বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

একেবারে দোরগোড়ায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। আর পুজোর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হল লম্বা ছুটি। অনেকেই পুজোর ছুটিতে প্রতি বছরই নিয়ম করে বেড়াতে যান। যদিও করোনা সংক্রমণের জন্য গত দুবছর সেইভাবে কেউ বেড়াতে যেতে পারেননি। আজকে আমরা জেনে নেবো, এ বছর পুজোর ছুটিতে বেড়াতে গেলে আমরা কী কী সাবধানতা অবলম্বন করব।

মনে রাখতে হবে, এখনও দেশের বেশ কিছু রাজ্যে কমবেশি করোনা হচ্ছে। করোনার সময় আমরা যে সতর্কতাগুলি অবলম্বন করছিলাম, যেমন নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এগুলো এখনও মেনে চলতে হবে। ট্রেনে, বাসে বা বিমানে যে ভাবেই যান না কেন, নিজের সুরক্ষার জন্য এগুলো মেনে চলতেই হবে।
মাস্ক পরলে এবং নিয়মিত স্যানিটাইজ করলে কোভিড ছাড়া অন্যান্য ভাইরাল সংক্রামক রোগ যেমন সোয়াইন ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা এগুলিও এড়ানো যাবে। কারণ, এ ধরনের রোগও শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যেই ছড়ায়।
 
বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সতর্কতা

এ বিষয়ে আমার পরামর্শ, যাঁদের খুব বেশি বয়স এ সময় তাঁদের যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলাই ভালো। পাশাপাশি বিমান, ট্রেনে বা দূরের কোনও গন্তব্য বেড়াতে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর বেড়াতে যদি যেতেই হয় তাহলে বরং কাছেপিঠে কোথাও যান। যেখানে ব্যক্তিগত বা ভাড়া গাড়িতে কয়েক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিলেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেই সঙ্গে অবশ্যই সর্বত্র করোনা বিধি মেনে চলতে হবে।
 
সঙ্গে রাখুন ‘মসকিউটো রিফলেক্ট’

এছাড়া আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এখন ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এগুলো মশাবাহিত রোগ। সুতরাং ‘মসকিউটো রিফলেক্ট’ সঙ্গে রাখতে হবে। যদিও অনেক সময় হোটেলে বা অন্যান্য জায়গায় এগুলো রাখা থাকে, তাও নিজের কাছে এটি থাকলে মশার কামড় থেকে নিজেকে অনেক নিরাপদে রাখা যায়।

 
যে সব ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে

যাঁরা বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য নিয়মিত ওষুধ খান তাঁরা বেড়াতে যাওয়ার সময় অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধগুলি সঙ্গে নিয়ে যাবেন। কারণ, অনেক জায়গায় এখানকার প্রেসক্রিপশনের ওষুধ সব সময় পাওয়া যায় না। ওষুধ একটু বেশি করেই সঙ্গে রাখলে ভালো। কারণ অনেক সময়ই ভ্রমণসূচি পরিবর্তন হয়। আবার ট্রেনে বা বিমানে টিকিট সংক্রান্ত কারণেও দেরি হতে পারে।
 
হার্টের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা

যাঁরা হার্টের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যায় ভোগেন তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন। হার্টের সমস্যায় অনেকে ইনহেলার ব্যবহার করেন। তাই ইনহেলারও সঙ্গে রাখতে হবে।
 
পাহাড়ে বেড়াতে গেলে

যাঁরা পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছেন তাঁরা যাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। আপনার পক্ষে পাহাড়ে যাওয়া উচিত হবে কিনা বা কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, ইনহেলার সঙ্গে রাখতে হবে কিনা, যাঁরা শ্বাসকষ্টে ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রে ইনহেলারের ডোজ বাড়াতে হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিয়ে যাত্রা শুরু করা উচিত।

আরও পড়ুন:

রিল লাইফ পেরিয়ে রিয়েল লাইফেও প্রেম করছেন শ্বেতা-রুবেল? মুখ খুললেন অভিনেতা

বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে, পর্ব ৩৪: দোলন ইজিট্যাক্সি থেকে নেমে হাসিমুখে বলল, ‘চলেন আপনারে মঠে পৌঁছাইয়া দিয়া আসি…’

 
বমির প্রবণতা থাকলে

যাঁদের বমির প্রবণতা আছে বিশেষত গাড়িতে চাপলে বা পাহাড়ে উঠলে তাঁরা অ্যাভোমিন জাতীয় ওষুধ যাত্রা শুরু করার আধ ঘণ্টা আগে অবশ্যই খেয়ে নিতে হবে।
 
ডায়রিয়া হলে

ইলেকট্রল পাউডার বা ওআরএস সঙ্গে রাখতে হবে। যে কোনও ধরনের ডায়রিয়া হলে প্রথমে ইলেকট্রল বা ওআরএস জল খেতে হবে। এক লিটার জলে এক প্যাকেট ইলেকট্রল পাউডার বা ওআরএস গুলে বারবার সেই জল পান করতে হবে।
 
হজমের সমস্যা

বেড়াতে গিয়ে অনেক সময় খাবারের জন্য কারও কারও হজমের সমস্যা হয়। সেই জন্য এনজাইম জাতীয় হজমের ওষুধ সঙ্গে রাখুন। দুপুরে এবং রাতে খাবার পরে খেতে হবে। অ্যাসিডিটির জন্য সবচেয়ে ভালো লিকুইড জাতীয় অ্যান্টাসিড খাওয়া। তবে বাইরে বেড়াতে গেলে বিমানে অনেক সময় বেশি লিকুইড বহন করতে দেয় না। তাই এক্ষেত্রে অ্যাসিডিটি কমানোর জন্য প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ ৪০ পাওয়ারের একটা করে খালি পেটে খেতে পারেন বা যখন মনে হচ্ছে গ্যাস হচ্ছে তখনও খাওয়া যেতে পারে। বমির জন্য প্যান্টোপ্রাজলের সঙ্গে ডমপেরিডন কম্বিনেশন ওষুধও পাওয়া যায়। সেই ধরনের ওষুধও খাওয়া যেতে পারে। আবার ডমপেরিডন-১০ খাওয়ার আধঘণ্টা আগে খাওয়া যেতে পারে।

 
জ্বর হলে

জ্বরের জন্য ক্যালপল বা প্যারাসিটামল অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।
 
ব্যথার জন্য

বেড়াতে গিয়ে অনেক সময় চোট-আঘাত লেগে যায়। তা থেকে ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল-১০০০ বা ক্রোসিন খেতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে দুবার বা তিনবার খাওয়া যেতে পারে। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যে কোনও রোগী ব্যথার জন্য এই ওষুধ খেতে পারেন।
 
কাশি

কাশির জন্য সালবুটামল জাতীয় কাফ সিরাপ সঙ্গে রাখতে হবে। দু’ চামচ করে তিনবার খাওয়া যেতে পারে।
 
সঙ্গে রাখুন চিকিৎসকের ফোন নম্বর

বেড়াতে যাওয়ার আগে আপনার গৃহ চিকিৎসকের ফোন নম্বর সঙ্গে রাখবেন। কারণ হঠাৎ করে দরকার পড়লে আপনি যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারবেন কোনও সমস্যায় কী ওষুধ খেতে হবে। বেড়াতে গিয়ে যে হোটেলে থাকবেন সেখানকার চিকিৎসক বা স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখবেন, যাতে হঠাৎ দরকার পড়লে যোগাযোগ করতে পারেন।

উপরোক্ত সতর্কতাগুলি মেনে চলে পুজোর ভ্রমণ উপভোগ করুন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫


Skip to content