রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


ডাঃ জয়ন্ত রায়, সিনিয়র কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট

হঠাৎ শুরু হয়ে গেল মাথাব্যথা। কোনও কাজেই মন দিতে পারছেন না। মাসের তিন-চারটে দিন এইরকম মাথাব্যথা একেবারে বাঁধাধরা। মাথাব্যথা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আপনাকে জানতে হবে ঠিক কী কারণে প্রায়ই মাথাব্যথা হচ্ছে। কোন মাথাব্যথা মাইগ্রেনের, আর কোনটা নয়, তা আগে বুঝতে হবে। জানতে হবে মাইগ্রেন আসলে কী? এর উপসর্গই বা কী? মাইগ্রেন থেকে মুক্তির উপায় কী? এই সবকিছু নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন কলকাতার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস-এর ডিরেক্টর অব স্ট্রোক প্রোগাম এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট ডাঃ জয়ন্ত রায়। কথা বলেছেন মোহনা বিশ্বাস।

● মাইগ্রেন ঠিক কী?
●● মাইগ্রেন হল একটা মাথাব্যথার অসুখ। এটাকে প্রাইমারি হেডেক ডিসঅর্ডারের মধ্যে ধরা হয়। মাইগ্রেন একটি প্রাইমারি হেডেক। যেখানে শুধুমাত্র হেডেক নয়, এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক নানারকম উপসর্গ থাকতে পারে।

● কেন হয়?
●● মাইগ্রেন হওয়ার পিছনে দুটো থিয়োরি আছে। ইলেক্ট্রিক্যাল থিয়োরি এবং কেমিক্যাল থিয়োরি। ইলেক্ট্রিক্যাল থিয়োরি-র ক্ষেত্রে ব্রেনের মধ্যে কিছু ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল তৈরি হয়, যা ধীরে ধীরে ব্রেনের একটা রিজিয়ন থেকে অন্য রিজিয়নে ছড়িয়ে পড়ে। এটাই মাইগ্রেনের ব্যথাকে আরও উদ্দীপিত করে। কেমিক্যাল থিয়োরি-র ক্ষেত্রে ব্রেনের মধ্যে থাকা স্নায়ু কোষগুলির কাজ নিয়ন্ত্রণে রাখে নিউরো কেমিক্যাল। মূলত, ইলেক্ট্রিক্যাল থিয়োরি এবং কেমিক্যাল থিয়োরির কারণেই মাইগ্রেন হয়।

● এর উপসর্গ নিয়ে যদি একটু বিস্তারিত বলেন?
●● মাইগ্রেনকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। সাধারণ মাইগ্রেন ও ক্লাসিক মাইগ্রেন বা মাইগ্রেন উইথ অরা।

● কোনটা সাধারণ মাইগ্রেন বুঝবো কী করে?
●● মাথাব্যথা ও বমি হওয়া।

●ফোটোফোবিয়া ও ফোনোফোবিয়া-র বিষয়টি যদি বুঝিয়ে বলেন।
●● ফোটোফোবিয়া-তে ভুগলে মাইগ্রেনের রোগীরা অন্ধকার ঘরে থাকতে বেশি পছন্দ করে। কারণ তাঁরা জোরালো আলো বা রোদের আলো সহ্য করতে পারে না। একেই বলে ফোটোফেবিয়া। আর ফোনোফোবিয়া হল যারা আলোর পাশাপাশি জোরালো শব্দ সহ্য করতে পারে না, তাকে বলা হয় ফোনোফোবিয়া। কেউ সাধারণ মাইগ্রেনে ভুগলে মূলত এই উপসর্গগুলি দেখা যায়।

ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

● সাধারণ মাইগ্রেনের থেকে ক্লাসিক মাইগ্রেন বা ‘মাইগ্রেন উইথ অরা’-এর পার্থক্য কী?
●● এক্ষেত্রে মাইগ্রেনের দু’ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। তার মধ্যে একটি হল প্রোড্রোম। যা মাইগ্রেন হওয়ার আগে জানান দেয়। এক্ষেত্রে মাইগ্রেন হওয়ার আগে চোখ বন্ধ করলে চোখের সামনে তারা তারা দেখেন অনেকে। এটা দিয়ে শুরু হওয়ার পর হেডেক আরম্ভ হয়। যাঁদের এমন হয়, তাঁরা জানেন যে তাঁদের এরপর মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হবে। হেডেকটা চলে যাওয়ার পর তারপর কতক্ষণ মাথাব্যথা থাকবে, তার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। কারওর কারওর সারাদিন ব্যথা থাকে, বমি হয়, কারওর আবার দু’ঘণ্টার মধ্যেই ব্যথা কমে যায়।
● মাইগ্রেন থেকে মুক্তির উপায় কী?
●● কারওর যদি মাইগ্রেন থেকে থাকে তাহলে ওষুধ তো অবশ্যই খেতে হবে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন মাইগ্রেন সারে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মাইগ্রেনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার ভালো উপায় হল লাইফস্টাইল চেঞ্জ করা। অর্থাৎ একটি সুস্থ লাইফস্টাইল পারে মাইগ্রেন থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে। এই রোগকে গুরুত্ব না দিলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই আপনার যদি মাইগ্রেনের উপসর্গগুলি থেকে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

● মাইগ্রেন থাকলে কী খাওয়া যাবে না?
●● মাইগ্রেন থাকলে কিছু খাবারকে বিদায় জানাতে হয় ঠিকই। তবে সেটা ব্যক্তিবিশেষে নির্ভর করে। সাধারণত, মাইগ্রেনের সমস্যা থাকলে খাদ্যতালিকা থেকে প্রথমেই বাদ দিতে হবে আজিনামোটো। বেশি চিজ, কফি খেলেও অনেকের মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। তাই এই দুটো খাবারও খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া, মটন খেলে অনেকের মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়ে। তাই যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাঁদের মটন না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এসবের পাশাপাশি চাইনিজ খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে।

Skip to content