রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

গত সপ্তাহে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, পা ফোলার সম্ভাব্য কারণগুলি কী কী? আজ এর দ্বিতীয় ভাগ নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা হয় তো অনেকেই জানি না, কিছু কিছু ওষুধ খেলেও পা ফুলতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা ব্লাড প্রেশারের সমস্যায় ভোগেন, তাঁরা এক ধরনের ওষুধ খান, যেমন অ্যামলোডিপাইন। এই ডিপাইন দিয়ে শেষ হয় এমন ওষুধগুলো খেলে কিন্তু অনেকের পা ফুলতে পারে। যেমন অ্যামলোডিপাইন, সিলনিডিপিন, নিফিডিপিন, মেরিডিপাইন এই জাতীয় ওষুধ খেলে পা ফোলার সম্ভাবনা থাকে। তবে ওষুধ খেলেই যে পা ফুলবে এমনটা নয়। এই ডিপাইন জাতীয় ওষুধ যারা খান তাঁদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ শতাংশ ব্যক্তির পা একটু আধটু ফোলে ফুলতে পারে। এই ব্লাড প্রেসারের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পা ফোলা কিন্তু খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু কারও পা যদি খুব বেশি ফোলে অর্থাৎ পায়ে জুতো গলাতে পর্যন্ত অসুবিধা হচ্ছে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন করতে হতে পারে।

এছাড়া আর্থারাইটিসের জন্য অনেকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খান। আবার করোনা সময় রোগীর ফুসফুসের সংক্রমণে জন্য অনেক সময় চিকিৎসকেরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন। এই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খেলে ফলে পা ফুলতে পারে। আবার স্টেরয়েড বন্ধ করে দিলেও আস্তে আস্তে পা ঠিক হয়ে যায়। সুতরাং যারা স্টেরয়েড নিচ্ছেন তাঁরা কিন্তু পা ফুললে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ খেলেও পা ফুলতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে ব্যথার ওষুধ খেলে কিডনির উপর খারাপ প্রভাব পড়তে, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় ‘ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস’ বলা হয়। অনেকে মাইগ্রেনের ব্যথায় জন্য বা হাড়ের সমস্যার জন্য ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার খান, এই ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার জাতীয় ওষুধ খেলেও অনেকেরই পা ফোলে। তবে ওষুধ খাওয়ার জন্য যদি কারও পা ফোলে চিকিৎসকের পরামর্শে নেওয়া উচিত। অনেক সময় ওষুধ পরিবর্তন করে সমস্যা এড়ানো যায়। মনে রাখবেন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পা ফুললে কখনও একটা পা ফুলবে না, দুটো পাই ফুলবে।
 

পা ফুললে কী কী পরীক্ষা করা উচিত?

পা ফুললেই প্রথমেই দেখতে হবে একটা পা ফুলছে, না কি দুটিই পা ফুলছে।
আর্থারাইটিস আছে কি না।
পায়ে ব্যথা আছে কি না।
তিনটি প্রধান অর্গান অর্থাৎ কিডনি, হার্ট, লিভারের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা এগুলো দেখার জন্য কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। প্রথমে কিডনির জন্য কিডনির ফাংশন টেস্ট অর্থাৎ ইউরিয়া ক্রিয়েটিন চেক করতে হবে। লিভারের জন্য লিভার ফাংশন টেস্ট করতে হবে। আর হার্টের জন্য ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে হবে।

এছাড়া থাইরয়েড ফাংশন ঠিক আছে কি না দেখার জন্য থাইরয়েড পরীক্ষা করতে হবে। ‘কমপ্লিট হিমোগ্লাম’ পরীক্ষা করেও দেখতে হবে যে রোগীর হিমোগ্লাম কমে যাচ্ছে কি না। অর্থাৎ রোগীর রক্ত কমে যাচ্ছে কি না দেখতে হবে।

অনেক ক্ষেত্রে কিডনি থেকে প্রোটিন লিক করে। প্রথম দিকে প্রোটিন লিক করলে কিন্তু প্রস্রাবে ফেনা হয়। অনেকে সেটা ভালো করে দেখেন না বলে বুঝতে পারেন না, বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীরা।
ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনির সমস্যার জন্য পা ফুলতে পারে। প্রথম দিকে কিন্তু ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন বাড়ে না। সেক্ষেত্রে ইউরিন স্পট এসিআর অর্থাৎ অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেসিও পরীক্ষা করে দেখতে। এই পরীক্ষা সকালের প্রথম ইউরিন দিয়ে করতে হয়। এই পরীক্ষা করলে বোঝা যায় ইউরিনের প্রোটিন লিক করছে কিনা। ইউরিনে প্রোটিন লিক করলে পা ফুলতে পারে।

এছাড়া অনেক সময় ছেলেদের ক্ষেত্রে বিশেষত একটু বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রস্টেটের সমস্যা হয়। প্রস্টেটের সমস্যা হলে অনেক সময় ইউরিন আটকে যায়, সেক্ষেত্রে প্রস্টেটের আলট্রা সাউন্ড করে দেখতে হবে ইউরিন জমে থাকছে কিনা। কারণ প্রস্টেট বড় হলে বা ইউরিন জমে গেলে ‘ব্যাক ফ্লো’ করে কিডনি ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। এর জন্যও পা ফেলতে পারে।

আগের পর্বে বলেছিলাম যে, পায়ের গোছে যে শিরা এবং ধমনী আছে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধলে পায়ে ব্যথা এবং পা ফোলার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। একে চিকিৎসা পরিভাষায় ডিপ ভেন থ্রমবোসিস বলা হয়। এর জন্য ডপলার স্ক্যান করে দেখতে হয়। এই স্ক্যান করলে বোঝা যায় আমাদের পায়ে কোথাও কোনও ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধছে কিনা। সুতরাং আমাদের পা যদি ফোলে তাহলে এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে আসল কারণ আমরা জানতে পারবো এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫

Skip to content