বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

চড় চড় করে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ, এখনও দেখা নেই কালবৈশাখীর। তীব্র তাপপ্রবাহে শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা থাকে খুবই বেশি৷ অল্পবয়সি মানুষের ক্ষেত্রে সমস্যার আশঙ্কা তাও কিছুটা কম থাকে। কিন্তু বয়স বেশি হলে, বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই, ষাট পেরিয়ে অবসর জীবন কাটানো মানুষদের এই সময়টাই বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷ সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে বাড়ির লোকজনকেও।
 

প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো এক্কেবারে নয়

খুব দরকার না হলে বয়স্ক মানুষেরা এই সময় বাড়ি থেকে বেরোবেন না। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা। এই সময় সূর্যের তাপ খুব বেশি থাকে। মর্নিং ওয়াক করতে হলে সকাল ৬টার মধ্যে সেরে ফেলুন। গরমের সময় হাটবাজার করতে বেরোনো হোক বা অন্য কাজে, রোদে বেরোলে অবশ্যই কিছু বিষয় মানতে হবে। বাজার একসঙ্গে কয়েক দিনের করে নিন। বা এলাকায় যারা দুয়ারে বাজার নিয়ে আসে তাদের থেকে নিন৷ বাইরে গেলে অবশ্যই মাথায় ছাতা দিন৷ পাশাপাশি সুতির কাপড়ের জামা-কাপড় পরেই বাইরে বেরোতে হবে৷ এর অন্যথা হলে সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
 

অবশ্যই সঙ্গে জলের বোতল রাখুন

এই সময়টায় প্রতিটি মানুষকে বিশেষ করে বয়স্কদের জলের বোতল নিয়ে বেরোতে হবে। কারণ, এই গরমে শরীরে জলের জোগান ঠিক না রাখতে পারলে দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশন সহ অন্যান্য সমস্যা। এছাড়া জলের সঙ্গে ওআরএস (ORS) মেশাতে পারলে সবথেকে ভালো হয়। কারণ শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইটসের বা লবণের ভারসাম্য আসে ওআরএস-এর মাধ্যমে৷ প্রয়োজন হলে ডাবের জল পান করতে পারেন৷

আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৬০: সন্দেহের পর সন্দেহ

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২৫: ধৃতিমানের ওপর কি শ্রেয়া নজর রাখছিল? নাকি অন্য কেউ?

 

ডিহাইড্রেশন থেকে সতর্ক থাকুন

এই সময় দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশন (Dehydration)। এক্ষেত্রে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়৷ পাশাপাশি জলের সঙ্গে বেরিয়ে যায় প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইটস বা খনিজ লবণ, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি। ইলেকট্রোলাইটস ও জল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে বড়সড় সমস্যা হতে পারে। খুব বেশি ঘাম হলে, জিভ গলা শুকিয়ে গেলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, খুব ক্লান্ত লাগলে সতর্ক থাকুন৷
 

হিট এক্সহউশন খুব পরিচিত সমস্যা

এই সময় প্রবীণদের একটি পরিচিত সমস্যার নাম হল হিট এক্সহউশন (Heat Exhaustion)। এই সমস্যা বেশি দেখা যায় গরমের পাশাপাশি আর্দ্রতা বেশি থাকলে। এক্ষেত্রেও শরীর ঠিকমতো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর ফলেই দেখা দেয় সমস্যা। বয়সকালে সামান্য কিছু কাজ করলেও এই সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে খুব ঘাম হওয়া, বমি বা বমি বমি ভাব, পেশিতে ব্যথা বা ক্লান্তি, অত্যন্ত ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৪: কোন সকালে মুক্তির অপেক্ষায় ‘ত্রিযামা’

ইতিহাস কথা কও: পূর্বোত্তরে ইতিহাস ঐতিহ্যে হাতি

 

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে

হিট স্ট্রোক (Heat Stroke) আপনাদের অনেকের পরিচিত সমস্যা। এক্ষেত্রে শরীর দ্রুত গরম হয়ে যায়। কোর টেম্পারেচার অনেক বেশি হয়ে যায়। বয়স্কদের (Elderly) এই সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে সবথেকে বেশি। আসলে কম বয়সে শরীর গরম বাড়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু বেশি বয়সে আর এই কাজটা সম্ভব হয় না। তাই হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা সবথেকে বেশি। এক্ষেত্রে তাপমাত্রা অনেকটা বেড়ে যাওয়া, পালস বেড়ে যাওয়া, বিভ্রান্তি, অজ্ঞান এমনকী কোমা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 

সুগার ফল বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে সতর্ক থাকুন

এই গরমে অনেক ডায়াবেটিস রোগীদের রাস্তায় বেরিয়ে সুগার ফল বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এই মানুষগুলি সঙ্গে কিছুটা চকোলেট রেখে দিন। সবচেয়ে ভালো হয় গ্লুকোজ মেশানো জল যদি রাখতে পারেন। সমস্যা বুঝলে খেয়ে নিন। দেখবেন, ভালো অনুভূত হবে। তাই প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীদের এই বিষয় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে৷

আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪১: মা সারদার অন্তরঙ্গ সেবক শরৎ মহারাজ

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৯: কামিনী রায়, জনৈক বঙ্গমহিলা

 

হঠাৎ প্রেশার কমে যেতে পারে

গরমে বাজারে বা ব্যাংকের লাইনে অনেক বয়স্ক মানুষ দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে রক্তচাপ হঠাৎ করেই অনেকটা কমে যেতে পারে যাকে বলে ভেসোভেগাল ইফেক্ট। তাই বেশিক্ষণ না দাঁড়ানোই উচিত৷ বরং কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে কোথাও একটা বসতে হবে। তবেই এই সমস্যা এড়াতে পারবেন৷
 

খেতে হবে সহজ পাচ্য খাবার

এই সময় তেল, ঝাল, মশলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়ারিয়া সহ অন্যান্য রোগের আশঙ্কা অনেকটাই বাড়বে। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়ির খাবার খান। খান মরশুমি ফল (কোনও বিশেষ বাধানিষেধ না থাকলে), শাক, সবজি। আর অবশ্যই পরিমিত জল পান। রান্না হবে একদম কম মশলা দিয়ে। হালকা খাবার, তরল জাতীয় খাবার হলেই ভালো। আর অবশ্যই কোনও সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ নির্বিচারে মেট্রোনিডাজল বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না, কারণ সব পেট খারাপেই কিন্তু এসব লাগে না৷

এই সব কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই কিন্তু প্রবীণ মানুষেরা ভালো থাকতে পারবেন। প্রবীণদের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির লোকেদেরও কিন্তু একটা বড় ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে।

* লেখক: কর্ণধার ‘বাঁচবো’, সহ সম্পাদক জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, পশ্চিমবঙ্গ শাখা৷ উপদেষ্টা, প্রোটেক্ট দ্যা ওয়ারিয়ার্স। যোগাযোগ : ‘বাঁচবো’, ফোন : ৯৯০৩৩৮৮৫৫৬

Skip to content