মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

কোলেস্টেরল দু’ ধরনের হয়। এক, এলডিএল কোলেস্টেরল এবং দুই, এইচডিএল কোলেস্টেরল। এই দুই কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত হার্টের সমস্যার জন্য। হার্ট আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করে। হার্ট যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে তার জন্য হার্টের নিজস্ব কিছু রক্ত সঞ্চালন লাগে পুষ্টির জন্য। প্রধানত হার্টের তিনটি ধমনী আছে, যারা হার্টের রক্ত সঞ্চালন করে। এই ধমনী যদি কখনও ব্লক হয়ে যায় তাহলে আমাদের নানা সমস্যা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। যেমন—বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি প্রভৃতি।
রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনী ব্লক হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ, রক্তে অস্বাভাবিক কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা থাকার জন্য।

কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ
বংশগতভাবে কোনও কোনও পরিবারের দেখা যায় তাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেশি। সেই সমস্ত পরিবারের মানুষের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও সাধারণত বেশি থাকে। কিছু কিছু এমন রোগ আছে সেগুলি যদি কারও হয় তাহলে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। এই রোগগুলি হল ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, থাইরয়েড বা হাইপোথায়রয়েড, কিডনিজনিত ও লিভারজনিত সমস্যা।
ওবেসিটির বলতে মূলত ‘সেন্টার ওবেসিটি’ বা পেটের মেদ বৃদ্ধির কথা বলছি। এর প্রধান কারণ হল নিয়মিত শরীরচর্চার ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব। দীর্ঘদিন কোভিড পরিস্থির জন্য ওয়ার্ক ফর্ম হোম হওয়ার ফলে ওবেসিটি হার অনেকটাই বাড়ছে। আর এই ওবেসিটি বেড়ে যাবার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ছে। ফলস্বরূপ, রক্ত সঞ্চালনকারী প্রধান তিনটি ধমনী ব্লকে সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
রক্ত সঞ্চালনকারী ধমনীগুলি যে ব্লক হচ্ছে প্রথম দিকে এর কোনও উপসর্গ থাকে না। যখন ৫০-৬০ শতাংশের বেশি ব্লক হয়ে যায় তখনই আমরা বুঝতে পারি। অর্থাৎ বুক ধড়ফড় করা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি উপসর্গ তখন দেখা দিতে শুরু করে।
কখন সজাগ হব?
যদি কোনও ব্যক্তির বংশপরম্পরাগত হার্টের সমস্যা না থাকে তাহলে পুরুষের ক্ষেত্রে ৩০ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর বছরে একবার টেস্ট করিয়ে নেওয়া উচিত। কিন্তু যদি বংশপরম্পরাগত হার্টের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে পুরুষের ক্ষেত্রে ২৫ বছর এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ বছরের পর বছরে একবার করে টেস্ট করা দরকার। সেই সঙ্গে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী শরীরচর্চা করতে হবে এবং খাদ্যাভ্যাসের বিধি নিষেধ মেনে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
কোলেস্টেরলের মাত্রাটি কতটা থাকা উচিত
এইচডিএল কোলেস্টেরল অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরল পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫-এর বেশি এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৫৫ বেশি রাখতে হবে। এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধির পথ ডাক্তারি শাস্ত্রে সীমিত। তবে আপনি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস করেন তাহলেই এই কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
যাঁদের এখনও পর্যন্ত হার্টের কোনও সমস্যা হয়নি তাঁদের এলডিএল কোলেস্টেরল ১০০ নীচে রাখতে হবে। যাঁদের ইতিমধ্যেই হার্টের সমস্যা হয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে এলডিএল কোলেস্টেরল ৭০-এর নীচে রাখতে হবে। এই এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতে গেলে আপনাকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস করতে হবে। খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। তেল, ঘি, মাখন, ফাস্টফুড এগুলি আসতে আসতে কমিয়ে ফেলতে হবে। ডিমের কুসুম, রেড মিট খাওয়া যাবে না। রান্নায় পরিমিত তেল ব্যবহার করতে হবে। তেল ছাড়াও আপনি কতটা পরিমাণ ক্যালোরি খাচ্ছেন সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। এসবের সঙ্গে আপনাকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনার অ্যাক্টিভিটি অনুযায়ী আপনার কতটা পরিমাণ ক্যালোরি খাওয়া উচিত।
এছাড়া যদি বংশপরম্পরাগত এলডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা থাকে তাহলে টেস্ট করিয়ে ২৫-৩০ বছরের পর থেকে ওষুধ শুরু করা বাঞ্ছনীয়। কারণ, এলডিএল কোলেস্টেরলের যে ওষুধগুলি পাওয়া যায় সেগুলি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ। এই ওষুধগুলিই আপনাকে হার্টঅ্যাটাক থেকে বাঁচাতে পারে। অর্থাৎ হার্টঅ্যাটাক হলে এনজিওগ্রাফি, এনজিওপ্লাস্টি, বাইপাস প্রভৃতি সমস্যা থাকলে এই ওষুধগুলির প্রয়োজন পড়ে। এই ওষুধগুলিকে যুগান্তকারী ওষুধও বলা হয়। তবে এই ওষুধগুলি নেওয়ার আগে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
রক্তে লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করতে গেলে আপনাকে ১২ ঘণ্টা খালি পেটে থেকে টেস্ট করতে হবে। অর্থাৎ এই ১২ ঘণ্টা জল ছাড়া অন্য কিছু খাবার খেতে পারবেন না। সাধারণত প্রথম ৬ মাস ওষুধ না দেওয়া হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও শরীরচর্চার মধ্যমে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। তাতেও যদি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে ওষুধ খেতে হবে। কিন্তু যাঁদের বংশপরম্পরাগত এই সমস্যা আছে তাঁদের নিয়মিত ওষুধ খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

Skip to content