সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

ইউরিক অ্যাসিড কোথা থেকে আসে?
আমরা প্রধানত তিন ধরনের খাবার খাই। ১. প্রোটিন যুক্ত, ২. কার্বোহাইড্রেট এবং ৩. ফ্যাট।
প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে যখন মেটাবলিজম তৈরি হয় অর্থাৎ শরীরে ভেঙে যায় তখন প্রোটিন থেকে যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মলিউকলগুলি আমাদের শরীরে উৎপন্ন হয়, তার মধ্যে একটি হল ইউরিক অ্যাসিড। শরীরে প্রোটিনের পরিমাণ যত বেশি থাকবে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণও তত বেশি হবে। আমাদের শরীরে এমন কিছু অঙ্গ আছে যেমন কিডনি, সেখান দিয়ে ইউরিক অ্যাসিড বেরিয়ে যায়।

রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার কারণ কী?
দুটো কারণে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে৷ এক, কিডনি দিয়ে ইউরিক অ্যাসিড ঠিকমতো বেরোতে পারছে না৷ দুই, আমাদের শরীরে বেশি ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হচ্ছে৷ প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে৷ কিংবা শরীরে যে বিভিন্ন কোষ আছে সেই কোষগুলি নিরন্তর ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে চলে৷ অর্থাৎ কোষ জন্মায়, আবার কোষ ভাঙে৷ শরীরের কোষগুলি যে ভাঙছে সেখান থেকেও ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হতে পারে।

ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে কী কী উপসর্গ হতে পারে?
প্রধানত হয় গাঁটে ব্যথা, পায়ের বুড়ো আঙুলে ব্যথা। বুড়ো আঙুল ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়। যার ফলে হাঁটাচলাও করতে পারবেন না৷ এছাড়াও হাঁটুতে ব্যথা বা পায়ের গোড়ালিতেও ব্যথা হতে পারে। আমাদের শরীরে যে ছোট ছোট গাঁট আছে, যেমন কবজি বা হাতের আঙুলে গাঁট৷ মনে রাখতে হবে এগুলির ব্যথা ইউরিক অ্যাসিড থেকে হয় না। ব্যতিক্রম হিসাবে কিছু মানুষের এই হাতে ব্যথাও হতে পারে। তবে তাঁদের হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল যাঁদের শরীরে দীর্ঘদিন ধরে ইউরিক অ্যাসিডের প্রাচুর্য দেখা যায়। অনেকের ধারণা আছে গা, হাত, পা, পিঠের যন্ত্রণা হচ্ছে মানে তার ইউরিক অ্যাসিড আছে কিন্তু এ ধারণা সত্য নয়। ইউরিক অ্যাসিডের কারণে কখনও পিঠের ব্যথা হয় না। পিঠে ব্যথা হয় অন্য কারণে৷
এই ইউরিক অ্যাসিড যদি বেড়ে যায় তাহলে কিডনি বা মূত্রনালীতে পাথর হতে পারে। দেখা গেছে যে কিডনিতে স্টোন হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

আমরা চিকিৎসা কখন করব?
শরীরে ওজন বেড়ে গেলে ওবেসিটি, ডায়াবেটিস বা রক্তে কোলেস্টেরল ট্রাইগ্লিসারয়েডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া—এইগুলি খুবই মেটাবলিক সিনড্রোম। এইগুলি থেকে অনেক রোগও হয়৷ যেমন, ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশার, হার্টের সমস্যা। এই সমস্ত রোগের প্রারম্ভিক উপসর্গ হল রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।

ধরা যাক, একটি ২৫ বছরের ছেলের ইউরিক অ্যাসিড ধরা পড়েছে কিন্তু তার কোনও উপসর্গ নেই। তখন ডাক্তারবাবুরা বলেন রুগিকে সজাগ হতে অর্থাৎ ধীরে ধীরে দৈহিক ওজন কমাতে। টেস্ট করে দেখতে হবে তার ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার সব কিছু ঠিক থাকছে কি না। এগুলি যদি না হয় তাহলে ইউরিক অ্যাসিডের চিকিৎসা করার কোনও প্রয়োজন নেই। যদি গাঁটে ব্যথা বা কিডনির সমস্যা না হয় তাহলেও আমরা বলি যে কারণগুলির জন্য ইউরিক অ্যাসিড বাড়ছে সেই কারণগুলিকে অনুসন্ধান করতে। সেই কারণ দেখেই চিকিৎসা করতে হয়। ইউরিক অ্যাসিড যখন আমাদের মূত্রের মধ্য দিয়ে নির্গমন হয় তখন করণীয় হল যাতে বেশি পরিমাণ ইউরিক অ্যাসিড নির্গমন করে।

কী কী খাবার খাবেন
বেশি করে ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। লেবুজাতীয় ফল খেতে হবে, আমলকী খেতে হবে। বেশি পরিমাণে জল খেতে হবে। দেখা গেছে যদি বেশি পরিমাণে জল ও ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খাওয়া যায় তাহলে মূত্রের মধ্য দিয়ে তা বেরিয়ে যায়।

কী কী খাবার খাবেন না
প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে পাঁঠার মাংস, যেকোনও মাংসের মেটে, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া—এগুলি খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। ভেজিটেবল প্রোটিনের মধ্যে সোয়াবিন, শিম, পুঁইশাক, টমেটোর ভিতরের অংশ, ঢেঁড়স—এগুলি খেলেও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। যদি খেতে হয় খুব কম করে খেতে হবে। ডিম কম খেতে হবে। কারণ এতে অনেক প্রোটিন রয়েছে।

যদি কিডনির সমস্যা আপনার শরীরে থাকে তাহলে ইউরিক অ্যাসিডের জন্য অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে। কারণ এই ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মধ্যে গিয়ে তার সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি মহিলাদের ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ৬.৫ মিলিগ্রাম এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৭ মিলিগ্রামের বেশি হয় তাহলে তা অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে। কারণ যদি কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে ইউরিক অ্যাসিড কিডনির মধ্যে প্রবেশ করে সেই সমস্যাটাকে আরও বাড়িয়ে ফেলতে পারে৷ কিডনিতে স্টোন পর্যন্ত হতে পারে৷

এই সাধারণ বিষয়গুলি যদি আমরা মনে রাখতে পারি তাহলে আমরা ইউরিক অ্যাসিডের হাত থেকে বাঁচতে পারি।

Skip to content