মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

আগে সাধারণত মধ্যবয়স্ক পুরুষ বা মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বেশি দেখা যেত। কিন্তু এখন অনেক কম বয়সেও কেউ কেউ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছেন। এমনকী ৩৫ থেকে ৪০ বছরের নীচেও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা ঘটছে।
হার্ট অ্যাটাক বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি? আমাদের হার্টের যে তিনটি রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনী আছে অর্থাৎ যে তিনটি ধমনী দিয়ে হার্টের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন হয় তাতে যখন আংশিক বা পুরোপুরি রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে হয়ে যায় তখন তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় হার্ট অ্যাটাক বলা হয়।
 

হার্টের সমস্যায় অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টোরল, অতিরিক্ত মেদ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মদ্যপান, মানসিক চাপ—এগুলিকে মূলত হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে মনে করা হয়।

 

উপসর্গ

সাধারণত বুকের বাঁ দিকে ব্যথা অনুভূত হয়। আস্তে আস্তে সেই ব্যথা চোয়াল বা বাঁদিকের কাঁধ ও হাতে ছড়িয়ে যেতে থাকে। এটি হাঁটাচলা করলে বেশি হয়। এই ধরেনের ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকবে। ফলে এই রকম ব্যথা দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা হওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড়, হঠাৎ শরীর খারাপ লাগতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

যদি শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনও সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয়, তবে সেটা খারাপ লক্ষণ। অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াও হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।

হঠাৎ করে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি ভাব এলেও সতর্ক থাকতে হবে।

শরীরে কলস্টেরলের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে গেসিও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন:

যে জীবন মানেনি বাধা…

ভালোবাসা এবং ভরসা

ছাদে দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন বিগ-বি, রশ্মিকার হাতে লাটাই, ‘গুডবাই’ কবে মুক্তি পাচ্ছে?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১: আলোছায়ায় ‘দৃষ্টিদান’

 

তাহলে প্রতিকারের উপায়

বংশগত কারণেও কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই পরিবারে কাউ যদি ৫০ বছরের নীচে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও ইতিহাস থাকে তাহলে ২৫ বছরের পর থেকে বছরে অন্তত একবার স্ক্রিনিং করতে হবে। হার্টের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে। স্ক্রিনিং অর্থাৎ ইসিজি ও ইকো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে এইচবিএ১সি সাড়ে ছ’য়ের নীচে রাখতে হবে।

এছাড়া যদি কারও ব্লাড প্রেশার বা কোলেস্টেরল লেভেল বেশি থাকেতাহলে তাঁকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। শরীরচর্চা করে হোক বা ওষুধ খেয়ে যে ভাবে হোক ব্লাড প্রেশার বা কোলেস্টেরল লেভেলকে কমাতে পারেন।

রোজ অন্তত ৪৫ মিনিট শরীরচর্চা করতেই হবে। ঘাম ঝরবে এমন শরীরচর্চা করতে হবে।

যাঁদের ব্লাড প্রেশার আছে তাঁদের নিয়মিত ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেতে হবে।

হৃদরোগের প্রধান শত্রু হচ্ছে ধূমপান। তাই ধূমপান ও মাদকদ্রব্য থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকুন।

ডায়াবেটিস এখন ঘরে ঘরে। একে নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। এজন্য নিয়মিত হাঁটা-চলা ও ব্যায়াম করে নিজেকে সুস্থ রাখুন।

প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

কায়িক পরিশ্রম না করে যাঁরা কাজ করেন তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ওজন বেড়ে গেলে যেহেতু মেদ বেড়ে যাবে তাই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও অবশ্যই বেশি থাকে। তাই ওজন বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক হতে হবে।

যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের বুকে ব্যথা ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের চেষ্টা করতে হবে এইচবিএ১সি অর্থাৎ রক্তের যে তিন মাসের গড় সুগারের মাত্রা সাড়ে ছ’য়ের নীচে রাখতে।

ডায়াবেটিস, কোলস্টেরল বেশি থাকলে ওষুধ খেতে হবে।

বছরে একবার করে ইসিজি, ইকো পরীক্ষা করে দেখতে হবে হার্টের কোনও সমস্যা আছে কিনা। যদি ইতিমধ্যেই হার্টের কোনও সমস্যা এসে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে অ্যাসপিরিন অর্থাৎ ‘ব্লাড থিনা’র জাতীয় ওষুধ খেতে হবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনওই ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। তাহলেই কিন্তু আমরা হার্ট অ্যাটাককে এড়িয়ে চলতে পারব।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫

Skip to content