রোগ হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় বিভিন্ন কারণে অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। কারও কারও সর্দি, কাশি বা নাক দিয়ে জল পড়ে। যাদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের সমস্যা আরও বাড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে ত্বক লাল হয়ে ফুলে যায়, একে আরটিকেরিয়া বলে। শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যাবার ফলে বিভিন্ন চামড়ার সমস্যা দেখা যায়। যেমন, সরিয়াসিস, এটোপিক ডারমাটাইটিস, হেয়ার ফল ইত্যাদি বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৮: চল্লিশ পার হলেই নিরামিষ?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৫: সুন্দরবনের বিসূচিকা রোগের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ওলাবিবি

 

কী করণীয়?

জলবাহিত রোগ এড়িয়ে চলতে আমাদের জলকে ফুটিয়ে খেতে হবে। রাস্তার খাবার বা অপরিচ্ছন্ন খাবারগুলি এড়াতে হবে। কারণ এর থেকে পেটের সমস্যা তৈরি হতে পারে। বাজার থেকে আনা শাকসবজি বা ফল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, খাবার আগে ও বাথরুমের পরে অবশ্যই ভালো করে হাত ওয়াশ করতে হবে। খালি পায়ে বিশেষ করে বাচ্চাদের খেলতে দেওয়া যাবে না।
পতঙ্গবাহিত রোগগুলি থেকে বাঁচার জন্য আমাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, কোনও জায়গায় জল জমতে দেওয়া যাবে না। যেমন, টায়ারের মধ্যে বা নারকেলের মালার মধ্যে জল জমতে দেখলে তৎক্ষণাৎ তা পরিষ্কার করতে হবে। কারণ মশা এই জাতীয় জলেই ডিম পাড়ে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৮: খেলার ছলে এসেছিনু যেথা ‘হারজিৎ’-র পর্ব রাখিনু সেথা

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১২: জয়রামবাটিতে প্রত্যাবর্তন

 

খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে স্বাস্থ্যকর ডায়েটের প্রয়োজন। যেমন, বেশি পরিমাণে শাকসবজি খেতে হবে, মরশুমি ফল খেতে হবে, ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এগুলি খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। ফলে ভাইরাসঘটিত ইনফেকশন হওয়ার সুযোগ খুব কমবে। এর সঙ্গে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার লিটার জল খাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭২: রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে কঠোর হতেও পারতেন

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১১: দেব-দেউল কথা ও মদনমোহন মন্দির

 

যে সব হোমিওপ্যাথি ওষুধ বাড়িতে থাকলে ভালো

ঋতু পরিবর্তনের সাধারণত ভাইরাল ফ্লু অর্থাৎ সর্দি, কাশি প্রভৃতি হয়। তার জন্য কিছু ওষুধ আছে যেমন, অ্যাকোনাইট, বেলডোনা, ব্রায়োনিয়া এগুলি খুব ভালো কাজ করে।
ডায়েরিয়াঘটিত রোগের ক্ষেত্রে আর্সেনিক অ্যালবাম, মারকিউরিয়াস, পোডোফাইলাম প্রভৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। এর সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে পর্যাপ্ত জল ও শরবত খেতে হবে।
বিশেষ কিছু রোগের জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রতিরোধক হিসাবে ভালো কাজ করে। যেমন, হামের জন্য একটি ওষুধ হল মরবিলিয়াম। হাম শরীরে দেখা দেওয়ার আগে যদি মরবিলিয়াম খাওয়ানো হয় তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে ভেরিওলিনাম ওষুধ খুব ভালো কাজ করে।
মামস-এর জন্য প্যারোটিডিনাম ওষুধ হাতের কাছে রাখা যেতে পারে। মামস প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে ওষুধটি।
অ্যালার্জির ক্ষেত্রে অনেক ওষুধ আছে। কী ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে সেই অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করতে হবে। কারও খাওয়াদাওয়া থেকে অ্যালার্জি হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঋতু পরিবর্তনের জন্যও অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জির সমস্যা হোমিওপ্যাথিতে অনেক ভালো ওষুধ রয়েছে। যেমন, আর্সেনিক আয়োড, হিস্টামিনাম এই ধরনের অসুখে খুবই উপকারী।
ত্বকের সমস্যার ভালো সমাধান লুকিয়ে আছে হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রে। কিছু কিছু ওষুধও আছে যেমন, গ্রাফাইটিস, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি ত্বকের সমস্যাতে ভালো কাজ করে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার জন্য হোমিওপ্যাথি ওষুধ বাড়িতে রাখলেও সব সময় একজন দক্ষ ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত। কারণ কোন সমস্যায় ঠিক কী ওষুধ দিনে কতবার, কতটা পরিমাণ, কীভাবে খেতে হবে এটা জানা অত্যন্ত জরুরি।

যোগাযোগ : ৯৪৩৩১৮০৩১২

* হোমিওপ্যাথি (Homeopathy) : ডাঃ আশিস শাসমল (Asish Sasmal), সহযোগী অধ্যাপক, পিসিএম হোমিওপ্যাথিক হসপিটাল অ্যান্ড কলেজ।

Skip to content