বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংহিতায় প্রত্যেক ঋতুর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ঋতুচর্যা রয়েছে। যেখানে মূলত কোন ঋতুতে কী জাতীয় খাদ্য গ্রহণ ও কী কী বর্জন করা উচিত সে ব্যাপারে সুবিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়।

হেমন্ত-শিশির ঋতুসন্ধিকালীন সতর্কতা
আচার্য বাগভট মতে দুই ঋতুর মধ্যবর্তীকালীন সময়কে অর্থাৎ প্রথম ঋতুর শেষ সপ্তাহ ও আগত ঋতুর প্রথম সপ্তাহকে ঋতুসন্ধি বলা হয়। (যেমন: হেমন্তের শেষ সাতদিন ও শীতের প্রথম সাতদিন) এই সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করে ধীরে ধীরে নতুন ঋতুর নীতিমালায় অভ্যস্ত হলে খুব সহজে ঋতু পরিবর্তন জনিত রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

শিশির ঋতুচর্যায় আয়ুর্বেদ
হেমন্ত অপেক্ষা শীতকালে শৈতের প্রভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকে সঙ্গে রুক্ষতাও। তাই এই সময় জঠরাগ্নির দীপ্ততা বাড়ে এবং বারে বারে খিদের প্রবণতা দেখা যায়। প্রাতরাশে মধুর, অম্ল, লবণ রস যুক্ত খাদ্যদ্রব্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সেবন করা উচিত যাতে অগ্নির সাম্যতা বজায় থাকে।

নিয়মিত অভ্যঙ্গ
আয়ুর্বেদ মতে শীতকালে স্নানের পূর্বে নিয়মিত রূপে অভ্যঙ্গ অর্থাৎ তেল মাখার অভ্যাস করুন কারণ এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে, মাংসপেশি সুদৃঢ় হয় এছাড়াও অভ্যঙ্গ দৃষ্টিপ্রসাদন করে, তারুণ্য বজায় রাখে, ক্লান্তি নাশ করে, এটি নিদ্রাদায়ক। সর্বোপরি ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে অভ্যঙ্গ এক অদ্বিতীয় উপাচার। তবে জ্বর, সর্দি, কাশি, অজীর্ণ রোগীদের ও মাসিককালে অভ্যঙ্গ নিষেধ।

স্নান বিধি
শীতকালে তেল মাখার পর সম্ভব হলে উষ্ণ জলে দ্রোণী অবগাহন (বাথটবে স্নান) ও স্নানের পর কেশর লেপ করলে শরীর সুবাসিত ও উষ্ণ থাকে।

খাদ্যাভ্যাস
নিরামিষভোজী ও আমিষভোজীদের ক্ষেত্রে পৃথক খাদ্যাভ্যাস থাকলেও প্রায় সকলের জন্য শীতের শাকসবজি, মরশুমি ফল, গুড়ের তৈরি খাবার, ঘি, ঔষধি সুরাপান ও ইক্ষু রস, দুগ্ধজাত দ্রব্য সেবনীয়।

শীতঋতুর অসুখ বিসুখ ও প্রতিকার

সর্দিসহ সাধারণ জ্বর
সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারণে হাওয়া জ্বর দিন তিনেকের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে ওঠে তবে সর্দিসহ জ্বরে অঙ্গমর্দ, অরুচি, মুখে তেতো ভাব থাকলে আদা তুলসীপাতার রস এক ফলপ্রসূ মুষ্টিযোগ।

শুকনো কাশি
কাশির জন্য গলা খুসখুস করলে ও ঢোক গিলতে সমস্যা হলে আদা টুকরো গোলমরিচ চূর্ণ মিশিয়ে চকলেটের মতো করে দিনে চারবার মতো সেবন করা যেতে পারে।

শিরোশূল (মাথাব্যথা)
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে নাসাপথকে শিরের দ্বার বলা হয় অর্থাৎ অধিকাংশ শিরোরোগ চিকিৎসায় নাক দিয়ে নস্যকর্ম নামে এক বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। তা অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদাচার্যের তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। তবে শ্লেষ্মাজনিত মাথাব্যথায় তিন ফোঁটা পেঁয়াজের রস দুই নাসাপথে দিয়ে টানলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই ব্যথার উপশম হয়। মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থাকলে সপ্তাহখানেক সকাল সন্ধে তিন ফোঁটা করে ষড়বিন্দু তেলের ব্যবহার করা যায়।

স্বরভঙ্গ
গলার স্বর বসে গেলে যষ্টিমধু চূর্ণ বা বহেড়ার চূর্ণ মধু সহযোগে কয়েকদিন সেবন করলে আশাতীত ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও আয়ুষ ক্বাথের সেবন স্বরভঙ্গে যথেষ্ট উপকারী।

অগ্নিমান্দ্য
শীতকালীন সময়ে মুখে অরুচি, পেট ভারবোধ, মন্দাগ্নি ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে জোয়ানের আরক ১০-১৫ এম এল হাফকাপ জলে মিশিয়ে দিনে দুইবার সেবন করা যেতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যে
শীতকালে অনেকেরই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়৷ সেক্ষেত্রে এরন্ড তেল (কাস্টার অয়েল) তিন চামচ রাতে গরম জলের সঙ্গে দিন কয়েক খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ব্যথা বেদনায়
শীতকালে বাতব্যাধি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকসময় ব্যথা বাড়ার কারণে যথেষ্ট কষ্টে ভোগে সেক্ষেত্রে ব্যথা বেদনা উপশমে পর্যাপ্ত স্নেহন, স্বেদন (উষ্ণ সেক) ও বাতনাশক উপাচার সেবনীয়। মাংসাশ্রিত বাতের যন্ত্রণায় দুই তিন কোয়া রসুন বাটা ঘি মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।

ঋতু হরীতকী
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বিভিন্ন ঋতুতে অনুপান ভেদে হরীতকী সেবনের পরামর্শ রয়েছে যা ঋতু হরীতকী নামে পরিচিত।
শীতকালে পিপুল চূর্ণের সঙ্গে হরীতকী চূর্ণ মিশিয়ে সেবন করলে শরীরে দোষের সাম্যতা বজায় থাকে যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে অনাক্রমতা তৈরি করে।

শিশির কালের পথ্য-অপথ্য
আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানের এ যাবৎ সুদীর্ঘ গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতায় লিপিবদ্ধ চরক সংহিতায় নিত্য সেবনীয় ও বর্জনীয় খাদ্যতালিকা অনুযায়ী, শালি চাল, মুগ, সৌন্ধব লবণ, আমলকী, যব, দুধ, ঘি, মধু ইত্যাদি নিত্য খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।

লেখক: আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার (উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)


Skip to content